(এক)
ফোনটা না ধরাই ভালো এমনটা ভাবছে ইন্দ্ৰ। তবু মনে হচ্ছে বাড়ির লোক যদি ঠিকমতো কথা বলতে না পারে। অ্যাডটা সে নিজেই দিয়েছে, তারপরে অবশ্য বাড়িতে জানিয়েছে।
আজ রবিবার ছুটির দিন। মেজভাই এলেও তার বউ আসেনি। ছোটোভাই নিজের চেম্বারে, ওর চাপ আর বয়স বাড়ছে- তাই ইন্দ্ৰ এই অ্যাডটা দিয়েছে। অবশ্য তার আগে কলকাতায় যার জন্য মুখিয়ে ছিল সেই অ্যাকট্রেস কল্পনা, ইন্দ্রকে ঠিক বিয়ে করার মতো ভালোবাসে না বলেছিল। তারপরই ইন্দ্র অ্যাড দেবার সিদ্ধান্ত নেয়। তবে ইন্দ্রও ভেবেছিল কল্পনাকে এ বাড়িতে তোলা যাবে না! কল্পনা, ইন্দ্রর ভাঙা জীবনে এক অকল্পনীয় কল্পনার মতোই ফিরে এসেছিল।
ফিল্ম লাইনে দু’বছর চাকরি হয়ে গেছে, তাও মামার সুপারিশ ছাড়া এ চাকরিটাও জুটত না। প্রাইভেট কোম্পানি সিরিয়াল বানায়। মামা দূরদর্শনের কর্মী, অ্যাকাউন্ট্যান্ট। হাত দিয়ে বিল পাস হয়। টাকাই পৃথিবীর বস। ইন্দ্র এখানে চাকরি করে মাসে হাজার দশেক টাকা পায়। টেকনিক্যাল কাজ কিছু জানে না। ফিজিক্স-এ অনার্স পাশ হলেও, সাধারণ স্নাতক হিসাবে কাজ করে।
মামা ধুরন্দর লোক। চাকরি পাবার সময় ইন্দ্রকে বলেছিল, ‘ওখানে সময় সুযোগ করে টেকনিক্যাল কাজ কিছু শিখে নিবি, দাম আছে। যেমন এডিটিং, ডাইরেকশন, স্ক্রিপ্ট রাইটিং, ক্যামেরার কাজ এইসব। চাকরির বাজারে গতানুগতিক চাকর না হয়ে প্রাইভেট কোম্পানিতে মাল পার্সোনালিটি হওয়াই শ্রেয়। এদের চাকরি করতে হয় না, কাজ এদের খুঁজে নেয়। তাছাড়া সামর্থ্য থাকলে ফ্রিল্যান্সেরও জবাব নেই।”
এদিকে দালানে মায়ের গলা, ‘আপনি কোথা থেকে বলছেন? অ্যাঁ, একটাই মেয়ে, বিএ পাশ। ওকে, আপনার ফোন নম্বরটা বলুন।”
পারবে বলে মনে হল ইন্দ্রর। দু’বছর আগে বোনের বিয়ের অভিজ্ঞতা আছে। তাই ইন্দ্রর অনেকটা হালকা লাগল। এখনও মনে আছে বোনের বিয়ে। মেজভাইয়ের যে প্রেম আছে, তখনও বাড়িতে কেউ জানত না। ইন্দ্র আর মেজভাই কৃষ্ণেন্দু দু’জনেই মিশনের ছাত্র। ইন্দ্রর শরীর খারাপ হওয়ায় ভালো রেজাল্ট হয়নি, কোনওরকমে অনার্সটা পেয়েছিল।
এদিকে কৃষ্ণেন্দু ফার্স্ট ক্লাস ফোর্থ হয়ে ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিসটিক্যাল ইনস্টিটিউটে এম স্ট্যাট তারপর এম টেক, পিএইচডি করে সিঙ্গাপুরে পোস্ট ডক্টরেট করতে গেছিল। পরে ইউরোপের বিভিন্ন ইউনিভার্সিটি ভিজিট করেছিল। বর্তমানে খড়গপুরের আইআইটি-র অধ্যাপক৷ দেখতে দেখতে পনেরো বছর পার হয়ে গেছে। খড়গপুরে জয়েন করার আগে আয়ারল্যান্ডে থাকতে, বাড়িতে এসে বিয়েটা সেরে গেছে। দু’জনের প্রেম স্ট্যাটিসটিক্যাল ইনস্টিটউট বা আইএসআইতে।
রাতে খেতে খেতে মা সকলের সামনে বলল, ‘কুড়িটা সম্বন্ধ এসেছে। সবার-ই ফোন নম্বর নিয়েছি। এবার দেখতে গেলেই হয়।”
কৃষ্ণেন্দু বলল, “পছন্দ হলে সেগুলোতেই যাওয়া হবে। দাদার বিয়ে হয়ে গেলে ছটু বিয়ে করবে।
বাবা বলল, “তোর বিয়ে কি দাদার বিয়ের জন্য আটকে ছিল? ছটুর বিয়েও ওইরকম হবে।’
এদিকে ছটু-ও গম্ভীর ভাবে বলল, ‘বয়স হচ্ছে কিন্তু বিয়ের কোনও চেষ্টাই নেই দেখছি!”
ছোটো ভাইয়ের ডাক নাম ছটু, ভালো নাম সায়ন। এমবিবিএস ডাক্তার। কিছুদিন আগে জানা গেছে ও এনগেজ। তাই ইন্দ্রর বিয়েটাই গলগ্রহ হয়েছে ফ্যামিলিতে। ভবিষ্যতে চাকরির সমস্যা যে হবে, পড়ার সময় ইন্দ্র তা ভাবেনি। অনার্সের রেজাল্ট খারাপ হলেও ভেবেছিল বিসিএস বা পিএসসি-র চাকরি একটা হয়ে যাবে! স্কুলে ভালো ছেলে ছিল। সব ভাইবোনের চেয়ে পড়াশোনায় ভালো ছিল। কিন্তু ওর ভাগ্যটাই যে এমন হবে, তা কে জানত!
(ক্রমশ…)