ফোনের রিংটোন। খেয়াল করে বুঝতে পারল সুকুমার, বাজছে ওর নিজেরটাই। সকালবেলাই ফোন করে বউ খোঁজ নিয়েছিল ঠিক কখন সব মিটতে পারে।
ব্যাগ থেকে ফোন বের করে দেখল ছেলে। সাধারণত বেলার দিকে করে না। রাতে ফোন করে মায়ের সঙ্গে কথা বলে। রিসিভ করে কানে দিল সুকুমার।
—মা বলল ভ্যাকসিন নিতে এসেছ, সহজ গলায় বলল বাপ্পা। গরমটা এর মধ্যে আরও বেড়েছে। ঘাম আর অস্বস্তিও।
লাইনে চোখ রেখে সুকুমার বলল, “হ্যাঁ, মাঝরাত থেকে এসে দাঁড়িয়ে আছি।'
—মাঝরাত! কই, মা তো কিছু বলল না। ফোনের অন্যপ্রান্তে বাপ্পা যেন অবাক !
বেশি কথা শুধু ছেলের সঙ্গে নয়। কারওর সঙ্গেই আজকাল এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে না। বলল, 'কী করব! খুব ভিড় হচ্ছে।'
—খুব সাবধান। ভিড় থেকেই স্প্রেড করছে বেশি। ঠিক আছে, রাতে ফোন করছি। উপদেশ সেরেই ফোন ব্যস্ত ভাবে ছেড়ে দিল ছেলে।
ফোন ব্যাগে ঢুকিয়ে সুকুমার দেখল, ভ্যাকসিন নিয়ে তিনজন গটগট করে বেরিয়ে এল। যতটা তাড়াতাড়ি হবে মনে হয়েছিল, ততটা হচ্ছে না। সামনে দাঁড়িয়ে স্বপন এখন নিজের ফোন ঘাঁটছে। একমনে কীসব টাইপ করছে।
সূর্যের তাপ ক্রমশই বাড়ছে। পিছনে হই হট্টগোলের আওয়াজ বাড়তে ঘাড় ঘুরিয়ে দেখল সুকুমার। পুলিশ এসে হাজির। লাঠি হাতে কয়েকজনকে কড়া গলায় কিছু বোঝাচ্ছে। সামনে তাকিয়ে দেখল আরও দু'জন ভ্যাকসিন নিয়ে ওয়ার্ড থেকে বেরিয়ে এল। এখনও আঠারোজন। সময় অনেকটাই লাগবে মনে হচ্ছে। শরীরটাও বেকায়দা লাগছে।
ব্যাগ থেকে ছাতাটা বের করে খুলে নিজের মাথার উপর মেলল। আর কিছুক্ষণ। তারপর বাড়ি ফিরে গেলেই ঝামেলা থেকে মুক্তি। বেশ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর মাথাটা শুধু একবার ঝিমঝিম করে উঠল। তারপর চোখের সামনে খুব গাঢ় অন্ধকার। সুকুমারের মনে হল, ওকে যেন কেউ এক ঝটকায় ধরে নিল।
চোখ মেলার পর সামনে কয়েকজনের জটলা। কাছাকাছি কেউ নেই। দূর থেকে কথা চালাচালি। পিপিই কিট পরা একজন একটু দূর থেকে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞাসা করল, ‘প্রেসার আছে আপনার?'