(তিন)
মেজ ভাইয়ের কথা টিকল না। সবাই ফটো পাঠাতে চাইছে না। সবারই এক কথা— ‘না মানে দেখতে আসুন না, মেয়ে আপনাদের পছন্দ হবেই। চোখের দেখাই ভালো, আসলে মেয়ের ফটো ফেস ভালো নয়।’ তাই ইন্দ্রের মা ঠিক করল, যে-কুড়িটা সম্বন্ধ এসেছে তাদের সবাইকেই দেখতে যাবে।
অনেকে আবার ফোন করতে বলেছে, “আমার বোনের মেয়ে। দাঁড়ান ওদের বাড়িতে একবার জিজ্ঞেস করতে হবে।’ ইন্দ্র ভাবে যদি এখনও জিজ্ঞেস করতে হয় তবে ফোন করাই কেন ন্যাকামি করে।
কেউ কেউ আবার জানতে চায়— ‘এতদিন ছেলের বিয়ে হয়নি কেন? কোনও ভাবটাব বা অন্য কিছু নেই তো? না মানে চাকরিটা আসলে যে-লাইনে করে!”
গ্রামের দিক থেকেই অনেক সম্বন্ধ এসেছে। শেষমেশ দশটা মেয়ে দেখাতে রাজি হল। চল্লিশের কাছাকাছি বয়সের ইন্দ্র ভাবল, এই দশটার মধ্যেই বিয়ে করতে হবে, না হলে আর বিয়ে হবে না। এই ফরসা রূপবান সুশ্রী ছেলেটার বিয়ে হয়নি কেন অনেকেই বলে! তবে বাস্তবটা ইন্দ্ৰ একাই বুঝতে পারে। যে-চাকরিটা করে তার তুলনায় জিনিষপত্রের যা দাম। তবে বিয়ে করলে চলে যাবে এটুকু জানে।
একদিকে ছোটো ভাইয়ের তাড়া অপর দিকে নিজের কাছে বিয়ের বয়স পার হয়ে যাবার ভয়। এই তো বাড়ি সবই ঠিক আছে তবু বাবা-মার অবর্তমানে, ভাই ভাই ঠাঁই ঠাঁই হলে তখন কে দেখবে ইন্দ্ৰকে? এই যে অ্যাকট্রেস কল্পনা তার সঙ্গে যেভাবে মেশে তাতে ইন্দ্র তাকে নিয়ে অনেক কিছুই ভেবেছিল। ইন্দ্রদের ভিডিওট্রিক্স কোম্পানির দু-চারটে মেগা সিরিয়ালের নায়িকা কল্পনা। পেমেন্ট ইন্দ্রর হাত দিয়ে হয় বলে খুব ভাব জমিয়েছিল। প্রথম প্রথম ইন্দ্রের খুব অসুবিধা হতো। প্রেম করার সমস্ত আত্মবিশ্বাস নষ্ট হয়ে গিয়েছিল প্রথম প্রেম করার চেষ্টা বিফল হওয়ায়! এমনিতেই এ ব্যাপারে লাজুক তার উপর প্রথম চেষ্টা অকৃতকার্য হওয়ায় আর প্রেম করার তাগিদ আসেনি।
চাকরি হলে বিয়ে করবে এমন চিন্তাই ছিল। মাঝে দু-একটা সম্বন্ধ এলেও ইন্দ্রের মা-ও বলেছিল, চাকরি পেলেই বিয়ে হবে। এ প্রসঙ্গে না এগিয়ে চাকরির চেষ্টাই করছিল, তবে চাকরিও ভালো হল না। এদিকে প্রথম প্রেমের চেষ্টাতে ঘরজামাইয়ের প্রতি ইন্দ্রের একটা দুর্বলতা হয়ে গেছিল। তার থেকেই রোজগেরে মেয়েদের প্রতি আনুগত্য ইন্দ্ৰকে অনেকটা নিষ্কর্মা করেছিল। আজকাল মেয়েরাও অনেকেই চাকরি করছে। তবে সাকার ছেলে বেকার মেয়ে বিয়ে করলেও সাকার মেয়ে বেকার ছেলে বিয়ে একদমই করে না! তবুও প্রেমে সবই সম্ভব!
বছর দুয়েক চাকরি করার ফলে মনে একটা স্বস্তি এসেছে। সরকারি চাকরি করলে আরও আসত আর বিয়ের জন্য অনেক কন্যাদায়গ্রস্ত পিতা তখন কথা বলত। কাগজের পাত্রপাত্রীর বিজ্ঞাপনে সরকারি চাকরিজীবীরাই বেশি আকর্ষিত হয়। সরকারি চাকরিতে যেমন মাইনে ভালো খাটুনি কম। ফাঁকিবাজি করা যায় আবার বিয়ের বাজারেও বেশ দামি। দশটা সম্বন্ধের ব্যাপারে মা একদিন বলেই ফেলল, “বাবা যদি একটা সরকারি চাকরি করতিস!”
মায়ের কথার জবাবে ইন্দ্ৰ বলে, ‘ওই জন্যই তো বিয়ে করব না বলছি।’
—সে আবার হয় নাকি? তাছাড়া তোর বিয়ে না হলে ছটু বিয়ে করতে পারছে না। ইন্দ্র মাকে একটু নিজের পক্ষে ভাবে, তার মুখেও বাড়ির ভাবনার কথা এখন বুঝতে পারে।
সত্যি ইন্দ্র এখন বোঝে সরকারি চাকরির গুরুত্ব কত। এখানে এত খেটেও বেতন অল্প। টিএ, ডিএ একটু এদিক ওদিক করলে অবশ্য কিছু পকেটে আসে, সকাল ন’টা থেকে সন্ধ্যা সাতটা ডিউটি আওয়ারস। শ্যুটিং চললে যেতে হলে একটু অন্যরকম। তাও ইন্দ্রকে আউটডোর শ্যুটিংয়ে ডিউটি দেয় না এখনও।
(ক্রমশ…)