অন্যের থেকে শুনে কিংবা সোশ্যাল মিডিয়া-র মাধ্যমে আপনি হয়তো প্রি-মেনস্ট্রুয়াল সিনড্রোম (পিএমএস) শব্দগুলির সঙ্গে পরিচিত হয়েছেন মাত্র, এর বেশি কিছু জানতে পারেননি। কিন্তু আপনি জানেন কি যে, প্রি-মেনস্ট্রুয়াল সিন্ড্রোম ভোগ করা মহিলারা কতটা কষ্ট পান? তাহলে জেনে নিন, শারীরিক কষ্ট ছাড়াও, মানসিক যন্ত্রণা ভোগ করেন এই রোগীরা। কষ্টের তাড়নায় কথায়- কথায় রেগে গিয়ে অন্যের সঙ্গে বাজে ব্যবহারও করে ফেলেন। তাই, রোগটি সম্পর্কে বিশদে জেনে নিয়ে, সঠিক চিকিৎসাকে মাধ্যম করা উচিত। এই বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেন ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট অপরূপা ওঝা।
প্রি-মেনস্ট্রুয়াল সিনড্রোম বা পিএমএস এবং প্রি-মেনস্ট্রুয়াল ডিসফোরিক ডিসঅর্ডার বা পিএমডিডি ঠিক কী?
প্রি-মেনস্ট্রুয়াল সিনড্রোম হল উপসর্গের একটি অংশ মাত্র। যেমন ফুলে যাওয়া, স্তনের শিথিলতা, মেজাজের কিছু পরিবর্তন (সবসময় উদ্বিগ্ন বোধ করা, সহজেই বিরক্ত হওয়া প্রভৃতি) এবং অন্যান্য লক্ষণ যা মহিলারা মাসিক ঋতুচক্র শুরু হওয়ার আগে এবং ওই কয়েকদিন অনুভব করেন। অন্যদিকে প্রি-মেনস্ট্রুয়াল ডিসফোরিক ডিসঅর্ডার হল প্রি-মেনস্ট্রুয়াল সিন্ড্রোমের একটি গুরুতর রূপ। ডিসফোরিয়া শব্দটি মহিলাদের পিরিয়ড শুরু হওয়ার আগে মেজাজ হারানো, হতাশা এবং অন্যান্য আবেগপূর্ণ উদ্বেগের ইঙ্গিত দেয়।
ঋতুস্রাব শুরু হওয়ার আগে ডিসফোরিক ডিসঅর্ডারের রোগীদের মেজাজের পারদ ওঠা-নামা, জৈবিক কার্যকারিতার পরিবর্তন (অনিদ্রা/ হাইপারসোমনিয়া, ক্ষুধায় পরিবর্তন, দুর্বলতা, ক্লান্তি) এবং শারীরিক উপসর্গ যেমন শরীর ফুলে যাওয়া, ব্যথা এবং পেশিতে টান লাগা প্রভৃতি দেখা যায়। এর ফলে দৈনন্দিন কাজ ব্যাহত হয়। আপনি যখন বড়ো হচ্ছিলেন সেই সময়ের কথা চিন্তা করুন। স্কুলের দিনগুলিতে আপনি হয়তো এমন একজন বন্ধুর কথা মনে করতে পারেন, যিনি প্রায়ই অসহ্য ব্যথা এবং অন্যান্য উদ্বেগের কারণে তার ঋতুচক্র চলাকালীন ছুটি নিতেন।
প্রি-মেনস্ট্রুয়াল ডিসফোরিক ডিসঅর্ডারে ভুগছেন এমন মহিলারা প্রায়শই কাজে মনোযোগ দেওয়া কঠিন বলে মনে করেন। সাধারণত দেখা যায় যে, এই আচরণগত এবং শারীরিক পরিবর্তনগুলি কারও কারও পিরিয়ডের প্রায় এক সপ্তাহ আগে স্পষ্ট হয়ে ওঠে এবং ঋতুস্রাব শুরু হওয়ার কয়েক দিন পরে ঠিক হয়ে যায়।
বিজ্ঞানীরা যারা ঋতু পূর্ববর্তী ডিসফোরিক ডিসঅর্ডার সম্পর্কে ব্যাপক ভাবে গবেষণা করেছেন— তারা ১.৮ শতাংশ মহিলাদের (ডিএসএমভি) মধ্যে এই সমস্যা দেখতে পেয়েছেন। গুজরাতের কলেজ ছাত্রীদের নিয়ে এক সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, তাদের মধ্যে ৩.৭ শতাংশ প্রি-মেনস্ট্রুয়াল ডিসফোরিক ডিসঅর্ডার-এ ভুগছেন। পিএমডিডি-র তথ্য থেকে বোঝা যায় যে, অস্বাভাবিক ঋতুচক্রের কারণে মহিলারা প্রচুর কষ্ট ভোগ করেন। তাই এখন কিছু অফিসে ‘পিরিয়ড লিভ’-ও চালু হয়েছে।
আচরণগত পরিবর্তনের প্রকৃতি মাসিক চক্রের বিভিন্ন পর্যায়ের মাধ্যমে হরমোনের ওঠা-নামাকে স্পষ্ট ভাবে নির্দেশ করে। মাসিক চক্রের সময় ফলিকুলার পর্বে প্রোজেস্টেরন নিঃসরণ কম থাকে এবং পিরিয়ডের শুরুতে দ্রুত হ্রাস পায়। গবেষকরা জানতে পেরেছেন যে, প্রোজেস্টেরন নিঃসরণে এই আকস্মিক পতনের ফলে আবেগ নিয়ন্ত্রণে সমস্যা হতে পারে, বিশেষ করে বিরক্ত বোধ করা এবং মেজাজ হারানো।
মজার বিষয় হল— আরেকটি হরমোন ইস্ট্রোজেনও ঋতুকাল শুরুর আগে ডিসফোরিক ডিসঅর্ডারের ভূমিকা পালন করে বলে মনে করা হয়। ইস্ট্রোজেনের মাত্রা বিভিন্ন নিউরোট্রান্সমিটারের উপর প্রভাব ফেলে। নিউরোট্রান্সমিটার হল রাসায়নিক পদার্থ যা বার্তা প্রেরণের জন্য সিন্যাপসে মুক্তি পায় এবং এর ফলে ঋতুমতী নারীদের আচরণকে প্রভাবিত করে। এটা লক্ষ্য করা যায় যে, ঋতুচক্রের শেষের দিকে ইস্ট্রোজেনের মাত্রা উল্লেখযোগ্য ভাবে কম থাকে। ইস্ট্রোজেনের নিম্ন স্তর সেরোটোনিন নামক একটি নিউরোট্রান্সমিটারের কার্যকারিতায় প্রভাব ফেলে বলে মনে করা হয়।