পয়লা বৈশাখকে ঘিরে বাঙালি তথা আপামর বাংলার মানুষ মেতে ওঠেন এক অন্যরকম আনন্দে। নতুন পোশাক আর সাজগোজের পরে যে বিষয়টি প্রাধান্য পায়, তা হল—খাওয়া-দাওয়া। বাংলা বছরের নতুন এই দিনটিকে কেন্দ্র করে বন্ধু কিংবা আত্মীয়-স্বজনদের নিয়ে সকাল থেকে রাত্রি পর্যন্ত কাটে হইহুল্লোড়ে। আর এই হইহুল্লোড়ের মধ্যে গল্প এবং আড্ডার পরে অবশ্যই প্রাধান্য পায় সুস্বাদু কিছু খাওয়ার বিষয়টি।
এখন বেশিরভাগ মানুষই প্রতিদিন কর্মব্যস্ত থাকেন। তাই প্রত্যেকে মুখিয়ে থাকেন কোনও ছুটি কিংবা উৎসব-অনুষ্ঠানের দিনের জন্য। আসল কথা হল, নানান বাহানায় কর্মব্যস্ত জীবনকে কিছুটা সময়ের জন্য হলেও উপভোগ্য করে তোলা।
প্রকৃতিগত ভাবেই মানুষ খেতে ভালোবাসে। আসলে সুস্বাদু কিছু খাওয়ার মধ্যেই এক অন্যরকম তৃপ্তি পাওয়া যায়। বিশেষকরে বাংলার মানুষ একটু বেশি খাদ্যরসিক। বাড়ির মেয়েরা তো উৎসব-অনুষ্ঠানে ভালো এবং নতুন কোনও খাবার বানিয়ে যেমন আনন্দ পান, ঠিক তেমনই নতুন কোনও খাবার প্রিয়জনদের খাইয়ে নিজেদের ধন্য মনে করেন।
এমন অনেক খাবার আছে, যেগুলো আমাদের ঠাকুমা, দিদিমারা বানাতেন এবং আমরা সেসব খাবার খেয়ে চরম তৃপ্তি পেতাম। কিন্তু সময় বদলেছে। এখন আর বাড়িতে সময় নিয়ে খাবার বানানোর রীতি রেওয়াজ প্রায় নেই বললেই চলে। তাই রেস্তোরাঁর থেকে খাবার খেয়েই আমরা রসনা তৃপ্তি করি। কিন্তু সবার তো আর আর্থিক সামর্থ সমান নয়, তাই ইচ্ছে থাকলেও রেস্তোরাঁয় গিয়ে খাবার খাওয়ার উপায় থাকে না। আর এই আর্থিক বিষয়টি মাথায় রেখে অনেকে সারাবছর কিছু টাকা জমিয়ে রাখেন রেস্তোরাঁয় বসে ভালো কিছু খাবারের স্বাদ উপভোগ করার জন্য। অবশ্য খাবার ঘরোয়াই হোক কিংবা রেস্তোরাঁর, প্রয়োজন নতুন স্বাদের ভালো খাবার। আর এসব কথা মাথায় রেখেই এবারের বাংলা নববর্ষের আগে জেনে নিন নতুন কিছু পদের খাবারের বিষয়ে।
পয়লা বৈশাখের স্পেশাল মেনু লঞ্চ উপলক্ষ্যে কলকাতা-র পোলো ফ্লোটেল-এর জেনারেল ম্যানেজার সৌমেন হালদার জানিয়েছেন, ‘প্রতিটি বাঙালি পরিবারের হৃদয়ে রয়েছে খাঁটি ঘরোয়া স্বাদের স্মৃতি, যা ঐতিহ্য এবং ভালোবাসাকে ফিরিয়ে দেয়। যা এই দ্রুত গতির বিশ্বে খুব কমই পাওয়া যায়। এই পয়লা বৈশাখে, শুধুমাত্র হারিয়ে যাওয়া রেসিপিগুলির স্বাদই নয়, বরং ঠাকুমা-দিদিমাদের উত্তরাধিকারকে লালন করার সুযোগও করে নেওয়া উচিত। কারণ, তারাই আমাদের রন্ধনসম্পর্কীয় ঐতিহ্যকে যুগে যুগে সংরক্ষণ করেছেন। এই ভুলে যাওয়া খাবারগুলিকে পুনরুজ্জীবিত করার মাধ্যমে, আমরা সেই মহিলাদের ভালোবাসা, মহত্ব এবং সরলতার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে পারি এই সুযোগে।’
ঐতিহ্যবাহী খাঁটি বাঙালি খাবারের পুরনো স্বাদ এবং স্মৃতি ফিরিয়ে আনতে পারবেন আপনিও। অবশ্য এরজন্য আপনাকে পাতে রাখতে হবে নতুন কিছু পদের খাবার। এর মধ্যে রয়েছে মাংস-কিমার দই বড়া, পাতা মোড়া চিকেন, চিকেনের রসোল্লা, মাংসের গড়গড়া, সাজা মাছ কিংবা সাত্ত্বিক সুক্তনি প্রভৃতি।
আসলে উল্লেখিত এই পদগুলির মধ্যেই লুকিয়ে আছে উপকরণ এবং প্রণালী। যেমন, মাংসের কিমার সঙ্গে দই-এর মিশ্রণ ঘটিয়ে তৈরি করা যায় মাংস-কিমার দই বড়া। তবে এই বিষয়ে আপনাকে একটা সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আপনি যদি নতুন এই পদটি তৈরি করতে না পারেন, তাহলে আপনাকে রেস্তোরাঁয় যেতেই হবে। আসল বিষয় হল খেয়ে তৃপ্তি পাওয়া, সে ঘরে কিংবা বাইরে যেখানেই হোক।