মোবাইল ফোন যেমন একটি টেকনোলজির বিপ্লব বলে গণ্য করা হয়, ঠিক ততটাই বিপদ বাড়ে যখন এই কারিগরিকে ভুল কাজে ব্যবহার করা হয়। মোবাইল ফোনের ক্যামেরা ঠিক তেমনই একটা ক্ষতিকারক জিনিস। মহিলাদের স্নানের দৃশ্য বা পোশাক পরিবর্তনের মুহূর্ত কেউ গোপনে ক্যামেরাবন্দি করে, ভাইরাল করে দেওয়ার ঘটনা প্রায়ই ঘটছে আজকাল৷
দুঃখের বিষয় হল, ভারতের আমজনতা যারা বিজ্ঞান সচেতন এবং সামাজিক শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ার আগেই এই যন্ত্রটি এবং ইন্টারনেট পরিষেবা হাতে পেয়ে গেছেন— তারা প্রতিদিন মুখিয়ে থাকেন এই সব কুরুচিপূর্ণ ভিডিয়োর জন্যই। ইনস্টাগ্রাম, ফেসবুক, অ্যাপস, থ্রেড এবং ইউটিউব-এ হামলে পড়ে মানুষ এই ধরনের আপত্তিকর ভিডিয়ো দেখার আশায়।
দিল্লিতে ছাত্রদের একটি অনুষ্ঠানে, ফ্যাশন শো চলাকালীন ওয়াশরুমে কস্টিউম বদলাতে ঢোকে মেয়েরা। একজন সাফাই কর্মচারী কোনও একটি জানলা থেকে সরাসরি এই দৃশ্য ক্যামেরাবন্দি করতে গিয়ে ধরা পড়েন। অনিচ্ছাকৃত ভাবে অসতর্ক হওয়া এই ঘটনায় ওই মেয়েদের কি সত্যিই দোষী বলা যায়? কিন্তু তাদের জীবন গ্লানিময় হয়ে উঠতে পারত ওই ভিডিয়ো ভাইরাল হয়ে গেলে।
আজকাল ভিডিয়ো এডিটিং টুলস অত্যন্ত সহজলভ্য। ব্যাকগ্রাউন্ড বদলে যে-কোনও মহিলাকে পতিতাবৃত্তির সঙ্গে যুক্ত বলে চাউর করে দেওয়া মোটেই কঠিন নয়। কিছু অসাধু লোক এই কুরচিকর ভিডিয়ো ভাইরাল করার নেশায় মেতেছে।
এদিকে মোবাইল প্রস্তুতকারী সংস্থাগুলি বেশি মুনাফা লাভের জন্য দিনকে দিন মোবাইল ফোন ক্যামেরাকে উন্নততর করে তুলছে। কিন্তু সামাজিক অপরাধ রুখতে এখনই মোবাইল ফোন থেকে ক্যামেরা পৃথক করা উচিত। এটি একটি আলাদা গ্যাজেট হিসাবে ব্যবহৃত হতে পারে, যাতে উলটো দিকের মানুষ সহজেই সতর্ক হতে সক্ষম হয় যে তার ছবি ক্যামেরিবন্দি করা হচ্ছে। এটা টেকনোলজি বিরোধী পদক্ষেপ নয় বরং গাড়িতে সেফটি ব্রেক বা এয়ার বেলুন থাকার মতো জরুরি উপকরণ হল মোবাইল ও তার সঙ্গে থাকা ক্যামেরা।
মোবাইল ক্যামেরা প্রাইভেসিকে পুরোপুরি হত্যা করছে। গৃহবধূরাও এখন দিনরাত ঘর সংসারকে উন্মুক্ত করে দিচ্ছে রিল বা ডেইলি ভ্লগের মাধ্যমে। এরপর তার ব্যক্তিগত জীবনের সুরক্ষার দায়িত্ব কীভাবে বা কারা নিতে পারবে?
আমেরিকায় যেমন বখাটে ছোকরাদের বন্দুক চালিয়ে যখন তখন মানুষ মারা নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা হয়ে গেছে। পাদ্রীরা একে ঈশ্বরের বিধান এবং গণতন্ত্রের প্রচারকরা অধিকারের প্রশ্ন তুলে নির্বিকার হয়ে রয়েছেন। এদেশে তেমন ফোন ক্যামেরাকে হাতিয়ার হতে দেওয়া বিপজ্জনক।
ক্যামেরা ফোনের সঙ্গে পৃথক ভাবে বিক্রি হলে, অনেকেই তা কিনবেন না আলাদা টাকা দিয়ে। অন্তত এর ফলে এদেশের নিরীহ নাবালিকারা তাদের সম্ভ্রম ও লজ্জাটুকু সুরক্ষিত রেখে একটি নিশ্চিন্ত জীবন কাটাবে।