অঞ্জলি বেশ জোরের সঙ্গে বলতে শুরু করল, “আপনাদের তিনজনকে ঘুরতে ফিরতে দেখে লোকে হয়তো ভেবে নেয় মানসী রোহিতের গার্লফ্রেন্ড। কিন্তু আসলে ওর সঙ্গে আপনার প্রেমের সম্পর্ক রয়েছে। সঞ্জীবদা, আমি এই মুহূর্তে ঠিক করলাম রোহিত এবং আপনার সুখশান্তির জন্য রোহিতকে, আমন সম্পর্কে সব খুলে বলব। কিন্তু আমি চাই আপনিও এই মুহূর্ত থেকে রোহিতের সঙ্গে সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন করবেন।’

—অঞ্জলি, তুমি চাইলেই আমি রোহিতের সঙ্গে সম্পর্ক ত্যাগ করব, এই ধারণা খুব ভুল। সঞ্জীব ইরিটেডেড হয়ে বলল।

—এই বন্ধুত্ব তো আমি ভেঙেই ছাড়ব কারণ আপনাদের দুজনের বন্ধুত্ব বজায় থাকলে আমার ক্ষতিই হবে। এটা তো আমার সৌভাগ্য যে, আমি জানতে পেরেছি রোহিতের মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়ার ফলেই মানসীর সঙ্গে অবৈধ সম্পর্ক শিখা বউদির থেকে এতদিন লুকিয়ে রাখতে পেরেছেন। কালকে রোহিতও এরকম অন্যায় কাজ করতে পারে! আর এই জন্যই আপনাদের দুজনের বন্ধুত্ব আমার বিবাহিত জীবনের ভবিষ্যৎ সুখ-শান্তির জন্য বিরাট ক্ষতির কারণ হয়ে উঠতে পারে। ইমোশনাল হওয়ার ফলে অঞ্জলির গলার স্বর সামান্য কেঁপে গেল।

—তুমি ফালতু কথার পাহাড় দাঁড় করাচ্ছ অঞ্জলি।

—আপনি যা ভাবছেন ভাবুন। কিন্তু রোহিতের সঙ্গে আপনাকে বন্ধুত্ব ভাঙতেই হবে।

—অঞ্জলি, তুমি বুঝতেই চাইছ না, রোহিতের সঙ্গে বন্ধুত্ব ভেঙে গেলে আমি খুব একলা হয়ে যাব। সঞ্জীবের গলায় হতাশা ঝরে পড়ল।

—আপনি আমার দিকটাও একটু দেখুন সঞ্জীবদা। আমি চাই না মানসীর সঙ্গে অবৈধ সম্পর্ক বজায় রেখে আপনি রোহিতের কাছে ভুল উদাহরণ তুলে ধরুন। আমি নিজেকে শিখা বউদির পরিস্থিতিতে দেখতে চাই না।

—তুমি তো কিছুতেই বুঝতে চেষ্টা করছ না অঞ্জলি যে, রোহিতকে ছেড়ে দিলে আমার কাছে বাঁচা-মরা সমান হয়ে যাবে! সঞ্জীবের গলা ধরে এল।

—মানসীর সঙ্গে অবৈধ সম্পর্কটার থেকে রোহিতের সঙ্গে বন্ধুত্বের সম্পর্ক আপনার কাছে যদি বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়, তাহলে আপনি মানসীর সঙ্গে সম্পর্কটা থেকে কেন বেরিয়ে আসছেন না? অঞ্জলি উত্তেজিত হয়ে সঞ্জীবের দিকে প্রশ্নটা ছুড়ে দিল।

সঞ্জীব নিরুত্তর হয়ে বসে থাকল। অঞ্জলি নরম স্বরে বোঝানোর চেষ্টা করতে লাগল, ‘দাদা, আপনি যদি শান্ত ভাবে বিশ্লেষণ করেন তাহলে বুঝতে পারবেন যে আমি আপনাকে সঠিক পদক্ষেপ নেওয়ারই পরামর্শ দিচ্ছি। শিখা বউদির শারীরিক যা কিছু দুর্বলতা সেটা দূর করার দায়িত্ব আমি নিচ্ছি। বউদির এক্সট্রা মেদ ঝরানোর জন্য আমি নিয়মিত বউদিকে নিয়ে জিমে যাব। বিউটি পার্লারে যাওয়ারও অভ্যাস করাব। আমরা সবাই মিলে যদি চেষ্টা করি তাহলে দেখবেন — বিয়ের সময় বউদি ঠিক যেমন ছিলেন আবার সেরকমই হয়ে যাবেন।

অনেকক্ষণ দু’জনে চুপচাপ বসে রইল। সঞ্জীব কিছু একটা ভাবছিল। হঠাৎই ভাবুক কণ্ঠে বলে উঠল, ‘মনে হচ্ছে মানসীর সঙ্গে আমার সম্পর্কে ইতি টানার সময় চলে এসেছে। শিখার থেকে এই সম্পর্কটা লুকিয়ে রাখার টেনশন এবং বিবেকের দংশন ও অপরাধবোধের ফলে এই বয়সেই আমি উচ্চ রক্তচাপের শিকার হয়ে পড়েছি। অঞ্জলি, আমি তোমাকে কথা দিচ্ছি মানসীর সঙ্গে সব সম্পর্ক আমি ত্যাগ করব।”

—দাদা, আমাকে দেওয়া কথা যেন মিথ্যা না হয়, তাহলে কিন্তু আমি খুব দুঃখ পাব। অঞ্জলির চোখ জলে ভরে গেল।

—আমি রোহিতের নামে শপথ করছি, আমার বলা সমস্ত কথা আমি অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলব।

—তাহলে আমিও আপনাকে কথা দিচ্ছি আমনের সঙ্গে যেদিন দেখা করতে যাব সেদিন ওকেও আমি বলে দেব যে, ওর সঙ্গে আমি আর দেখা করতে আসব না।

সঞ্জীবের হঠাৎই মনে হল, ওর সঙ্গে মানসীর সম্পর্কটা ভাঙার জন্যই হয়তো অঞ্জলি আমনের সঙ্গে বিয়ের পরেও সম্পর্কটা বাঁচিয়ে রাখার একটা নাটক করল। কিন্তু অঞ্জলির সামনে সঞ্জীব ওর প্রশংসা করে বলল, ‘তুমি সত্যি খুব বুদ্ধিমতি মেয়ে অঞ্জলি।’ মনের থেকে সাহস করে সব সংশয় দুর করে ফেলল সঞ্জীব।

—ধন্যবাদ দাদা। নিজের প্রশংসা শুনে অঞ্জলি খুব খুশি হল।

সঠিক রাস্তায় আমাকে ফিরিয়ে আনার জন্য ‘ধন্যবাদ’ তো তোমারই প্রাপ্য। মানসীর সঙ্গে অন্যায় সম্পর্ক শেষ করার সিদ্ধান্ত সঞ্জীবের মনকে এক অদ্ভুত আনন্দ এবং খুশিতে ভরিয়ে তুলল।

অঞ্জলির শুধু একটাই ভয় ছিল যে রোহিত হঠাৎ করে আমনের খোঁজখবর নিতে শুরু না করে কারণ গত ছয় বছর ধরে আমন নিজের শহর থেকে অনেক দূরে বেঙ্গুলুরুতে বসবাস আরম্ভ করেছে। যদি এই সত্যি সকলের সামনে চলে আসে তাহলে অঞ্জলি এবং সঞ্জীবের মধ্যেকার বন্ধুত্ব নষ্ট হয়ে যেতে পারে এবং রোহিতের সঙ্গেও ওদের সম্পর্কে দূরত্ব বাড়তে পারে।

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...