শত-শত বছর ধরে প্রতিটি পরিবারের রান্নাঘরে ঘি রাখা থাকে রান্নার উপকরণ হিসাবে। কারণ, ঘি দিয়ে রান্না করলে খাবারের স্বাদ ভালো হয়। তাই, স্বাদ বাড়ানোর প্রধান উপকরণ হিসাবে রান্না ঘরে বরাদ্দ থাকে ঘি। আসলে, স্বাদে-গন্ধে ঘি এক অনন্য উপকরণ এবং অল্প পরিমাণে ঘি খেলে পুষ্টিগত উপকারিতাও পাওয়া যায়। ডাল-রুটি-সবজি হোক কিংবা উৎসবে-অনুষ্ঠানে লাড্ডু ও হালুয়ার মতন মিষ্টিই হোক, সব কিছুতেই অবশ্য প্রয়োজনীয় উপকরণ হল ঘি। যা রোজকার খাবারদাবারকে তো বটেই, সেই সঙ্গে উৎসব-অনুষ্ঠানের জন্য তৈরি খাবারের স্বাদে-গন্ধে আলাদা একটা মাত্রা এনে দেয় ঘি।
ভারতে ঘি ব্যবহারের দীর্ঘ এক ইতিহাস আছে এবং এর সাংস্কৃতিক গুরুত্বও আছে। তবু, কিছু স্বাস্থ্য সচেতন মানুষ ঘি নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন। কারণ ঘি-তে আছে উচ্চ মাত্রার স্যাচুরেটেড ফ্যাট ও কোলেস্টেরল। তবে বলা হয়, ঘি-তে কিছু আবশ্যিক পুষ্টিও আছে, যেগুলি স্বাস্থ্যের পক্ষে উপকারী। তাই, সুস্থতার জন্য চাই লোয়ার কোলেস্টেরল ঘি। আর এই সাধারণ ঘি এবং লোয়ার কোলেস্টেরল ঘি-এর বিষয়ে তুলে ধরা হচ্ছে আইটিসি লিমিটেড-এর পুষ্টি বিজ্ঞান বিভাগের প্রধান ড. ভাবনা শর্মা-র বক্তব্য এবং পরামর্শ।
- ঘি-তে আছে প্রচুর আবশ্যিক ফ্যাটি অ্যাসিড, ওমেগা-থ্রি ও ওমেগা-সিক্স ফ্যাটি অ্যাসিড। এগুলি সেল মেমব্রেনকে সুসংহত রাখে আর বোধশক্তিকে উন্নত করে। এই ফ্যাটগুলি ইনফ্লেমেশন কম করে সামগ্রিক ভাবে স্বাস্থ্যকে উন্নত করে।
- ঘি-তে যে বিউটিরিক অ্যাসিডের মতন উপাদান আছে, তা অন্ত্রের নালীতে রোগ প্রতিরোধক কোষ তৈরি করে, যেগুলি রোগ প্রতিরোধের কাজকে শক্তিশালী করতে পারে।
- ঘি-তে আরও এক উপাদান আছে। যাকে বলে লিনোলেনিক ফ্যাটি অ্যাসিড (ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড)। এটি ইনফ্লেমেশন মোকাবিলায় সহায়ক বলে পরিচিত। সে জন্যও ঘি সুস্বাস্থ্যের জন্য উপকারী হতে পারে।
ঘি-কে আয়ুর্বেদে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্থান দেওয়া হয়েছে। এই শাস্ত্রে ঘিকে বলা হয়েছে সাত্ত্বিক আহার। যা সেবন করলে শরীর–মন শুদ্ধ হয়ে ওঠে। আয়ুর্বেদের মতে, ঘি সেবন করলে পাচক রস বা এনজাইম বেশি করে নিঃসৃত হয় বলে খাবার হজমেও সহায়ক হয়ে ওঠে। ভেষজ ওষুধ তৈরিতে ঘি-কে একটি মাধ্যম হিসাবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। ঘি শরীরের প্রাণশক্তির নির্যাস, যা শরীরকে মজবুত রাখে এবং রোগ ইত্যাদি থেকেও সুরক্ষিত রাখে। ঘি-তে কিছু আবশ্যিক ভিটামিনও আছে। যেমন, এ, ডি, ই, ও কে ভিটামিন। সেই সঙ্গে মিনারেল যেমন ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস। অবশ্য, ঘি স্বাস্থ্যের পক্ষে উপকারী হলেও এটি হল স্যাচুরেটেড ফ্যাট ও কোলেস্টেরলের উৎস। তাই ব্যাপক মাত্রায় ও রোজ ঘি সেবন করলে তা চিন্তার বিষয় হয়ে উঠতে পারে।
ঘি ভারতীয় পরিবারগুলির একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। তাই, একে পুরোপুরি বাদ দেওয়া কঠিন। অতএব, ঘি সেবনের দৈনিক মাত্রাকে নিয়ন্ত্রণ করা উচিত। এমন বিকল্প ঘি গ্রহণ করতে পারেন, যা ‘আপনার জন্য ভালো’। যেমন, লোয়ার কোলেস্টেরল ঘি সেবন করলে আপনি ঘি উপভোগ করার অন্য একটি উপায় পেয়ে যাবেন। ফুড ম্যানুফ্যাকচারিং প্রসেসের সময় ‘কম কোলেস্টেরল শোষণ‘-এর মতন উন্নত খাদ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। এই ভাবে এমন ঘি তৈরি করা হচ্ছে যে, গ্রাহকরা চিরাচরিত ঘিয়ের একটি বিকল্প খুঁজে পাচ্ছেন। আর এর জন্য তাদের স্বাদ ও উপকারিতার ব্যাপারে কোনও আপসও করতে হচ্ছে না। খাদ্য প্রযুক্তি এত উন্নত হয়ে গেছে যে, প্রস্তুতকারকরা এখন ঘি-এর দুর্দান্ত স্বাদ–গন্ধকে অবিকৃত রেখেই তার কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে ফেলতে পারছেন।
আজকের গ্রাহকরা সহজ কিছু উপায়ে অল্প মাত্রায় লোয়ার কোলেস্টেরল ঘি সেবন করে ঘিয়ের দুর্দান্ত স্বাদ–গন্ধ এবং পুষ্টিগত উপকারিতাও লাভ করতে পারবেন। এই উপায়গুলি হলঃ–
– রুটি, ডাল, সবজির মতন বিভিন্ন খাবারে এই ঘি ব্যবহার করা
– উৎসব–অনুষ্ঠানের জন্য তৈরি মিষ্টি যেমন লাড্ডু, হালুয়া, ও জিলিপির স্বাদ–গন্ধকে আরও বাড়ানোর জন্য এই ঘি ব্যবহার করা
– মাখন দিয়ে যেসব পদ রান্না করা হয়, সেগুলিকে এই ঘি দিয়ে রান্না করা
– শরীর–মন চাঙ্গা করার জন্য সকালের চায়ে বা কফিতে এক চা–চামচ এই ঘি মিশিয়ে নেওয়া
এই ঘি সেবন করলে চিরাচরিত ঘিয়ের মতনই উন্নত মানের স্বাদ, গন্ধ, ও পুষ্টিগত উপকারিতা পাওয়া যাবে। সেই সঙ্গে, কোলেস্টেরলের মাত্রাও বেশ উল্লেখযোগ্য ভাবে কম করা যাবে। এই ভাবে সবাই ঘি-কে তাদের বৈচিত্রময় সুষম আহারের অঙ্গ করে তুলতে পারবেন।