সৈনিকদের দৈনন্দিন জীবনযাপন থেকে ভালো কিছু শিক্ষা নেওয়া যায়। কারণ, তারা দিনরাত নিয়মশৃঙ্খলার মধ্যে থাকে বলেই অনেক ঝড়ঝাপটা সামলে দেশরক্ষা করতে পারে। নির্দিষ্ট নিয়ম মেনেই ওদের যেমন খাবার খেতে হয়, ঠিক তেমনই পোশাকও পরতে হয় নিয়ম মেনে। শুধু তাই নয়, প্রতিটি পদক্ষেপই তাদের মাপা থাকে। নিয়ম ভাঙলে শাস্তিও মাথা পেতে নিতে হয় সৈনিকদের।
বাস্তবে দেখা গেছে, যেখানে কোনও নিয়ম নেই, সবকিছু অগোছালো, যত গণ্ডগোল সেখানেই। এক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে, নিয়মের পরিবর্তে যদি নিয়ম ভাঙার নিয়ম থাকে, তাহলে ভণ্ডরা সুযোগ নেবেই। আর এই নিয়মশৃঙ্খলা লঙ্ঘন করার ক্ষেত্রে আমাদের দেশ কিংবা দেশের নাগরিকরা অনেকটা এগিয়ে আছে বলেই মনে হয়।
এই যেমন যত্রতত্র মলমূত্র ত্যাগ, যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং, নিয়ম না মেনে বাড়িঘর তৈরি, লাইন না মেনে এগিয়ে যাওয়া— এই সবকিছুই আসলে কুঅভ্যাস। রাস্তাঘাট থেকে শুরু করে জলনিকাশি ব্যবস্থা, সব ক্ষেত্রেই লক্ষ্য করা যায়। পরিকল্পনার অভাব। সব যেন কেমন এলোমেলো, অগোছালো।
সরকারের অনেক দপ্তরে গিয়ে দেখুন জনগণের অত্যন্ত প্রয়োজনীয় কাগজপত্র এলোমেলো করে রাখা থাকে। আর এই অগোছালো থাকার কারণে সাধারণ মানুষ সঠিক সময়ে পরিসেবা পাওয়া থেকে অনেক সময় বঞ্চিত হন। সংসদ ভবন থেকে শুরু করে গ্রামের খেতখামার, সর্বত্রই অগোছালো, নিয়মশৃঙ্খলার অভাব।
আসলে এই অগোছালো কিংবা নিয়ম ভাঙার মানসিকতা অনেকের রক্তে মিশে গেছে। তাই প্রাইম টাইম-এ রাস্তায় যে যানজট তৈরি হয়, তাও আসলে ওই অগোছালো কিংবা নিয়ম ভাঙার মানসিকতারই কুফল।
অনেক ক্ষেত্রে তো আবার ইচ্ছে করে সবকিছু অগোছালো ভাবে রাখা হয়, যাতে গোছানোর লোক নিয়োগ করে আর্থিক মুনাফা করা যায়। কোনও ধর্মীয় স্থানে গেলে এই বিশৃঙ্খলার মাত্রা দ্বিগুণ হতে দেখা যায়৷ দু’চাকা, তিন চাকা, চার চাকা কিংবা ছয় চাকার গাড়ি রাখার যেমন নির্দিষ্ট কোনও জায়গা নেই, ঠিক তেমনই যে যেখানে পেরেছে দোকান সাজিয়ে বসে পড়েছে।
এই অগোছালো অবস্থা ভক্তরা মন্দির চত্বরে দেখে শিখে এসে, তার প্রয়োগ ঘটায় নিজের এলাকায় এবং বাড়িতেও। তাই বাড়িতে জামাকাপড় থেকে শুরু করে বইখাতা, বাসনপত্র সবকিছুই এখানে-ওখানে ছড়িয়ে রাখার প্রবণতা থাকে অনেকের।
কিন্তু এই অগোছালো নারীপুরুষরা ভুলে যান যে, বড়োরা অগোছালো থাকলে ছোটোরাও তাই শিখবে এবং অগোছালো থাকলে সঠিক সময়ে গুরুত্বপূর্ণ জিনিসটা নাও খুঁজে পেতে পারেন। শুধু তাই নয়, অগোছালো বিষয়টি মস্তিষ্কেও যে কুপ্রভাব ফেলে, তা অনেকেরই জানা নেই। কিন্তু মনে রাখবেন, মস্তিষ্ক যদি চঞ্চল হয়ে যায়, তাহলে যেমন মেজাজ হারিয়ে ফেলতে পারেন যখন-তখন, ঠিক তেমনই জীবনে বড়ো কোনও ভুলও করে ফেলতে পারেন।