প্রচলিত বিশ্বাসে বা কুসংস্কারে চোখের ডান বা বাম পাতা কাঁপার সঙ্গে শুভ-অশুভ যোগ আছে ধরে নেন অনেকে। কিন্তু মনে রাখবেন, চোখের পাতা খুব সংবেদনশীল, যা সারাদিনে গড়ে ১৯,০০০ বার পর্যন্ত পলক ফেলে। এটি আমাদের অজান্তেই হয়ে থাকে কিন্তু যদি অনিয়ন্ত্রিত ভাবে খুব বেশি পলক পড়তে থাকে কিংবা চোখের পাতার পেশি সংকোচনের সঙ্গে ভ্রু, মুখের মাংসপেশিও অনিয়ন্ত্রিত ভাবে কাঁপতে থাকে, তাহলে তখনই সমস্যার সূত্রপাত হয়। দিশা আই হসপিটাল-এর কনসালটেন্ট অপথালমোলজিস্ট ডা. সৌগত পোদ্দার এই বিষয়ে জানিয়েছেন বিস্তারিত।

O ঘুমের অভাবে আমাদের শরীরে যেরকম ক্লান্তি অনুভূত হয়, ঠিক সেইরকম চোখের পাতার মাংসপেশিগুলোও পর্যাপ্ত ঘুমের অভাবে ক্লান্ত হয়ে পড়ে এবং চোখের পাতা কাঁপতে থাকে।

O যদি চোখের পাওয়ার-এ ভারসাম্য না থাকে কিংবা চশমা সঠিক না হয়, তাহলেও চোখের উপর চাপ বেড়ে যায় এবং চোখের পাতা কাঁপে।

O প্রেসবায়োপিয়ায় চশমা না পরলেও চোখে অত্যধিক চাপ পড়ে চোখের পাতা কাঁপতে পারে।

O যারা অনেকক্ষণ ল্যাপটপ, ডেস্কটপ, ডিজিটাল স্ক্রিনে কাজ করছেন, তাদের চোখেও এই আই ফ্যাটিগ হতে পারে, যার ফলে কাঁপতে পারে চোখের পাতা।

O অত্যধিক শারীরিক কিংবা মানসিক স্ট্রেস কিংবা উদ্বেগ থেকেও চোখের পাতা টুইচিং হতে পারে।

O অত্যধিক কফি, চা, ধূমপান কিংবা মদ্যপান নার্ভের উপর দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলতে শুরু করে এবং এর ফলে চোখের পাতার ইনভলান্টারি টুইচিং প্রাথমিক লক্ষণ হতে পারে।

O ওষুধের সাইড এফেক্ট অর্থাৎ কিছু নার্ভের ওষুধ, মাইগ্রেইনের ওষুধ প্রভৃতির এফেক্ট হিসাবে এটা হতে পারে।

O চোখের অভ্যন্তরীণ সমস্যা, যেমন চোখের পাতার ভিতরে conjunctiva-র যে আবরণ থাকে, সেখানে ছোটো ছোটো পাথরের মতো কিছু জমলে, তা চোখের মধ্যে অস্বস্তি তৈরি করতে পারে এবং চোখের পাতা কাঁপতে পারে।

O মেইবোনিয়ান গ্ল্যান্ড ডিসফাংশন হলে, রেফারিটিস চোখের পাতার ইনফেকশন হলে, কোনও ফরেন বডি চোখের একদম ভিতরে গেঁথে থাকলেও চোখের পাতা কাঁপতে পারে।

O কন্ট্যাক্ট লেন্স-এর হাইজিন সঠিক ভাবে না মানলে, যেমন ধরুন যদি কেউ ভুল করে সারারাত কন্ট্যাক্ট লেন্স পরে ঘুমিয়ে পড়ে কিংবা কর্নিয়ায় কোনও আঘাত থাকে, তাহলেও আই লিড টুইচিং হতে পারে।

O ইউভাইটিস বা চোখে বাত হলে আলোর দিকে তাকাতে অসুবিধা হয়, তখনও চোখের পাতা কাঁপতে থাকে বা ব্লেফারোস্পাজম হতে পারে।

O চোখের পাতার আই ল্যাশগুলি যদি বাইরের দিকে গ্রো না করে ভিতরের দিকে গ্রো করতে থাকে, তাহলে ক্রনিক ইরিটেশন হতে থাকে, সেক্ষেত্রেও চোখের পাতা কাঁপতে পারে।

O কিছু কিছু ডেমিয়েলিনেটিং নিউরো ডিজিজের প্রাথমিক লক্ষণ হতে পারে এই পাতা কাঁপার সমস্যা। যেমন— মাল্টিপল স্ক্লেরোসিস।

O হেমি ফেসিয়াল স্পাজম অর্থাৎ চোখের পাতার সঙ্গে মুখের মাসলগুলোও কাঁপতে পারে।

O বাচ্চার চোখের পলক বেশি পড়লে অভিভাবকরা অনেক সময় চিন্তায় পড়ে যান। কিছু ক্ষেত্রে শিশুদের অন্য কোনও শারীরিক সমস্যা থাকলেও চোখের পাতা কাঁপতে পারে। তবে ওই শারীরিক সমস্যা দূর হলে কিংবা বয়স বাড়লে চোখের পাতা কাঁপা বন্ধ হয়ে যাবে।

O যদি বাচ্চাকে খাওয়ানোর সময় চোখের পাতা পড়তে থাকে, তাহলে তা মার্কাসগান জও-উইঙ্কিং সিনড্রোমও হতে পারে। এ ক্ষেত্রে উপযুক্ত চিকিৎসার প্রয়োজন।

O কিছু প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের মুদ্রাদোষ হিসাবেও চোখের পাতা কাঁপার সমস্যা হয়। এক্ষেত্রে দৈনন্দিন জীবনে অসুবিধা করে না।

প্রতিকার

সাধারণত ৫-৭ দিনের মধ্যে নিজে থেকেই চোখের পাতা কাঁপা বন্ধ হয়ে যায় কোনও চিকিৎসা ছাড়াই। এর পরেও যদি পাতা কাঁপতে থাকে, তাহলে ইগনোর না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

ঘরোয়া টোটকা হিসাবে, পরিষ্কার জলে চোখ ধোবেন, চোখে একটু হালকা গরম সেঁক দিতে পারেন, স্ট্রেস রিলিফের জন্যে ধ্যান করতে পারেন, আর্টিফিসিয়াল টিয়ার-ড্রপ দিনে তিন থেকে চার বার ব্যবহার করতে পারেন। তবে চোখ খচখচ করলেও দোকান থেকে কিনে কোনওরকম অ্যান্টিবায়োটিক বা স্টেরয়েড ড্রপ দেবেন না। সেইসঙ্গে অন্যের চশমা ব্যবহার করবেন না। নিজে থেকে ঘুমের বা নার্ভের ওষুধ খাবেন না নেটে সার্চ করে।

কখন নেবেন চিকিৎসকের পরামর্শ?

O পাতা কাঁপার সঙ্গে যদি চোখে খচখচানি অনুভূত হয়, চোখ জ্বালা করে, জল পড়ে, ব্যথা করে, লাল হয়ে যায় কিংবা আলোর দিকে তাকাতে অসুবিধা হয়

O ৫-৭ দিনেও চোখের পাতা কাঁপা যদি না থামে

O মুখ বেঁকে গেলে অথবা মুখের মাসলগুলোও অনিয়ন্ত্রিত মুভমেন্ট করলে

O অতিরিক্ত কাঁপার ফলে যখন চোখের পাতা খুলে রাখা যাচ্ছে না।

O ছোটো বাচ্চাদের চোখ কাঁপা বন্ধ না হলে অবশ্যই চোখের পুরো চেক-আপ করাতে দেরি করবেন না।

চিকিৎসা

উদ্বেগ কমানোর জন্য প্রাথমিক ভাবে ওষুধ দিয়ে ৮০ শতাংশ ক্ষেত্রে চোখের পাতা কাঁপার সমস্যা দূর করা যায়। তবে দীর্ঘদিন ধরে চোখের পাতা কাঁপার সমস্যা থাকলে, বোটক্স ইনজেকশন চোখের পাতার মাসলে দেওয়া যেতে পারে। এর ফলে বেশ কয়েক মাস নিশ্চিন্ত থাকা যায়, এটি ডে কেয়ার প্রসিডিওর। অবশ্য বোটক্স রেসপন্স না করলে চোখের পাতার ওভার অ্যাক্টিভ মাসল বা নার্ভ স্বাভাবিক রাখার উপযুক্ত ব্যবস্থা করতে হবে। ডেমিয়েলিনেটিং নিউরো ডিজিজের ক্ষেত্রে নিউরোলজিস্ট-এর সঙ্গে আলোচনা করে চিকিৎসা করারও প্রয়োজন হতে পারে।

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...