বিয়ের আগে রাতারাতি গ্ল্যামারাস হয়ে ওঠার ইচ্ছে হয় হবু কনের। এই কারণে নিজের ত্বককে আরও সুন্দর, উজ্জ্বল ও মোহময়ী করে তোলার জন্য প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করা উচিত। অতিরিক্ত সূর্যের আলোর সংস্পর্শে থাকলে ত্বকের মেলানিন কালচে হয়ে যায়। তাই ত্বককে বাইরের দূষণ ও সূর্যের রশ্মি থেকে বাঁচাতে দৈনন্দিন যত্ন নেওয়া উচিত। পার্লারে গিয়ে ট্রিটমেন্ট করালে তা সময় ও অর্থ দুটিই ব্যয় করে। তাই বিয়ের দিন ঠিক হওয়ামাত্র একটা বিউটি রুটিন তৈরি করে নিন। ঘরে থাকা কয়েকটি জিনিসের মাধ্যমেই নিজের ত্বককে সহজেই সুন্দর করে তুলতে পারবেন।
কী কী তৈরি করবেন?
হোম ফেসিয়াল: বাড়িতে কয়েকটি উপকরণ থাকলে, সহজেই ফেশিয়াল কিট তৈরি করতে পারবেন। পার্লারের মতোই এফেক্ট নজরে পড়বে আর ত্বকের সংক্রমণের ভয়ও থাকবে না।
কী কী লাগবে: ঈষদুষ্ণ জল, ক্লিনজার, এক্সফলিয়েন্ট, তুলো, স্কিন টনিক, মাস্ক, শসার স্লাইস (ফ্রিজে রেখে ঠান্ডা করা), পরিষ্কার তোয়ালে।
হোমমেড ক্লিনজার: হাফ কাপ ওটমিল ও পরিমাণমতো দই একসঙ্গে মিশিয়ে নিন। এমন ভাবে মেশান যেন রাফ বা দানা ভাব না থাকে।
হোমমেড এক্সফলিয়েন্ট: এক কাপ চিনির সঙ্গে হাফ কাপ কলা চটকে একটি মসৃণ পেস্ট তৈরি করুন। এটাই ত্বকের এক্সফলিয়েশনে সাহায্য করবে।
হোম মেড টোনার: শসা কুচিয়ে নিন। মুখের উপর ভেজা কাপড় রেখে, তার উপর শসার কুচিগুলো রাখুন। শসার রস ন্যাচারাল অ্যাস্ট্রিনজেন্ট হিসাবেও কার্যকরী।
হোম মেড মাস্ক: ১ টেবল চামচ মধু, ১টা ডিমের সাদা অংশ, ১ চা চামচ গ্লিসারিন এবং ২ চা চামচ ময়দা নিয়ে একসঙ্গে এই উপকরণগুলো মিশিয়ে মাস্ক হিসাবে ব্যবহার করুন।
ফেসিয়ালের টুকিটাকি
O মাত্র আধঘণ্টা সময় বরাদ্দ করলেই একটু যত্ন নিতে পারবেন নিজের। তাই ফেসিয়াল করার সময় অন্য কাজের ভাবনা ছেড়ে রিল্যাক্সড থাকুন। এতে ভালো এফেক্ট পাবেন
O ফেসিয়াল শুরু করার আগে, সমস্ত জিনিস গুছিয়ে নিয়ে বসুন, যাতে প্রক্রিয়া শুরু করার পর এটা-ওটা খুঁজতে না হয়। তাহলে পরিশ্রমটাই মাটি হবে
O ফেসিয়াল করার আগে স্টিম নেওয়া খুবই জরুরি। এতে মুখের রোমকূপ খুলবে ও মুখ পরিষ্কার হয়ে যাবে
O স্টিম নেওয়ার জন্য ৬ কাপ মতো জল ফুটিয়ে নিন। মাথায় তোয়ালে চাপা দিয়ে স্টিম নিন।
O স্টেপ অনুযায়ী প্রথমে তৈরি করা ক্লিনজার দিয়ে মুখ পরিষ্কার করুন। তারপর স্ক্রাবার লাগিয়ে এক্সফলিয়েট করুন। এরপর মাস্ক ব্যবহার করুন। সবশেষে তৈরি করা টোনার লাগিয়ে স্কিন-এর টানটান ভাব ফিরিয়ে আনুন।
চোখের সৌন্দর্য
সকলেই চান চোখের সৌন্দর্য প্রদর্শন করতে। কিন্তু বড়ো বড়ো চোখও অনেক সময় কোনও আকর্ষণ তৈরি করে না। কারণ চোখের নীচে ডার্ক সার্কল্স সৌন্দর্যহানি করে। আসলে বেশি টেনশন এবং স্ট্রেসের প্রভাব, চোখের সৌন্দর্যকে ঢেকে দেয়। তখন নষ্ট হয় চোখের স্বাভাবিক সৌন্দর্য। মহিলাদের চোখের এই সৌন্দর্য-সমস্যা আজকাল ক্রমশই বাড়ছে। বিয়ের আগে যদি আপনারও চোখের নীচে কালো দাগের সমস্যা দেখা দেয়, তাহলে সেই নিয়ে অযথা চিন্তা না করে, সমস্যামুক্ত হওয়ার চেষ্টা করুন।
অত্যধিক স্ট্রেস এবং টেনশনের ফলে অনেকেরই এখন চোখের তলায় কালোভাব ফুটে ওঠে। তবে আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতিতে কোনওরকম কাটাছেঁড়া (অপারেশন) না করেই, শুধুমাত্র থেরাপিতে এই সমস্যা দূর করা যায়।
ডার্ক সার্কল্স–এর কারণ
চোখের নীচে কালো ছাপ পড়ার বেশ কয়েকটি কারণ তুলে ধরেছেন চিকিৎসকরা। তাঁদের মতে, এই সমস্যাটির মুখ্য কারণ বংশগত। যদি মা-বাবার এই সমস্যা থেকে থাকে, তাহলে সন্তানও এই সমস্যার শিকার হতে পারে। এছাড়া যদি বেশি কসমেটিক্স ব্যবহার করেন এবং সেই কসমেটিক্স যদি খারাপ মানের হয়, তাহলেও চোখের নীচে কালো ছোপ পড়তে পারে। সেইসঙ্গে, কাজের অতিরিক্ত চাপ, স্ট্রেস প্রভৃতি কারণেও চোখের সৌন্দর্য নষ্ট হতে পারে। রোদে বেশি ঘুরলেও হতে পারে ওই একইরকম সমস্যা।
চিকিৎসা পদ্ধতি
চোখের নীচে কালি দূর করার চিকিৎসা পদ্ধতির নাম ‘আন্ডার আই ট্রিটমেন্ট”। এটি খুব প্রচলিত থেরাপি। অ্যালোপ্যাথিক ওষুধ দিয়ে দূর করা হয় এই ডার্ক সার্কল্স। মলম এবং ট্যাবলেট দুই-ই থাকে এই ওষুধের তালিকায়। অন্তত ৬ মাস ব্যবহার করতে হয় এই মলম এবং সঙ্গে ওষুধও খেতে হয়। সবচেয়ে বড়ো কথা, এই থেরাপিতে কোনও সাইড এফেক্ট নেই অর্থাৎ কোনও ক্ষতি হয় না। দুই থেকে তিন হাজার টাকা পর্যন্ত খরচ হয় এই থেরাপিতে। তবে কোনও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শমতোই চিকিৎসা শুরু করা উচিত। চোখ যেহেতু শরীরের খুব গুরুত্বপূর্ণ অংশ, তাই ওষুধের দোকান থেকে ওষুধ কিনে নিজে কোনওরকম চিকিৎসার ঝুঁকি নেবেন না।
চোখের নীচের ত্বকের যত্ন
অনেকের চোখের নীচের ত্বকে ভাঁজ পড়তে দেখা যায় অল্প বয়সেই। এতে চোখের এবং এমনকী মুখমণ্ডলেরও সৌন্দর্য নষ্ট হয়। বয়সও একধাপে অনেক বেড়ে গিয়েছে মনে হয়। তবে এটা এখন আর তেমন সমস্যার নয়। রিংকল থেরাপির দ্বারা এই সমস্যা এখন খুব সহজেই দূর করা যায়। চোখের নীচের ত্বকে ভাঁজ দূর করার এই চিকিৎসা পদ্ধতিটিকে বলা হয় ‘নন এবিলেটিভ রেডিয়ো ফ্রিকোয়েন্সি”। তিন থেকে চারটি সিটিংয়ে ত্বক টানটান করে লাবণ্য ফিরিয়ে আনা যায়।
রূপটানের ঘরোয়া টোটকা
O বিয়ের আগে পার্লারে না যাওয়ার কথা যারা ভাবছেন, তারা বাড়িতেই শুরু করুন রূপচর্চা। একসময় ঘরোয়া পদ্ধতিতে রূপটানের নানা টোটকা আমাদের মা-ঠাকুমাদের কাছে মজুত থাকত। এতে সাইড এফেক্টস নেই, কোনও ক্ষতির সম্ভাবনা কম অথচ ত্বক হবে তরতাজা। জেনে নিন, কী সেই টোটকা।
O সকলের বাড়িতেই শ্বেতচন্দন থাকে৷ ত্বক উজ্জ্বল ও শীতল করতে শ্বেতচন্দন যে কতটা কার্যকর, তা অনেকেরই জানা। শুধু তাই নয়, ত্বকের অসমান রং, দাগছোপ কমাতেও চন্দন খুবই কাজের এবং সানট্যান কমাতে ও রোদে পোড়া ত্বক সারাতেও চন্দন সাহায্য করে
O হলুদের অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল গুণ রয়েছে। ফলে ব্রণ, এমনকী ব্রণর দাগছোপ কমাতেও হলুদ দারুণ কাজ করে। ত্বকের সার্বিক সুস্থতা বজায় রাখার পাশাপাশি ত্বক উজ্জ্বল রাখতেও সাহায্য করে হলুদ
O ত্বক ও চুলের স্বাস্থ্যের পক্ষে এর অসাধারণ উপকারিতার জন্য, সৌন্দর্যচর্চার অন্যতম প্রধান উপাদান ভাত সিদ্ধ করা জল বা মাড়। চিনের হুয়াংলুও ইয়াও গ্রামের ইয়ায়ো উপজাতির মেয়েরা তাদের অত্যন্ত ঘন, দীর্ঘ ও ঝলমলে চুলের জন্য বিখ্যাত। বলা হয়, ভাতের পাতলা মাড় দিয়ে নিয়মিত চুল ধোয়াটাই তাদের এই মনভোলানো চুলের গোপন রহস্য
O সৌন্দর্যচর্চায় ভাতের মাড়ের ব্যবহার ত্বকে দ্রুত বয়সের ছাপ পড়া থেকে রেহাই দেয়। এই তরলে থাকে অ্যান্টি অক্সিড্যান্টস, ভিটামিন সি, ফ্লাভোনয়েড ও ফেনোলিকের মতো উপাদান, যা ত্বকের সুস্থতার জন্য কাজ করে থাকে।
O অন্যদিকে চুল পড়া রোধ করতে, নতুন চুল গজাতে, চুলের প্রাকৃতিক আর্দ্রতা ধরে রাখতে এবং সেই সঙ্গে ঝলমলে চুল পেতেও কার্যকরী ভাতের মাড়। তবে খেয়াল রাখতে হবে যে, তরলটি যেন ঠান্ডা বা স্বাভাবিক তাপমাত্রায় থাকে
O সিদ্ধ ভাতের মাড় যেমন ব্যবহার করা যায়, তেমনই ১৫-২০ মিনিট চাল ভিজিয়ে রাখা জলও ব্যবহার করা যেতে পারে। এতে এই জলে চালের অনেক পুষ্টি উপাদান চলে আসে। এয়ারটাইট বোতলে ও রেফ্রিজারেটরে সংরক্ষণ করে চার থেকে পাঁচদিন পর্যন্ত ব্যবহার করা যায় এই তরল
O রোজ যদি বেসন দিয়ে মুখ পরিষ্কার করে নেওয়া যায় স্নানের সময়, তাহলে আর আলাদা করে ফেসিয়ালের দরকার পড়বে না এখন অনেক বাড়িতেই অ্যালোভেরা গাছ থাকে। অ্যালোভেরা জেলের সঙ্গে একটু মধু বা ভিটামিন ই-ট্যাবলট মিশিয়ে মুখে মাখুন। ময়েশ্চারাইজারের কাজ করবে
O জল খাবারে এখন ওটস খান অনেকেই। সেই ওটসের গুঁড়ো আর দইয়ের পেস্ট মুখে লাগাতে পারেন। ভালো স্ক্রাবারের কাজ করবে
O চুল সুন্দর রাখতে বাড়িতে ভালো করে অয়েল মাসাজ করুন। কিছুক্ষণ গরম তোয়ালে মাথায় লাগিয়ে রেখে শ্যাম্পু করে ফেলুন। ডিম ব্যবহার করতে পারেন কন্ডিশনার হিসেবে
O বাড়িতেই অনেক ধরনের জেল, কন্ডিশনার, শ্যাম্পু ব্যবহার করি আমরা। ফলে কিছুদিন স্পা না করালে কোনও সমস্যা হবে না ফেসিয়াল হেয়ার রিমুভ করতে বা আইব্রো ঠিক করতে ছোটো ওয়্যাক্স স্ট্রিপ বা সেনসিটিভ ট্রিমার ব্যবহার করতে পারেন ত্বক উজ্জ্বল করতে এক চা চামচ হলুদ গুঁড়োর সঙ্গে দুই চা চামচ পাতিলেবুর রস আর এক চা চামচ দই মাখুন। ১৫ মিনিট মেখে মুখ ধুয়ে ফেলুন
O স্ক্রাবের জন্য চাল আর তিল সারারাত জলে ভিজিয়ে রাখুন। মিক্সিতে পেস্ট করে মুখে মাখুন। দু’মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন টোনার হিসেবে ফলের রস বা ডাবের জল মুখে মাখুন। পাঁচ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন
O ময়েশ্চারাইজার হিসাবে অ্যালোভেরা জেল আর ভিটামিন ই দারুণ সুফল দেয়। মুখে মাখুন। ১৫ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন
জরুরি পরামর্শ
O পর্যাপ্ত জল পান করলে চোখের নীচের কালো দাগ কিছুটা আটকানো যায়
O চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনওরকম ওষুধ সেবন কিংবা মলম লাগানো উচিত নয়
O ত্বক ড্রাই নাকি অয়েলি— তা বিচার করে, সেইমতো ক্রিম ব্যবহার করা উচিত
O রোদে বেশি ঘোরাঘুরি করা উচিত নয়, এতে চোখের নীচে কালো দাগ পড়তে পারে। আর যদি বের হতেই হয়, তাহলে রোদচশমা এবং ছাতা ব্যবহার করা উচিত
O ত্বকে যদি লাবণ্য থাকে তাহলে অযথা প্রসাধন সামগ্রী ব্যবহার করে ত্বকের ক্ষতি করবেন না। কারণ অতিরিক্ত কসমেটিক্স ব্যবহারের ফলে ত্বকে রিংকল আসতে পারে
O রাতে অন্তত আট ঘণ্টা ঘুমাতে হবে। কারণ ঘুম কম হলে চোখের নীচে কালো দাগ পড়তে পারে
O স্ট্রেস এবং টেনশন কাটাতে হবে
O নিয়মিত শাকসবজি খেতে হবে।