আর্থিক লাভ পেতে, কমার্শিয়াল এবং রেসিডেনশিয়াল দুই ধরনের প্রপার্টিতেই টাকা ইনভেস্ট করা যেতে পারে। রেসিডেনশিয়াল প্রপার্টিতে সব শ্রেণির অর্থাৎ উচ্চবিত্ত থেকে শুরু করে মধ্যবিত্ত সকলেই বিনিয়োগে আগ্রহী হন কিন্তু কমার্শিয়াল প্রপার্টির ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের থেকে উচ্চবিত্ত শ্রেণিই বেশি আগ্রহ দেখিয়ে থাকেন। কিন্তু এখন ট্রেন্ড বদলাচ্ছে। সাধারণ মধ্যবিত্তরাও দ্রুত লাভের আশায় কর্মাশিয়াল প্রপার্টিতে বিনিয়োগ করছেন।

রিয়েল এস্টেট বিশেষজ্ঞদের মতে, এখন কমার্শিয়াল প্রপার্টির বাজার একটু খারাপের মুখে। যদি কোনও বিনিয়োগকারী প্রাইম লোকেশনে লাভজনক প্রপার্টি কিনতে সফল হন, তবে দীর্ঘ মেয়াদ শেষে বেশ মোটা অঙ্কের একটা লাভ তিনি অবশ্যই তুলতে পারবেন। এর মধ্যে প্রপার্টির দাম যদি অল্পবিস্তর কমেও যায়, তাহলেও বিনিয়োগের উপর তার কোনও প্রভাব পড়বে না। কিন্তু বিনিয়োগের জন্য যখন প্রাইম লোকেশনে প্রপার্টি কিনতে মনস্থির করবেন, তখন সেখানে প্রপার্টির চাহিদা কীরকম, কত ইনভেস্ট করতে গ্রাহকরা আগ্রহী ইত্যাদি বিষয়ে একটা রিসার্চ করে নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।

বিনিয়োগের কৌশল

কমার্শিয়াল প্রপার্টিতে বিনিয়োগ তিন ভাবে করা যায়। প্রথমত, কমার্শিয়াল বিল্ডিংটি যে ডেভেলপার, তার কাছ থেকে সরাসরি অফিস স্পেস ক্রয় করা যেতে পারে। এছাড়াও ডেভেলপার কোম্পানির শেয়ারও কেনা যায় অথবা এমন রিয়েল এস্টেট ফান্ড-এ বিনিয়োগ করা যেতে পারে, যেখানে থাকবে শুধু কমার্শিয়াল বিল্ডিং তৈরির উপরেই সম্পূর্ণ ফোকাস্ড। এই ধরনের বিনিয়োগে যেহেতু একটা মোটা অঙ্কের টাকার প্রয়োজন হয়, তাই অনেক ভেবেচিন্তে, খবর সংগ্রহ করে তবেই এই পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।

প্রাইম লোকেশনে ছোটো জায়গা হলেও সেটা লাভজনক হতে পারে। ভালো লোকেশনে গ্রাহক পাওয়ার কোনও অসুবিধা হয় না। নিজের ব্যাবসা থাকলে এই স্পেস নিজের প্রয়োজনেও ব্যবহার করা যেতে পারে। কমার্শিয়াল প্রপার্টিতে বিনিয়োগ করার সবথেকে বড়ো সুবিধা হল, মুদ্রাস্ফীতি এবং শেয়ার মার্কেটে ক্ষতির সম্ভাবনার হাত থেকে সুরক্ষিত রাখে। কমার্শিয়াল প্রপার্টি কেনার জন্য ব্যাংক, প্রপার্টির ট্রু ভ্যালুর ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ ঋণ দেয় এবং রেসিডেনশিয়াল প্রপার্টির ক্ষেত্রে ট্রু ভ্যালুর ৭০ থেকে ৮৫ শতাংশ ঋণ মঞ্জুর করে ব্যাংক। যে ঋণ নিচ্ছে তার শোধ করার ক্ষমতা কতটা, সেটা নির্ধারণ করেও ঋণ কতটা দেওয়া হবে, সেটা ঠিক করে ব্যাংক।

তবে, রেসিডেনশিয়াল প্রপার্টি কেনার পর ফেলে না রেখে, ভাড়া দিয়ে ঋণের টাকা শোধ করতে পারেন। দেখবেন, কয়েক বছর ভাড়া দিতে পারলেই লোনের টাকা শোধ হয়ে গিয়ে একসময় ওই প্রপার্টি ফ্রি-তে পাওয়া মনে হবে। কিন্তু এই ক্ষেত্রে একটা বিষয় মনে রাখতে হবে যে, আইনমাফিক মাত্র এগারো মাসের চুক্তিতে ভাড়াটে বসাতে হবে। সেইসঙ্গে, ভাড়া দেওয়ার আগে ভাড়াটের ব্যাকগ্রাউন্ড ভালো কিনা যাচাই করে নেবেন যতটা সম্ভব। সবচেয়ে ভালো হয় যদি কলেজ স্টুডেন্টদের কিংবা সরকারি চাকরিজীবীদের ভাড়া দিতে পারেন। তবে যাকেই ভাড়া দেবেন, তার থেকে রেসিডেনশিয়াল প্রুফ নেবেন এবং রেফারেন্স পার্সন-কে উইটনেস হিসাবে রাখতে ভুলবেন না।

বাজার বুঝে নেওয়া জরুরি

প্রপার্টিতে বিনিয়োগ কিন্তু কোনও সহজ কাজ নয়। টাকা ইনভেস্ট করার জন্য যে প্রপার্টি বেছে নিচ্ছেন, সেটা আদৌ কোনও লাভের মুখ দেখাবে কিনা তা মার্কেট রিসার্চ করে তবেই বিনিয়োগ করা উচিত। প্রপার্টি-টি কীরকম জায়গায় অবস্থিত, তার চাহিদা কীরকম, সেখানে কী কী অসুবিধা রয়েছে, সবকিছুই ভালো ভাবে খোঁজখবর নেওয়া প্রয়োজন। ভালো করে খোঁজ না নিয়ে প্রপার্টির ডিল করলে এমনও হতে পারে যে, সেই প্রপার্টির চাহিদা বাড়তে প্রচুর সময় পার হয়ে যাবে অথবা ওই প্রপার্টি থেকে লাভ ওঠাতে গেলে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হবে। প্রত্যেক এরিয়ার কমার্শিয়াল প্রপার্টির দাম সবসময় আলাদা আলাদা হয়। আর একটা বিষয়— বিনিয়োগকারীকে মাথায় রাখতে হবে যে, অর্থব্যবস্থা, জব মার্কেট এবং জনসংখ্যা বৃদ্ধির স্থিতি, সবকিছু প্রপার্টি বাজারের অনুকূলে রয়েছে কিনা।

আইনি বিষয়

তাড়াহুড়ো করে প্রপার্টিতে বিনিয়োগ করা কখনও-ই উচিত নয়। বিনিয়োগের আগে প্রপার্টির বিল্ডার সম্পর্কে পুরো খোঁজখবর নিয়ে নেওয়া উচিত। তার পুরোনো রেকর্ড ঘাঁটা উচিত। প্রপার্টিটা নিয়ে কোনওরকম বিবাদ রয়েছে কিনা সেটাও ভিতরে ভিতরে জানার চেষ্টা করতে হবে। এর জন্য প্রপার্টির সঙ্গে যুক্ত প্রত্যেকটি কাগজপত্র আইনগত ভাবে সঠিক আছে কিনা, সেটা নিজেকে দেখে নিতে হবে।

এছাড়াও, প্রপার্টি-র কন্ডিশন, প্রপার্টি ট্যাক্স, বিল্ডিং ইনশিয়োরেন্স ইত্যাদি পরীক্ষা করে নেওয়া দরকার। অফিস স্পেস- এর ক্ষেত্রে আর্থিক লাভের সম্ভাবনা কতটা রয়েছে, তাও ভালো করে খতিয়ে দেখা দরকার। এইসব তথ্য পরিষ্কার করে জেনে নেওয়ার জন্য পরামর্শ নিতে পারেন কোনও ভালো উকিল এবং রিয়েল এস্টেট কনসালট্যান্ট-এর সঙ্গে।

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...