মেয়েরা এখন একাই পথ চলে, একাই সিদ্ধান্ত নেয়। পেশাগত কারণে ঘুরে বেড়ায় দেশে-বিদেশে। কাজ করে নাইট শিফটেও। আর্থিক ভাবেও স্বনির্ভর। একশো ভাগ না হলেও, সিংহভাগ মেয়েরাই এখন স্বনির্ভর, স্বাধীনচেতা এবং সচেতন। ‘জলে নামব অথচ গা ভেজাব না’ —এমন সনাতন মানসিকতাকেও তাই ঝেড়ে ফেলেছে আজকের মেয়েরা। সেক্স সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণাও এখন মেয়েদের রয়েছে। পুরুষের কাছে কীভাবে নিজেকে আকর্ষণীয় রূপে তুলে ধরতে হয়, তাও জানে মেয়েরা। সঠিক গর্ভনিরোধক কৌশলও রপ্ত করেছে তারা। তাই, অনেক মেয়ের হ্যান্ডব্যাগে এখন সাজগোজের উপকরণ ছাড়াও থাকে গর্ভনিরোধক সামগ্রী। অতএব, বিয়ের আগে প্রেমকে চরম উপভোগ্য করে তুলতে, মেয়েরা এখন অনেক সাহসী সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
আসলে, সমীক্ষা করলে হয়তো দেখা যাবে, আজকের যুগের প্রায় সিংহভাগ মেয়েদেরই বিয়ের আগে আচমকা এই সম্ভোগের অভিজ্ঞতা রয়েছে। তবে দু’দশক আগেও হয়তো ‘অগ্নিপরীক্ষা’ দিতে হতো ভারতীয় মেয়েদের। অর্থাৎ ফুলশয্যার রাতে নারীকে দিতে হতো সতীত্বের প্রমাণ। বিয়ের আগে যৌন স্বাধীনতা ভোগ করার অধিকারী ছিল একমাত্র পুরুষরাই। নারী শুধু তার শরীর ও মনকে সযত্নে তুলে রাখত স্বামীর জন্য।
বিয়ের আগে মেয়েদের অন্য কারওর সঙ্গে শারীরিক মিলনকে ‘পাপ কাজ’ বলে মনে করা হতো। আসলে এমনই সামাজিক অনুশাসনকে মেনে নিতে বাধ্য করা হতো মেয়েদের। কিন্তু সত্যিই কি সব মেয়েরাই ওই সামাজিক অনুশাসন মানত? নাকি বিয়ের আগেই লুকিয়ে চুরিয়ে অন্য প্রেমিকের সঙ্গে এক- আধবার শরীরী মিলন ঘটিয়ে ফেলত কেউ কেউ? হয়তো অনেক কিছুই ঘটত কিন্তু সামাজিক চাপের কথা ভেবে কেউ স্বীকার করত না কিংবা ওই ঘটনার কথা প্রকাশ্যে আসত না। তবে সময় বদলেছে।
এখন মোবাইল, ইন্টারনেট-এর যুগ। মেয়েরা এখন সামাজিক অনুশাসনের চোখ রাঙানি-কে ভয় না করে, ইচ্ছে মতো ইচ্ছেপূরণ করে। বিবাহ-পূর্ব সম্পর্কে শারীরিক ঘনিষ্ঠতার সাহস দেখাতে পারে এবং তা স্বামীর কাছে নির্দ্বিধায় বলতেও পারে। ছেলেরাও এখন এ ব্যাপারে অনেকটাই উদার। আসলে এই মানসিকতার বদল ঘটেছে খুবই সংগত কারণে।
বয়ঃসন্ধিকালে যুবক-যুবতির শরীরে যে প্রবল যৌন ইচ্ছে তৈরি হয়, তা পূরণের জন্য পরস্পর উন্মুখ হয়ে থাকে। ফলে, যুবক-যুবতিরা পরস্পরের কাছাকাছি এলে, কোনও এক ইমোশনাল মুহূর্তে শরীরী মিলন ঘটে যেতেই পারে।
দু’দশক আগেও হয়তো এই সাহস দেখাতে পারত না অনেক মেয়ে, কিন্তু এখন পারে। তাই বর্তমান সামাজিক প্রেক্ষাপটে বিবাহ-পূর্ব শারীরিক মিলনের ঘটনা খুব অস্বাভাবিক কিছু নয় বলেই মনে করে তরুণ প্রজন্ম।
ফিলমি রিফ্লেকশন
কেউ বাড়িতে নেই। পরিবারের সবাই আত্মীয়ের বাড়ি বেড়াতে গেছেন। তাই অসীমা বাড়িতে একা রয়েছে। এমন সময় বাড়িতে এল অসীমার প্রেমিক ভিকি। স্মার্ট ছেলে। দেখা হওয়া মাত্রই ভিকি তার বলিষ্ঠ বাহুযুগল দিয়ে কাছে টেনে নিল অসীমা-কে। শুধু তাই নয়, ভিকি যখন অসীমার কাছ থেকে জানল বাড়িতে কেউ নেই, তখন তার সে কী আনন্দ! ‘ঘরমে কোই নেহি হ্যায়! থোড়াই না লুডো খেলেঙ্গে, চোলে…’ বলেই অসীমাকে নিয়ে সোজা বিছানায়। অসীমাও ভিকিকে বাধা দেয়নি কিংবা মনে মনে হয়তো এমনটাই চাইছিল। কারণ অসীমা তখন ভিকির প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছিল। সুজিত সরকার পরিচালিত ‘ভিকি ডোনার’ ছবির এমন ঘটনা হয়তো অনেকের জীবনেই ঘটেছে কিংবা ঘটতেও পারে।
নারীর স্বাধীনতা, প্রি-ম্যারিটাল যৌন ইচ্ছে পূরণ প্রভৃতি বিষয় নিয়ে আজকাল প্রচুর ছবি তৈরি হচ্ছে। এইসব ছবি দেখে উদ্বুদ্ধও হচ্ছে আজকের মেয়েরা। তাছাড়া, মেয়েরা এখন মুঠোফোনে, ল্যাপটপ-এ কিংবা কম্পিউটার-এর মাধ্যমেও সহজেই ‘নীল ছবি’ দেখছে। আর এরই প্রতিফলন ঘটছে বাস্তব জীবনে। ফলে মনের মধ্যে যে প্রবল যৌন ইচ্ছে তৈরি হচ্ছে, তা মিটিয়ে নিচ্ছে প্রেমপর্বেই, অর্থাৎ বিয়ের আগেই।
চাহিদা পূরণ
পুরুষের মতো নারী শরীরেও যৌন চাহিদা তৈরি হয় খুব স্বাভাবিক ভাবে। আর খুব সহজ ভাবেই এই যৌন চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম হয়েছে আজকের মেয়েরা। তাই কোনও ইমোশনাল মুহূর্তে যদি শারীরিক মিলন ঘটেও থাকে, তাহলে ‘ভুল করেছি ” বলে আক্ষেপ করে না আজকের মেয়েরা। আর যার সঙ্গে সেই শারীরিক মিলন ঘটেছিল, অনিবার্য কারণে যদি তার সঙ্গে সম্পর্ক ভেঙেও যায়, তাহলেও এখন আর মেয়েদের জীবন ‘বৃথা’ হয়ে যায় না।
সময় বয়ে চলে, পুরোনো সম্পর্কের সুখস্মৃতি সঙ্গে রেখে আজকের মেয়েরা গড়ে তোলে নতুন সম্পর্ক। বিয়ের আগেই হোক কিংবা পরে, প্রেমিকই হোক কিংবা হবু স্বামী, শরীর চাইলে যৌন সম্পর্ক যখন খুশি, যার সঙ্গে খুশি স্থাপন করতে এই প্রজন্মের মেয়েরা বেশ দ্বিধাহীন।
সতীচ্ছদ প্রসঙ্গে
সনাতন রীতি অনুযায়ী, একমাত্র স্বামীরাই পারে মেয়েদের কুমারীত্ব হরণ করতে। অর্থাৎ নববধূ স্বামীর সঙ্গেই প্রথমবার সেক্স করছে কিনা, তা প্রমাণিত হতো ফুলশয্যার রাতেই। আর এই কুমারীত্ব প্রমাণ করত ‘সতীচ্ছদ’ (স্ত্রী যোনিতে পাতলা পর্দাবিশেষ)। অর্থাৎ সতীচ্ছদ অক্ষত রাখা বাধ্যতামূলক ছিল সনাতন রীতি অনুযায়ী। অবশ্য যৌনসম্পর্ক ছাড়াও যে সতীচ্ছদ ছিঁড়ে (সাইক্লিং কিংবা আঘাতজনিত কারণে) যেতে পারে, এই জ্ঞানটুকু সবার নেই। তাই কিছু না করেও, ‘ইউড্’ শব্দটি অজ্ঞ স্বামীর মুখ থেকে শুনতে হয় অনেক মেয়েকেই।
তবে আজকের মেয়েরা বিয়ের আগে সেক্স-এর অভিজ্ঞতা নেওয়ার পরও, বিবাহিত জীবনে ‘ইউজ্ড্’ বলে গিলটি ফিল করে না। তাছাড়া, একটা ছোট্ট সার্জারির মাধ্যমে (হাইমেনোপ্লাস্টি), যৌনাঙ্গে কৃত্রিম সতীচ্ছদ তৈরি করে ‘অজ্ঞ’ স্বামীকে যে খুশি করা যায়, এই বিষয়টিও এখন অনেক মেয়েই জানে। অতএব, শরীর, মন চাইলে বিবাহ-পূর্ব সেক্স-এ সমস্যা নেই, অন্তত এমনটাই মনে করে তরুণ প্রজন্ম।
ফিল গুড ফ্যাক্টর
একটা সময় ছিল যখন মেয়েরা নিজের ইচ্ছের কথা মুখ ফুটে বলতে পারত না পুরুষ বন্ধুটিকে। কিন্তু এখন বেশিরভাগ মেয়েই মনের ইচ্ছে প্রকাশ করতে পারে। শুধু তাই নয়, নিজের ইচ্ছেকে প্রাধান্য দিয়ে সম্ভোগের সময় অ্যাক্টিভ রোল-ও প্লে করতে পারে আজকের মেয়েরা। অর্থাৎ শুধু পুরুষরাই নয়, মেয়েরাও এখন চরম তৃপ্তিলাভের ব্যবস্থা করে নিতে পারে নিজেরাই।
সতর্কতা
সম্পর্ক তৈরি করার ক্ষেত্রে মেয়েরা এখন অনেক বেশি সচেতন। কার সঙ্গে সম্পর্ক করবে, কতটা এগোবে, মানসিক সম্পর্ক থেকে শারীরিক সম্পর্কে যাবে কিনা এসব নিয়ে মেয়েরা এখন উপযুক্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা রাখে। সেইসঙ্গে নিজের ইচ্ছেমতো সুরক্ষিত যৌনতার জন্য মেডিকেল প্রিকশনস সর্বদা সঙ্গে রাখে। তবে শুধু আগাম প্রিকশনস-ই নয়, ইমোশনালি হঠাৎ যদি প্রিকশনস ছাড়াও কারও সঙ্গে দৈহিক ঘনিষ্ঠতা হয়েও যায়, তাহলেও ইমারজেন্সি কন্ট্রাসেপটিভ পিল ব্যবহার করে চাপমুক্ত হতে পারার সহজ ফর্মুলা এখন তাদের হাতের মুঠোয়।