বিশ্বজুড়ে বহু পরীক্ষা-নিরীক্ষায় দেখা গেছে যে, যেসব বাচ্চারা রাত্রে তাড়াতাড়ি ঘুমোয় এবং তাড়াতাড়ি সকালে ওঠে, তারা অনেক বেশি সজাগ, স্মার্ট হয় এবং মোটা হওয়ার প্রবণতা কম হয়। যত দিন যাচ্ছে ততই বাচ্চাদের রাত অবধি জাগিয়ে রাখার রাস্তা প্রশস্ত হচ্ছে। ওদের হাতে এখন আছে রাত জাগার নানারকম সরঞ্জাম। টেলিভিশন, ইন্টারনেট, ঘণ্টার পর ঘণ্টা ফোনের মাধ্যমে কথা বলা, ভিডিও গেমস ইত্যাদিতে আসক্তি, বাচ্চাদের চোখে ঘুমের পরিমাণ মারাত্মক ভাবে কমিয়ে দিচ্ছে।
আসলে, শহরে, মফস্সলে এখন ট্রেন্ড হচ্ছে, বাড়ির অভিভাবকেরা সকলেই চাকুরিজীবী। তাই তাদের বাড়ি ফিরতে ফিরতে সাতটা, আটটা কিংবা ন’টা বেজে যায়। সুতরাং বাড়ি ফিরে বাচ্চাদের সঙ্গে কথা বলে, , তাদের প্রয়োজনীয় পড়াশোনা করিয়ে, খাইয়ে বিছানায় ঘুমোতে পাঠাতে পাঠাতে ঘড়ির কাঁটা গভীর রাত্রি ছুই ছুই। সকালে তাড়াতাড়ি উঠেই আবার স্কুল, অফিস বেরোবার তাড়া। সুতরাং চাপ সৃষ্টি হয় ঘুমের সময়টার উপরেই। তাড়াতাড়ি শোওয়াতে গেলে বাচ্চারা হয়তো প্রতিবাদ করতে পারে, চ্যাঁচাতে পারে। কিন্তু মা-বাবার উচিত সপ্তাহের পাঁচ-ছ’টা দিন রাত্রে একটাই সময় ঠিক করে তাড়াতাড়ি বিছানায় শুইয়ে দেওয়া বাচ্চাদের। খেয়ালও রাখতে হবে তারা যেন জেগে না থেকে সঙ্গে সঙ্গে ঘুমিয়ে পড়ে। তাহলেই ঘুমটা ওদের পর্যাপ্ত হবে। তবে সপ্তাহে একটা দিন ওদের কিছুটা ছাড় দেওয়া যেতেই পারে এবং সেদিনটা একটু বিলম্বে ঘুমোতে যাওয়ার অনুমতি দিতেই পারেন।
ঘুমোনোটাকে আনন্দদায়ক করে তুলুন
তিনটে জিনিস খেয়াল রাখুন। বাচ্চার ঘুমোবার জায়গা, ঘুমোবার সময় এবং সকালে ওঠার সময়। বাচ্চারা যখন ঘুমোয়, তখন মা-বাবা আশপাশে থাকলে ওরা নিজেদের খুব নিরাপদ মনে করে। তাই ওদের রাত্রে শোয়াবার একটা প্যাটার্ন ঠিক করে দিন। তাড়াতাড়ি নির্দিষ্ট সময়ে বাচ্চাকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে ওর কাছে ১৫-২০ মিনিট থাকুন। সম্ভব হলে ওই সময়টাতে ওকে গল্প বলুন অথবা গল্প পড়ে শোনান। মাথায় ধীরে ধীরে হাত বুলিয়ে দিন এবং ঘুমিয়ে পড়লে নিশ্চিত হয়ে ঘরের আলো নিভিয়ে দরজা ভেজিয়ে বেরিয়ে আসুন।
বদভ্যাসগুলি মেনে নেবেন না
টেলিভিশন, কম্পিউটার, মোবাইল ইত্যাদি যদি বাচ্চাদের নেশার বস্তু হয়ে ওঠে, তাহলে সেগুলির ব্যবহার কমিয়ে দেওয়া আপনার দায়িত্ব। অন্য বদভ্যাসেও যেন সে অভ্যস্ত না হয়ে পড়ে, তার খেয়ালও আপনাদেরই রাখতে হবে। যেমন— স্ন্যাক্স, ক্যাফেন, ফাস্টফুড ইত্যাদি খাওয়া থেকে আপনার সন্তানকে বিরত রাখতে হবে।
নিয়ম মেনে চলতে শেখান বাচ্চাদের
বাচ্চাকে যদি একা শোয়াতে চান, তাহলে হঠাৎ করে তাদের আলাদা ঘরে ব্যবস্থা না করে, ধীরে ধীরে তাদের অভ্যাস গড়ে তুলতে সাহায্য করুন। প্রথমে নিজের পাশে আলাদা একটি খাটে ওদের শোয়ানোর ব্যবস্থা করুন। একটা নাইট-লাইট জ্বালিয়ে রাখুন এবং তার মাথার কাছে একটা অ্যালার্ম বেল রাখুন, যাতে রাত্রে ভয় পেলে তারা ওটা বাজাতে পারে। ধীরে ধীরে এভাবে অভ্যাস হলে আলাদা ঘরে ওকে শিফট করতে পারেন। ঘরটি সম্পূর্ণ বাচ্চাকে ছেড়ে দিন, যাতে নিজের জিনিসপত্র সে নিজের ঘরে রাখতে পারে এবং একা যখন থাকতে চাইবে, তাকে একা থাকার সেই অধিকারটুকু দিন। কিন্তু দু’জন শিশু একটা ঘরে ঘুমোতে গেলে সাধারণত দু’জনেরই ইচ্ছে হবে একে অপরকে বিরক্ত করার এবং তাতে ওদের ঘুমেরও ব্যাঘাত ঘটবে। ঘুমোতে যাওয়ার আগে
রুটিনের মধ্যে, শোওয়ার আগে ব্রাশ করা, হাত-পা-মুখ ভালো করে ধুয়ে বিছানায় ওঠা, গল্পের বই পড়া ইত্যাদি অভ্যাসগুলি বাচ্চাদের করাতে পারেন।
কিছু সতর্কতা
রাতে ঘুম থেকে উঠে বাথরুম-এ যেতে পারে বাচ্চারা। তাই বাড়ির জিনিসপত্র এমন ভাবে গুছিয়ে রাখুন, যাতে ঘুম চোখে বাথরুম-এ যাওয়ার পথে কোনওরকম আঘাত না পায়। ছোটো বাচ্চা হলে ধীরে ধীরে হাত ধরে ওকে বিছানায় শুইয়ে দিন প্রয়োজনে।
রিল্যাক্স রাখার টেকনিক
যেসব বাচ্চাদের অমনোযোগী হওয়ার সমস্যা থাকে, তারা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে প্রচণ্ড হাইপারঅ্যাক্টিভ হয়, ফলে ঘুমেরও প্রবলেম হয় তাদের। চেষ্টা করুন সন্তানকে মেডিটেশন, যোগা ইত্যাদিতে ব্যস্ত রাখতে। এগুলি রিল্যাক্স থাকার নানান উপায়। এছাড়াও রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে খাওয়ার অন্তত একঘণ্টা পরে) ৩০ মিনিটের হালকা ব্যায়াম করাতে পারেন বাচ্চাদের। এর ফলে, ব্যায়াম শেষে সে ক্লান্ত হয়ে পড়বে এবং ভালো ঘুম হবে। বিকেলেও কিছুটা সময় খেলার সুযোগ করে দেবেন বাচ্চাদের, যাতে রাতে ঘুম ভালো হয়।