মাদাগাস্কার থেকে প্রায় ৮০০ কিলোমিটার পূর্বে এই দ্বীপটির অবস্থান। দ্বীপটি প্রবাল বেষ্টিত। ১৭২১ সালে ফরাসিরা এবং ১৮১০ সাল থেকে ১৯৬৮ সাল পর্যন্ত ব্রিটিশরা এখানে উপনিবেশ গড়ে তোলে।

মরিশাসে বসবাসকারী বেশির ভাগ মানুষই ভারতীয় বংশোদ্ভূত। প্রায় এক শতাব্দী আগে এদের পূর্বপুরুষরা ভারত থেকে তৎকালীন ব্রিটিশ উপনিবেশ মরিশাসে আখের চাষ করতে আসে। তারপর তারা পাকাপাকি ভাবেই মরিশাসে থেকে যায়। শুধুমাত্র অর্থ উপার্জন নয়, মরিশাসের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, সমুদ্রসৈকতের সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্ত যে-কোনও পর্যটককে মুগ্ধ করবেই। তাছাড়া, অবাঙালি ভারতীয়দের ক্ষেত্রে ভাষাও কোনও অন্তরায় নয়। এখানে স্বচ্ছন্দে হিন্দিতে কথা বলে স্বদেশের আনন্দ উপভোগ করা যায়। এখানে বাঙালিও আছেন অনেক। তাছাড়া, ভারতীয় খাবার যেমন এখানে পাওয়া যায়, তেমনই দেখা যায় ভারতীয় সিনেমা। গান শুনতে চান? হ্যাঁ, শুনতে পাবেন ভারতীয় গানও।

মরিশাসের মূল ভাষা হল মরিশিয়ান ক্রেওল। তবে নানা ভাষা নানা মতের মতো এখানে হিন্দি, ইংরেজি, ফরাসি, তামিল, উর্দু, ভোজপুরি, বাংলা ভাষাও চলে। তাইতো এত সুন্দর ও সমৃদ্ধ মরিশাস সবারই ভালো লাগে৷

কীভাবে যাবেন?

ভারত থেকে মরিশাস যাওয়ার দ্রুততম উপায় হল বিমান। দিল্লির ইন্দিরা গান্ধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে মরিশাস যাওয়া যায়। দিল্লি থেকে মরিশাসের দূরত্ব প্রায় ৩৬২২ মাইল। বিমানে সময় লাগে ৬ থেকে ৭ ঘণ্টা। ভারতের অন্যান্য শহর থেকেও মরিশাস যাওয়া যায়। যেমন— মুম্বাই, চেন্নাই, বেঙ্গালুরু প্রভৃতি।

মরিশাসের প্রধান বিমানবন্দরের নাম – স্যার সিউসাগুর রামগুলাম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। এটি রাজধানী পোর্ট লুইস থেকে ৪৮ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এয়ার ইন্ডিয়ার ফ্লাইট মরিশাস যায়। তাছাড়া, এয়ার সেশেলস, এমিরেটসের মাধ্যমে ভারতের অনেক শহর থেকে সংযোগকারী ফ্লাইট ধরা যায়।

ফ্লাইটের বিকল্প হিসেবে সমুদ্রপথেও মরিশাস যাওয়া যায়। সেজন্য রয়েছে বিলাসবহুল ক্রুজ। সেক্ষেত্রে মুম্বাই বন্দর থেকে মরিশাস যেতে সময় লাগবে প্রায় ১৩ দিন। চেন্নাই বন্দর থেকে মরিশাস সমুদ্রে ভ্রমণ করতে লাগবে প্রায় ১২ দিন।

মরিশাস এক আশ্চর্য দ্বীপ। দর্শনীয় স্থানও আছে অনেক। পরিবহণ ব্যবস্থারও অনেক সুবিধা আছে। অনেক বাস রয়েছে যা যাত্রীদের সহজে গন্তব্যস্থলে পৌঁছে দেয়। যাত্রীরা পছন্দমতো বেছে নিতে পারেন স্ট্যান্ডার্ড বাস বা এক্সপ্রেস বাস। এক্সপ্রেস বাসগুলির স্টপেজ কম এবং বেশিরভাগ বাসই শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। ট্যাক্সিও পাওয়া যায়। বিশেষকরে বিমানবন্দরের বাইরে প্রচুর ট্যাক্সি অপেক্ষারত থাকে। বলাবাহুল্য, ট্যাক্সি এখানে অপেক্ষাকৃত বেশি ব্যয়বহুল।

মরিশাস ভ্রমণের জন্য প্যাকেজ ট্যুরেরও ব্যবস্থা আছে। কেউ একা বা সঙ্গী সংখ্যা কম হলে প্যাকেজ ট্যুরে বিভিন্ন জায়গা ভ্রমণ করা যেতেই পারে। আবার এখানে কিছু কিছু কোম্পানি বা সংস্থা স্কুটার, সাইকেল, গাড়ি ভাড়া দেন ন্যায্য মূল্যে। তাছাড়া, ট্যাক্সি তো আছেই।

কেউ যদি মনে করেন আকাশপথে মরিশাস ঘুরে দেখবেন, তারও ব্যবস্থা আছে। সেজন্য পাওয়া যায় হেলিকপ্টার। তবে হেলিকপ্টার পেতে গেলে যোগাযোগ করতে হবে— এয়ার মরিশাস বা সেখানকার পুলিশ বাহিনীর সঙ্গে।

আবার যাদের বৈধ ড্রাইভিং লাইসেন্স রয়েছে, তারা ইচ্ছা করলে গাড়ি বা স্কুটার ভাড়া করে নিজেরাই তা চালাতে পারেন। কারণ, মরিশাস সরকার বিদেশি লাইসেন্সে আপত্তি করে না। মরিশাস ছোটো দ্বীপ হলেও, ভ্রমণের পক্ষে আদর্শ। কারণ, আপনি যেখানেই যেতে চান না কেন, যানবাহনের কোনও অভাব হবে না। ভাড়ার জন্য প্রচুর ক্যাব, ট্যাক্সি ইত্যাদি যানবাহন আছে, এমনকী ড্রাইভারও ভাড়া পাওয়া যায়।

যদি কেউ জলপথে যেতে চান বা নৌকাবিহার করতে চান তো তারও ব্যবস্থা আছে। এখানে মোটরচালিত ছোটো নৌকা ভাড়া পাওয়া যায়। এছাড়া পাওয়া যাবে ক্যাটামারান এবং স্পিড বোট।

বড়ো গ্রুপে গেলে বাস ভাড়া নেওয়া যেতে পারে। সেইসব বাসে করে শহর এবং গ্রামীণ এলাকাগুলিও ঘুরে দেখা যায়। মরিশাসে প্রচুর হোটেল এবং রিসর্ট আছে। হোটেল বা রিসর্টের বাইরে অপেক্ষায় থাকে প্রচুর ট্যাক্সি। অনেক জায়গায় মিনিবাসও ভাড়ায় পাওয়া যায়। যা দ্বীপের ভ্রমণের উপযোগী গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলি সাদরে ঘুরিয়ে আনতে পারে।

মরিশাস যেতে গেলে ট্যুরিস্টদের জন্য ভিসার কোনও খরচ লাগে না। ভারতীয় নাগরিকদের জন্য On Arrival ভিসা থাকলেই চলবে। আগমনের দিন থেকে ৬০ দিন পর্যন্ত থাকা যায়। তবে ৬০ দিনের বেশি সময় থাকতে চাইলে ইমিগ্রেশন ডিপার্টমেন্টের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা সে ব্যবস্থা করে দেন। ভারতীয় নাগরিকদের কাছে বৈধ পাসপোর্ট, রিটার্ন টিকিট, আনুমানিক খরচের টাকা, কোথায় গিয়ে থাকবেন সেই বিবরণ থাকলেই চলবে।

কেউ মাল্টিপল এন্ট্রি ভিসা নিতে চাইলে তারও ব্যবস্থা আছে। সেই প্রক্রিয়ার জন্য আনুমানিক ৫ থেকে ৭টি ওয়ার্কিং ডে লাগতে পারে। মরিশাস বেড়াতে যাওয়ার সেরা সময় হল এপ্রিল থেকে জুন মাস, আর সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর মাস।

সব শেষে জানিয়ে রাখি, বিশেষকরে ভারতীয় পর্যটকদের কাছে এই দ্বীপ রাষ্ট্রটি সুন্দর, মনোরম, সমৃদ্ধ দ্বিতীয় স্বদেশ। তাইতো প্রত্যেক বছর লক্ষ লক্ষ মানুষ মরিশাস ভ্রমণে গিয়ে অনুভব করেন স্বাচ্ছন্দ্য।

(সমাপ্ত)

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...