বেশ কিছুদিন আগের কথা। আমার এক মাসতুতো দাদার ছেলে বিয়ের পর সস্ত্রীক মরিশাস গিয়েছিল হনিমুনে। মরিশাস ঘুরে আসার পর একদিন চায়ের আড্ডায় বসে তাদের কাছ থেকে অনেক কথাই শুনেছিলাম মরিশাস সম্বন্ধে। সেখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ভ্রমণপিপাসুদের মুগ্ধ করে। প্রকৃতির রঙ্গশালায় নব-নব রূপের প্রাচুর্য, ফুল-ফলের নানা রঙের অনুপম বৈচিত্র্য যেন অনেক দেশের থেকে স্বতন্ত্র।
যদিও দেশ-বিদেশের নানান জায়গায় ঘুরে বেড়িয়েছি আমি, তবুও ওদের মুখে মরিশাসের অপূর্ব কাহিনি শুনে কেন জানি না আমার মনের মধ্যে একটা সুপ্ত বাসনা জেগে উঠেছিল। মরিশাসের নয়নাভিরাম সৌন্দর্য থেকে আমি-ই বা বঞ্চিত হই কেন?
সুযোগ এল হাতের মুঠোয়। কলকাতার এক অভিজাত ক্লাবের সদস্য হিসেবে একদিন পৌঁছে গেলাম মরিশাস। মরিশাসের আয়তন ২০৪০ বর্গ কিলোমিটার। বিশ্বের ক্ষুদ্রতম দেশগুলির মধ্যে এটিও একটি। মাদাগাস্কারের পূর্ব দিকে ভারত মহাসাগরের মাঝে এই দ্বীপদেশের অবস্থান।
মরিশাসের রাজধানীর নাম পোর্ট লুইস। এটি একটি উন্নতমানের সংস্কৃতি সমৃদ্ধ শহর। বিভিন্ন ধরনের বুটিকের দেখা মিলবে এখানে এলে। দেখতে পাবেন নানারকমের রেস্তোরাঁ, পাবেন সুস্বাদু খাবার। শপিং এবং বিনোদনেরও প্রচুর জায়গা রয়েছে এখানে। ব্লু পেনি নামের একটি মিউজিয়াম রয়েছে, যা প্রত্যেক ভ্রমণার্থীদের কাছে অতি প্রিয় দর্শনীয় স্থান। এখানকার আপ্রবাসী ঘাট দেখতে ভুলবেন না কেউ। এটি ইউনেস্কোর একটি ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটও বটে।
নয়টি জেলা নিয়ে গঠিত এই মরিশাস দ্বীপ। এগুলি হল – গ্র্যান্ড পোর্ট, ব্ল্যাক রিভার, ফ্ল্যাক, প্যম্পেলমাউসেস, মোকা, পোর্ট লুইস, প্লেইনস, উইলহেমস, সাভান ও রিভিয়েরে ডু রেম্পার্ট।
মরিশাস দ্বীপটিকে এক সময় আগ্নেয়গিরির দ্বীপ বলা হতো। সেটা বহু বছর আগের কথা। এখন আর আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত দেখা যায় না। স্থানীয় মানুষদের কেউ কেউ বলেন— এই আগ্নেয়গিরিটি যেন কুম্ভকর্ণের বড়ো ভাই বা তুতো ভাই। ঘুমিয়ে পড়েছে, আর কোনওদিন জাগবে না। দ্বীপের অনেকটা অংশ পাহাড় দিয়ে ঘেরা। কিছু অপেক্ষাকৃত নিচু, কিছু উঁচু পাহাড়। পাহাড়ের নীচে রয়েছে তৃণভূমি। যাইহোক, নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক দৃশ্য পর্যটকদের মনে আনন্দের ঢেউ তুলবেই।