কোনও মানুষের জীবন যদি লাইনচ্যুত হয়, তখন ঘটে যেতে পারে মর্মান্তিক কোনও ঘটনা। যেমন, দিল্লিতে ৪২ বছর বয়সি এক মহিলা তার ৫ বছর বয়সি এবং ১৮ বছর বয়সি দুই মেয়েকে নিয়ে আত্মহত্যা করেন। প্রকাশিত তথ্য অনুসারে, ওই মহিলার প্রথম বিয়ে ভেঙে যাওয়ার পর, অনেক পুরুষের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি হয়। তিনি দিল্লির মোলারবন্দ এলাকায় এক কক্ষের ফ্ল্যাটে থাকতেন। লিভ-ইন পার্টনারকে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছিল ওই মহিলার বিরুদ্ধে। যার কারণে তাকে এবং তার ২৫ বছর বয়সি ছেলেকে জেলে যেতে হয়েছিল। অবশ্য একসময় মা-ছেলে জামিন পেয়ে যান কিন্তু জেল থেকে ফেরার পর আর কোনও চাকরি করতে পারেন না ওই মহিলা। এরপর ওই মহিলার আরও এক লিভ-ইন পার্টনারও হঠাৎ মারা যান। আবার সন্দেহ দানা বাঁধে। হতাশ মহিলা তার দুই মেয়েকে নিয়ে সম্প্রতি আত্মহত্যা করেছেন। এখন প্রশ্ন হল, কেন এমন মর্মান্তিক পরিস্থিতির শিকার হন কিছু মানুষ ?
২৫ বছরের ছেলে, ১৮ বছরের বড়ো মেয়ে এবং ৫ বছরের ছোটো মেয়েকে নিয়ে ভাড়ায় এক ঘরের ফ্ল্যাট-এ থাকা, মহিলার একাধিক সম্পর্ক, লিভ-ইন পার্টনার-এর মৃত্যু— সব মিলে রহস্য ঘনীভূত হয়। কিন্তু কেন?
এখন এই ধরণের ঘটনার সংখ্যা বাড়ছে। আর এইসব ঘটনার কেন্দ্রে মেয়েদেরই বেশি দেখা যাচ্ছে। সবচেয়ে দুঃখের বিষয় হল– মর্মান্তিক ঘটনার সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পেলেও, হতাশাগ্রস্ত মানুষদের রক্ষা করার উপায়ও যেমন অধরা, ঠিক তেমনই রক্ষাকারী কাউকেও চোখে পড়ছে না। সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, অসহায় মানুষ, বিশেষকরে মহিলাদের ভরণপোষণের জন্য পরিবারের সদস্যরা দায়িত্ব এড়িয়ে যেতে চাইছেন। যদি বাবা-মা বেঁচে না থাকেন, তাহলে সম্ভবত তারা অভিভাবক হিসাবে ঠিকমতো দায়িত্ব পালন করছেন না, কিংবা আলাদা ভাবে বসবাস করছেন। অথবা সন্তানদের যত্ন না নিয়ে এবং অতিরিক্ত স্বাধীনতা দিয়ে ফেলেছেন মা-বাবা এবং তারা নিজেদের নিয়েই ব্যস্ত থাকছেন। ফলত, অসহায় মানুষের জীবন পরিচালনা করার কেউ থাকছে না। আর এই অসহায়ত্বের কারণে, কেউ-কেউ দিশাহারা হয়ে পড়ছেন এবং অনেক সময় বিপথে চালিত হচ্ছেন। অবশেষে ঘটে যাচ্ছে, খুন কিংবা আত্মহত্যার মতো ঘটনা।
সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হল এই যে, সমাজ, সরকার, এমনকী মানবাধিকার সংগঠনের কর্মীরাও সঠিক ভাবে এবং সঠিক সময়ে এই বিগড়ে যাওয়া কিংবা অসহায় এবং হতাশাগ্রস্ত মানুষগুলোর কাছে পৌঁছাতে পারেন না। এক্ষেত্রে সমাজ যেমন নিষ্ঠুর, সরকার তেমনই কর আদায়ে ব্যস্ত থাকে এবং ধর্মগুরুরা মানুষকে ঈশ্বর লাভের প্রলোভন দেখিয়ে দান নিতে ব্যস্ত থাকে। অর্থাৎ, কেউই যেন কারওর জীবনরক্ষার দায়িত্ব নিতে চায় না!
আসলে যারা ঠিক-বেঠিকের পার্থক্য ভুলে যান, বিগড়ে যাওয়া সেই মানুষগুলোই অবসাদের শিকার হন এবং অবশেষে মর্মান্তিক মৃত্যুবরণ করেন অথবা মৃতপ্রায় হয়ে বেঁচে থাকেন। এই যেমন দিল্লির ওই আত্মহত্যাকারী মহিলা হয়তো স্বামী কিংবা প্রেমিকদের দ্বারা ঠকেছেন কিংবা হয়তো ওই মহিলাই ন্যায়- অন্যায়ের তফাত ভুলে গিয়ে বড়ো ধরণের অপরাধ করে ফেলেছেন।
সমাজ, সংসার, সরকার সবাই কি তাহলে দায়মুক্ত? কেউ কি তাহলে বিগড়ে যাওয়া মানুষদের সঠিক পথ দেখানোর জন্য হাত বাড়াবে না? এর ফলে তো অপরাধ প্রবণতা কিংবা অপরাধীর সংখ্যা বাড়তেই থাকবে? কেউ হয়তো কিছু ভুল করেছে, কেউ হয়তো কারওর চক্রান্তের শিকার হচ্ছে এবং যার পরিণতিতে ঘটে যাচ্ছে মৃত্যু কিংবা হত্যার ঘটনা। এ বড়ো মর্মান্তিক!