কীরকম অন্দরসজ্জা চান আপনি, তা ঠিক করে নিন প্রথমে। গুরুত্ব দিন আপনার পরিবারের বাকি সদস্যদের পছন্দকেও। এবার ঠিক করুন, সবাই ট্র্যাডিশনাল লুক চান নাকি ফিউশন। এরপর গুরুত্ব দিন আলোর বিকল্প, আসবাব, ফ্লোরিং, বাড়ির বাইরের এবং ভিতরের রং অথবা ওয়ালপেপার। এই সবকিছুরই দাম জেনে নিয়ে কিছুটা দরদাম করে, বাজেটের মধ্যে যেটা নিতে পারবেন, সেই পছন্দের জিনিস দিয়ে সাজিয়ে তুলুন নিজের একান্ত আপন বাড়িটিকে। অবশ্য বাড়ি সাজাবার আগে, যারা ওই বাড়িতে থাকবেন, তাদের রুচি এবং প্রয়োজন প্রাধান্য পাওয়া উচিত এক্ষেত্রে।
অন্দরসজ্জায় পরিবর্তন আনতে হবে আর্থিক সামর্থ্য অনুযায়ী। সবরকম আর্থিক সামর্থ্যের ক্রেতাদের কথা মাথায় রেখে, বিপণিগুলি নিত্যনতুন পণ্যসম্ভারে বাজার ভরিয়ে তুলেছে। বাজেট অনুযায়ী, পছন্দসই ফার্নিশিংস আর আসবাবের কোনও অভাব নেই বাজারে। শুধু বাছাই করে নিতে পারলেই উদ্দেশ্য পূরণ হবে। নতুনরূপে সহজে সাজাবার কিছু পরামর্শ দেওয়া হল এখানে, যা আপনাকে সাহায্য করবে।
কাস্টমাইজড ইন্টিরিয়র ডিজাইনিং
প্রত্যেকটি শোয়ার ঘর, রান্নাঘর, বাথরুম, বারান্দা প্রভৃতি কতটা স্পেস রয়েছে, তা দেখে নিয়ে সাজে বদল আনার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এই পদ্ধতিকে বলা হয় কাস্টমাইজড ইন্টিরিয়র ডিজাইনিং। এতে ব্যক্তির প্রয়োজন, ঘরের রং, আসবাবের শেপ, ফ্যাব্রিক, মেটিরিয়াল, ডিজাইনিং প্রভৃতি একের সঙ্গে অপরের সামঞ্জস্য বজায় রেখে সোফা, কুশন, দেয়াল, সিলিং, পর্দা সবকিছুরই বিশেষ খেয়াল রাখা হয়।
বাজারে গিয়ে কিছু পছন্দসই জিনিস কিনলেন অথচ বাড়িতে নিয়ে এসে দেখলেন ঘরের আকার অনুযায়ী ঠিকমতো আঁটানো যাচ্ছে না, এমন ঝামেলায় পড়তে হয় অনেক সময়। যেটাই বাড়িতে নতুন তৈরি করা হবে, তা যেন বাড়ির পুরো ডেকরের সঙ্গে সামঞ্জস্য বজায় রেখে করানো হয় এবং বাজেটও আয়ত্বে থাকে। লিভিং রুমটি হয়তো আকারে ছোটো অথচ দোকানে গিয়ে পছন্দ হল বড়োসড়ো একটি সোফা। কখনওই সেটা মানানসই হবে না, উপরন্তু জায়গাতেও কম পড়বে। তার চেয়ে ভালো, ঘরের আকার অনুযায়ী কাস্টমাইজড সোফা বানিয়ে নেওয়া এবং সেইসঙ্গে, ঘরের অন্যান্য আসবাবও।
বিশেষজ্ঞদের মতে, কাস্টমাইজড ইন্টিরিয়র হল বিভিন্নরকমের ডিজাইন নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষার মাধ্যম। গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী বাড়ির অভ্যন্তরীণ পরিবেশ, জায়গা ইত্যাদি দেখে বানানো হয়। এতে গ্রাহকের নিজস্ব পছন্দের বিষয়টিও ঠিক থাকে। সারা বাড়ির ডেকর বদলে ফেলা সম্ভব এই পদ্ধতিতে। লেদারের সঙ্গে সলিড কাঠের আসবাব মানানসই হলেও একটু বেশি গরমের অনুভূতি হয়। কিন্তু যদি কাঠ এবং মোটা তারের জাল ব্যবহার করে সোফা কিংবা খাট তৈরি করা হয়, তাহলে হাওয়া চলাচল সঠিক থাকবে এবং গরম হবে না। এরকম ডিজাইনার ফার্নিচারের প্রচুর বিকল্পও রয়েছে আজকাল। এগুলিকে মডার্ন লুকও দেওয়া যায়, আবার ক্রেতা চাইলে ট্র্যাডিশনাল লুক দিয়ে তৈরি করে দেন ফার্নিচার বিপণির কর্মীরা।
পছন্দসই ডেকর
আমরা যে-রঙের পর্দা ব্যবহার করি, সেই রঙের কুশন কভার, বেড কভার ইত্যাদি দিয়ে ঘর সাজাবার চেষ্টা করি, যাতে রং ও স্টাইল-এ একটা মিলমিশ থাকে। পর্দায় ঝালর লাগাতে চাইলে, দেয়ালের রঙের সঙ্গে মিলিয়ে লাগানো যেতে পারে। ঘর আকারে ছোটো হলে, বড়ো যাতে লাগে, সেইজন্য দেয়ালে ওয়ালপেপার লাগানো যেতে পারে অথবা ওয়ালপেপারে পেইন্ট করানো যেতে পারে। ওয়ালপেপার পছন্দ করার প্রথম কারণ হচ্ছে, ঘর দেখতে সুন্দর লাগে। তারপর রং করাবার হলে, ভালো রঙের মিস্ত্রি খুঁজে বার করা এবং হাতে সময় থাকাটাও জরুরি। সময় বাঁচাতে চটজলদি ওয়ালপেপার লাগিয়ে ঘরের অন্দরসজ্জা সেরে ফেলতে ক্ষতি কী? বাড়ির সকলের আলাদা আলাদা পছন্দে এবং ওয়ালপেপারের বৈচিত্র্যে প্রত্যেকের ঘর সেজে উঠতে পারে সম্পূর্ণ ডিফারেন্ট লুক নিয়ে।
অনেকের মনেই এই ধারণা রয়েছে যে, নিজের পছন্দমতো বাড়ি সাজাতে গেলেই অর্থব্যয় অনেক বেশি হবে। কিছুদিন আগে পর্যন্ত হয়তো এই ধারণাটা সত্যি ছিল কিন্তু এখন সময় বদলেছে। কারণ আর কিছুই নয়, এখন বাজারে ভ্যারাইটি এবং বিভিন্ন রকমের মেটিরিয়ালের প্রাচুর্য রয়েছে। কাঠের আসবাব কিনতে গেলে, কাঠের মধ্যেই নানা ভ্যারাইটি পাবেন। তাছাড়া, দামি, কমদামি সবই পেয়ে যাবেন একই ছাদের তলায়। এরকমই ফ্র্যাব্রিক, কিচেন অ্যাকসেসরিজ, ডেকোরেশনের জিনিস, সবই ফ্ল্যাট অথবা অ্যাপার্টমেন্ট অনুযায়ী এবং বাজেটের মধ্যেই পেয়ে যাবেন। প্রয়োজন শুধু সঠিক খোঁজখবর নেওয়ার। সুতরাং অন্যের কথায় কান না দিয়ে, নিজের প্রয়োজন জানুন এবং বাড়িতে বসবাসের দিনগুলিকে আনন্দময় করে তুলুন।
পর্দায় বাড়ান আকর্ষণ
ঘরের পর্দা আমরা চট করে বদলাই না। টাঙানো থাকতে থাকতে পর্দায় একটা ম্যাড়মেড়ে ভাব চলে আসে, যা ভীষণ ভাবে ঘরের মেজাজে একটা প্রভাব ফেলে। তাই পর্দা মাঝেমধ্যেই বদলান। পর্দায় উজ্জ্বল ফ্লাওয়ার প্রিন্ট বা একরঙা উজ্জ্বল যে-কোনও রং-ই এই বসন্ত ঋতুর পক্ষে আদর্শ সাজ। আপনার ঘরের দেয়ালে যদি ডিজাইন পেইন্ট করা থাকে, চেষ্টা করুন পর্দার ক্ষেত্রে একই ধরনের ডিজাইন প্যাটার্ন ফলো করতে। ফ্লোরাল প্রিন্ট পছন্দ না হলে মডার্ন কার্টন ডিজাইনগুলি দেখুন। মার্কেটে বোল্ড প্যাটার্ন-এর প্রচুর পর্দা পাবেন। কিন্তু যেটাই ব্যবহার করুন, সেটার যেন ঘরের রঙের সঙ্গে সামঞ্জস্য থাকে।
দেয়ালের রূপ খোলে পেইন্টিং
আপনি যদি ক্রিয়েটিভ হন, নিজের সৃষ্টি করা কোনও পেইন্টিং সুন্দর করে বাঁধিয়ে দেয়ালে ঝোলাতে পারেন। চাইলে অ্যামব্রোস পেইন্টিং কিনে নিতে পারেন থ্রিডি এফেক্ট-এর জন্য। এছাড়া নিজেও এমবস করে বানাতে পারেন। এমবস করার জন্য রং ও ছাপ কিনতে পাওয়া যায়। যদি ফোটোগ্রাফির শখ থাকে, তাহলে ছবি তুলে ওয়াশ করে বাঁধিয়ে নিতে পারেন। দেয়ালের রূপ নিমেষে খুলে যাবে।
কুশন কভারে পরিবর্তন
আপনার কুশন কভারগুলো কি বহু ব্যবহারে মলিন হয়ে গেছে? তাহলে এখনই ওগুলো বদলাবার সময় এসেছে। আপনি পুরোনো কভারগুলির উপর ব্লক প্রিন্ট বা অ্যাপ্লিক করে অন্য লুক নিয়ে আসতে পারেন। পুরোনো সিল্কের শাড়ি থেকে নিজেই প্যাচওয়ার্ক করে কুশন বানাতে পারেন। প্লেন একরঙা কুশন হলে এতে ফেব্রিক পেইন্ট করতে পারেন। সব মিলিয়ে আপনার চিরচেনা ঘরটা নতুনত্বের ছোঁয়া পাবে।
ইন্ডোর প্ল্যান্টস–এর সবুজ সংসার
গাছপালা শুধু বাড়ির বাইরেটাকেই নয়, অন্দরমহলকেও নিমেষে সতেজ সুন্দর করে তুলতে পারে। তাই ঘরটাকে শ্যামলিমায় ভরে দিতে ইন্ডোর প্ল্যান্টস লাগান। মানি প্ল্যান্ট, এয়ার পিউরিফায়ার, অ্যালোভেরা, ব্যাম্বু প্রভৃতি ঘরের সৌন্দর্য বাড়ায়। গাছ থাকার ফলে আপনার ঘরের পরিবেশটাও বিশুদ্ধ হাওয়ায় ভরে উঠবে। যে-কোনও অতিথি আপনার রুচির প্রশংসা করবেন।
ওয়ালপেপার–এ রূপ বদল
আজকাল নানারকম ওয়ালপেপার পাওয়া যায় মার্কেটে। পেইন্ট করা ব্যয়সাপেক্ষ, সেই সঙ্গে একটু ঝামেলাও। তারই সুবিধাজনক বিকল্প ওয়ালপেপার আটকানো। এটুকু বদল করলেই আপনার চেনা ঘরটা একেবারে ঝকমকে নতুন হয়ে উঠবে। তাই স্টিকার বা ওয়ালপেপার এখন বিপুল ভাবে জনপ্রিয়।
ফার্নিচার সেটিং
আপনি হয়তো ঘরের যাবতীয় আসবাব বহুদিন ধরে একই পজিশনে দেখছেন। সেটাও একঘেয়েমির একটা কারণ হতে পারে। একটু জায়গা অদলবদল করে দেখুন, চেনা ঘরটাই নতুন লাগবে। আলমারি, খাট, চেয়ার সবই একটু স্থান পরিবর্তন করলে ঘরের ধুলোও ঝাড়া হবে, আর আলো হাওয়াতেও পরিবর্তন হবে।
লাইটিং আনে উজ্জ্বলতা
দীর্ঘদিন একই ধরনের লাইট সেটিং ঘরটাকে ম্লান করে তোলে। পুরোনো টিউব বদলে এলইডি নিয়ে আসুন। ঘরের আলো উজ্জ্বল করলে ঘরটা দেখতেও ভালো লাগবে। সুন্দর ল্যাম্পশেড, দেয়ালে লাগানোর ল্যাম্প শেড সবই সৌন্দর্যে আলাদা মাত্রা আনে। ঘর এবং বারান্দা— দুই-ই সুন্দর আলো দিয়ে সাজাতে পারেন।
ঘর সাজাতে ফুলের ব্যবহার
আজকাল বহু রকমের আর্টিফিশিয়াল ফ্লাওয়ার কিনতে পাওয়া যায়। ঘরের কোনায় বড়ো ফ্লাওয়ার ভাস-এ সাজান কিংবা টেবিলের উপর, ফুল কিন্তু ঘরের সৌন্দর্যে দারুণ পরিবর্তন আনতে পারে। যদি ফ্রেশ ফ্লাওয়ার পছন্দ হয় আপনার, তাহলে জারবেরা বা ডালিয়া, চন্দ্রমল্লিকা, গোলাপ— এসব তো আছেই। সেন্টেড, ফ্লোটিং ক্যান্ডল্স আর ফুল, নিমেষে একটা সুন্দর পরিবেশ তৈরি করবে আপনার ঘরে।
টুকিটাকি রদবদল
কাস্টমাইজড ইন্টিরিয়র ডিজাইনিং-এর সঙ্গে সঙ্গে বাড়িতে হাতের কাছে থাকা বিভিন্ন জিনিসের সামান্য রদবদলেও, আপনার ফ্ল্যাটটি উৎসবের রঙে সেজে উঠতে পারে। হাতে সময় কম থাকলে অর্ডার প্লেস করা, জিনিস তৈরি হওয়ার সময় দেওয়া, কোনওটাই সম্ভব নয়। তাই বলে কি অন্দরসজ্জায় পরিবর্তন আনবেন না মাঝেমধ্যে? মন খারাপের কিছু নেই।
আসবাবপত্রের অবস্থান পরিবর্তন করেও ঘরের সাজ বদলে দেওয়া যায়। বারান্দায় অবহেলায় পড়ে থাকা ফুলের টবগুলিকে রঙিন করে ঘরের প্রতিটি কোনায় রাখুন ফুলের গাছ সহযোগে। ঘরের দেয়ালের রং এবং পর্দার রঙের সঙ্গে মিলিয়ে কুশন কভার, বেড কভার, বালিশ এবং পাশবালিশের কভার বদলে ফেলুন। আজকাল মেঝেতে পাতার জন্য খুব সুন্দর ডিজাইনের হালকা, সিন্থেটিক কার্পেট কিনতে পাওয়া যায়। বসার ঘরে যদি একটা কার্পেট বিছিয়ে নেন, তাহলে ঘরের সৌন্দর্যও বাড়বে এবং শীতকালে মেঝে থেকে ওঠা ঠান্ডাও আপনার পায়ে লেগে সমস্যায় পড়তে হবে না। আর বাড়িতে থাকা ফুলদানিতে টাটকা ফুল রেখেও ঘরের সৌন্দর্য বাড়ানো যেতে পারে এবং ঘরকে সুগন্ধময় করে রাখা যেতে পারে।