শাড়ি ভারতের প্রাচীনতম পরিধান। ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে, বিভিন্ন ভাবে শাড়ি পরার চল আজও বর্তমান। অনেকেরই ধারণা, শাড়ি পরা মানেই ‘বহেনজি’ টাইপ, আউটডেটেড লুক। অথচ ধারণাটা সম্পূর্ণ ভুল। অন্যান্য পোশাকের তুলনায় শাড়িতেই সেক্সি ও আকর্ষণীয়া হয়ে ওঠার সম্ভাবনা সবথেকে বেশি। আধুনিকারা হিন্দি ছবির হিরোইনদের আইডল মেনে তাদেরই ফ্যাশন ফলো করেন। আজকাল বহু হিন্দি ছবিতেই গ্ল্যামারাস হিরোইনরা শাড়ির সৌন্দর্যকে অন স্ক্রিন ফুটিয়ে তুলছেন। ফ্যাশনে শাড়ি আজও তাই স্ব- মহিমায় বিরাজমান। শুধুমাত্র শাড়ি পরার সময় কয়েকটি বিষয় যদি খেয়াল রাখেন, তাহলে আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে যে আপনি থাকবেন-ই, এতে কোনও সন্দেহ নেই।
ভারতীয় ডিজাইনাররা বরাবরই শাড়িতে নিজেদের ডিজাইনের নিজস্বতা প্রমাণ করে সারা বিশ্বের দরবারে তুলে ধরেছেন। শাড়ির খ্যাতি দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে বিদেশের মার্কেটে পৌঁছে দিতে সমর্থ হয়েছেন। প্রয়াত সত্য পল নিজস্ব প্রিন্টেড ফাঙ্কি ডিজাইনের জন্য বিশ্ববন্দিত। মনীষ মালহোত্রা বলিউড এবং ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিতে সুলতান অফ শাড়ি বলে খ্যাত। সব্যসাচী মুখোপাধ্যায়ের ডিজাইন করা শাড়ির খ্যাতি সারা বিশ্বজোড়া। তরুণ তাহিলিয়ানী তাঁর ব্রাইডাল শাড়ির জন্য বিখ্যাত।
শাড়ি এবং লহঙ্গার ফ্যাব্রিকের উপর হেভি ব্রাইডাল ডিজাইনার রেঞ্জ-এর জন্য ঋতু কুমারের প্রসিদ্ধি। গৌরাঙ্গ শাহ হায়দরাবাদের ডিজাইনার। এনার জামদানি উইভার্স-এর একটি বড়ো ক্রিয়েটিভ টিম রয়েছে। এঁরা সাধারণত হ্যান্ডমেড মাস্টার পিস বানান। এছাড়াও অনিতা ডোগরে, নীতা লুল্লা প্রমুখ ডিজাইনাররাও যথেষ্ট সুনাম অর্জন করেছেন এবং বিশ্বের বাজারে শাড়িকে বিশেষ পরিচিতি দিতে এঁদের অবদানও কিছুমাত্র কম নয়।
শাড়ির ফ্যাশন আবহমানকাল ধরে চলে এলেও, এর আকর্ষণ ফুরোবার নয়। কর্মব্যস্ততার কারণে ড্রেস পরার চলটা এখন বেড়েছে, কিন্তু ভারতীয় সংস্কৃতির ছাপ রয়েছে মানুষের মনে। তাই উৎসবে, অনুষ্ঠানে আজও মেয়েদের পছন্দ শাড়ি। তবে অনভ্যাস এবং ব্যস্ততার কথা মাথায় রেখে ছয় গজের শাড়ি পরা এবং ম্যানেজ করা অনেকের জন্যই দুঃসাধ্য হয়ে ওঠে। এই কথা মাথায় রেখেই ডিজাইনাররাও পোশাক নিয়ে নানা এক্সপেরিমেন্ট করতে থাকেন এবং শাড়ি নিয়েও নানা পরীক্ষা, জল্পনা-কল্পনাও চলছে আধুনিক সময়ে।
শাড়ির ফ্যাব্রিক
নিজেকে হট ও গ্ল্যামারাস করে তুলতে প্রথাগত সিল্ক শাড়ি বা অন্য ফ্যাব্রিক না বেছে শিফন, জর্জেট বা ক্রেপ বাছুন। শিয়ার শাড়ির ফ্যাশন এখন খুব চলছে। লাইট ফ্যাব্রিক ক্যারি করা খুব সুবিধা। শাড়ির প্রিন্ট এবং প্যাটার্নও খেয়াল রাখা উচিত। প্রিন্টেড শাড়ির থেকেও প্লেন শাড়িতে গ্ল্যামারাস হয়ে ওঠার সুযোগ অনেক বেশি। আজকাল হাফ শাড়ির প্যাটার্নও খুব জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এই প্যাটার্নে শাড়ির অর্ধেক প্রিন্টেড হয়, বাকি অর্ধেক প্লেন।
এখন মার্কেটে হট্ ফেভারিট, ‘শাড়ি গাউন’ অথবা এটাকে অনেকে লেহেঙ্গা শাড়িও বলতে পছন্দ করছেন। শাড়ি এবং গাউনের কম্বিনেশনে তৈরি শাড়ি গাউন দেখতে খুবই স্টাইলিশ এবং ম্যানেজ করাটাও খুব সোজা। যে-কোনও অনুষ্ঠানের রাত আরও রঙিন করে তুলতে বেছে নিতে পারেন এই শাড়ি গাউন, তবে বাছার আগে কয়েকটা বিষয়ে খেয়াল রাখা খুব দরকার।
শাড়ি গাউন–ই কেন বাছবেন
এভারগ্রিন এবং সবসময় ফ্যাশনে ইন এই শাড়ি গাউন, পরা এবং পরে ম্যানেজ করাটা খুবই সোজা। শাড়ির মধ্যে প্লিটস-এর সঙ্গেই ব্লাউজ এবং আঁচল অ্যাটাচ করা থাকে। তাই ড্রেস পরার মতোই খুব সহজে মিনিটের মধ্যে এটা পরা যায়। সবকিছু অ্যাটাচ থাকার ফলে, কুঁচি বা আঁচল খুলে যাওয়ারও ভয় থাকে না এবং ফিটিংস-টাও খুব ভালো হয়।
কীভাবে বাছবেন শাড়ি গাউন
বাজারে শাড়ি গাউনের বিভিন্ন প্যাটার্ন, স্টাইল এবং ফ্যাব্রিক চোখে পড়বে। নিজের জন্য পারফেক্ট শাড়ি গাউন বাছতে হলে খেয়াল রাখতে হবে—
প্যাটার্ন: মার্কেটে শাড়ি গাউনের অনেকরকম ভ্যারাইটি পাওয়া যায়। ধুতি, প্যান্ট স্টাইল, ফিশ কাট, লেহেঙ্গা থেকে শুরু করে স্ট্রেট কাট সব ধরনের প্যাটার্ন-ই এখন ফ্যাশনে ইন। নিজের পার্সোনালিটি কীরকম, সেটা মাথায় রেখে প্যাটার্ন বাছাটা জরুরি। এমন প্যাটার্ন বাছা উচিত, যেটা নিজের বডি শেপের সঙ্গে মানাবে। যেমন, যাদের হাইট কম তাদের উচিত স্ট্রেট অথবা ফিশ কাট শাড়ি গাউন বাছা। কারণ এতে আপনাকে লম্বা দেখাবে। যাদের উচ্চতা বেশি তাদের ফ্লেয়ার্ড শাড়ি গাউন দারুণ মানাবে।
শাড়ি গাউনের ব্লাউজ: শাড়ি গাউনের ব্লাউজের নানা প্যাটার্ন হয়। যেমন— ভন শোল্ডার, অফ শোল্ডার, স্লিভলেস, হাফস্লিভ, ফুলস্লিভ, থ্রি কোয়ার্টার স্লিভ ব্লাউজ ইত্যাদি। এরই সঙ্গে নেকলাইনেও ডিফারেন্ট ভ্যারাইটি দেখতে পাওয়া যায়। যেমন রাউন্ড, স্কোয়্যার, ওভাল, বোটনেক। ব্লাউজের ক্ষেত্রেও, পার্সোনালিটির উপরই নির্ভর করবে, কী ধরনের ব্লাউজের সঙ্গে শাড়ি গাউন বাছাটা বাঞ্ছনীয়।
ডিজাইন: সিম্পল এবং সোবার থেকে শুরু করে সিকোয়েন্স, জরির কাজ, এমব্রয়ডারি কাজের শাড়ি গাউন, মার্কেটে সহজেই পেয়ে যাবেন। কী অনুষ্ঠানের জন্য শাড়ি গাউন বাছবেন সেটা খেয়াল রাখাটাও খুব জরুরি। যেমন বিয়ের অনুষ্ঠানের জন্য বেছে নিতে পারেন হেভি ওয়ার্কের গর্জিয়াস লুকিং শাড়ি গাউন। কিন্তু ডে-পার্টি, গেট-টুগেদার-এর জন্য সিম্পল, সোবার ডিজাইনই মানাবে ভালো।
কালার্স: হালকা রং থেকে শুরু করে ডার্ক, ব্রাইট কালার্স অথবা ম্যাট কালার্স, সব রকমের অপশন-ই মার্কেটে অ্যাভেলেবেল। স্কিনটোন দেখে কালার বাছা উচিত। রং ফরসা হলে রেড, পিংক, গোল্ড, সিলভার শেড-এর শাড়ি গাউন কেনা যেতে পারে। কিন্তু রং যদি শ্যামলা হয়, লাইট বা প্যাস্টেল শেডের শাড়ি ট্রাই করা উচিত। কোনও কোনও শাড়ি গাউন ডুয়েল শেড, কনট্রাস্ট কালারস অথবা মাল্টি শেডেও বানানো হয়, যেগুলোও ট্রাই করে দেখা যেতে পারে মানানসই লাগছে কিনা৷
ফ্যাব্রিক: নেট, ব্রোকেড, জর্জেট থেকে শুরু করে সিল্কের ফ্যাব্রিকেও শাড়ি গাউন পাওয়া যায়। আলাদা আলাদা ফ্যাব্রিকে, শাড়ির লুক এবং ফল-ও ডিফারেন্ট হয়। কোন মরশুমে শাড়িটা পরবেন সেটা মাথায় রেখে ফ্যাব্রিক পছন্দ করা উচিত। শাড়ির লুক- টাও দেখে নেওয়া খুব জরুরি। লাইট ফ্লোয়িং ফ্যাব্রিকের শাড়ি গাউন দেখতে সবথেকে সুন্দর লাগে। এর সঙ্গে ব্লাউজের ফ্যাব্রিক যদি নেট-এর বাছা যায়, তাহলে শাড়ি গাউনের লুক আরও সেক্সি হয়ে উঠবে নিঃসন্দেহে। আর আপনার আনন্দ-উৎসবের রাতও হয়ে উঠবে স্মরণীয়।
স্মার্ট আইডিয়া
শাড়ি গাউনে কমপ্লিট লুক পেতে হলে কী করবেন তার কিছু আইডিয়া শেয়ার করা হল।
জুয়েলারি সিলেকশন: শাড়ি গাউনের সঙ্গে হেভি জুয়েলারি পরার ভুল করবেন না। কানের দুল, আংটি ব্রেসলেট পরলেই যথেষ্ট। হেয়ারস্টাইল: পারফেক্ট লুকের জন্য চুলে হাই অথবা লো ‘বান’ বাঁধতে পারেন। আবার চাইলে স্ট্রেটনিং করিয়ে চুল খোলাও রাখতে পারেন।
মেক–আপ লুক: ডার্ক শেড-এর লিপস্টিক লাগান অথবা স্মোকি আই মেক-আপ। দুটোর কোনওটাকেই হাইলাইট করবেন না। ট্রেন্ডি ফুটওয়্যার: স্লিম লুকের জন্য শাড়ি গাউনের সঙ্গে হাইহিল পেনসিল ফুটওয়্যার পরুন। সিম্পল গাউনের সঙ্গে সোবার এবং হেভি গাউনের সঙ্গে স্টোন স্টাডেড ফুটওয়্যার ভালো মানাবে।
ক্লাচ ব্যাগ: শাড়ি গাউনের কালারের সঙ্গে ম্যাচ করে ক্লাচ ব্যাগ ক্যারি করতে পারলে আপনার সাজ সম্পূর্ণ হবে।
শাড়ি পরার নিয়ম
সঠিক উপায়ে শাড়ি পরাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নাভির উপর থেকে শাড়িটা গোঁজা আরম্ভ করতে হয়। এতে আপনার ফিগার বা শরীরের শেপ স্পষ্ট হবে। কোমরের অংশ খোলা রাখতে চাইলে আঁচল প্লিট করা অবস্থায় স্লিক ড্রেপ করুন। আর যদি কোমর ঢাকা রাখতে চান তাহলে আঁচলে গ্লিট্স না করে হাতের উপর দিয়ে ছড়িয়ে দিন।
ব্লাউজ
শাড়িকে আকর্ষণীয় করে তুলতে ব্লাউজ অনেকটাই সাহায্য করে। আজকাল মিক্স এবং ম্যাচ ফ্যাশনের প্রচণ্ড ডিমান্ড। প্লেন শাড়ির সঙ্গে প্রিন্টেড ব্লাউজ এখন ট্রেন্ডিং। ব্লাউজ, শাড়ির স্টাইলকে অনেক বেশি ফুটিয়ে তোলে। নানা প্যাটার্নের আকর্ষণীয় ব্লাউজ বাজারে পাওয়া যায়।
O হল্টার নেক ব্লাউজ
O স্প্যাগেটি স্ট্র্যাপ ব্লাউজ
O ফুলস্লিভ বা থ্রি কোয়ার্টার স্লিভ-এর ব্যাকলেস ব্লাউজ
O ওয়াইড নেক ব্লাউজ
O স্টাইলিশ র্যাপআপ শাড়ি ব্লাউজ
O এমবস্ড এমব্রয়ডারি ব্লাউজ
O মডার্ন চোলি ব্লাউজ
O শিয়ার ব্যাক শাড়ি ব্লাউজ।
শাড়ির সঙ্গে অ্যাক্সেসরিজ
খুব সামান্য অ্যাক্সেসরিজ পরেই আপনি হয়ে উঠতে পারেন হট এবং গ্ল্যামারাস। শাড়ির সঙ্গে ম্যাচ করে স্টেটমেন্ট ইয়াররিংস পরলেই যথেষ্ট। স্টেটমেন্ট ক্লাচ ব্যাগটা ভুললে কিন্তু চলবে না। পেন্সিল হিল আপনার সাজ সম্পূর্ণ করবে।
হেয়ার স্টাইল
হাই বান হেয়ারস্টাইল: যদি ব্লাউজের নেকলাইন খুব ছড়ানো এবং বড়ো হয় অথবা স্ট্র্যাপলেস ব্লাউজ হয়, তাহলে এই হেয়ারস্টাইল খুব ভালো মানাবে।
স্ট্রেট হেয়ারস্টাইল: খুব তাড়াতাড়ি সাজ কমপ্লিট করতে চাইলে এই হেয়ারস্টাইল বেছে নিতে পারেন। এটি সিম্পল এবং এলিগ্যান্ট-ও বটে।
ব্যাস হেয়ারস্টাইল: যাদের চুল লম্বা তাদের জন্য এই স্টাইল এখন ফ্যাশনে ইন। ওয়েস্টার্ন ড্রেসেজ এবং শাড়ি উভয়ক্ষেত্রেই এই স্টাইল খুব মানানসই।
সিম্পল শর্ট কাট হেয়ারস্টাইল: হিন্দি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি-তে মন্দিরা বেদী খুব সুন্দর ভাবে এই হেয়ারস্টাইল ক্যারি করেন এবং তাঁর দৌলতেই এই স্টাইলটি ইয়ং জেনারেশনের মধ্যে এতটা পপুলার হয়ে উঠেছে। এই স্টাইলের সঙ্গে বড়ো ইয়াররিংস এবং নেকপিস খুব ভালো মানাবে।
সিম্পল পনিটেল: পনিটেলের সঙ্গে ডিজাইনার ব্লাউজ ম্যাচ করিয়ে নিজেকে আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু করে তুলতে পারেন। এই হেয়ারস্টাইল আপনাকে দেবে ক্লাসিক লুক। শাড়ির সঙ্গে এই স্টাইলটি খুবই ভালো লাগে এবং ইয়ং জেনারেশনের কাছে এই স্টাইলটি খুবই পছন্দের।





