এক্সারসাইজ করাটা সুস্বাস্থ্যের জন্য একান্ত জরুরি। কিন্তু আধুনিক জীবনশৈলীতে আমরা এতটাই ব্যস্ত যে, ব্যায়ামের জন্য সময় থাকে না। অথচ ব্যায়াম করার সুফল হল, এটা শরীরকে তরতাজা করার সঙ্গে সঙ্গে, মনকেও চাপমুক্ত করে। ফলে পরেরদিন আপনি কর্মক্ষেত্রে যেতে পারেন সম্পূর্ণ ফ্রেশ মুড-এ।
প্রত্যেকের শরীরই প্রতিদিন অল্প মাত্রায় হলেও সক্রিয়তার প্রয়োজন বোধ করে। অঙ্গ চালনা এই জন্যই একান্ত জরুরি। শরীরের অভ্যন্তরীণ সিস্টেমগুলোও এর ফলে সঠিক ভাবে ক্রিয়াশীল থাকে। কিন্তু ভুললে চলবে না, ব্যায়ামেরও একটা পদ্ধতি আছে, যে-পদ্ধতি ভুল হলে শরীরে লাভের চাইতে ক্ষতি বেশি হবারই সম্ভাবনা থাকে।Over Exercise করার কুফল জানুন৷
সঠিক এক্সারসাইজ-এর সুফল
আমাদের হৃৎপিণ্ডের সক্রিয়তা নির্ভর করে আমাদের কায়িক শ্রমের উপর। যারা কম পরিশ্রম করেন, দেখা গেছে তাদেরই হার্টের সমস্যা বেশি হয়।
ব্যায়ামে পর্যাপ্ত ঘুম
গবেষণায় দেখা গেছে যারা নিয়মিত ব্যায়াম করেন, তারা রাত্রে ভালো ঘুমোন। এর কারণ শারীরিক পরিশ্রম করার ফলে শরীরের সার্কেডিয়ান রিদম সচল থাকে। এর ফলে আপনিও সক্রিয় থাকবেন এবং সারাদিনের কাজকর্মে অ্যাক্টিভ থাকবেন, আর রাতের ঘুমটাও ভালো হবে।
এনার্জি বাড়ায় ব্যায়াম
অনেকেই ভাবেন ব্যায়াম করলে শরীরের এনার্জি ক্ষয় হয়। অথচ বাস্তবে এর ঠিক উলটোটা ঘটে। এক্সারসাইজ করার ফলে আপনি দিনভর এনার্জেটিক থাকতে পারবেন। কসরত করার ফলে কিছু হরমোন নিসৃত হতে শুরু করে, যা আমাদের এনার্জি লেভেলকে বাড়াতে সাহায্য করে।
ব্যায়ামে বাড়ে আত্মবিশ্বাস
আপনার শরীরের অত্যধিক মেদ ঝরিয়ে আপনার ফিগারকে পারফেক্ট শেপ দিতে সাহায্য করে ব্যায়াম। এর ফলে আত্মবিশ্বাস বাড়ে, শরীরের শক্তপোক্ত গঠন আপনাকে আত্মবিশ্বাস দেয়। যে-কোনও ইতিবাচক ভাবনাকে গুরুত্ব দিয়ে এগিয়ে চলতে সাহায্য করে।
অতিরিক্ত ব্যায়ামের কুফল
ফিজিক্যাল অ্যাক্টিভিটির কোনও বিকল্প নেই। জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে নিন ব্যায়াম-কে। কিন্তু অনেক সময়ই দেখা যায় কেউ কেউ ব্যায়ামের ব্যাপারে খুব অবসেসড হয়ে যান। অতিরিক্ত ব্যায়াম করতে শুরু করেন, আর তাতেই যা ক্ষতি হবার হয়। জেনে নিন অতিরিক্ত ব্যায়ামে কী কী সমস্যা হতে পারে।
- মহিলাদের একটি নির্দিষ্ট বয়সের পর মেনোপজ হওয়াটা একটি প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া। কিন্তু এটা যখন স্বাভাবিক নিয়মে না হয়ে, অকালে এই পরিস্থিতি তৈরি হয় –বুঝতে হবে সমস্যা অন্যত্র। তিনমাস পিরিয়ড না হওয়ার কারণ কোনও কোনও সময় ওভার এক্সারসাইজ। ব্যায়ামের কারণে যে-এনার্জি শরীরে তৈরি হচ্ছে, তাকে সাপোর্ট করার মতো ক্যালোরি-যুক্ত ডায়েট গ্রহণ না করা হলে, মূলত অপুষ্টিজনিত কারণে পিরিয়ডে তার প্রভাব পড়তে পারে। অতিরিক্ত ব্যায়াম ও ক্যালোরির ঘাটতি শরীরে ফার্টিলিটি প্রবলেমও সৃষ্টি করতে পারে। বস্তুত মেয়েদের যৗন ইচ্ছার অভাব ঘটতে পারে। মেদবহুল মহিলারা অতিরিক্ত ব্যায়াম করে অনেক সময়ই এই বিপত্তি ডেকে আনেন।
- ওবেসিটি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শরীরে এস্ট্রোজেন হরমোন-এর মাত্রায় বৃদ্ধি হয়। এটাই পিরিয়ডের উপর প্রভাব বিস্তার করে এবং অনেক সময় ইনফার্টিলিটির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। কম বয়সি মহিলারাও এক-এক সময় মাত্রাতিরিক্ত ব্যায়াম করার ফলে এস্ট্রোজেনের মাত্রা বৃদ্ধি হয়, যা তাদের ঋতুচক্রকে প্রভাবিত করে এবং সন্তানধারণে সমস্যা তৈরি করে
- পুরুষদের ক্ষেত্রেও সমস্যা তৈরি করে হেভি ওয়েট ট্রেনিং সেশন। এতে শুক্রাণুর সংখ্যায় তারতম্য ঘটে। শুক্রাণু কমে যাওয়ায়, ইনফার্টিলিটির সমস্যা হয়। ফলে দীর্ঘ সময় ধরে বেশি ওজন নিয়ে এক্সারসাইজ করা ক্ষতিকারক
- অনেক সময় পুরুষরা অতিরিক্ত ব্যায়ামের ফলে ক্লান্তি অনুভব করেন। শুক্রাণুর ঘাটতিও এই ক্লান্তির কারণ হয়ে থাকতে পারে। ফলে এ ব্যাপারে সতর্ক হওয়া জরুরি
- হেভি রেজিসটেন্স ট্রেনিং অনেক সময় আপনাকে সুফল দেওয়ার পরিবর্তে বড়ো সমস্যার সম্মুখীন করতে পারে। এতে সরাসরি টেস্টোস্টেরন হরমোনের উপর প্রভাব পড়ে। ফলে পুরুষের উর্বরতা ক্ষমতা হ্রাস পায়। এর ফলে স্ত্রীয়ের গর্ভধারণে সমস্যা তৈরি হয়।
তাই নিয়মিত ব্যায়াম করার পাশাপাশি সুষম খাদ্য গ্রহণ করুন। ডায়েট চার্ট ফলো করে ব্যায়াম বজায় রাখুন। সঠিক ক্যালোরি আপনার শরীরকে ঠিকমতো ক্রিয়া করতে সাহায্য করে। এনার্জির অভাবে শরীরে ক্লান্তি অনুভব করলেই পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করুন। পুরুষরা ব্যায়াম করার রেজিম ফলো করুন, কিন্তু নিয়মিত স্পার্ম কাউন্ট চেক করান। মহিলাদেরও ফার্টিলিটি টেস্ট ও হরমোন টেস্ট করাতে হবে মাঝে মাঝেই। এক্সারসাইজ আপনার জীবনশৈলীকে সুন্দর করতে সাহায্য করে। কিন্তু নিয়ম মেনে ব্যায়াম করুন।