নতুন বাড়ি বা ফ্ল্যাটের সিলিং-এর ডিজাইন, রং ইত্যাদি নিয়ে অনেকেই অনিশ্চয়তার মধ্যে থাকেন। আবার খুব বেশি ডিজাইনের বিকল্পও মনকে ধন্দে ফেলে দেয়। অথচ মন চায় বাড়ির সিলিং সুন্দর করতে কিন্তু তার জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য বা জ্ঞান আমাদের কাছে থাকে না।

বাজারে রোজই নতুন ফ্যাশনের সংযোজন ঘটছে। আগেরটা থেকে পরেরটা যেন আরও ভালো। কিন্তু সকলেরই ব্যক্তিগত পছন্দ রয়েছে যেটা সকলের নিজের নিজের রুচিরই প্রকাশ।

আগেকার দিনে অর্থবান ব্যক্তিদের বাড়ি অথবা ছবির পরদায় ডিজাইনার সিলিং চোখে পড়ত। ফলস সিলিং সে-সময়ও ছিল কিন্তু তা ছিল সাধারণ মানুষের সামর্থ্যের বাইরে। কিন্তু ধীরে ধীরে সাধারণ মানুষও এই ধরনের সিলিং অ্যাফোর্ড করতে পারছেন। এই ধরনের সিলিং-এ নতুন সংযোজন হয়েছে লাইটের। আগের মতোই পিওপি অর্থাৎ প্লাস্টার অব প্যারিস-এর যুগ এখনও আছে তবে নানা রঙের আলোয় সিলিং-এর সৗন্দর্য আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। আসুন জেনে নিই সিলিং-এর ডিজাইন সম্পর্কে।

ট্র্যাডিশনাল ডিজাইন

সাদামাটা সিলিং এখন আর কেউ পছন্দ করছেন না সুতরাং হালকা ডিজাইন-কে এখন অনেকেই প্রায়োরিটি দিচ্ছেন। অফ হোয়াইট এবং হালকা হলুদ রং-এর সিলিং এখন ধীরে ধীরে ফ্যাশনে ফিরছে এবং নতুন ডিজাইনের লাইট এতে লাগানো হচ্ছে। ইলেকট্রিক আইটেমের ভ্যারাইটি এখন বাজারে প্রচুর।

ড্রইংরুমের সিলিং প্লেন বা হালকা রঙের হলে তাতে নানা ধরনের লাইট লাগানো যাবে। সাধারণত ঘরের ঠিক মধ্যিখানে একটা বড়ো ল্যাম্প বা ঝাড়লণ্ঠন সিলিং থেকে ঝোলানো দেখতে ভালো লাগে এবং চার কোণে এলইডি বাল্ব ঘরের সৗন্দর্য বাড়াবে। ঘরের আকার অনুযায়ী আলোর সংখ্যাও বাড়ানো যেতে পারে।

ন্যাচারাল ডিজাইন

ফলস সিলিং-এর চল যখন পুরোপুরি শুরু হয়নি তখন ঘরের সৗন্দর্য বাড়াবার জন্য ছবি বা পোস্টার দিয়ে দেয়াল ও সিলিং সাজাবার চল ছিল। প্রাকৃতিক দৃশ্যের পোস্টারই ব্যবহার হতো বেশি যাতে নীল আকাশ, ঝরনা, পাহাড়, নদী, ফুল ইত্যাদির অলংকরণ চোখে পড়ত।

সিলিং-কে ন্যাচারাল লুক অনেক ভাবেই দেওয়া যায়। এটা সম্পূর্ণ নির্ভর করে ব্যক্তিবিশেষের উপর। ট্রে-সিলিং-এর মাধ্যমে এখন অনেকেই ঘরের ছাদ ডেকোরেট করছেন।

জিওমেট্রিকাল ডিজাইনিং

প্রায় পঞ্চাশ শতাংশ কাস্টমার ঝোঁকেন জিওমেট্রিকাল ডিজাইনের সিলিং-এর দিকে। এই ধরনের ডিজাইন ঘরের শোভা বাড়িয়ে সাধারণ ঘরকেও আকর্ষণীয় করে তোলে।

এই ডিজাইনের মধ্যে বিভিন্ন আকারের ত্রিভুজ, চতুর্ভুজ, সমান্তরাল রেখা, সার্কল ইত্যাদি হয়ে থাকে এবং যে-দূরত্ব বা গ্যাপ রাখা হয়, সেগুলো পুরো মাপজোখ করেই রাখা হয়। এর মধ্যে পছন্দ অনুযায়ী লাইট লাগানো যেতে পারে। রং-এর পছন্দও নিজের ইচ্ছা অনুযায়ী করা সম্ভব। তবে ইন্টিরিয়র ডিজাইনারদের মতে খুব ডার্ক কালার ব্যবহার করলে কিছুদিন পর রঙের পরত খসতে আরম্ভ করে সুতরাং হালকা রং ব্যবহার করাটাই এই ক্ষেত্রে বুদ্ধিমানের হবে।

ক্লাসিকাল ডিজাইন

সিলিং-এ নানা ধরনের বাদ্যযন্ত্র যেমন সানাই, ঢোলক, হারমোনিয়াম, বীণা ইত্যাদি আকৃতির অলংকরণও মাঝেমধ্যে চোখে পড়ে তবে এর সংখ্যা খুবই কম। আর খুব কম এই ধরনের ডিজাইন দৃষ্টিগোচর হয় বলে অতিথিদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বেশি। তবে এই ডিজাইনের সঙ্গে লাইটের ব্যবহার খুব মানানসই হয় না।

অনেক ক্ষেত্রে আঞ্চলিক ডিজাইনও চোখে পড়ে যেমন ডোকরার শিল্প, পোড়ামাটির কাজও সিলিং এবং ঘরের দেয়ালের সৗন্দর্য বাড়ায়। মার্কেটে এর বিশাল রেঞ্জ সহজলভ্য।

স্টাইলিশ ডিজাইন

স্টাইলিশ ডিজাইনের সিলিং-এ আলো এবং রঙের যথেচ্ছ ব্যবহার করা হয়। সাধারণত বড়ো ড্রইংরুম বা বেডরুমের জন্য এর ব্যবহার উপযুক্ত।

ড্রইংরুমের মধ্যে একটা বড়ো ঝাড়লণ্ঠন এবং চারপাশের কোণায় চারটে ছোটো ঝাড় লাগানো যেতে পারে যেমনটা হোটেলে বা কর্পোরেট অফিসগুলিতে দেখতে পাওয়া যায়। নিজের পছন্দ অনুযায়ী ডিজাইন বানানোও যেতে পারে আবার তৈরি অবস্থাতেই কিনতেও পাওয়া যায়।

অনলাইন-এর মারফতও এই ধরনের সিলিং কেনা যেতে পারে।

রোমান্টিক ডিজাইন

এই ধরনের ডিজাইন মূলত নব-দম্পতিদের প্রধান পছন্দ। বেডরুমের সিলিং সাজাতে এবং ঘরের পরিবেশ রোমান্টিক করে তুলতে এই রকমের ডিজাইন বেছে নেওয়া যেতেই পারে। গোলাপি রং এবং গোলাপফুলের ঝাড় সিলিং এবং দেয়াল অলংকৃত করে। আলোর রং-ও গোলাপি রাখা হয়। এই ক্ষেত্রে অনেক সময় ওয়ালপেপারও ব্যবহার করা হয় যেটা কিনা ঘরে ঢোকামাত্র রোমান্সের মুড তৈরি করতে সাহায্য করে। তবে যেখানে দম্পতিরা একা একটি ফ্ল্যাট বা বাড়িতে থাকেন সেখানেই এই ডিজাইন কার্যকরী হতে পারে। একাধিক ব্যক্তির উপস্থিতিতে এই রোমান্টিক মুড নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...