বিয়ের দিনটা সকলের কাছেই একটি বিশেষ দিন। নতুন সঙ্গীর হাত ধরে নতুন জীবনে প্রবেশ করার শুরু-টা তাই চিরজীবনের জন্য স্মরণীয় করে তোলাটাও একান্তই কাম্য। বিয়ের বিশেষ দিনটাতে কনের সাজ শুধুমাত্র বর বা বরপক্ষকে মোহিত করার জন্য নয়, সমস্ত নিমন্ত্রিত অতিথিরাও উদগ্রীব হয়ে থাকেন, Bridal Make-up কীরকম হল তা দেখার জন্য।

আজকাল বেশিরভাগ বিয়েতেই মেক-আপ আর্টিস্ট-ই দায়িত্বে থাকেন Bridal Make-up করার। যারা কনের সাজ নিয়ে বিভিন্নরকম এক্সপেরিমেন্ট করেন, তারা প্রথমেই কনের পার্সোনালিটি, স্কিন টাইপ, স্কিন টোন, চুলের টেক্সচার, কালার, আইব্রো-র শেপ, ফেস-কাট ইত্যাদি খুঁটিয়ে দেখে নেন। যদি কনের মধ্যে সৌন্দর্যের কোনও সমস্যা থাকে, তাহলে কনেকে এক্সারসাইজ এবং স্কিন কেয়ার রুটিন মেনে চলার পরামর্শ দেওয়া হয়, যা শুরু হয়ে যায় বিয়ের অনেক আগে থেকেই। এতে বিয়ের দিনের মেক-আপ শুরুর আগেই ত্বক হয়ে ওঠে প্রাণোচ্ছল।

ত্বক পরিচর্যার রুটিন

বিয়ের কনেকে প্রথমেই জানতে হবে, তার নিজের ত্বক কী ধরনের। বিয়ের আগে রেগুলার ক্লিনজিং, টোনিং এবং ময়েশ্চারাইজিং-এর রুটিন ফলো করা উচিত। যদি ত্বক খুব রুক্ষ হয় তাহলে সোপ-ফ্রি কন্সিলার ব্যবহার করা উচিত। সারাদিনে অন্তত দুবার ত্বক ময়েশ্চারাইজ করাও খুব জরুরি।

যদি ত্বক তৈলাক্ত হয়, তাহলে ক্লিনজিং-এর সঙ্গে সঙ্গে দিনে ২ থেকে ৩ বার মুখে জল দিয়ে ভালো করে ধুয়ে ফেলা বাঞ্ছনীয়। অয়েলি ত্বকের জন্য টোনিং খুবই জরুরি। এতে ত্বকের পোর্স বন্ধ হয়ে যায় এবং ত্বকে তেল বেরোনোও বন্ধ হয়ে যায়। একই সঙ্গে ত্বককে ময়েশ্চারাইজ করার জন্য ওয়াটার বেসড ময়েশ্চারাইজার লাগানো খুব জরুরি৷  ফেস মাস্কও অতি প্রয়োজনীয়। এর ফলে ত্বকের মৃত কোশ দূর হয় এবং ত্বক নিঃশ্বাস নিতে পারে।

কীভাবে বাছবেন ওয়াটার এবং ক্রিম বেসড মেক-আপ

ভারতীয়দের মধ্যে তিন ধরনের কমপ্লেকশন সাধারণত দেখতে পাওয়া যায়– ফরসা, গমের মতো রং এবং শ্যামলা।

কমপ্লেকশন অনুযায়ী এইভাবে মেক-আপ বাছুন

ফরসা ত্বকের জন্য – ত্বকের রং ফরসা হলে রোজি টিন্ট বেস কালার এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে শাইনিং কালারের ফাউন্ডেশন বেস খুব ভালো মানাবে। চোখের মেক-আপ করার সময় ভ্রূ হাইলাইট করুন ব্রাউন কালার দিয়ে। ফরসা ত্বকে পিংক এবং হালকা লাল রঙের ব্লাশার খুব ভালো মানায়। ঠোঁটের জন্য হালকা রং বাছাই বুদ্ধিমানের হবে।

গম রঙের ত্বকের জন্য – গম রঙের ত্বক হলে, ত্বকের রঙের সঙ্গে ম্যাচ করে ওয়াটার বেসড ফাউন্ডেশন লাগানো সব থেকে ভালো। লাইট কালারের ফাউন্ডেশন একেবারেই ব্যবহার করবেন না। চোখের মেক-আপের জন্য ব্রোঞ্জ বা ব্রাউন ব্যবহার করা উচিত। গালে ব্রোঞ্জ কালারের ব্লাশার মানাবে ভালো। স্কিন টোন অনুযায়ী ডার্ক রঙের লিপস্টিক পুরো সাজের সঙ্গে মানানসই হবে।

শ্যামলা রঙের ত্বকের জন্য – শ্যামলা বর্ণ হলে মেক-আপ করার আগে খুব সাবধানে করতে হবে। রং যদি শ্যামলা হয় তাহলে ওয়াটার বেসড ন্যাচারাল ব্রাউন টোন ফাউন্ডেশন ব্যবহার করতে হবে। তাছাড়াও ফাউন্ডেশন ব্লেন্ডিং করার ক্ষেত্রেও বিশেষ যত্ন নিতে হবে, নয়তো ত্বকে ছোপ ছোপ দাগ ফুটে উঠবে।

খেয়াল রাখতে হবে ত্বকের রঙের থেকে বেশি গাঢ় রঙের ফাউন্ডেশন ব্যবহার যাতে করা না হয়। চোখের মেক-আপের জন্য লাইট কালারের আইব্রো কালার একেবারেই ব্যবহার করা উচিত হবে না, কিন্তু আউটলাইনের জন্য কাজল ব্যবহার করা যেতে পারে। প্লাম এবং ব্রোঞ্জ কালারের ব্লাশার ব্যবহার করা যুক্তিসঙ্গত হবে। ঠোঁটের জন্য পার্পল, রোজ এবং পিংক গ্লস মানানসই হবে। কনেকে সতর্ক থাকতে হবে যাতে মেক-আপ বেশি না হয়ে যায়, তাতে বেশি বয়স বলে মনে হবে। সুতরাং হেভি মেক-আপের রাস্তায় হাঁটবেন না।

সাবধানে লিপস্টিক চয়ন করুন

রুপোলি পর্দার নায়িকারাই হচ্ছেন আলটিমেট ফ্যাশন স্টেটমেন্ট। তাঁরা কী পরছেন, চুলের স্টাইল কেমন রাখছেন, কোন রঙের লিপস্টিক বা নেলপেইন্ট ব্যবহার করছেন, সকলেরই দৃষ্টি সেইদিকে– বিশেষ করে আধুনিকাদের তো বটেই। এখন নায়িকারা কম মেক-আপ এবং হালকা রঙের লিপস্টিকের শেড পছন্দ করছেন। হাই ডেফিনেশন ক্যামেরার যুগে, ছবি তুলতে গেলেই ধরা পড়বে অত্যধিক মেক-আপ করা মুখের খুঁটিনাটি। ফলে ফটোগ্রাফও বিসদৃশ লাগবে। সুতরাং মেক-আপ সবসময় হালকা রাখাই ভালো এমনকী বিয়ের দিনটাতেও।

আজকাল ট্রেন্ড হিসেবে মার্কেটে অনেক রকম লাইট শেডের লিপস্টিক পাওয়া যাচ্ছে, যেগুলো ডার্ক লিপস্টিকের মতোই লুক দেবে। এতে ঠোঁটের পাউট লুক্সও আসবে। একটা কথা মনে রাখা আবশ্যক যে, লিপস্টিক যদি গাঢ় রঙের হয়, তাহলে হালকা আই মেক-আপ করলেই চলবে। আর যদি হেভি আই মেক-আপ করতেই হয় তাহলে লাইট শেডের লিপকালার ব্যবহার করাই বাঞ্ছনীয়।

বাছুন কালার্ড লেন্স

ত্বকের রং যেমনই হোক, আই লেন্স সবসময় হালকা রঙের বাছাই করাই শ্রেয়। আই লেন্সে গ্রিন এবং ব্রাউন মিশিয়ে নতুন একটি রং তৈরি করা হয়েছে যেটি ভারতীয় ত্বকের জন্য খুবই মানানসই। নীল রং একেবারেই বাছা উচিত নয়, ভারতীয় স্কিন টোনের জন্য।

মেক-আপের আগে ক্যামেরায় ফ্ল্যাশ টেস্ট

স্টেজে পারফর্ম করার আগেই হোক অথবা বিয়ের কনে, যেখানে মেক-আপের প্রয়োজন আছে সেখানে মেক-আপ বেস বা ফাউন্ডেশন পারফেক্ট হওয়াটা খুব জরুরি। ক্যামেরার ফ্ল্যাশে মেক-আপ এমনিতেই ধূসর লাগে দেখতে। উচিত হচ্ছে মেক-আপ বেস লাগাবার পর নিজের ফোনের ক্যামেরায় ফ্ল্যাশ অন করে নিজের একটা ছবি তোলা। এতে বোঝা যাবে ফাউন্ডেশনের প্রয়োগ ঠিকমতো হয়েছে কিনা। এই পদ্ধতিটিকে মেক-আপ আর্টিস্টরা ফ্ল্যাশ টেস্ট বলে থাকেন।

যতটা সম্ভব মেক-আপ বেস-এর প্রয়োগ কম করে এবং কম ফাউন্ডেশন, লাইট কালারের ব্লাশ এবং হালকা রঙের লিপস্টিক লাগিয়ে নিজেকে প্রেজেন্ট করুন। কনের এই হালকা সাজই কনের সৗন্দর্য ফুটিয়ে তুলতে সাহায্য করবে এবং এর সঙ্গে আর একটা কথা মনে রাখতে হবে, মেক-আপ যেন কনের পার্সোনালিটিরি অনুরূপ হয়।

জরুরি মেক-আপ টিপ্স

  • কনের কাছে সবসময় তার নিজের স্কিনটোনের সঙ্গে ম্যাচিং কনসিলার রাখাটা খুব দরকার যাতে চোখের নীচে কালি এবং ত্বকের যে-কোনও দাগ-ছোপ সহজেই লুকোতে পারে।
  • এছাড়াও টিনটেড ময়েশ্চারাইজার রাখাটাও খুব দরকার। এটি লাগালে মুখে একটা হালকা গ্লো আসে।
  • বিয়ের দিন চুলের স্টাইল আপনার সৌন্দর্য আরও অনেক বাড়িয়ে দিতে পারে যদি প্রপার স্টাইলিং করা হয়। কোঁকড়ানো চুল আপনাকে যেমন গ্ল্যামারাস লুক দেবে তেমনি স্ট্রেট চুলের স্টাইল, দেবে ম্যাচিওরড লুক।
আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...