‘সুমন শুধু শরীর বোঝে। ও অন্য একটা মেয়ের সাথে ইনভলভড। সেই মেয়েটা আনম্যারেড, বয়স চব্বিশ। তাই আমাকে প্রতিদিন শুনতে হয়, ইউ আর ভেরি মাচ লুজ অন বেড…’

তিন্নির চোখ ভিজে ওঠে। আমি অস্বস্তি নিয়ে বসে থাকি। কী বলব বুঝতে পারি না।

বিগবাজার থেকে বের হবার মুখে হঠাৎ দেখা হয়ে গেল তিন্নির সাথে। তিন্নি আমার শৈশবের সহপাঠী। যাকে দেখলে বুকের মধ্যে মেঘ ডাকার শব্দ পেতাম। যার হাসিতে তুফান উঠত মনের সাগরে। আছড়ে পড়া স্রোতের ঢেউ বেলাভূমিতে রেখে যেত অজস্র মণি-মুক্তো। তার আলো সারারাত ঘিরে থাকত নির্ঘুম আমাকে। তিন্নিকে বলিনি কখনও। অন্য কাউকেও নয়।

ক্লাস সেভেন এইটে এসে সব সহপাঠিনীর শরীরেই পরিবর্তন এল। আমরা ছেলেরা চুরি করে দেখতাম। আর কল্পনা করে নিতাম স্বর্গের সমস্ত সৗরভ। কিন্তু তিন্নি একই রয়ে গেল। মানে তিন্নির শরীর। তার বুকের সোনালি উপত্যকায় দেখা গেল না কোনও বন্ধুরতার আভাস। নাইন টেনে উঠে ছেলেদের গুরুতর চর্চার বিষয় হয়ে দাঁড়াল সেটা। কিন্তু ওকে কেউ ‘নিমাই’ বললে আমার সেটা পছন্দ হতো না। কারণ তিন্নিকে ভালোবাসতাম আমি।

তিন্নি আমার পাড়ার মেয়ে। তবু কিছু বলা সম্ভব ছিল না। কারণ দু’বাড়ির বৈভবে তফাত ছিল অনেকটা। আমি স্কুল মাস্টারের ছেলে। আর তিন্নির বাবার কলকাতায় বিরাট ব্যাবসা। কয়েক বছর আগে আমার জ্যাঠতুতো দাদার সাথে তিন্নির দিদির প্রেম ধরা পড়ে যায়। তিন্নির বাবা রাস্তায় দাদাকে জুতো দিয়ে মেরেছিলেন।

তার কয়েকদিন পরেই ডেন্টাল কলেজের হস্টেলে দাদার ঝুলন্ত দেহ পাওয়া যায়। তাই এক তরফা স্বপ্নেই মশগুল ছিলাম।

হঠাৎ তাতেও বিঘ্ন ঘটে গেল। কলকাতা থেকে তিন্নির দিদির দেওর এল ওদের বাড়িতে। লম্বা, ফরসা, সুপুরুষ, সরু কার্তিকের মতো গোঁফের অধিকারী এক যুবক। কায়দা করে সিগারেট ধরিয়ে শূন্যে রিং ছাড়ত। তা ছাড়ুক। কিন্তু ও যে তিন্নিকে ছাড়বে না তা আমার মন বলছিল।তিন্নি আমার পাড়ার মেয়ে। ক্লাসের সব ছেলেদের টপকে ওর জীবনের একমাত্র পুরুষ হবার দৗড়ে আমার অগ্রাধিকার। হয়তো বোকার মতো সেটা ভাবতাম আমি। তাও ক’দিনেই উবে গেল। বুঝে গেলাম ক্লাসের কাউকে নয়, তিন্নি পছন্দ করতে শুরু করেছে তাদের নতুন আত্মীয়কে। আমার আকাশ বাতাস সব যেন কালো হয়ে গেল।

কার্তিকটির বাইকে হঠাৎ একদিন তিন্নিকে দেখা গেল। পিছনের সিটে সবুজ শাড়ি পরে। উড়ন্ত চুল কপালে লেপটে। মাঠ পেরিয়ে ওরা চলে গেল দিঘির পাড়ে। গাছের সারির ভিতর দিয়ে ওরা নেমে গেল দিঘির ভিতরে। যতক্ষণ না সন্ধ্যা নেমে আসে আমি তাকিয়ে থাকলাম সেদিকে। একসময় অন্ধকার ফুঁড়ে জ্বলে উঠল রাজকীয় বাইকের জোরালো হেডলাইট। চোখের জল মুছতে মুছতে আমি অন্ধকার মাঠের আলপথের উপর বসে নিঃশব্দে কাঁদছিলাম।তারপর আমি খেলা ও আড্ডার সব সাথিকে এড়িয়ে মাঠের এককোণে লুকিয়ে যেতাম রোজ বিকেলে। সন্ধ্যা পর্যন্ত তাকিয়ে থাকতাম দিঘির পাড়ের ক্রমশ আবছা হতে থাকা দুই নর-নারীর দিকে।

কয়েক মাসের মধ্যেই তিন্নির শরীরে যেন পাহাড়ি নদীর বন্যা। ছলকে ওঠা লাবণ্যের বাড়তি ঢেউ। সেই লাবণ্যের ছোঁয়ায় উচ্চাবচ বুকের মাঝে গজিয়ে ওঠা হঠাৎ স্পর্ধা। আমার পৃথিবীটা আস্তে আস্তে ছোটো হয়ে যেতে লাগল।

বিয়ে করে তিন্নি চলে গেল কলকাতায়।আমি বুঝতে পারছিলাম, তিন্নি সুখী হবে না। দুদুল-এর মতো ছেলে এক নারীতে খুশি হবার নয়। আহত বুকের রক্তক্ষরণ থেমে গেল আস্তে আস্তে।

দু’বছর পর শুনলাম ছেলে হয়েছে তিন্নির। তিন বছরের মাথায় শুনলাম ডিভোর্স হয়ে গেছে ওর। তারপর চাকরি পেয়ে আমি মুম্বই চলে যাই। আর তিন্নির সাথে দেখাও হয়নি কোনওদিন। আমার একাকী হৃদয়ের এক নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে রয়ে গেছিল তিন্নি।বহুদিন পর বাড়ি ফিরে শুনি তিন্নির দ্বিতীয় বিয়েও ভেঙে গেছে। তারই জিম ট্রেনার, তিন নম্বর বরের সাথে চলছে সম্পর্কের টানাপোড়েন।

 

আজ আবার তিন্নির সাথে দেখা। প্রাথমিক কথাবার্তার পর জানলাম ও ওর বরের জন্য ওয়েট করছে। তিন্নির ফরসা মুখের উজ্জ্বল ত্বকের মধ্যেও দু’চোখের নীচে যেন কালির আভাস। উচ্ছলতার বদলে রূপসি মুখে কেমন যেন একটা ব্যথাময় মালিন্য। দু’জনে গিয়ে কফিশপে বসলাম।

‘তুই তো বহুদিন গ্রামে যাসনি। সেই কবে তোকে দেখেছি শেষ…’

‘হুম, যদিও বা দু’একবার গেছি, খুবই সামান্য সময়ের জন্য।’

‘বিয়ে করবি না…?’

একটু অপ্রস্তুত লাজুক হাসি আসে আমার মুখে। ‘হ্যাঁ, করব। দেখি…’

‘আর কবে করবি-রে, ছত্রিশ পেরিয়ে গেল…’

সত্যি তাই। মাঝে মাঝে খেদ হয়। প্রতিষ্ঠার পিছনে দৗড়াতে গিয়ে প্রথম ও মধ্য যৗবনের সোনালি সময় পেরিয়ে গেছে। বিয়ে করা হয়ে ওঠেনি। এটাই সবাই জানে। আর একটা কারণ কেউ জানে না। সেটা আজ আর তিন্নিকেও বলা সম্ভব নয়। হেসে এড়িয়ে যাই প্রশ্নটা।

‘জানিস তো এটা তিন নম্বর বিয়ে। এটা অবশ্য বাবা-মার অমতে নিজের চয়েসে করেছি।’

‘শুনেছি।’ সংক্ষেপে উত্তর দিই আমি।

‘এই সাহসটা আঠারো বছর আগে দেখাতে পারলে ভালো হতো, বুঝলি…’

তিন্নির কথা শুনে চমকে উঠি আমি।

‘কিন্তু তখন সম্ভব ছিল না। নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে, আর্থিক ভাবে স্বাধীন হবার পর, বিয়ের ক্ষেত্রে অনেকটা স্বাধীনতা পাওয়া যায়। কিন্তু কম বয়সে বাবা-মা’র আঁচলের তলায় থেকে মেয়েদের সব কিছু অগ্রাহ্য করা সম্ভব হয় না…

তিন্নি কি জানত আমি ওকে ভালোবাসি! মনে মনে ভাবতে থাকি আমি। আর তার পরেই চমকে উঠি ওর কথায়।

‘আর আমার যখন বিয়ে হল… তখন তুই তো নেহাতই পুঁচকে…!’ হাসে তিন্নি।

আমি অস্বীকার করতে পারি না, প্রতিবাদও নয়। ধরা পড়ে চোরের মতো আমি তাকিয়ে থাকি মাটির দিকে।

‘ঋষি, তুই আমার একটা উপকার করে দিতে পারবি…?’ হঠাৎ আমার হাত চেপে ধরে তিন্নি।

আমি আমার সারা জীবনের স্বপ্নকে সামনে বসে দেখছি।

‘হ্যাঁ, কী…বল…’

‘আমি আমার বরকে তোদের কথা বলেছি। যারা আমার সাথে পড়েছিস। তোকে একটা কাজ করতে হবে। কথায় কথায় আমার বরকে বলবি যে আমরা ২০০১-এ মাধ্যমিক দিয়েছি।’

আমি চমকে যাই। ‘কী! ২০০১-এ? কেন?’

আমার চমকে ওঠা দেখে তিন্নি যেন একটু নিভে যায়।

আমরা মাধ্যমিক দিয়েছি ১৯৯১-এ। আর ও পাক্বা দশ বছর কমিয়ে বলতে বলছে! যাকে বলব জানি না তার মনে কী প্রতিক্রিয়া হবে…

‘তুই যদি এইটুকু কষ্ট করিস তাহলে আমার এই সংসারটা টিকে যায়…’

তিন্নির মুখ গ্লানির ভারে নত হয়ে যায়। আমি বুঝে উঠতে পারি না। চোখের জল সামলে নিয়ে তিন্নিই খোলসা করে ব্যাপারটা।

ওর এখনকার বর সুমনের বয়স সাতাশ। আর তিন্নির এখন ছত্রিশ। বয়স বেশি এই অভিযোগ তুলে সুমন এখন তিন্নিকে ছাড়তে চাইছে। সংসার বাঁচাতে তিন্নি ভুরি ভুরি মিথ্যা বলেছে ওকে। মাধ্যমিকের সাল দশ বছর কমিয়ে বলেছে তিন্নি। তিন্নির সৗন্দর্য আর শরীরের গড়ন তার মিথ্যা চার-পাঁচ বছর অনায়াসে লুকিয়ে দিতে পারে। কিন্তু দশ বছর! বলা অসম্ভব কিনা জানি না। তবে এটা একটা বেশ সাহসী মিথ্যা…

‘জানিস, ও এই কথাটাই বলেছে। বলেছে তোমার সাথে মাধ্যমিক দিয়েছে এমন কাউকে মিট করিয়ে দাও…’

পুরোনো বন্ধুর রিকোয়েস্টে দু’এক বছর অনায়াসে কমিয়ে বলাই যেত। কিন্তু দশ বছর! আমার দ্বিধা দেখে ফের আমার হাত মুঠোর মধ্যে ধরে তিন্নি। আমার দিকে কাতর ভাবে তাকিয়ে থাকে।

‘প্লিজ এটুকু একটু বলে দে…’

‘ওকে…তুই যখন বলছিস…’

এমন গ্লানিময় একটা বন্ধনকে টিকিয়ে রাখার জন্য তিন্নিকে এতটা মরিয়া দেখতে ভালো লাগে না। ও আমার মনের রাজকুমারী। আমি নিঃশব্দে কফিতে চুমুক দিতে থাকি।

তিন্নির চোখ যেন সামান্য ভিজে। সামলে নেয় তিন্নি। ধরে আসা গলা কিছুটা স্বাভাবিক করে নেয়।

‘এই বিয়েটা ভেঙে গেলে সবাই আমাকে কী বলবে জানিস?’ কফি কাপের উপর খেলা করতে থাকে তিন্নির লজ্জিত আঙুল।

‘খ-এ আকার দিয়ে একটা তিন অক্ষরের খুব লব্জ শব্দ ,যেটা পুরুষরা আমাদের সম্বন্ধে খুব নির্দ্বিধায় বলে ফেলে। আর সেটা চাই না বলেই…’

আমি চুপ করে থাকি।

‘সুমন শুধু শরীর বোঝে। ও অন্য একটা মেয়ের সাথে ইনভলড। সেই মেয়েটা আনম্যারেড, বয়স চব্বিশ। তাই আমাকে প্রতিদিন শুনতে হয়, ইউ আর ভেরি মাচ লুজ অন বেড…’

আবার তিন্নির চোখ ভিজে ওঠে। আমি অস্বস্তি নিয়ে বসে থাকি। কী বলব বুঝতে পারি না।

‘ও অনেক আগেই ছেড়ে চলে যেত। যাচ্ছিলও। আমিই আটকে রেখেছি। বিনিময়ে ও বলেছে কলকাতার ব্যাবসা পুরোটা ওর নামে লিখে দিতে হবে। অর্ধেকেও রাজি হয়নি। জানি এরমধ্যে ভালোবাসা বলে কিছু নেই। জানি পুরোটা হাতে পেলে ও যে-কোনও দিন ডিভোর্স দিয়ে ওই মেয়েটাকে বিয়ে করবে… তবু এই ভাবে আটকে রেখেছি। কারণ মেয়েদের একা থাকার মধ্যে অনেক গ্লানি। ছাড়াছাড়ি হলে সবাই ধরে নেয় মেয়েটিরই দোষ। আর তারপর একা থাকা মেয়েদের দিকে বয়সে ছোটো-বড়ো অনেক লোভী হাত, স্পর্শ, ইশারা..। কেউ মেয়েটির মনের খোঁজ নিতেই চায় না। সবাই চায় শরীরের চাহিদা দাবিদারহীন মেয়েটিকে দিয়ে মিটিয়ে নিতে। এই জীবনে কম তো দেখলাম না…’

আমি শুধু দেখছিলাম আমার শৈশব ও কৈশোরের মনের রাজকুমারীকে।

‘আচ্ছা ঋষি, তোর সেই পেন ভেঙে যাবার ঘটনাটা মনে আছে…’

চট করে মনে করতে পারি না কোন ঘটনার কথা বলছে তিন্নি।

‘সুদর্শন মির্ধার কোচিং এ…’

হঠাৎ মনে পড়ে যায় সেই ঘটনার কথাটা। কোচিং-এর এক এক ব্যাচে আমরা কুড়ি-বাইশজন করে পড়তাম। কিন্তু তিন্নির বাবার তো অনেক টাকা। তাই তিনি কোনও টিচারের এক ব্যাচে যা রোজগার ,তাকে তার থেকে বেশি টাকা মাসোহারা দিতেন। তিন্নি শুধু একা পড়ত এক ব্যাচে।

রবিবার তিন্নির সময় ছিল দুপুর একটা থেকে তিনটে। আমাদের তিনটে থেকে পাঁচটা। আমাদের ব্যাচের মধ্যে সবার আগে আমি গিয়ে পৌঁছেছি সেদিন। ঢুকে তিন্নিকে অঝোর নয়নে কাঁদতে দেখে অবাক হই।

‘ও। তোরা এসে পড়েছিস…’ স্যার অপ্রস্তুত স্বরে বলেন, ‘এই দ্যাখ্ না…। ইয়ে…জানলা দিয়ে একটা উড়ো জাহাজ যাচ্ছিল, বুঝলি… তিন্নি দেখতে গেছে উবু হয়ে। ওর উইংসান পেনটা ভেঙে গেল… তাই কাঁদতে লেগেছে… বোকা মেয়ে…!’

বলে বোকা বোকা হাসেন সুদর্শন স্যার।

ঘটনাটা আমার অনেকদিন মনে ছিল। ভুলিনি। কিন্তু কৗতূহল থাকলেও কোনওদিন তিন্নিকে জিজ্ঞেস করতে পারিনি কী ঘটেছিল সেদিন।

‘জননতন্ত্র বুঝতে গিয়ে সেদিন আমার কুমারীত্ব নাশ হয়েছিল, সুদর্শন মির্ধার হাতে বুঝলি…! যাকে পিতার মতো শ্রদ্ধা করতাম, সেই শিক্ষাগুরু সেদিন আমার সমস্ত বাধার প্রাচীর তছনছ করে দিয়ে শরীরটাকে খুবলে খুবলে খেয়েছিলেন। কাউকে বলতে পারিনি। একটা মেন্টাল ট্রমার মধ্য দিয়ে মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছিলাম…’

আমি তেমন কিছুই একটা এতদিন আন্দাজ করে এসেছিলাম। তবু ওর মুখ থেকে শুনে গা শিউরে ওঠে।

‘তারপর নিজেরই শরীরের প্রতি কেমন একটা ঘৃণা চলে আসে। নিজেকে অশুচি মনে হতো। সে সময় এল দুদুল। বুঝতে পারতাম ও আমাকে খুব করে চাইছে। আটকাতে চেষ্টা করিনি। মনে হতো ঘৃণার এই অশুচি শরীর আর কাকে দেব!’

‘ও আমাদের গ্রামে আসার আগেই একটা অ্যাফেয়ারে জড়িয়ে ছিল, জানতাম। কিন্তু বিয়ের পর আরও ভুল ভাঙল। দেখলাম, নিজের বৗদির সাথেও শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত। একটা ছেলে হল। তবুও বদলাল না। সম্পর্ক ভেঙে বেরিয়ে এলাম।’

একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল তিন্নি।

‘দ্বিতীয় বিয়েটা বাব-মা’র অনুরোধেই করলাম। ছেলেটা ছিল মায়ের ভেড়ুয়া। ওর মা-র সাথে বুলাই সামন্ত বলে একটা লোকের অবৈধ সম্পর্ক ছিল। বিয়ের পর একদিন আমি দেখে ফেলি। বুলাই ওদের জন্য দু’হাতে টাকা ওড়াত। তাই সে চাইতেই মা ছেলে দু’জনেই আমাকে চাপ দিতে লাগল তার সাথে শোবার জন্য। একদিন ওরা জোর করতে যায়। বুলাইকে আহত করে বেরিয়ে চলে আসি।’

আমিও দীর্ঘশ্বাস ফেলি এবার।

‘আর এই হল তিন নম্বর। যার কথা তোকে প্রথমেই বললাম।’

গল্প করতে করতেই সুমন এসে পৌঁছোয়। আলাপ করিয়ে দেয় তিন্নি। কাঁধ ঝাঁকিয়ে কায়দা করে ‘হ্যালো’ বলে সুমন। পুরোনো কথা গল্প করার ছলে সাহসী মিথ্যেটা শেষ পর্যন্ত বলেই ফেলি আমি। সুমন সামান্য চোখ কুঁচকে একবার আকাশের দিকে চায়। তারপর মুখ নামিয়ে মৃদু হাসে।

তিন্নির মুখও হাসিতে ভরে যায়। কিছু হারিয়ে আবার ফিরে পাবার মতো সেই হাসি।

তবে সে হাসি ওর বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। তিন মাস পরে পুজোর ছুটিতে গ্রামের বাড়িতে যাই আমি। বন্ধুদের সাথে একদিন ব্রিজ খেলতে খেলতে তিন্নির কথা ওঠে। সঞ্জয় বলে, ‘কালই শুনলাম, ওর তিন নম্বর বর সুমনের সাথেও নাকি ছাড়াছাড়ি হয়ে গেছে, জানিস?’

আমি চমকে উঠি। আবার!

অন্যরাও সে খবর তখনও শোনেনি। কাইজার শুনে মুখে চুকচুক আওয়াজ করে। ক্লাসমেট হলেও আজ ওদের কাছে তিন্নি আর ছোটোবেলার সেই মানস কন্যা নয়। আজ সে যে-কোনও এক নারী। যার বুকে আজ শুধুই মাংসের গন্ধ!

দীপাঞ্জন বলে ওঠে, ‘হুঁ! তিন তিনটে বর!! শালী পুরো একটা খা–’

হাতের তাস ফেলে তড়িৎ গতিতে ওর মুখে হাতচাপা দিই আমি। সবাই অবাক হয়ে আমার দিকে তাকায়। তাকাক। দীপের আর সেই বিশেষণটি উচ্চারণ করা হয়ে ওঠে না।

আমার দুঃখী রাজকুমারী যা শুনতে চায়নি। কোনও দিন…

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...