ড্রইংরুমে বসে কফির কাপে চুমুক দিতে দিতে তানিয়া চিন্তায় ডুবে গিয়েছিল। প্রায় দুই বছর হতে চলল বিয়ের।কলকাতায় হাতিবাগানে বড়ো হয়েছে, কলকাতাতেই পড়াশোনা। তারপর সমীরের সঙ্গে বিয়ে। সমীরের বাবা তানিয়ার বাবার বন্ধু ছিলেন। দুই বন্ধুর মধ্যে কথা হয়েই ছিল পরস্পরের মধ্যে আত্মীয়তা গড়ে তোলার। সমীর ক্লাস এইটে থাকতেই ওরা আমেরিকায় পাকাপাকি ভাবে পাড়ি দেয় কিন্তু দুটো পরিবারের বন্ধুত্ব অটুট ছিল। কথা মতো এমসসি করতে করতেই তানিয়াকে বাড়ির বউ বিসাবে সমীরের বাবা গ্রহণ করেন। ইন্ডিয়াতে ছেলেকে বিয়ে দিতে নিয়ে আসেন এবং শর্ত অনুযায়ী ঠিকও করা হয়, এমসসি কমপ্লিট করেই তানিয়া হিউস্টন চলে আসবে। সমীরের মা আমেরিকায় থাকাকালীনই গত হন।
রক্ষণশীল পরিবারে বড়ো হয়েছিল তানিয়া, তাই , শুনে এসেছে নারী পুরুষের লাগাম ছাড়া বন্ধুত্ব কখনও সমাজকে অগ্রগতির পথে নিয়ে যেতে পারে না। তাতে সমাজ কলঙ্কিত হয় বেশি। মেয়েদের স্কুলে পড়াশোনা শেষ করে এক বছর আগে তানিয়া হিউস্টনে সমীরে্র কাছে চলে এসেছে। অবশ্য সমীররা গ্রিনকার্ড হোল্ডার বলে তানিয়ার খুব একটা অসুবিধা হয়নি গ্রিনকার্ড পেতে। সমীরের কোম্পানিতেই তানিয়া এখন চাকরি করে।
সাত মাস হয়েছে তানিয়ার শ্বশুরমশাইও হার্ট অ্যাটাকে হঠাৎ-ই মারা যান। হিউস্টানে সমীরদের বড়ো বাংলোবাড়ি, আধুনিক সুখ-সুবিধারও কোনও অভাব ছিল না বাড়িতে। কিন্তু পুরুষ সম্পর্কে কেমন একটা ভীতির মনোভাব গড়ে উঠেছিল তানিয়ার মনে, যেটা শত চেষ্টা করেও মন থেকে সরাতে পারত না তানিয়া। কেমন যেন একটা আড়ষ্টতা বোধ করত বরাবর। সমীর ছেলে হিসেবে ভালো কিন্তু দুজনের মানসিকতা একেবারে ভিন্ন। আমেরিকান সংস্কৃতির মধ্যে সমীর বড়ো হয়েছে অথচ তানিয়ার বড়ো হয়ে ওঠা রক্ষণশীল পরিবেশে।
স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কোথাও একটা দূরত্ব রয়ে গিয়েছিল যেটা হাজার চেষ্টাতেও দেয়াল হয়ে দাঁড়াত। অথচ সমীরের চাহিদা প্রয়োজন সবই স্ত্রী হিসেবে তানিয়া মেটাবারই চেষ্টা করত। কিন্তু তানিয়া মনে করতে পারে না, সমীরের মুখে নিজের কোনও প্রশংসা শুনেছে বলে। বাইরের পার্টিতেও সমীরের সঙ্গে খুব কমই গেছে তানিয়া। যেহেতু তানিয়া বাইরের পুরুষের সামনে খুব একটা সহজ হতে পারত না তাই সমীরও ওকে নিয়ে পার্টি যাওয়া অ্যাভয়েড করত তানিয়ার মনে, সমীরের ওর প্রতি এই উদাসীনতা খুব ব্যথা দিত। ও কিছু বলতে চাইলেও সমীর ধৈর্য ধরে পুরো কথা না শুনেই কাজের বাহানায় অন্য ঘরে বা বাইরে চলে যেত। আজও যেমন ছুটির দিনেও সমীর কিছু না বলেই বেরিয়ে গেল শুধু বলে গেল বাড়ি ফিরতে সন্ধে হয়ে যাবে।
হঠাৎই ল্যান্ডলাইনের লাগাতার বেজে চলা আওয়াজটা তানিয়ার একাগ্রতা ভঙ্গ করে। কফির কাপটা নামিয়ে রাখে। তাড়াতাড়ি উঠে ফোনের রিসিভার উঠিয়ে নেয় তানিয়া,
‘হ্যালো, হু ইজ স্পিকিং?’
‘তানু, আমি নন্দা বলছি। আজ বাড়িতে আছিস?
‘হ্যাঁ, কেন রে?’
‘আজ মনটা খুব খারাপ লাগছে একটু আপসেটও। তোর সঙ্গে সারাটা দিন একটু স্পেন্ড করতে চাই।
‘ওকে ফাইন। জাস্ট চলে আয় আর এখানে বসে আমার সঙ্গে ব্রেকফাস্ট করবি। তোর পছন্দের কড়াইশুঁটির কচুরি করেছি। সমীরও সকাল সকাল খেয়ে বেরিয়ে গেল, ফিরতে সন্ধে হবে। আর হ্যাঁ, মৈনাককেও নিয়ে আসিস।’
‘আমি একলাই আসব তানু’, বলে নন্দা ফোন কেটে দিল।
নন্দাকে তানিয়া কলকাতা থেকেই চিনত। একই পাড়ায় থাকত, স্কুলে এক ক্লাস উঁচুতে পড়ত নন্দা। তানিয়ার থেকে বছর দুই বড়ো হবে। পাড়াতেই বন্ধুত্ব হয় দুজনের। পরে বাড়ির অমতে নিজের পছন্দের পাত্র-কে বিয়ে করে নন্দা তানিয়ার বিয়ের আগেই আমেরিকায় চলে আসে। এখানে একই শহরে থাকায় নতুন করে দু জনের মধ্যে যোগাযোগ হয় এবং আসা যাওয়াও বাড়তে থাকে।
নন্দা এসেই টেবিলে নিজের ব্যাগ আর মোবাইল নামিয়ে রাখতে রাখতেই বলে, ‘তানু, আগে কফি খাওয়া। তারপর বসে আড্ডা মারা যাবে।’
তানিয়া কফি বানিয়ে টেবিলে নন্দার মুখোমুখি বসল, ‘কী রে, সকালে বললি মন খারাপ, কী হল? আর সাধারণত তুই মৈনাকের সঙ্গেই আসিস। আজ মৈনাক এল না কেন?’
‘কাল রাত্রে মৈনাকের সঙ্গে খুব ঝগড়া হয়েছে। ও আমাকে প্রচণ্ড বকাবকি করেছে।’
‘মৈনাক তোকে বকেছে... ইমপসিবল। এখনও পর্যন্ত তুই মৈনাকের উপর চ্যাঁচাতিস, এটাই দেখে এসেছি। নিশ্চয়ই তুই বড়ো কোনও অন্যায় করেছিস।
‘কীসের অন্যায়? মৈনাক তাতাইকে নিয়ে চেস টুর্নামেন্টে গিয়েছিল। মৈনাকের খুব বন্ধু হচ্ছে সিদ্ধার্থ। ও ফোন করে, আমরা কী করছি না করছি জিজ্ঞাসা করছিল তাতে আমি বলি মৈনাক ছেলেকে নিয়ে বেরিয়েছে। কী কারণে ফোন করেছে জিজ্ঞাসা করতে ও বলল, মুভি দেখতে যাচ্ছিল। আমরা যাব কিনা জিজ্ঞাসা করার জন্যই ও ফোন করেছে’, বলে নন্দা একটু চুপ করে।
‘তারপর?
‘সিদ্ধার্থকে এত ভালো করে চিনি সুতরাং ওর সঙ্গে একা একাই মুভি যেতে আমি রাজি হয়ে যাই। মুভি দেখে আমরা বাইরে লাঞ্চ করি, মৈনাক এবং তাতাইয়ের জন্যও প্যাক করিয়ে নিই খাবার।
বরের বন্ধুর সঙ্গে একা একা সিনেমা দেখতে যাওয়ার কথা তানিয়া ভাবতেই পারে না, তাই চট্ করে মুখ থেকে বেরিয়ে আসে, ‘একা চলে গেলি সিদ্ধার্থর সঙ্গে? মৈনাককে জানিয়েছিলি মুভি দেখতে যাওয়ার আগে?’
‘না, আগে বলিনি কিন্তু ফিরে এসে তো বলেছি। তাতে হয়েছেটা কী? কিন্তু সব শুনেই মৈনাক এমন চ্যাঁচামেচি আরম্ভ করে দিল, আমার নাকি একজন ব্যাচেলারের সঙ্গে মুভি দেখতে যাওয়া ঠিক হয়নি। এই নিয়েই ঝগড়ার সূত্রপাত। মৈনাক রেগে আমাকে জিজ্ঞেস করল আমি ওর সঙ্গে থাকতে চাই কিনা। শুনে আমি রাগের মাথায় বলে দিয়েছি থাকতে চাই না। আমি ওর কাছে ডিভোর্স চেয়েছি কারণ জানি আমেরিকায় ডিভোর্স পাওয়া খুব একটা কঠিন হবে না।’
চুপ করেই নন্দার কথা শুনছিল তানিয়া। মনের মধ্যে নানা চিন্তা এসে ভিড় করছিল। নন্দার সঙ্গে নিজের পার্থক্যটা বারবার চোখের সামনে ভেসে উঠছিল তানিয়ার। মায়ের কাছে শুনে এসেছে পরপুরুষের স্পর্শ পাপ। হাইস্কুলে যখন তানিয়া, তখন ওর মনে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছিল লাভ ম্যারেজ খুব খারাপ জিনিস। বাপের বাড়ি থেকে বিয়ে হয়ে মেয়েরা শ্বশুরবাড়ি যায় আর সারা জীবনটা সেখানেই কাটিয়ে ফেলার পর মৃত শরীরটাই শ্বশুরবাড়ির চৗকাঠ পেরয়।
তানিয়া কিছুতেই ভেবে পাচ্ছিল না যেখানে আজও বাড়িতে শেখানো বুলিগুলোর শৃঙ্খল ভেঙে ও বেরোতে পারেনা, সেখানে নন্দা নিজের পছন্দে বিয়ে করে আমেরিকায় চলে এল এবং এখন ডিভোর্সের কথাও চিন্তা করছে। নন্দার কথাগুলো পুরোনো স্মৃতি ফিরিয়ে আনল তানিয়ার সামনে। তানিয়ার মনে হল ও যদি আর একটু বোল্ড হতো তাহলে ওরও নিজস্ব একটা মতামত থাকত এবং সমীরের সঙ্গে হয়তো গোটা জীবনটা কাটাতে হতো না। মনে পড়ল হর্ষ-র কথা। ছেলেটির পুরো নাম হর্ষবর্ধন। ভারতীয় হলেও বাঙালি নয় এটা তানিয়া শুনেছিল। তানিয়ার কোম্পানিতেই নতুন রিক্রুট, পেশায় ইঞ্জিনিয়ার। দু’জনের কেবিন ঠিক সামনাসামনি। মাঝে মাঝেই তানিয়া বুঝতে পারত ছেলেটি ওর দিকে তাকিয়ে আছে। ওরও চোখ পড়ে যেত মাঝেমধ্যেই। চোখাচোখি হলেই দুজনেই চোখ নামিয়ে নিত। কেন জানি না ছেলেটিকে লুকিয়ে চুরিয়ে দেখতে তানিয়ার বেশ ভালোই লাগত। একটা শিহরণ অনুভব করত। ওরও মনে হতো ছেলেটি ওকে দ্যাখে মানে ওর নিজের মধ্যেও এমন কিছু আছে যেটা ছেলেটির দৃষ্টি আকর্ষণ করে। অফিসের ক্যান্টিনে প্রায় রোজই ওদের দেখা হতো। মৗখিক সৗজন্য বিনিময় ছাড়া বিশেষ কিছু কথা হতোই না। এরই মধ্যে তানিয়া প্রেগন্যান্ট হয়েছে। এই সুখানুভূতি স্বামীর সঙ্গে শেয়ার করলেও সমীরকে উচ্ছ্বসিত হতে দেখেনি তানিয়া। সুতরাং নিজের মনের ভিতরেই এই আনন্দকে দাবিয়ে রাখতে বাধ্য হয়েছে ও। শুধু মাঝে মধ্যে অফিসে গিয়ে তানিয়া লক্ষ্য করত হর্ষের দৃষ্টি ওর শরীরের উপরেও ঘোরাফেরা করছে। সংকোচ বোধ করত, কারণ মাতৃত্বের সব লক্ষণই ধীরে ধীরে ওর শরীরে ফুটে উঠছে বুঝতে পারত। লজ্জায় লাল হয়ে উঠত ও। একদিন পার্সোনাল কম্পিউটার খুলেই তানিয়া খেয়াল করল হর্ষ ওকে ফেসবুকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়েছে। আশ্চর্য হল, কারণ সেখানে বিশেষ কোনও কথাবার্তাই হয় না সেখানে একেবারে সোজাসুজি ফ্রেন্ডশিপের জন্য রিকোয়েস্ট পাঠিয়ে  দেওয়াটা একটু বাড়াবাড়ি। কটা দিন  অস্বস্তিতেই কাটাল তানিয়া, হর্ষের বন্ধুত্ব স্বীকার করবে কিনা। কিন্তু নিজেকে আটকাতে পারল না তানিয়া। হর্ষের সঙ্গে কথা বলার জন্য মন ছটফট করছিল, অতএব ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট অ্যাকসেপ্ট করে নিল ও। সঙ্গে সঙ্গে উত্তর এল ‘থ্যাংকস’।কর্মক্ষেত্রে হর্ষ এবং তানিয়ার মধ্যে কথাবার্তা আগের মতোই রয়ে গেল, সেটা খানিকটা সংকোচের জন্য বলেই মনে হতো তানিয়ার। অথচ বাড়ি ফিরে ফেসবুকে হর্ষের লগ-ইন করার অপেক্ষায় থাকত ও। সমীরও জানত ওর এই নতুন ফেসবুক বন্ধুটির কথা। ওর কাছে এটা খুবই একটা সাধারণ ব্যাপার ছিল যার জন্য, তানিয়াকে সন্দেহ বা নিজে আশ্চর্য হওয়ার কোনও অবকাশ ছিল না। ওর উপর এর কোনও প্রভাব পড়তেও দেখল না তানিয়া। ফেসবুকে চ্যাট করতে করতেই তানিয়া   জানতে পারল হর্ষ বোকারোর ছেলে। বিটেক কমপ্লিট করে আমেরিকায় স্টুডেন্ট এবং এখান থেকে মাস্টার্স করে এখন ওপিটি-তে রয়েছে। আমেরিকায় সায়েন্স, টেকনোলজি, ইঞ্জিনিয়ারিং এবং ম্যাথ্স-এ গ্রাজুয়েশন করার পর কম করে বারো মাস পর্যন্ত অপশনাল প্র্যাক্টিক্যাল ট্রেনিং-স্লর সুযোগ দেওয়া হয় এবং ওই সময় চাকরি করাও যেতে পারে। এই টাইম পিরিয়ডের মধ্যে যদি কোনও কোম্পানির মাধ্যমে জব ভিসা এইছ ওয়ানবি পাওয়া যায় তাহলে আরও তিন বছর আমেরিকায় চাকরি করা যেতে পারে। নয়তো নিজের দেশে ফেরত যেতে হবে। এরপর তানিয়াকেও মেটারনিটি লিভ নিতে হল অফিস থেকে। ছেলের জন্মের পর অফিস থেকেও সকলে অভিনন্দন জানিয়ে মেসেজ পাঠাল ওদের দুজনকেই। একটি হোটেলে তানিয়া আর সমীর একটা পার্টির আয়োজন করল যেখানে অফিসের সব বন্ধু-বান্ধব, স্টাফ সকলকেই নিমন্ত্রিত করা হল। ওখানেই এত মাস বাদে তানিয়ার মুখোমুখি হল হর্ষ। তানিয়াকে অভিনন্দন জানিয়ে আস্তে করে কানের কাছে মুখ নিয়ে চাপাস্বরে বলল, ‘তানিয়া এমনিতেই তুমি সুন্দরী তার উপর মা হওয়ার পর আরও সুন্দর হয়ে উঠেছ। আমি তোমাকে খুব মিস করছি। অফিস কবে জয়েন করছ?’
হর্ষের কথায় তানিয়ার মনে শিহরণ খেলে গেল। এইভাবে ওকে ‘মিস’ করার কথা কেউ কোনওদিন বলেনি। সমীরের কাছে তো ও টেকেন ফর গ্রানটেড-ই। কোনওদিন সমীরের মুখে শোনেনি যে ও তানিয়াকে মিস করেছে। এক মাস বাদে তানিয়া অফিস জয়েন করল। বাচ্চার জন্য ডে-কেয়ারের ব্যবস্থা করতে হল তানিয়াকে। অফিসে হর্ষের সঙ্গে রোজই দেখা হতো কিন্তু কথা হতো না। মেসেজেই যে-টুকু কথা হতো ব্যস ওই অবধিই।
অফিসে একদিন মিটিং চলাকালীন তানিয়াকে হর্ষের পাশের চেয়ারটাতে বসতে হল। হর্ষ খুব ধীরে যাতে কেউ না শুনতে পায় সেইভাবে জিজ্ঞেস করল, ‘আমার সঙ্গে কথা বলতে অস্বস্তি হয় কেন তোমার?’
তানিয়া হ্যাঁ-না কিছুই উত্তর দিল না। ‘কখনও সন্ধেবেলায় আমরা কফি খেতেও তো যেতে পারি’, হর্ষ তানিয়ার দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করল।
‘পরে কথা বলছি’, চোখ না সরিয়েই তানিয়া উত্তর দিল।
তানিয়াও হর্ষকে মিট করার জন্য ভিতরে ভিতরে ছটফট করছিল কিন্তু হর্ষ ওর মধ্যে কী খুঁজছে বা কী ওর থেকে আশা করছে সেটা কিছুতেই তানিয়া বুঝে উঠতে পারছিল না।
এর কিছুদিন পর একটা অফিসিয়াল পার্টিতে তানিয়া আবার মুখোমুখি হল হর্ষের। হর্ষ-ই প্রথম নীরবতা ভঙ্গ করল, ‘দুদিন তোমার সঙ্গে কথা বলার সুযোগ হল তানিয়া। কেন জানি না তোমার সঙ্গে সময় কাটাতে আমার ভালো লাগে।’
‘আমারও ভালো লাগে তোমার সঙ্গ, কিন্তু কেন, আমি উত্তর দিতে পারব না... ব্যস ইট হ্যাপেনস সো। কিন্তু তুমি এর থেকে কী পাও?’ তানিয়া হর্ষ-কে জিজ্ঞেস করে।                                    ‘ওটাই, যেটা তুমিও অনুভব করো, আনন্দ’, বলে হর্ষ, তানিয়ার টেবিলের উপর রাখা হাতটা নিজের হাতে তুলে নেয়। মিউজিক শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হর্ষ তানিয়াকে ওর সঙ্গে ডান্স করার জন্য হাত ধরে আকর্ষণ করে। সংকোচবশত তানিয়া ‘না’ বলে দিলেও হর্ষ জোর করেই প্রায় ডান্স ফ্লোরে ওকে নিয়ে যায়। হর্ষের স্পর্শে রোমাঞ্চিত হয়ে ওঠে তানিয়া। হর্ষের কাঁধে মাথা রাখতে ইচ্ছে করে তানিয়ার কিন্তু ওর সংস্কারাচ্ছন্ন মন সায় দেয় না তাতে। ডান্স শেষ হলে আবার নিজের নিজের চেয়ারে ফিরে আসে। কিছুটা স্বস্তির নিশ্বাসও ফেলে তানিয়া। সমীর সঙ্গে নেই তাই এই স্বাধীনতাটুকু ও উপভোগ করার সাহস সঞ্চয় করতে পেরেছে। অপরাধবোধটাও অনেকটাই হালকা নয়তো সমীর ছাড়া কারও হাতে নিজেকে সঁপে দেওয়ার কথা তানিয়া স্বপ্নেও চিন্তা করতে পারে না।                                                                                                       সিরিয়াস হয় হর্ষ, ‘তানিয়া আমি এইছওয়ান বি ভিসা পেয়ে গেছি, আমাকে কয়েকদিনের জন্য ইন্ডিয়া যেতে হবে পাসপোর্টে ভিসায় স্ট্যাম্প লাগাবার জন্য। কিন্তু স্টেপিং-এর জন্য ভয় পাচ্ছি।’ ‘কেন?’                                                                                                                                 ‘আগে তো এটা নেহাতই একটা নর্মাল প্রসিডিওর ছিল কিন্তু আজকাল শুনছি নতুন নিয়ম করেছে, কন্সুলেট ইন্টারভিউ হবে। অপ্রয়োজনীয় জিজ্ঞাসাবাদ করে, তাছাড়া আমেরিকা থেকে ক্লিয়ারেন্স নিতেও প্রচুর সময় লাগিয়ে দেয়।'                                                                                  ' কবে যাচ্ছ?’                                                                                                                       ’নেক্সট উইক। তোমাকে খুব মিস করব, আর তুমি?’                                                                ‘হ্যাঁ আবার না-ও’, তানিয়া উত্তরটা এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে, ‘ইন্ডিয়ায় গেলে আমার বাবার সঙ্গে একটু কনট্যাক্ট করতে পারবে... প্লিজ। আমি বাবার ফোন নম্বর দিয়ে দেব।’                           ‘তুমি আমাকে নিশ্চয়ই পর ভাবো নয়তো সামান্য এইটুকু অনুরোধ করার জন্য এত  সংকোচ কেন? বোকারো থেকে কলকাতা মাত্র ৭-৮ ঘন্টায় পৌঁছে যাওয়া যায়। আমি তোমার বাবার কাছে নিজেও চলে যেতে পারি।’                                                                                                         হর্ষ ইন্ডিয়া চলে গেল। হর্ষের খালি কেবিনটার দিকে তাকালেই কান্না পেত তানিয়ার। ডানা মেলে ওড়ার ইচ্ছেটাতেও প্রথমেই ডানা ছেঁটে দেওয়ার নির্ণয় নিলেন ভগবান। ফোনে, ভিডিও চ্যাটিং-এ হর্ষের সঙ্গে কথা হতো তানিয়ার। জানতে পরল খুবই চিন্তার মধ্যে আছে হর্ষ কারণ কন্সুলেট-এ অনেকটা সময় লাগছিল সবকিছু ক্লিয়ার হতে। প্রায় দুই মাস পর হর্ষ আমেরিকায় ফিরলে জানতে পারল তানিয়া ওই কোম্পানি ছেড়ে অন্য কোম্পানি জয়েন করেছে।                    ফোনেই হর্ষ তানিয়াকে জানাল, ‘একদিন দেখা করো। তোমার বাবা বোকারো এসে তোমাদের জন্য কিছু জিনিসপত্র দিয়ে গেছেন।’                                                                                  সেদিনই একটা কাফেতে দু’জনে দেখা করল। ‘তুমি আমাকে অ্যাভয়েড করার জন্যই অন্য জব নিয়েছ, তাই না তানিয়া’, প্রথমেই হর্ষ জিজ্ঞেস করল।                                                         তানিয়া বোঝাবার চেষ্টা করে, ‘আমার সম্পর্কে এরকম ভাবলে আমি দুঃখ পাব হর্ষ। নতুন অফিস আমার বাড়ি থেকে অনেক কাছে ফলে ছেলেকে বেশি সময় দিতে পারি।’                        তানিয়াও হর্ষকে খুবই মিস করছিল কিন্তু সন্তানের প্রতি মায়ের স্নেহ, দায়িত্বর অনেক বেশি গুরুত্ব ছিল তানিয়ার কাছে। দুজনে একদিন একটা রেস্তোরাঁ-তে বসে খাবারের অর্ডার দিচ্ছে, তানিয়া লক্ষ করল হর্ষ কেমন জানি মনমরা। ওকে আগে কখনও এরকম দেখেনি তানিয়া। অর্ডার দেওয়া হয়ে গেলে তানিয়াই জিজ্ঞেস করল, ‘কী হয়েছে হর্ষ? অফিসে কিছু গণ্ডগোল? তুমি তো এরকম চুপচাপ থাকো না?’                                                                                     হর্ষের চোখের কোণ চিকচিক করে উঠল, ‘তানিয়া, তুমি চলে যেতে আমি অফিসে কিছতেই মন বসাতে পারছি না। তোমার কেবিনের দিকে বারবার চোখ চলে যায়। তোমাকে রোজ দেখে মনের মধ্যে একটা প্রশান্তি অনুভব করতাম। মনে হচ্ছে সব ছেড়েছুড়ে ইন্ডিয়া ফেরত চলে যাই।’ ‘এরকম বোকামি কোরো না। এত কষ্ট করার পর ভিসা পেয়েছ, ছয় বছর তো এখন নিশ্চিন্তে কাজ করো। এমনও হতে পারে এই ছয় বছরের মধ্যে কোম্পানি তোমার গ্রিনকার্ডও স্পন্সর করে দিতে পারে’, তানিয়া আশা দেয় হর্ষ-কে।                                                                               ‘আশা খুবই কম তানিয়া’, হতাশ শোনায় হর্ষের কণ্ঠস্বর।                                                        ‘ঠিক আছে দেখছি তোমাকে কোনও হেল্প করতে পারি কিনা’, তানিয়া আশ্বাস দেয়।                এর দু-তিনদিন পর তানিয়া হর্ষ-কে ফোন করে ওর সঙ্গে দেখা করতে বলে। কাফেতে দুজন সামনাসামনি বসে স্যান্ডউইচে কামড় বসাতে বসাতে হর্ষ জিজ্ঞেস করল, ‘কী ব্যাপার জরুরি তলব কেন?’                                                                                                                       ‘ফোনে বলা সম্ভব ছিল না। আমার কোম্পানিতে ভ্যাকেন্সি আছে। আপ্লাই করো, আমি রেফার করে দেব তাহলে মনে হয় হয়ে যাবে। একটা ইন্টারভিউ কল অবশ্য যাবে তোমার কাছে।’      এক মাসের নোটিশ দিয়ে হর্ষ, তানিয়ার কোম্পানি জয়েন করল। সামনাসামনি কেবিন না হলেও আসতে যেতে হামেশাই ওদের দেখা হতো এবং কথা বলারও কোনও অসুবিধা রইল না।  ক্যান্টিনে একসঙ্গে লাঞ্চ করতে করতে হর্ষ হঠাৎই তানিয়ার হাত দুটো নিজের হাতে নিয়ে বলল, ‘তোমার সঙ্গে দেখা হলেই কেন যে এত ভালো লাগে নিজেই বুঝতে পারি না। একদিন না দেখলে মন ছটফট করে।’                                                                                                               ‘একটা কথা জিজ্ঞেস করি, সত্যি উত্তর দেবে?’ এখন তো তুমি ভালো চাকরি করছ, একটা ভালো মেয়ে দেখে বিয়ে কেন করে নিচ্ছ না?’                                                                                    ‘হুবহু তোমার একটা কপি নিয়ে এসো, আমি এখুনি বিয়ে করতে রাজি আছি।’                    ‘আমার মধ্যে এমন কী আছে?’                                                                                          ‘তোমার ইনোসেন্স, হরিণের মতো বড়ো বড়ো চোখ, মুক্ত ঝরে পড়ার মতো হাসি, গালে টোল পড়া, –সবকিছুই আমাকে তোমার প্রতি আকর্ষণ করে।’                                                        ‘হর্ষ... প্লিজ... এগুলো বলার কোনও অর্থ আছে কি? তুমি ভালো করেই জানো আমি বিবাহিতা এবং সন্তানের মা-ও বটে। ফ্লার্ট করেও আমার কাছ থেকে তোমার কিছুই পাবার নেই।’          ‘আমি একবার বলেছি যে তুমি স্ত্রী বা মা নও? আমি শুধু তোমাকে দেখে মনে আনন্দ পাই এই পর্যন্ত। এটাই আমার পাওনা।’                                                                                               হর্ষের কথাগুলো তানিয়ার মুখ-চোখ লজ্জায় লাল করে তুললেও যথাসম্ভব নিজেকে সংযত রেখে তানিয়া বলল, ‘আমার থেকেও ভালো হাজারো মেয়ে তুমি পেয়ে যাবে হর্ষ।’                               হর্ষ অনড়, ‘বললাম না, যে তোমার একেবারে ডিটো কপি চাই। তোমার থেকে ভালো আমার দরকার নেই।’                                                                                                                         ‘হর্ষ, দ্যাখো যতদিন না তুমি বিয়ে করছ আমিও তোমার প্রতি আকর্ষিত হতে থাকব, মন দিয়ে নিজের সংসার করতে পারব না। আর তুমিও মিথ্যা মরীচিকার পিছনে ছুটে মরবে। আমি এটা একেবারেই চাই না’, দৃঢ় কণ্ঠে তানিয়া বলে।                                                                            ‘ঠিক আছে, আমাকে একটু ভাবার সময় দাও। তানিয়া মনে মনে ঠিক করে নেয়, হর্ষ এটা নিয়ে ভাবুক বা নাই ভাবুক, ওকে একটা ডিসিশনে আসতেই হবে। নিজের আনন্দের জন্য হর্ষ-কে কিছুতেই ও আর ব্যবহার করবে না।                                                                                পরেরবার যখন তানিয়া হর্ষের সঙ্গে অফিসের বাইরে দেখা করল প্রথমেই জিজ্ঞেস করল, ‘বিয়ের ব্যাপারে কী ভাবলে হর্ষ?’                                                                                                    ‘আমার বিয়ে নিয়ে কেন  উঠেপড়ে লেগেছ? আমি তো তোমাকে দেখেই দিব্যি আনন্দে আছি।’ ‘আমারও ভালো লাগে তোমার সঙ্গে সময় কাটাতে। আমি তোমাকে কোনওদিনও ভুলতে পারব না। বিশ্বাস করো আমার কথা, আর তুমি প্লিজ এবার একটা বিয়ে করো।’                             কিছুটা সময় কেটে গেল। কেউই কোনও কথা বলল না। হর্ষের উদাসীনতা লক্ষ করল তানিয়া। নিজেও মুখ ফুটে কিছু বলতে পারল না। তানিয়াও বুঝতে পারছিল হর্ষের থেকে দূরে চলে গেলেও নিজেও দুঃখ পাবে কিন্তু তাই বলে এরকম একটা সম্পর্ক বয়ে বেড়াবারও কোনও মানে নেই। এ হল নদীর দুটো পাড়, যা কোনওদিনই একসঙ্গে মিশতে পারবে না।                                   তানিয়াই নিস্তব্ধতা ভঙ্গ করল, ‘হর্ষ আমরা দুজন একইরকম বন্ধু থাকব, আমাদের দেখাও হবে তোমাকে প্রমিস করছি, কিন্তু এই  ভাবে নয়। তুমি তোমার ওয়াইফের সঙ্গে আসবে। আর একটা কথা, আমাদের দেখা হলেই তোমাকে দেখেছি আমার মধ্যে কিছু একটা খুঁজতে থাকো সেটা তোমাকে বন্ধ করতে হবে।  এটাতেই আমাদের দুজনকে সন্তুষ্ট থাকতে হবে। আমাদের সম্পর্কটা নিয়ে মিথ্যা ভাবার সুযোগ আমি কাউকে দিতে চাই না।’                                                        হঠাৎ-ই হর্ষ উঠে দাঁড়ায়, ‘ঠিক আছে তানিয়া। আমি তোমার সব কথা মেনে নেব, কিন্তু আমার একটা শর্ত আছে।’                                                                                                                    ‘কী শর্ত?’                                                                                                                          ‘একবার আমি তোমার স্পর্শ পেতে চাই। একবার শুধু তোমাকে দুহাতে জড়িয়ে ধরে বুকের কাছে টেনে আনতে চাই।’                                                                                                                 বিনা সংকোচে তানিয়া নিজেকে হর্ষের কাছে সঁপে দেয়। হর্ষের বক্ষলগ্না হয়ে পরম শান্তি অনুভব করে তানিয়া। হর্ষের কাঁধে মাথা রাখে তানিয়া।                                                                   ‘তানিয়া, এই ইচ্ছে আমার কতদিনের। আজ এই ইচ্ছে আমার পূরণ হল, এখন আমি যদি তোমাকে না ছাড়ি’, হর্ষ তানিয়ার মুখ নিজের দিকে তুলে ধরে।                                               ‘আর আমার ছেলে যদি আমার জন্য কাঁদে তাহলেও তুমি ছাড়বে না?’                                  সঙ্গে সঙ্গে হর্ষ বাহুর বাঁধন আলগা করে তানিয়াকে মুক্ত করে দেয়, ‘এই মুহূর্তটা আমি কখনও ভুলব না তানিয়া।’                                                                                                               ‘আমিও না, হর্ষ।’                                                                                                                তানিয়া মনে মনে প্রার্থনা করে, হর্ষের যে স্ত্রী হবে সে যেন হর্ষ-কে এতটাই ভালোবাসে যাতে হর্ষের মন থেকে তানিয়ার স্মৃতি মুছে যায়, ওকে যেন বারবার তানিয়ার কেবিনের দিকে তাকাতে না হয়। নিজের মনকেও বোঝায় তানিয়া, এবার থেকে হর্ষের সঙ্গে মুখোমুখি কথা বন্ধ করতে হবে, মনের স্মৃতিকোঠায় শুধু সযত্নে তুলে রাখবে হর্ষকে।                                                                          হঠাৎ-ই ডোরবেলের আওয়াজে ঘোর কাটে তানিয়ার। অতীত থেকে এক ধাক্বায় বর্তমানে এসে পড়ে। দরজা খুলতেই দেখে সামনে দাঁড়িয়ে মৈনাক। ভেতরে আসার আমন্ত্রণ জানায় মৈনাককে।                                                                                                                         মৈনাক নন্দার দিকে তাকায়, ‘তাড়াতাড়ি চলো নন্দা। উকিলকে সময় দেওয়া আছে, ডিভোর্সের পেপারও রেডি। শুধু গিয়ে সাইন করতে হবে। মৈনাকের কথায় তানিয়া অবাক হয়ে যায়। ধমক দিয়ে ওঠে মৈনাককে, ‘এইসব ছোটোখাটো জিনিসের জন্য কেউ ডিভোর্সের কথা ভাবে মৈনাক?’ ‘তোমার বন্ধুই তো ডিভোর্সের জন্য জোর করেছে।’ নন্দার দিকে তাকাতেই তানিয়া দেখে আষাঢ়ের মেঘে বৃষ্টির সঞ্চার হয়েছে। নন্দার দুই চোখে ধারা নেমেছে, ‘আমি তো মজা করে কথাটা বলেছিলাম,’ কণ্ঠ রুদ্ধ হয়ে আসে নন্দার।                                                                    ‘তো, আমিও সিরিয়াসলি কথাটা বলেছি নাকি?’ কৗতুকে চকচক করে ওঠে মৈনাকের চোখ দুটো ‘চলো বাড়ি চলো’, মৈনাক বলে। দৌড়ে নন্দা গিয়ে মৈনাককে জড়িয়ে ধরে যেন এই মুহূর্তটারই অপেক্ষা করছিল নন্দা।                                                                                                            ওরা দু’জনে চলে যেতে তানিয়া ছেলেকে খাইয়ে সবেমাত্র ওর শোয়ার ব্যবস্থা করছে, সমীর বাড়ি ফিরে জানাল, ‘তানিয়া তুমি আদির জন্য যে স্কুল চাইছিলে, তোমার ছেলের সেখানেই অ্যাডমিশন হয়ে গেছে।’                                                                                                                    তৎক্ষণাৎ তানিয়ার মনে হল, ছেলে কি ওর একার ? সমীর ‘আমাদের ছেলেও’ তো বলতে পারত। যে স্কুলে ছেলের অ্যাডমিশন হয়েছিল সেটা শহরের সবথেকে ভালো স্কুল। তাই কথাটা শুনেই তানিয়া আনন্দে সমীরকে জড়িয়ে ধরল। কিন্তু ওর প্রতিক্রিয়ায় সেই আগের উদাসনতাই খেয়াল করল তানিয়া। তাও কিছুক্ষণ ওই ভাবেই তানিয়া অপেক্ষা করল যদি সমীর ওর আহ্বানে সাড়া দেয়। ধীরে ধীরে তানিয়া নিজেকে সরিয়ে আনল সমীরের সংস্পর্শ থেকে। নিজের জগতে আবার ফিরে গেল ও, কারণ স্পষ্টই বুঝতে পারল সমীরের থেকে এতটা আশা করা ওরই অনুচিত ছিল।

आगे की कहानी पढ़ने के लिए सब्सक्राइब करें

ডিজিটাল

(1 साल)
USD10
 
সাবস্ক্রাইব করুন

ডিজিটাল + 12 প্রিন্ট ম্যাগাজিন

(1 साल)
USD79
 
সাবস্ক্রাইব করুন
আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...