আমাদের দেশে শুষ্কতার মিশেলে তৈরি হয় অসহ্যকর পরিস্থিতি। আর এই পরিস্থিতিতে চোখ আক্রান্ত হয় অ্যালার্জিক কনজাংটিভাইটিস-এ। কিন্তু কীভাবে বুঝবেন আপনি এই অসুখে আক্রান্ত হয়েছেন? কিংবা, সঠিক সময়ে চিকিৎসা করালে আপনি কী উপকার পাবেন, সেই বিষয়ে সম্প্রতি আলোকপাত করেছেন ডা. জয়িতা দাস।

Allergic Conjunctivitis কী?

অ্যালার্জির কারণে যখন চোখের সাদা অংশে একপ্রকার পাতলা আস্তরণ পড়ে চোখ চুলকোতে থাকে এবং লাল হয়ে ওঠে, সেই অবস্থাটিকে বলা হয় চোখের অ্যালার্জিক কনজাংটিভাইটিস।

চোখের Allergic Conjunctivitis কখন এবং কেন হয়?

চোখের এই অসুখ, অর্থাৎ, অ্যালার্জিক কনজাংটিভাইটিস সারাবছর ধরে অনেকেরই হতে থাকে। তবে, গ্রীষ্মকালে এই রোগের প্রকোপ বাড়ে। আর এই অসুখে বেশি আক্রান্ত হয় শিশুরা। কারণ, শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে। আসলে, গ্রীষ্মকালে ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রা, ধুলো-ধোঁয়াযুক্ত দূষিত বায়ু, কিছু ফুলের ক্ষতিকারক রেণু, পশুর লোম, পশু-পাখির মলমূত্র প্রভৃতি যখন চোখের সংস্পর্শে আসে, তখন অনেকের চোখ আক্রান্ত হয় অ্যালার্জিক কনজাংটিভাইটিস-এ। এই সময় আইবল এবং সাদা অংশের উপর একপ্রকার আস্তরণ পড়ে যায় এবং চোখ তা সহ্য করতে পারে না, তাই লাল হয়ে যায় এবং চুলকোতে থাকে।

অ্যালার্জিক কনজাংটিভাইটিস-এর কোনও ধরন আছে কি?

মূলত দু’রকম অ্যালার্জিক কনজাংটিভাইটিস হয়। একটি হল অ্যাকিউট অ্যালার্জিক কনজাংটিভাইটিস এবং অন্যটি হল ক্রনিক অ্যালার্জিক কনজাংটিভাইটিস। অ্যাকিউট-এ ভোগায় কম অর্থাৎ খুব কম সময়ের মধ্যে এটি সেরে যায়। এই ক্ষেত্রে চোখের পাতা (আইলিড্‌স) হঠাৎ ঘেমে ওঠে, চুলকোয় এবং জ্বালা করে। আর ক্রনিক-এর ধরন হল, সারা বছর ধরে মাঝেমধ্যে এই সমস্যা হতে থাকে। এই অ্যালার্জি সাধারণত কোনও খাবার থেকে হতে পারে, ধোঁয়া, ধুলো কিংবা দূষণযুক্ত বায়ু থেকে হতে পারে এবং পশুর লোম, লালা (স্যালাইভা) প্রভৃতি থেকেও হতে পারে। আর এই ক্ষেত্রে চোখে জ্বালা-যন্ত্রণা হওয়া ছাড়াও, আলো সহ্য করতে অসুবিধে হবে।

অ্যালার্জিক কনজাংটিভাইটিস কখন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে?

অ্যালার্জিক কনজাংটিভাইটিস-এ আক্রান্ত হওয়ার পরও যদি সঠিক সময়ে চিকিৎসা না করা হয় এবং সেই অবস্থায় যদি ধুলো-ধোঁয়াযুক্ত দূষিত পরিবেশে বসবাস করেন, তাহলে চোখের বড়োরকম ক্ষতি হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা থাকে।

অ্যালার্জিক কনজাংটিভাইটিস-এর চিকিৎসা কীভাবে হয়?

আমরা প্রথমে আই চেক-আপ করি এবং জেনে নিই অ্যালার্জিক হিস্ট্রি। এরপর যদি প্রয়োজন হয়, তাহলে অ্যালার্জি স্কিন টেস্ট এবং ব্লাড টেস্ট করে সমস্যার আসল কারণ বুঝে নিয়ে সেইমতো চিকিৎসা শুরু করি। সমস্যা কম থাকলে অনেকসময় শুধু আই-ড্রপ দিয়েই চিকিৎসা করা হয়। এরমধ্যে রয়েছে অ্যান্টি-ইন্ফ্লামেটরি এবং অ্যান্টি-ইন্ফ্লামেশন আই-ড্রপ। অনেকসময় ভাইরাল অথবা ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন-এর কারণেও অ্যালার্জিক কনজাংটিভাইটিস হয়, সেক্ষেত্রে চিকিৎসাও করতে হবে সেই মতো। আই-ড্রপ ছাড়াও, ওরাল মেডিসিন এবং ইঞ্জেকশন দিয়েও চিকিৎসা করা হয়ে থাকে। আর কোনও রোগীর ক্ষেত্রে অ্যালার্জিক কনজাংটিভাইটিস যদি জটিল রূপ নেয়, তাহলে রোগিকে হাসপাতালে অবজারভেশন-এ রেখেও চিকিৎসা করতে হতে পারে।

অ্যালার্জিক কনজাংটিভাইটিস-এ যাতে আক্রান্ত না হতে হয়, অথবা রোগে আক্রান্ত হওয়ার পর কী কী সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত বলে মনে করেন আপনি?

যে-কোনও অসুখ এড়াতে কিংবা বাড়াবাড়ি আটকানোর জন্য কিছু বিষয় মেনে চলা উচিত।

সতর্কতা

> চোখ লাল হলে কিংবা চুলকোলে আঙুল দিয়ে রগড়াবেন না। কারণ, আঙুল দিয়ে রগড়ালে, আঙুলে যদি জীবাণু থাকে তাহলে তা চোখে সংক্রামিত হয়ে আরও বেশি ক্ষতি করতে পারে চোখের। তাই, চোখ চুলকোলে শুধু ঠান্ডা জলের ঝাপটা দিন বারবার

> নিজে থেকে কোনও ওষুধ খাবেন না কিংবা না জেনে চোখে কোনও ড্রপ ব্যবহার করবেন না। বড়ো ক্ষতি এড়াতে চিকিৎসকের পরামর্শ মতো চিকিৎসা করুন চোখের

কী কারণে চোখে অ্যালার্জি হচ্ছে, তা খুঁজে বের করে সমস্যামুক্ত থাকার চেষ্টা করুন

ধুলো-ধোঁয়া এবং দূষণ এড়ানোর জন্য গাড়ি চালানোর সময় জানলা বন্ধ রেখে এসি ব্যবহার করুন

> কনট্যাক্ট লেন্স ব্যবহার করলে যদি চোখে অ্যালার্জি হতে থাকে, তাহলে কনট্যাক্ট লেন্স ব্যবহার বন্ধ করুন। আর যদি কনট্যাক্ট লেন্স ব্যবহার করতেই হয়, তাহলে ভালোমানের লেন্স ব্যবহার করুন

> বাজার, মেলা প্রাঙ্গণে অথবা যে-কোনও ওভার ক্রাউডেড পলিউটেড এলাকায় বাচ্চাদের নিয়ে গেলে চোখে সানগ্লাস পরিয়ে নিয়ে যান এবং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ওই দূষণযুক্ত জায়গা ছাড়ুন

> ভালোমানের প্রসাধন সামগ্রী ছাড়া ব্যবহার করবেন না, কারণ, বাজে কেমিক্যাল-যুক্ত কসমেটিক্স চোখের ক্ষতি করতে পারে

>  ধুলো, ধোঁয়া থেকে দূরে থাকুন এবং ধূমপান ছাড়ুন

>   বাড়িঘর নোংরা আবর্জনায় ভরিয়ে রাখবেন না। ভালো ভাবে ঝেড়ে-মুছে বাড়িঘর পরিচ্ছন্ন রাখুন। ঘরে পর্যা৫ আলো-হাওয়া ঢুকতে দিন

>   রোদে বেরোলে ব্যবহার করুন ভালোমানের ইউভি প্রোটেকটেড সানগ্লাস

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...