অনলাইন কেনাকাটার সূত্রপাত হওয়ার ফলে, কিছুটা হলেও ভিড় কমেছে দোকানে। এখন আর শুধু উৎসবের আগে কেনাকাটার হিড়িক পড়ে না, অনলাইন-এ প্রায় সারা বছর ধরেই চলতে থাকে কেনাকাটা। বাজারের থেকে কিছুটা হলেও কম দামে কেনাকাটার সুযোগ পাওয়া যায় অনলাইন-এ।

উৎসবে যেহেতু সবরকম খরচা অনেকটাই বেড়ে যায়, তাই খানিকটা সাশ্রয় করতে অনলাইন বাই-এর সুযোগ নেন অনেকেই। মোবাইলের ইন্টারনেট অন্ করে নির্দিষ্ট ব্র্যান্ড-এর জিনিসপত্রের ছবি এবং বিবরণ দেখে নিয়ে কেনাকাটা করা যায় এই মাধ্যমে। অনলাইন কেনাকাটায় দাম অনেকটা কম পড়ে কারণ, এক্ষেত্রে দোকান চালানোর খরচ নেই, শুধু ক্যুরিয়ারে জিনিসটি ক্রেতার ঠিকানায় পৌঁছে দিতে পারলেই কাজ শেষ। এক্ষেত্রে আগাম পেমেন্টও করা যায়। জামাকাপড়, জুতো, গয়না, প্রসাধন সামগ্রী, ব্যাগ, মোবাইল ফোন, কম্পিউটার, টিভি, ফ্রিজ প্রভৃতি প্রায় সবকিছুই অনলাইন-এ বিক্রি করছে বিভিন্ন সংস্থা। কিন্তু এত কিছুর মধ্যেও, অনলাইন কেনাকাটার সুবিধে-অসুবিধে নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। অনেক সময় কেউ-কেউ নানা সমস্যায়ও পড়ছেন। প্রতারণারও শিকার হয়েছেন অনেকে।

ঠকে যাওয়ার সম্ভাবনা

কম দামে ব্র্যান্ডেড জিনিস পাওয়ার লোভে ক্রেতারা বেশি ঝুঁকছেন অনলাইন-এ কেনাকাটার দিকে। কিন্তু যে-সব জিনিস অনলাইনে কিনছেন ক্রেতারা, সত্যিই কি সেসব আসল ব্র্যান্ড-এর, নাকি বেশিরভাগই নকল?

চকচকে, আকর্ষণীয়, কম দাম এবং নামকরা ব্র্যান্ড-এর ট্যাগ দেখে ক্রেতারা অর্ডার করছেন অনলাইন-এ কিন্তু জিনিস ব্যবহারের কিছুদিনের মধ্যেই ভুল ভাঙছে ক্রেতাদের। নকল জিনিস যেমন সহজেই নষ্ট হয়ে যায়, নামি ব্র্যান্ড-এর ট্যাগ থাকলেও অনেক ক্ষেত্রে সেই খারাপ অভিজ্ঞতা অর্জন করেন ক্রেতারা। শুধু নকল কিংবা খারাপ জিনিস-ই নয়, অনেক সময় প্যাকেট-এর মধ্যে ইট, কাঠ, পাথর ভরেও পাঠিয়ে দেওয়া হয়। অবশ্য এসব, জনপ্রিয় ই-কমার্স সংস্থাগুলি করে না। বড়ো সংস্থার নামে যারা প্রতারণার জাল বিছিয়ে রেখেছে ইন্টারনেট-এ, তারাই ঠকায় ক্রেতাদের। এক্ষেত্রে সংস্থার নামের বানানে সামান্য হেরফের করে ওয়েবসাইট খুলে রাখে প্রতারকরা। ক্রেতারা সে-সব নিখুঁত ভাবে না দেখে অর্ডার করে দেন কম দামে জিনিস কেনার লোভে। প্রি-পেমেন্ট না করে কেউ যদি পোস্ট পেমেন্টও করেন, তা হলেও ঠকে যাওয়া থেকে রেহাই পাওয়া সম্ভব হয় না। কারণ, আপনি ডেলিভারি নেওয়ার সময় জিনিসের মূল্য না চুকিয়ে জিনিস হাতে পাবেন না এবং প্যাকেট খুলতে পারবেন না।

সাম্প্রতিক এক সমীক্ষা অনুযায়ী দেখা গেছে, প্রায় ৬২ শতাংশ ক্রেতা জানিয়েছেন, ই-কমার্স সংস্থাগুলির ওয়েবসাইট-এ ক্রেতাদের করা যে-সব রিভিউ এবং রেটিং দেখে কেনাকাটার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তা আসল নয়, ক্রিয়েটেড। কিছু নামি ই-কমার্স সংস্থাও নাকি ক্রেতাদের বড়োসড়ো অভিযোগগুলি শো করে না, মুছে ফেলে।

ক্রেতাদের অভিযোগের ভিত্তিতে সাইবার-ক্রাইম ব্রাঞ্চ মাঝেমধ্যে ধরপাকড় করলেও কিংবা অভিযোগ আদালত পর্যন্ত গড়ালেও, প্রতারণা পুরোপুরি বন্ধ হয়নি। বরং, প্রতিদিন প্রতারণার নতুন জাল পাতছে প্রতারকরা।

উৎসব অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে যেহেতু বেশি কেনাকাটা করেন ক্রেতারা, তাই প্রতিটি উৎসবের প্রাক্বালে প্রতারকরাও বেশি করে প্রতারণার জাল পাতে অনলাইন কেনাকাটায়। এই সময় যেহেতু ক্রেতারা বেশি ব্যস্ত থাকেন কিংবা আনন্দে থাকেন, তাই তাদের মধ্যে সতর্কতার অভাবও থাকে। আর এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে লোক ঠকায় অসাধু ব্যবসায়ীরা। তারা জিনিসপত্রের উপর ৫০ শতাংশ ছাড় দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে ক্রেতাদের আকৃষ্ট করে।

অনেক সময় দেখা যায় যে, কাউকে উপহার দেওয়ার জন্য আপনি অনলাইন-এ জিনিস কিনলেন। আপনি হয়তো মোটা টাকা খরচ করে নামি ব্র্যান্ড-এর জিনিস ভেবে কিনলেন, কিন্তু যাকে উপহার দিলেন, তিনি তা ব্যবহার করার পর দেখলেন জিনিসটা নকল। হয়তো লজ্জায় অনেকে সে-কথা জানালেনও না, কারণ, আপনি ভালোবেসে তাকে উপহার দিয়েছেন। তাই আপনি জানতেও পারলেন না যে, মোটা টাকার বিনিময়ে কিনে দেওয়া উপহারটি আপনার প্রিয়জনকে খুশি করতে পারল না।

স্মার্ট-চিটিং

অনেক ব্র্যান্ড কয়েকমাসের ব্যবধানে স্মার্ট ফোন-এর নতুন মডেল বাজারে আনে। আরও আপডেটেড, আরও ভালো এইসব স্মার্ট ফোন যেই বাজারে এল, ক্রেতারাও পুরোনো মডেল রেখে দিয়ে মোটা টাকা দিয়ে সেইসব স্মার্ট ফোন কিনতে শুরু করলেন। কিন্তু কেনার ইচ্ছে থাকলেও, মোটা টাকা খরচ করে নতুন মডেল-এর স্মার্ট ফোন কেনার সামর্থ সব ক্রেতার থাকে না। আর এই সমস্ত ক্রেতাদের-ই ‘টার্গেট কাস্টমার’ করে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী। এরা কোনও টিভি চ্যানেল-এ এমন ভাবে বিজ্ঞাপন করে যে, ক্রেতারা আকৃষ্ট হয়ে পড়েন।

যেমন– ‘লিমিটেড অফার, এখনই ফোন করলে কুড়ি হাজার টাকার লেটেস্ট স্মার্ট ফোন পেয়ে যাবেন মাত্র বারো হাজার টাকায়। নীচে দেওয়া নম্বর-এ তাড়াতাড়ি কল করুন, সময় শেষ হতে চলেছে, আর মাত্র দশটি স্মার্ট ফোন হাতে রয়েছে’ –এমনই কিছু বিজ্ঞাপনকে মাধ্যম করে লোক ঠকানোর পথ বেছে নিচ্ছেন অনেকে। এই রকম আরও অনেক ফন্দি-ফিকির বের করে চলছে স্মার্ট-চিটাররা। এদের প্রলোভনে পা দিলে ঠকতে হবে আপনাকেও।

ফেরতের ঝামেলা

যে-সমস্ত ই-কমার্স সংস্থা নকল ব্র্যান্ড-এর জিনিস বিক্রি করে সাধারণত লোক ঠকায় না, তাদের থেকে কেনা জিনিসও অনেক সময় ফেরত দেবার প্রয়োজন হতে পারে। কারণ, ছেঁড়া কিংবা মাপে ছোটো জামাকাপড়, ত্রুটিযুক্ত কোনও ইলেক্ট্রনিক্স জিনিসপত্র প্রভৃতি অনেক সময় বদলে ঠিকঠাক জিনিস নেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে। কিন্তু, অনলাইন কেনাকাটায় একবার যদি কোনও জিনিস ত্রুটিযুক্ত বেরোয়, তাহলে বিশাল ঝামেলার ব্যাপার। প্রথমে চিঠি লিখতে হবে, নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে সেই অভিযোগ-পত্র পাঠাতে হবে ই-কমার্স সংস্থার মাধ্যমে এবং এরপর ধৈর্য নিয়ে কার্যসিদ্ধির অপেক্ষায় বসে থাকতে হবে। আর দামি জিনিস সহজে যদি বদলে না নেওয়া যায়, তাহলে আইনি সাহায্য নিয়ে সেই জিনিস আদায় করাও খুব কঠিন কাজ। অর্থাৎ, অনলাইন কেনাকাটায় সুবিধের থেকে অসুবিধেই বেশি। অতএব, অনলাইন-এ কেনাকাটা করার আগে ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নিন।

_____   

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...