সৌন্দর্য যেমন মানুষের আত্মবিশ্বাস বাড়ায় তেমনি অপরের প্রশংসা কুড়োতেও সাহায্য করে। কিন্তু সৌন্দর্য ধরে রাখা খুব সহজ নয় যেখানে রাতদিন আমাদের স্ট্রেস, পলিউশন, দৗড়ঝাঁপের সঙ্গে রীতিমতন যুঝতে হয়। এর জন্য দরকার ভিতর থেকে শরীরকে হেলদি রাখা এবং এটা তখনই সম্ভব যখন আমরা খাওয়াদাওয়ায় প্রয়োজনীয় পরিবর্তন করতে পারব।

শরীর হেলদি থাকাটা পুরোটাই নির্ভর করে আমাদের লাইফস্টাইলের উপর। যেমন রেগুলার ওয়াক না করলে পেট ও কোমরের মেদ বাড়তে থাকে, ঘুম ঠিকমতো না হলে চেহারা শুকনো, রুক্ষ মনে হয় এবং পুষ্টিকর ডায়েটের অভাবে শত চেষ্টাতেও সৗন্দর্য ফুটিয়ে তোলা সম্ভব হয় না। সুতরাং প্রথম কাজ হল নিজের খাওয়াদাওয়ার সম্পূর্ণ খেয়াল রাখুন।

ব্যালেন্সড ডায়েট – পুষ্টিকর ব্যালেন্সড ডায়েটে, তেল, চিনি, ফ্যাট জাতীয় খাবারের পরিবর্তে শরীরের প্রয়োজনীয় পুষ্টিকর তত্ত্ব যেমন ভিটামিন, খনিজ এবং ফাইবারের মাত্রা বেশি থাকাটা বাঞ্ছনীয়।

প্রচুর জল খান – তেষ্টা মেটাতে ও ত্বকের ময়েশ্চার ধরে রাখতে সাহায্য করে জল। চোখের নীচে সূক্ষ্ম রেখা এবং বলিরেখা আটকাতেও জলের প্রয়োজন। যতটা জল আপনি রোজ খাবেন ততটাই বিষাক্ত পদার্থ শরীর থেকে বেরিয়ে যাবে, ফলে ত্বকও তরতাজা এবং উজ্জ্বল হয়ে উঠবে।

 অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ফুড রাখুন ডায়েটে – বলিরেখা আটকাতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যুক্ত আহার নেওয়া যুক্তিযুক্ত। ডার্ক চকোলেট, স্ট্রবেরি, পালংশাক, বাঁধাকপি, বীটরুট ইত্যাদি ডায়েটে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। স্ট্রবেরি, ব্রোকোলি, বাঁধাকপি, পালংশাকে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট তত্ত্বের সঙ্গে রয়েছে ভরপুর মাত্রায় ভিটামিন সি। এগুলি খেলে হার্টের অসুখ হওয়ার ভয় অনেকটাই কমে যায়।

ফাইবার-যুক্ত ডায়েট – পরীক্ষানিরীক্ষায় জানা গেছে, ব্রেকফাস্ট হওয়া উচিত ফাইবার-এ ভরপুর কারণ ফাইবার অ্যাসিডিটির সমস্যা রোধ করতে সাহায্য করে এবং একইসঙ্গে অ্যাকনে-র সমস্যা থেকেও অব্যাহতি পাওয়া যায়। ফাইবার-যুক্ত খাবার আমাদের শরীরের ভিতরকার ক্ষতিকারক তত্ত্ব বাইরে বার করে আমাদের স্বাস্থ্য এবং ত্বকের খেয়াল রাখে। শরীরের ওজনও নিয়ন্ত্রিত রাখে। সুতরাং সবুজ শাকসবজি, ফল, বাদাম, দই, স্যালাড ইত্যাদি বেশি পরিমাণে ডায়েটে রাখা দরকার।

আয়রন রিচ ডায়েট – ইউরোপিয়ান জার্নাল এবং ডার্মাটোলজিস্টের রিপোর্ট অনুযায়ী, শরীরে আয়রনের অভাবে চুল পড়ে যেতে থাকে। আয়রন রিচ ডায়েট, রক্তে অক্সিজেনের ফ্লো বাড়াতে সাহায্য করে ফলে চুলের  গোড়ায় এবং স্ক্যাল্পেও অক্সিজেনের সঙ্গে সঙ্গে পুষ্টিকর তত্ত্বও ঠিকমতো পৌঁছোয়। এর ফলে চুলের টেক্সচার এবং ডালনেস দূর হয়ে চুল হয়ে ওঠে স্বাস্থ্যোজ্জ্বল। সুতরাং আয়রন রিচ ডায়েট অবশ্যই নিন।

নখের যত্নে – ভঙ্গুর নখ এবং নখের হলুদ ভাব আমাদের হাতের সৗন্দর্য নষ্ট করে। এছাড়াও শরীরে ভিটামিন এবং খনিজ-এর অভাবেও এই লক্ষণগুলি স্পষ্ট হয়ে ওঠে। দুধ এবং ডেয়ারি প্রোডাক্টস-এ প্রেটিন, ক্যালসিয়াম, জিংক এবং ভিটামিন বি-র ভরপুর মাত্রায় থাকে যা নখ-কে স্ট্রং করতে সাহায্য করে। টক জাতীয় ফল, সবজি ভিটামিন ‘সি’-তে পরিপূর্ণ এবং নখের সৗন্দর্য বাড়াতেও এগুলি সাহায্য করে।

হাড়ের স্বাস্থ্য বজায় রাখে ক্যালসিয়াম – হেলদি ডায়েট হাড় মজবুত করতে এবং সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। এর জন্য প্রয়োজন ডায়েটে ক্যালসিয়াম রাখা। একই সঙ্গে ভিটামিন-ডি নেওয়াটাও আবশ্যক যাতে শরীরের কার্যক্ষমতা বাড়ে এবং খাবার থেকে পুরো ক্যালসিয়াম শরীর গ্রহণ করতে পারে।

ক্যালোরি-প্রয়োজনীয়তা – জেন্ডার, বয়স এবং সারাদিনে কতটা ফিজিক্যাল অ্যাকটিভিটি করতে হয় তার উপর নির্ভর করে একদিনে কতটা ক্যালোরি ইনটেক করতে হবে। মহিলাদের থেকে তুলনায় পুরুষদের বেশি  পরিমাণ ক্যালোরির প্রয়োজন হয়। অ্যাভারেজে মেয়েদের ২০০০ ক্যালোরি প্রয়োজন এবং পুরুষদের দরকার ২৫০০ ক্যালোরি যা তাদের শরীরের ওজন মেনটেন করতেও সাহায্য করে।

ঠোঁটের গোলাপি রং বজায় রাখুন – আপনার ঠোঁট যদি ডার্ক হয় বা ঠোঁটে পিগমেনটেশন থাকে, তাহলে বুঝতে  হবে আপনার ডায়েট ঠিক নয়। এর জন্য দরকার টম্যাটো খাওয়া। টম্যাটো-তে থাকে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট-এর গুণ যা ঠোঁটের সঙ্গে সঙ্গে ত্বকও ঠিক রাখে। আখরোটে ওমেগা থ্রি, ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে, যা কোলোজেন উৎপাদন বাড়ায়। এতে ত্বকের ইলাস্টিসিটি ইমপ্রুভ করবে। আখরোট স্ক্রাব ঠোঁটে লাগিয়ে ডেড স্কিন এবং ডালনেস দূর করা যেতে পারে।

ফল – ফলে ন্যাচারাল সুগার থাকে যা ফলের টেস্ট উন্নত করে এবং শরীরের সমস্ত জরুরি পুষ্টিকর তত্ত্বের অভাবও পূরণ করে।

সবজি – সমস্ত প্রয়োজনীয় ভিটামিন এবং খনিজ থাকে সবজিতে। তাই ডায়েটে সবুজ শাকসবজি যেমন পালং, বিন্স, ব্রোকোলি ইত্যাদি বেশি পরিমাণে রাখা উচিত।

আনাজপাতি – হোল গ্রেন খাওয়া সব থেকে ভালো, তাতে পুষ্টিকর তত্ত্ব অনেক বেশি থাকে।

প্রোটিন – মাংসপেশি এবং মস্তিষ্কের বিকাশের জন্য প্রোটিন জরুরি। ডাল, মাংস, বাদাম, আখরোট, পনির, সোয়া  নির্মিত খাবার খান।

ডেয়ারি প্রোডাক্টস – এতে ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ডি এবং অন্যান্য জরুরি পুষ্টিকর তত্ত্ব রয়েছে। ফিট থাকার জন্য এটি অত্যন্ত জরুরি।

ভিটামিন সি – এই ভিটামিন সি আমাদের ইমিউন সিস্টেম-কে স্ট্রং করতে সাহায্য করে। এছাড়াও ত্বক করে তোলে স্বাস্থ্যোজ্জ্বল এবং এজিং প্রসেস-কেও স্লো করে।

হেলদি ফ্যাটের প্রয়োজন – সব ফ্যাট-যুক্ত খাবারই যে শরীরের জন্য খারাপ এই ধারণা ভুল। হেলদি থাকার জন্য মোনোঅনস্যাচুরেটেড এবং পলিঅনস্যাচুরেটেড ফ্যাট খেতে পারেন। এতে সবরকম প্রয়োজনীয় ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে, যা ত্বকের ন্যাচারাল ময়েশ্চারাইজার ধরে রাখতে সাহায্য করে।

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...