বাতাসে শীতের আমেজ। হাওয়ার শুষ্কতা জানান দিচ্ছে শীতের আগমন। ফেস্টিভ মুড এবং শীতের রুক্ষতায় ব্যালেন্স করতে হবে সৌন্দর্য-কে। সেখানে কোনও আপস করা চলবে না। তার জন্য আগাম তৈরি রাখতে হবে নিজেকে। বিশেষ করে যত্নের প্রয়োজন ত্বক এবং চুলের। শীতের এই রুক্ষ আবহাওয়ায় চুলের যত্ন নেওয়া একান্ত কাম্য কারণ বাতাসে আর্দ্রতার অভাবে চুল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ঠান্ডার মরশুমে চুলের সৌন্দর্য অক্ষত রাখতে মেনে চলতে হবে কিছু সহজ উপায়–

ঘরোয়া উপায় 

  • চুল রুক্ষ হয়ে পড়লে জল বেশি খান, কারণ যত বেশি আপনি জল খাবেন ততই আপনার বডি হাইড্রেট থাকবে
  • একটি পাত্রে দুটি লেবুর রস বার করে তাতে একটু জল মিশিয়ে নিন। এই মিশ্রণটি আঙুলের সাহায্যে স্ক্যাল্পে হালকা করে মালিশ করুন। খানিক্ষণ রেখে ঠান্ডা জল দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন। এতে চুলের আর্দ্রতা বজায় থাকবে
  • ডিম, চুলের জন্য একটি ন্যাচারাল কন্ডিশনার। একটি পাত্রে দুটি ডিম ভেঙে তার মধ্যে লেবুর রস এবং সামান্য অলিভ অয়েল মিশিয়ে, স্ক্যাল্পে লাগান। শুকিয়ে গেলে মাইল্ড শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন
  • অ্যালোভেরা জুস এবং দই সমান মাত্রায় মিশিয়ে স্ক্যাল্পে লাগিয়ে ৩০ থেকে ৪০ মিনিট রাখুন এবং ঠান্ডা জলে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে অন্তত দুবার এই পদ্ধতি মেনে চললে চুলের রুক্ষ ভাব একেবারে চলে যাবে
  • জোজোবা অয়েল, অলিভ অয়েল অথবা নারকেল তেল রুক্ষ চুলের জন্য খুবই উপকারী। সপ্তাহে অন্তত দু’বার-এর মধ্যে যে-কোনও তেল দিয়ে রাতে ভালো করে চুলে মালিশ করুন এবং পুরো মাথা কাপড় দিয়ে ঢেকে শুয়ে পড়ুন। সকালে মাইল্ড শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন৷
  • বিশেষজ্ঞের মতামত, সপ্তাহে ২ থেকে ৩ বার নারকেল তেল,অ্যাভোকাডো অয়েল, ক্যাস্টর অয়েল এবং বাদাম তেল সমান মাত্রায় মিশিয়ে আঙুলের সাহায্যে হালকা করে স্ক্যাল্পে মালিশ করতে হবে। রাতভর মাথায় এটি লাগিয়ে রেখে সকালে শ্যাম্পু করে নিতে হবে। এর ফলে চুলে পর্যাপ্ত পুষ্টির জোগান থাকবে৷

ডায়েটে পরিবর্তন জরুরি

শুধু চুলের ট্রিটমেন্টই নয়, ডায়েটে পরিবর্তন এনেও চুলের ঔজ্জ্বল্য, আর্দ্রতা ফিরে পাওয়া সম্ভব। খাবারে এই পুষ্টিকর তত্ত্বগুলি যোগ করে চুলের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে পারেনঃ

  • আয়রনের অভাবে শরীরে রেড সেল্স ঠিকমতো কাজ করতে পারে না, যেটা কিনা শরীরের কোপ পর্যন্ত অক্সিজেন পৌঁছোতে সাহায্য করে। স্ক্যাল্পে অক্সিজেন পৌঁছোতে পারে না বলে চুলের গ্রোথ রোধ হয়ে যায়। সুতরাং ডায়েটে আয়রন-যুক্ত পদার্থ যেমন পালংশাক, রেড মিট, বিন্স, ব্রোকোলি, সিফুড, টম্যাটো, মুসুর ডাল ইত্যাদি রাখা অত্যন্ত জরুরি
  • জিংক শুধুমাত্র শরীরে নয়, স্ক্যাল্পেও হরমোন লেভেল ব্যালেন্স করে চুলপড়া কম করে। জিংক-এর অভাবে চুলের প্রোটিন স্ট্রাকচার ভঙ্গুর হয়ে পড়ে, ফলে চুলের গোড়া দুর্বল হয়ে যায়। এছাড়াও জিংক চুলের টিসু বাড়াতে সাহায্য করে। সুতরাং ঘন, লম্বা চুলের জন্য ডায়েটে বাদাম, বিনস, ডিম, রাঙাআলু ইত্যাদি অবশ্যই রাখুন
  • ম্যাগনেসিয়াম চুলের কোশ সুস্থ রেখে চুল বাড়তে সাহায্য করে। এর অভাবে স্ক্যাল্পে ক্যালসিয়াম জমা হতে থাকে। ফলে মাথার ত্বক নিঃশ্বাস নিতে পারে না। চুল পড়ে যেতে থাকে। চুল যদি বেশি ঝরতে থাকে তাহলে ডায়েটে মাছ, ড্রাই ফ্রুট্‌স, কলা, সবুজ শাকসবজি, ডার্ক চকোলেট, দই, বিনস, বাদাম, ডাল, আনাজপাতি ইত্যাদি রাখুন
  • প্রোটিন ফাইবার-এর সাহায্যে চুল ঘন হয়। এর অভাবেও চুল পড়ে যেতে থাকে। সুতরাং যাদের চুল বেশি পড়ে তারা ডাল, ডিম, মাছ, দুধ, খেজুর, স্প্রাউট, চিকেন ইত্যাদি ডায়েটে রাখতে পারেন
  • চুলের জন্য ভিটামিনও খুব জরুরি। বিশেষ করে ভিটামিন ‘এ এবং ‘ই ড্যামেজ হেয়ার টিশুগুলি রিপেয়ার করে কোশ গ্রন্থি বাড়াতে সাহায্য করে এবং স্ক্যাল্পের রক্ত সঞ্চালনও সঠিক রাখে। ভিটামিন ‘এ-র জন্য রাঙাআলু, ডিমের কুসুম, দুধ, পালংশাক, মাখন, গাজর, আম, ব্রোকোলি ইত্যাদি খাওয়া দরকার এবং ভিটামিন ‘ই-র জন্য বাদাম, মাছ, পেঁপে, অ্যাভোকাডো, পেস্তা, কিউয়ি, পালংশাক, ক্যাপসিকাম, টম্যাটো ইত্যাদি খাওয়া জরুরি

বিশেষজ্ঞের মতামত

বিশেষজ্ঞদের মতে এইসব খাদ্যদ্রব্য ছাড়াও বায়োটিন-যুক্ত ট্যাবলেট্‌স খাওয়া যেতে পারে যা-কিনা ভিতর থেকে চুলের স্বাভাবিক সৗন্দর্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। এছাড়াও সাপ্লিমেন্ট হিসেবে মাল্টিভিটামিন ট্যাবলেট-ও খাওয়া যেতে পারে। চুলের সঠিক গ্রোথের জন্য শরীরে হিমোগ্লোবিনের সঠিক মাত্রা থাকাটা একান্ত প্রয়োজন। সুতরাং আয়রন ট্যাবলেট রোজ একটি করে খান। এটি শরীরে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়াবে।

শরীরের জন্য প্রয়োজন ওমেগা এবং ফ্যাটি অ্যাসিড-যুক্ত খাবার। যারা আমিষ খান তারা মাছ, রেড মিট এবং ডিম খেতে পারেন। নিরামিষাশী যারা, তারা অ্যাভোকাডো, ফ্লেক্স সিড, ওট্‌স, মিল্ক প্রোডাক্ট ইত্যাদি খান। সঙ্গে ফল, সবজি ইত্যাদিও খাওয়া উচিত যেমন গাজর, বিট, আপেল ইত্যাদি।

প্রফেশনাল ট্রিটমেন্ট ট্রাই করতে পারেন

প্রফেশনাল হেয়ার স্টাইলিস্ট শাহজাদ খান জানালেন, অনেক সময় মহিলাদের চুল এতটাই রুক্ষ হয়ে যায় যে তাদের প্রফেশনাল ট্রিটমেন্টের প্রয়োজন হয়। এই ধরনের ট্রিটমেন্ট ডার্মাটোলজিস্ট অথবা প্রফেশনাল স্যালন-এ গিয়ে পেতে পারেন।

কেরাটিন ট্রিটমেন্ট -এটি এক ধরনের প্রোটিন ট্রিটমেন্ট, যার সাহায্যে চুলের ভিতরের সারফেস, কটেক্স রিপেয়ার করা হয়। এই ট্রিটমেন্টের সাহায্যে ড্রাই এবং নিষ্প্রাণ চুল, চুল পড়া, চুল নীচে থেকে ভেঙে যাওয়া ইত্যাদি রিপেয়ার করা হয়। এতে চুলের ঔজ্জ্বল্য যেমন ফিরে আসে তেমনি চুল মজবুত এবং ঘন হয়।

সিস্টিন ট্রিটমেন্ট – এটিও কেরাটিন-এর মতো একটি প্রোটিন ট্রিটমেন্ট। জট পাকিয়ে যাওয়া চুল ঠিক করতে এবং রুক্ষ চুলে পুষ্টি ফিরিয়ে আনতে এই ট্রিটমেন্ট সাহায্য করে।

রুক্ষ, নিষ্প্রাণ চুলের জন্য দুই ধরনের ট্রিটমেন্ট রয়েছ। একটি হল লেজার ট্রিটমেন্ট যাতে লেজার কোম্ব-এর সাহায্যে চুলের ভিতরের পরত রিপেয়ার করা হয় এবং দ্বিতীয়টি হল মিজো থেরাপি। এক ধরনের তরল মিশ্রণ স্ক্যাল্পে ঢেলে চুলের গোড়ায় প্রোটিন দেওয়া হয়। এই দুই ধরনের ট্রিটমেন্ট-ই খুবই লাভদায়ক।

নিষ্প্রাণ এবং রুক্ষ চুলের জন্য কিউআর ৬৭৮ থেরাপির ৮ থেকে ১০টি সিটিং নেওয়া খুব জরুরি। পিআরপি থেরাপিও এই ক্ষেত্রে খুব সুফল দেয়। এই থেরাপিতে শরীর থেকে রক্ত নিয়ে স্ক্যাল্পে ইনজেক্ট করা হয়ে থাকে।

এই প্রোডাক্টগুলি ব্যবহার করুন

 অনেক সময় মহিলারা ভুল প্রোডাক্ট ব্যবহার করে স্ক্যাল্প ড্যামেজ করে ফেলে। সুতরাং এমন প্রোডাক্ট ব্যবহার করা উচিত যা চুলকে ক্ষতির হাত থেকে বাঁচায়।

বোয়ার ব্রিস্টল ব্রাশ – এই ব্রাশ চুলের ন্যাচারাল অয়েলকে স্ক্যাল্পে ভালো করে ছড়িয়ে দিতে সাহায্য করে। এর ফলে চুলের ফ্রিজিনেস কম হয় এবং স্ক্যাল্পে রক্ত সঞ্চালন বাড়ে।

হিট প্রোটেক্টিং স্প্রে – আপনি যদি স্টাইলিং টুলস ব্যবহার বেশি করেন, তাহলে আপনার প্রয়োজন এই প্রোডাক্টটির। হেয়ার স্ট্রেটনার হোক অথবা ড্রায়ার, এগুলি ব্যবহারের আগে আপনার উচিত হিট প্রোটেক্টিং স্প্রে লাগানো যা আপনার চুলের উপর একটা পরত তৈরি করে দেয়। এর ফলে চুল ড্যামেজ হয় না।

লিভ অন কন্ডিশনার – এটি ব্যবহার করলে দীর্ঘ সময় পর্যন্ত চুল নরম, মসৃণ থাকে এবং চুলও ম্যানেজ করা সহজ হয়ে যায়। চুল ধুয়ে ফেলার পর চুলের মাঝখান থেকে চুলের আগা অবধি এই কন্ডিশনারটি লাগিয়ে রেখে দিন। এটি ধুয়ে ফেলার দরকার হয় না।

বিশেষজ্ঞের মতামত – সবসময় চুলের জন্য কম ইনগ্রিডিয়েন্ট শ্যাম্পু ব্যবহার করা উচিত যেটা খুব মাইল্ড এবং সোপ ফ্রি হবে। যদি চুলে খুশকি থাকে তাহলে সোপ-যুক্ত শ্যাম্পু ব্যবহার করতে হবে।

যে-মহিলাদের বাড়ির বাইরে গিয়ে কাজ করতে হয়, তাদের রোজ শ্যাম্পু করার প্রয়োজন হয়। এই ক্ষেত্রে সালফেট ফ্রি মেডিকেটেডে শ্যাম্পু ব্যবহার করা উচিত, যাতে চুলের কোনও ক্ষতি না হয়।

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...