প্রেগন্যান্ট অবস্থাতেও নিজেকে সুন্দর দ্যাখানো অন্যায় নয়। সুন্দর করে সেজে থাকলে নিজেরই ভালো লাগে। তাই অনেক মহিলাই এখন কুণ্ঠাহীন ভাবে অন্তঃসত্ত্বা অবস্থাতেও নানা অনুষ্ঠানে যান এবং প্রয়োজনে মেক-আপও করেন। কিন্তু এই সময় মেক-আপ করতে হলে কয়েকটি সতর্কতা অবশ্যই মেনে চলা উচিত। কারণ বিউটি প্রোডাক্ট প্রস্তুত করার সময় এগুলিতে এমন কিছু রাসায়নিক দেওয়া হয়, যা আপনার ত্বকের সঙ্গে মিশে শুধু আপনার নয়– গর্ভস্থ শিশুর উপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। তাই কিছু প্রসাধনী ব্যবহার করার ব্যাপারে সাবধান থাকুন।
ডিয়োডারেন্ট বা পারফিউম
প্রেগন্যান্সির সময়, অতিরিক্ত কড়া সুগন্ধী ব্যবহার না করাই ভালো। তাই ডিয়ো, পারফিউম বা ফ্রেশনার কেনার সময় অবশ্যই মাইল্ড ফ্র্যাগরেন্স-যুক্ত সুগন্ধী কিনুন। এর কারণ হল কড়া গন্ধযুক্ত এই প্রসাধনীতে হানিকারক কেমিক্যালস্ থাকে, যা আপনার ও শিশুর জন্য ক্ষতিকারক হতে পারে। এটা শুধু যে আপনার ত্বকেরই ক্ষতি করবে তা নয়, শিশুর শরীরে হরমোনাল ইমব্যালান্স পর্যন্ত সৃষ্টি করতে পারে।
লিপস্টিক
এই প্রসাধনীটি প্রায় সমস্ত মহিলাই ব্যবহার করে থাকেন। কিন্তু প্রেগন্যান্ট অবস্থায় লিপস্টিক লাগানো অনেক সময় গর্ভস্থ শিশুর পক্ষে ক্ষতিকারক হতে পারে। লিপস্টিকে সীসা থাকে, যা খাবার খাওয়ার সময় শরীরে প্রবেশ করে। এই সীসা শরীরের ভিতর বাড়তে থাকা ভ্রূণের বিকাশে বাধা সৃষ্টি করতে পারে। এছাড়াও এর নানারকম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হবারও সম্ভাবনা থাকে। তাই লিপস্টিকের প্রয়োগ এড়িয়ে চলুন।
ট্যাটু
ট্যাটু আজকাল দারুণ ইন। যুবতিরা সকলেই এই ট্রেন্ডে গা ভাসিয়েছেন। প্রেগন্যান্সির সময় বা প্ল্যানিং করার পর্যায়ে ট্যাটু করার ভাবনা ত্যাগ করুন, কারণ এর ক্ষতিকারক প্রভাব শিশুর উপর পড়তে পারে। ট্যাটু থেকে অনেকসময় ইনফেকশন হয়। এর কারণ ট্যাটুতে ব্যবহূত রাসায়নিক, যা আপনার ত্বকের গভীরে প্রবেশ করে বড়ো ধরনের সমস্যা তৈরি করতে পারে।
সানস্ক্রীন ময়েশ্চারাইজার
আজকাল সব মহিলাই রোদে বেরোনোর আগে সানস্ক্রীন-এর প্রলেপ মুখে লাগান। কিন্তু প্রেগন্যান্ট মহিলাদের এই প্রসাধনী যতটা সম্ভব কম প্রয়োগ করা উচিত। কারণ এতে থাকে রেটিনিল পামিটেট, বা ভিটামিন পামিটেট। এটা রোদে বেরোনোর পরই ত্বকের উপর কেমিক্যাল রিয়্যাকশন ঘটায়। দীর্ঘসময় রোদে থাকার ফলে স্কিন ক্যানসারেরও সম্ভাবনা সৃষ্টি করে। তাই সানস্ক্রীন ব্যবহারের আগে অবশ্যই দেখে নিন, এতে এই দুটি রাসায়নিক নেই তো?
হেয়ার রিমুভাল ক্রিম
হেয়ার রিমুভাল ক্রিম-এ থিয়োগ্লাইকোলিক অ্যাসিড থাকে। এটি গর্ভাবস্থায় হানিকারক হতে পারে। গর্ভাবস্থায় শরীরে নানা ধরনের হরমোনাল চেঞ্জ ঘটে। যার কারণে, কেমিক্যাল-যুক্ত হেয়ার রিমুভাল ক্রিম থেকে অ্যালার্জি হবার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়। এটি আপনার গর্ভস্থ শিশুর পক্ষেও ক্ষতিকারক হতে পারে। তাই নিজের ও সন্তানের কথা ভেবে এগুলি এড়িয়ে চলাই শ্রেয়।
নেল কালার
প্রেগন্যান্সির সময় নেল প্রোডাক্টস-ও ব্যবহার না করাই ভালো। এর কারণ এর মধ্যেও এমন কিছু রাসায়নিক থাকে, যা খাবার খাওয়ার সময় আপনার শরীরে প্রবেশ করে শিশুর ক্ষতি করতে পারে। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, নেল পেইন্ট তৈরির কারখানায় কর্মরতা মহিলাদেরও প্রেগন্যান্সির সময় নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে রাসায়নিক বিক্রিয়ার ফলে। ভ্রূণ বিকাশে সমস্যা, বা জন্মের পরেও শিশু স্বাভাবিক গতিতে বড়ো না হওয়া, এই সমস্যাগুলির অন্যতম।
ফেয়ারনেস ক্রিম
আপনি যদি কোনও ফেয়ারনেস ক্রিম ব্যবহার করে থাকেন সাধারণত, তাহলে এই সময়গুলিতে তা এড়িয়ে চলুন। এর প্রয়োগ আপনার গর্ভস্থ শিশুর পক্ষে ক্ষতিকারক। এই ক্রিমে থাকে হাইড্রোকুইনিন নামক একটি রাসায়নিক, যা গর্ভস্থ শিশুর উপর ক্ষতিকারক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। তাই হোয়াইটনিং ক্রিম বা ফেয়ারনেস ক্রিম-এর ব্যবহার এসময় বন্ধ রাখুন।
একটি সূত্রে জানা গেছে, প্রেগন্যান্ট মহিলারা অতিরিক্ত মেক-আপ ব্যবহার করার ফলে নির্দিষ্ট সময়ের আগে প্রসবের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। প্রিম্যাচিয়োর বেবি হওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়।