নির্জন হানাবাড়ির মাঝে দাঁড়ানো বৈশাখীর মুখে ছাদের ফাটল গলে এক চিলতে আলো এসে পড়ে। রণেন্দুর তাকে দেবী বলে মনে হয়। সে ভাবে কথাটা আজ বলেই ফেলবে বৈশাখীকে। কিন্তু তার মুখমন্ডল ঘেমে ওঠে। হঠাৎ কড়িবরগার থেকে দৃষ্টি সরিয়ে বৈশাখী চুপ করে যাওয়া রণেন্দুর মুখের দিকে তাকায়। তার কপালের ঘামে হাতের তালু ঠেকিয়ে বলে, ‘কী রে, তুই কী আমার সাথে সেক্স করতে চাইছিস!’

ঘাবড়ে যায় রণেন্দু। সে কীভাবে প্রোপোজ করবে ঠিক করতে পারছিল না লজ্জায়, তাকে বৈশাখীর হঠাৎ এই প্রশ্ন এফোঁড়-ওফোঁড় করে দেয়। সে তোতলাতে তোতলাতে বলে, ‘ন্না, না তো, কই…’

‘ছেলেরা সেক্স ফিল করলে কপাল ঘেমে যায়’ রিনরিনে হাসি ছড়িয়ে কথাগুলো বলে বৈশাখী। ‘আলটিমেটলি ছেলেরা তো মেয়েদের কাছাকাছি আসতে চায় সেক্স করার জন্যই।’ বৈশাখীর এই কথায় তার মনের ভিতর সাজিয়ে গুছিয়ে রাখা কথাগুলো এলোমেলো হয়ে যায়।

কলেজ পালিয়ে সবাই এদিক ওদিক ঘুরতে চলে যায়। জোড়ায় জোড়ায়। একদিন নদীর ধারে যায় রণেন্দু ও বৈশাখী। জঙ্গলে ঢাকা পোড়ো জমিদার বাড়ি দেখতে। রণেন্দু বৈশাখীর ক্লাসমেট হলেও মনের মধ্যে যত্নলালিত কথাটা তাকে কোনওদিনও বলে উঠতে পারেনি। আসলে বৈশাখীর সমদূরত্ব বজায় রাখা সব ছেলেবন্ধুর মধ্যে তার অবস্থানটা গুলিয়ে ফেলে রণেন্দু। তাই একদিন সুযোগ বুঝে বৈশাখীকে আমন্ত্রণ জানায় অজয়ের তীরে পোড়ো জমিদার বাড়ি দেখতে যাবার।

বাইকের পিছনে বসিয়ে বৈশাখীকে নিয়ে যাবার সময় নিজেকে রণেন্দুর পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী ও সৗভাগ্যবান সম্রাট বলে মনে হচ্ছিল। কোনও ধন-দৗলত ছাড়াই একজন মহিলাকে শুধুমাত্র নিজের করে পাওয়ার জন্য পুরুষরা সত্যিই সব ঐশ্বর্য হেলায় হারিয়ে দিতে পারে। অনেকের নজর থাকলেও বৈশাখীকে নিয়ে আজও কেউ স্বপ্নের মায়াজাল বুনতে পারেনি। স্বপ্ন দানা বাঁধার আগেই সবাই বুঝতে পারে বৈশাখী আদৌ ধরাই দিচ্ছে না স্বপ্নে। বাস্তবে তো নয়ই। সেই বৈশাখী একবার বলায় রাজি হয়ে যাবে, রণেন্দু ভাবেনি।

সাত কিলোমিটার দূরের নদীপাড়ে জমিদার বাড়ির ভগ্নাবশেষ দেখতে যাবার প্রস্তাব দিয়েছিল রণেন্দু। ভেবেছিল সেখানে নদীর তীরে চুনসুরকির ইটের স্তূপে বসে কাশফুলের দিকে তাকিয়ে কথাটা আজ বলেই ফেলবে বৈশাখীকে। তা-ও বাইকে চাপার সময় বৈশাখী বলেছিল, ‘কী রে, শুধু আমি আর তুই? আর কেউ যাবে না?’

মুহূর্তে চুপসে যায় রণেন্দু। এমন বেড়াতে যাবার ক্যাবলা প্রস্তাবের মধ্যে লুকিয়ে থাকা ছেলেদের উদ্দেশ্য মেয়েরা কোথাও পা বাড়ানোর আগেই বোধহয় বুঝে ফেলে, ভাবে রণেন্দু। তবে সে কিছু বলার আগেই বৈশাখী বলে, ‘ঠিক আছে, চল…’

জমিদার বাড়ির ভেঙে পড়া দেয়ালে আবছা হয়ে যাওয়া বংশলতিকা পড়তে গিয়ে যখন ঝুঁকে পড়েছিল বৈশাখী, সত্যি মুহূর্তে উত্তেজিত হয়ে উঠেছিল রণেন্দু বৈশাখীর ক্লিভেজের দিকে তাকিয়ে। কিন্তু ওই প্রশ্ন করার পর কেমন যেন গুটিয়ে গেল রণেন্দু। আর সে প্রস্তাবটা পাড়তেই পারল না। ফিরতে ফিরতে রণেন্দু প্রশ্ন করে, ‘তোর কী মনে হয়, ছেলেরা কি শুধু সেক্স করতে চায় বলেই মেয়েদের কাছে ঘুর ঘুর করে? তাহলে, জীবনে প্রেম ভালোবাসার কি কোনও গুরুত্ব নেই?’

বৈশাখী সে প্রশ্ন শুনে বেশ কিছুক্ষণ চুপ করে থাকে। তারপর রণেন্দুর পিঠে তার চিবুক ছোঁয়ায়। মুহূর্তে একটা অদ্ভুত শিহরণ জেগে ওঠে রণেন্দুর শরীরে। সে বাইকের গতি আস্তে করে দেয়। বৈশাখী তার কানের কাছে ফিসফিস করে বলে, ‘তুই না খুব ছেলেমানুষ!’

সারা রাস্তা ভেবেও সে কথার মানে উদ্ধার করতে পারে না রণেন্দু। বাইক থেকে নেমে যাবার সময় বৈশাখী বলে যায়, ‘মেয়েরা কিন্তু ছেলেমানুষ বর আদৌ পছন্দ করে না। বড়ো হ তাড়াতাড়ি।’

রণেন্দুর সারা শরীরে যেন বিদ্যুতের ঝিলিক খেলা করে যায়। স্ট্যান্ড করা বাইকের পাশে দাঁড়িয়ে সে নিজের শরীরের কাঁপুনি অনুভব করে।

তারপর থেকেই রাত জেগে রণেন্দু নিজের বদলে বৈশাখীর নোটস তৈরি করতে থাকে। পরীক্ষার আগে পড়াশোনার জন্য বাড়ি থেকে বেরোনো বন্ধ করে দিল বৈশাখী। লাইব্রেরি থেকে ছুটোছুটি করে বই এনে তার কাছে পৌঁছে দিতে লাগল রণেন্দু। আস্তে আস্তে বন্ধুমহলে ‘রণেন্দু-বৈশাখী’ কথাটা আর-পাঁচটা জুটির মতো চাউর হতে থাকে। রণেন্দু তার স্বপ্নের সিঁড়ি বেয়ে একটা করে ধাপ উপরে উঠতে থাকে।

আনন্দমুখর হয়ে থাকে কলেজের দিনগুলো। মাঝে মাঝে রণেন্দুর পথে অবশ্য টুকরো-টাকরা বাধা এসে দাঁড়ায়। তাদেরই সহপাঠী কৃষ্ণেন্দু ওর মাকে বলে, ‘মা. বৈশাখীকে তুমি বউমা করাতে চাও, ওকে বলো না।’ কৃষ্ণেন্দুর মা-ও মনে মনে অমন একটা ইচ্ছা লালন করতেন। একদিন এক বিয়ে বাড়িতে বৈশাখীকে সামনে পেয়ে কষ্ণেন্দুর মা সবার সামনে বলে বসেন, ‘তোকে আমার বউমা করব, মা…’

এই ঘটনায় রণেন্দুর অবশ্য ভালোই হয়। পরদিন কলেজে সবার সামনে কৃষ্ণেন্দুকে যা-তা অপমান করে বৈশাখী। রণেন্দু ভিতরে ভিতরে খুব খুশি হয়। প্রেমিকা বা গার্লফ্রেন্ড সুন্দরী হলে ছেলেরা যে কী নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে তা সে-ই জানে।

কলেজ পেরিয়ে ইউনিভার্সিটি গিয়ে আবার কিছুদিন টেনশন ভোগ করল রণেন্দু। অবিবাহিত ছোকরা প্রফেসর পি কে আর প্রথম দিনেই চেয়ারে বসে বললেন, ‘বছর কয়েক আগেও উলটোদিকের বেঞ্চে বসেছি। সো ইউ ক্যান টেক মি টু বি আ ফ্রেন্ড অ্যান্ড গাইড র্আদার দ্যান টিচার অর প্রিচার…’

কিন্তু রণেন্দুর বুকে কাঁটা ঢুকে গেল একটা। সব সাধারণ পুরুষমানুষের মতো পি কে আর-এর চোখ বারবার আটকে যেতে লাগল বৈশাখীর কাছে গিয়ে। মেয়েদের কে কতটা পড়া বুঝল সেই জিজ্ঞাসাটা বেশি করে বৈশাখী কেন্দ্রিক হয়ে গেল।

তবে ততটা গুরুত্ব দিল না রণেন্দু। কারণ ততদিনে সে বৈশাখীর অনেক কাছে চলে এসেছে। বৈশাখীকে সে আসল কথাটা বলে দিয়েছে অনেকদিন হল। বৈশাখী শুনে নিয়ে বলেছিল, ‘বিনা গোলাপে প্রোপোজ! যা, গোলাপ ফুল নিয়ে আয়। তারপর ভাবব।’

পার্কে বৈশাখীকে বসিয়ে সে সত্যিই ছুটেছিল গোলাপ খুঁজতে। আর কী পোড়া কপাল! কোথাও সে ফুলের দোকানের দেখা পেল না। অনেক ঘুরে ঘুরে যখন মনে হতে লাগল একা পার্কে বসে অধৈর্য হয়ে উঠবে বৈশাখী! উফ কী যে ঘটবে তার কপালে আজকের দিনে, কে জানে! হঠাৎ নজরে পড়ে গেল একটা লোক সাইকেলে করে একগাদা গোলাপের স্টিক নিয়ে যাচ্ছে। তার কাছ থেকে চড়া দামে একটা গোলাপের স্টিক নিয়ে পার্কে গিয়ে কেতাবি স্টাইলে হাঁটু গেড়ে প্রোপোজ করেছিল রণেন্দু।

গোলাপ পেয়ে বাচ্চা মেয়ের মতো খুশি হয়েছিল বৈশাখী। হেসেছিল খুব, ওর কান্ড দেখে। একবার রণেন্দুর মনে উঁকি দিয়েছিল একটা প্রশ্ন, এসব করে কি মেয়েরা আনুগত্য দেখে? নাকি জাস্ট তার প্রেমিক, বর হতে চাওয়া পুরুষ, তার জন্য কতটা পাগলপারা, দেখে একটা সুখ অনুভব করে? যাই করে করুক। রণেন্দুর যে বৈশাখীকে চাই-ই।

তারপর তারা রেস্টুরেন্টে একসাথে খেয়েছে, একসাথে হাত ধরে ময়দানে, চিড়িয়াখানায় ঘুরেছে। সিনেমা হলে সিনেমা দেখেছে। নলবন ভেড়িতে গিয়ে একদিন ওকে জড়িয়ে চুমু খেয়েছে।

‘এই ছাড়, বিয়ের আগে অত প্রেম ভালো নয়’, বলে যে ঠেলা দিয়ে ছাড়াতে চেয়েছিল বৈশাখী তার দুর্বল থেকে দুর্বলতর হতে থাকা দেখে রণেন্দু বুঝেছিল তাতে প্রতিরোধের চেয়ে প্রশ্রয় ছিল বেশি। কিন্তু সব মেয়েরাই এমন সিচুয়েশনে প্রথমে দুর্বল বা কপট বাধা দিয়েই থাকে। এটাই ভারতীয় নারীদের সংস্কার। ফর্মাল প্রোপোজ করার আগে একদিন রেস্টুরেন্টে খেতে বসে ওর হাতটা নিজের হাতে একবার নিয়ে ধরে দেখতে চেয়েছিল রণেন্দু। বৈশাখী ওর প্রাথমিক দ্বিধা কাটিয়ে বলেছিল, ‘একবার ধরতে দিলেই আবদার মিটে যাবে তো?’

ধরার পর রণেন্দু আর ছাড়তে চায়নি বৈশাখীর হাত। ধরে বসেই ছিল। বৈশাখী বলেছিল, ‘এবার হাতটা ছাড়ুন মশাই। নইলে প্রেমে পড়ে যাবেন!’

বৈশাখী কী জানত না, তার কত আগে থেকে সে তার প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে!

রণেন্দু হাতটা নিয়ে তার নাকের কাছে তুলছিল আস্তে আস্তে। উদ্দেশ্য ছিল ঘ্রাণ নেওয়া। আর একটা চুমু। মাঝপথে হাত থামিয়ে দিয়েছিল বৈশাখী, ‘বলেছিল এটা কিন্তু কথা ছিল না রণো…’

তবু থামেনি রণেন্দু। জোর করে হাতটার ঘ্রাণ নিয়ে একটা দীর্ঘ চুমু খেয়ে ছেড়েছিল। সাথে সাথে চোখ বুজে ফেলেছিল বৈশাখী। দ্রুত শ্বাস ফেলছিল। হাঁফানোর মতো করে ওর দু’বুক ওঠানামা করছিল। দু’মিনিট চোখ বন্ধ করে রেখেছিল। নাকের পাটা ফোলা। গাল লাল। তার বুকের দ্রুত ওঠানামা লক্ষ্য করতে করতে রণেন্দু ভাবল, ভুল করে বসল নাকি! তাতে আবার তার প্রেমটাই না কেঁচে যায়। সবাই জানে বৈশাখী চরম জেদি আর অভিমানী। না, সেদিন খারাপ কিছু ঘটেনি। শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক হয়ে গেলে চোখ খুলেছিল বৈশাখী। স্বাভাবিক ভাবেই কফি খেতে খেতে গল্প করেছিল। উঠে আসার সময় রণেন্দুর হাতটা একবার নিজের মুঠোর মধ্যে নিয়েছিল, নিজে থেকেই।

তাই কৃষ্ণেন্দুর পাগলামি বা পি কে আর স্যারের তাকিয়ে থাকা নিয়ে আর সে মাথা ঘামাত না। বৈশাখী নিজে থেকে তাকে নিয়ে কারও পাগলামির কথা রণেন্দুর কাছে গল্প করলে রণেন্দু বলত, ‘যাক, আমি সেফ তো?’

কটমট করে তাকাত বৈশাখী। কপট রাগ দেখিয়ে বলত, না, ‘সেফ নোস। আমি ওকে দেখে গলে গেছি…’

সেটা যে নিন্তাতই খুনসুটি বুঝত রণেন্দু। এমএ পড়ার সময়ই একদিন বাবা বলল, ‘হ্যাঁরে রণো, তোর মা বলছিল, কমলবাবুর মেয়ে নাকি আমাদের বউমা হবে…’

রণেন্দু মায়ের দিকে তাকিয়ে দেখল, মা তখন মিটিমিটি হাসছে। রণেন্দু কী আর বলবে বাবা-মা’র কাছে। বলল, ‘তোমরা কোথা থেকে এইসব আজগুবি খবর যে পাও না, একসাথে পড়ি…’

আবার কিছুদিন পরে মা বলল, ‘হ্যাঁ রে, বৈশাখী কিছু বলে?’

‘কী বলবে মা!’

‘না, আমার ওকে বউ হিসাবে খুব পছন্দ। তোর বাবারও। তুই ওকে আমাদের বউ করে এনে দে…’

‘হ্যাঁ চাকরি বাকরি পেলাম না, এখনই তোমাদের বউ খুঁজতে বেরোই আমি…’

শেষে বাবা মা’র জোরাজুরিতে বৈশাখীকে একদিন নিয়ে আসতে হয়েছিল ওদের কাছে। সেদিন লাজুক লাজুক মুখ করে বৈশাখী ওদের বাড়ি এসেছিল। এই লজ্জাটা এসেই যায় বোধহয়। বন্ধু হিসাবে কারও বাড়ি গেলে তো এই লজ্জা থাকে না মেযেদের মধ্যে।

বাড়িতে বৈশাখী আসার পর রণেন্দুর কাজ আরও বেড়ে গেল। বিশেষ কিছু হলেই মা জোর করে বৈশাখীর জন্য দিয়ে পাঠাত। সে কোথাও পুজো দিয়ে আনা মন্দিরের প্রসাদ হোক, বা পৌষের পিঠে পুলি হোক। ছেলের হবু বউকে খাওয়ানো চাই-ই।

পরীক্ষার রেজাল্ট দুজনেরই ভালো হল। তবে বৈশাখী ছাপান্ন পারসেন্ট পেলেও রণেন্দু সাড়ে চুয়ান্নতে আটকে গেল। বৈশাখী নেট-স্লেটের জন্য প্রিপারেশন নিতে লাগল। কিন্তু ইচ্ছা থাকলেও রণেন্দুকে তার স্বপ্ন কাটছাঁট করতে হল। ততদিনে বাবাও রিটায়ার করে গেছে। সংসারের আর্থিক দায় মেটাবার জন্য সে এসএসসি পরীক্ষা দিল। আর একটা স্কুলে পড়ানোর চাকরিও পেয়ে গেল।

অল্প বয়সেই নেট ক্র্যাক করা পি কে আর আবার স্পেশাল কোচিং শুরু করলেন নেট-স্লেট অ্যাস্পির্যান্টদের জন্য। সেখানে বীরেন আর ঝুমুরের সাথে বৈশাখীও যেতে লাগল। সারাদিন লাইব্রেরি টিউশন এইসব করে ফিরতে রাত হয়ে যেত বৈশাখীর। রণেন্দুরও স্কুল থেকে ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা নেমে যেত। প্রায় দিনই সে রাত আটটা সাড়ে আটটার দিকে একবার করে যেত বৈশাখীর কাছে। ওকে সামান্য স্পর্শ করলেই কেমন যেন কেঁপে উঠত বৈশাখী। লজ্জা পেয়ে বুকে মুখ গুঁজে দিত। শুধু ওইটুকু সুখের জন্য রোজ রাত ন’টা থেকে পরের দিন সন্ধ্যা আটটা বাজার অপেক্ষা করত রণেন্দু। দু-তিন মিনিটের একবারের স্পর্শ একজন মানুষকে সারাদিন এভাবে উন্মুখ রাখতে পারে, প্রেমে না পড়লে রণেন্দুর জানা হতো না।

বাঙলির বিয়ের বাজারে আর পাঁচজন স্কুল মাস্টার চাকুরের মতো রণেন্দুর গ্রহণযোগ্যতাও বেড়ে গেছে ততদিনে। বেড়ে গেছে বৈশাখীর বাবা-মার কাছেও। তাঁরা আকারে ইঙ্গিতে বিয়েটা সেরে ফেলার কথা বলেছেন কয়েকবার। বাড়িতে বাবার তো যেন ধৈর্য ধরছে না। কিন্তু বৈশাখী নেট-স্লেট দিয়ে চাকরি পেয়ে তবেই বিয়ে করতে চায়। আর ও এত ইন্টেলিজেন্ট রেজাল্ট নিয়ে ঘরে বসে থাকুক, সেটা রণেন্দুও চায় না। সুতরাং অপেক্ষাই ভবিতব্য।

চলে আসার সময় বৈশাখী বলত, ‘আমার কাছে আর একটু বোস না।’ শাড়ি পড়া বৈশাখীকে দেখলে তার কেমন বউ বউ লাগত।

এক রবিবারের দুপুরে স্নান সেরে বেরিরে বৈশাখী রণেন্দুর দুহাত ধরে একজায়গায় দাঁড় করিয়ে দিল। মাথায় ঘোমটা দিয়ে তার পায়ের কাছের মাটিতে মাথা ঠেকিয়ে প্রণাম করল। এই দৃশ্যে কিছুটা যেন স্তম্ভিত হয়ে গেছিল রণেন্দু। সহপাঠী, বয়সে এক, তাছাড়া শুধু বউ হবার কারণে স্বামীকে প্রণাম, এটা কোনওদিন সমর্থন করেনি সে।

অবাক রণেন্দু বলেছিল, ‘আরে হঠাৎ প্রণাম করছিস কেন?’

‘স্বামীদের প্রণাম করতে হয়, হাঁদারাম!’

‘তুই কি বউ হয়ে গেছিস?’

‘ষোলো পেরোলেই মেয়েরা মনে মনে বউ হয়ে যায়। কার বউ হবে সেটা পরে ঠিক হয়। আমার তো তাও ঠিক হয়ে গেছে।’

এক আকাশ সুখ, এক সমুদ্র সুখ রণেন্দুর বুকের ভিতর তিরতির করে ফল্গু ধারার মতো বইতে শুরু করে।

রণেন্দু চোখ বুজলে তার বাড়ির রান্নাঘরে ব্যস্ত বৈশাখীকে দেখতে পায়। দেখতে পায় বাবা ও মায়ের মুখ থেকে সুন্দরী বউমা পাবার সুখ ও গর্ব সারাদিন চুঁইয়ে চুঁইয়ে পড়ছে। শুনতে পায় রান্নাঘর থেকে ভেসে আসা চুড়ির রিনরিন আওয়াজ।

হঠাৎ চমক ভাঙে বৈশাখীর কথায়। ওর হাতে ধরা খোলা সিঁদুরের একটা কৗটো। ‘আমাকে একবার সিঁদুর পরিয়ে দিবি?’

চমকে ওঠে রণেন্দু। ‘আরে! এখন..বাড়িতে সিঁদুর পরে ঘুরবি নাকি!’

‘দাও না, তুমি চলে যাবার পর আমি মুছে নেব।’

বৈশাখীর দু চোখে কেমন যেন এক আকুল আর্তি। নিরাশ করতে পারে না রণেন্দু ওকে। এক চিমটে সিঁদুর দু আঙুলে তুলে নেয় কৌটো থেকে। বৈশাখীর সিঁথিতে সেই সিঁদুর লেপে দেবার সময় হাত কেঁপে যায় রণেন্দুর। ভিতরে ভিতরে একটা মিশ্র আনন্দের অনুভুতি লাভ করে তার সারা শরীর, দেহ, মন। বৈশাখী ওকে দু’বাহু দিয়ে জড়িয়ে ধরে।

হঠাৎ শীর্ষেন্দুর লেখা ‘বাঘ’ গল্পটার কথা মনে পড়ে যায় রণেন্দুর। তার খুব প্রিয় গল্প। গল্পের নায়ক জোনাকি কুমারের কোথাও যাবার যায়গা ছিল না। ছিল, দু বছর আগে পর্যন্ত। প্রেমিকা তিতিরের বিয়ের আগে অবধি। তার সুন্দরী প্রেমিকা তিতির। যার নানা ভঙ্গির মধ্যে লুকিয়ে থাকত কত সুন্দর দৃশ্য। জড়িয়ে থাকা অবস্থায় রণেন্দু ফিসফিস করে বলে, ‘তুমিও আমার একমাত্র ‘যাবার জায়গা’, বৈশাখী। শুধু হারিয়ে যেও না…’

মুখ তুলতে রণেন্দু দেখে বৈশাখীর চোখে জল। শাড়ির আঁচল দিয়ে সেই জল মুছে স্বাভাবিক হয়ে নেয় বৈশাখী। তারপর বলে, ‘আজ থেকে আমি তোর বউ, অ্যাঁ? নো প্রেমিকা, নো গার্লফ্রেন্ড, অনলি বউ। আর আজ থেকে আমাকে ‘তুই’ বলবি না। শুধু ‘তুমি’ বলবি।’

সেদিন এক অপূর্ব সুখানুভূতি নিয়ে ঘরে ফেরে রণেন্দু। সারারাত তার ঘুম হয় না ভালো করে। বারবার আসে আর ভেঙে যায়। যতটুকু সময় ঘুম হয় শুধু বৈশাখীকে স্বপ্নে দেখে, মনে হয় আর সে বৈশাখীকে ছেড়ে থাকতে পারবে না। মনে হয় এখনই ফের চলে যায় তার কাছে, হাত ধরে নিয়ে নিজের ঘরে চলে আসে।

সন্ধ্যার গল্পের মাঝে মাঝে হঠাৎ হঠাৎ কথা থামিয়ে প্রশ্ন করত বৈশাখী, ‘আমি তোমার বউ তো?’

মিটিমিটি হাসত রণেন্দু।

বৈশাখী বলত, ‘না, উত্তর দাও।’

‘হ্যাঁ, বউ। নে, হয়েছে?’

হেসে বিছানায় একপাক গড়াগড়ি দিত বৈশাখী। বালিশে চিবুক ছুঁইয়ে বিছানায় শুয়ে তার দিকে তাকিয়ে থাকত।

বৈশাখীর সারাদিন প্রাণপাত পরিশ্রম, লাইব্রেরি, টিউশন শেষ হয় অবেশেষে। তার নেট পরীক্ষা হয়ে যায়। যখন রণেন্দু ভাবছিল এবার নিজেদের মতো করে একটু সময় কাটানো যাবে, তখনই তার বিএড ট্রেনিং-এর চিঠি চলে আসে।

সেদিন সন্ধ্যায় মুখ ভার করে থাকে বৈশাখী। বলে, ‘না, তুমি আমাকে ছেড়ে কোথাও যাবে না…’

‘আরে কোথায় যাব পাগলি!’

‘না, আমি দু বছর তোমাকে ছেড়ে থাকব কী করে!’

‘আরে দু বছর তো আর একটানা থেকে যাচ্ছি না। প্রত্যেক মাসেই তো আসব।’

সেদিন হঠাৎ বৈশাখী বলে, ‘এক মাস না দেখলে যত চুমু ডিউ হবার কথা সব আমাকে আগাম দিয়ে যাও।’

একই শহরে বৈশাখীর দুই মাসি আর মামার বাড়ি। প্রায় দিনই কারও না কারও বাড়িতে তাদের পারিবারিক আড্ডা জমে। বৈশাখীর বাবা-মা নির্দ্বিধায় তাদের এমএ পাস মেয়ে আর স্কুলমাস্টার হবু জামাইকে রেখে চলে যান সে সবে যোগ দিতে। স্কুল কলেজের অল্প বয়সী ছেলেমেয়েদের মতো তার সুযোগ নেবার চিন্তা কোনওদিনও রণেন্দু-বৈশাখীর মনে আসেনি।

তবে সেদিন বৈশাখীর কপালে পাঁচটা চুমু খাবার পর ও তর্জনী দিয়ে ক্লিভেজের মাঝখানটা দেখায়। দিয়ে চোখ বুজে ফেলে। রণেন্দু কী করবে ভেবে থমকে যায়। বৈশাখীর তখন দ্রুত শ্বাস পড়ছে। মনে হয় সে যেন কিছুর জন্য অপেক্ষা করছে।

বৈশাখীর বুকের উপর মুখ নামিয়ে এনেছিল রণেন্দু। তারপর দুজনে কোথায় ভেসে গিয়েছিল মনে নেই।

দেখতে দেখতে বছর ঘুরে যায়। নেট-এর রেজাল্ট বের হয়। বৈশাখী পাস করে যায়। ইন্টারভিউ দিয়ে অ্যাপয়েন্টমেন্ট পেতে প্রায় বছর খানেক লেগে যায়। তাই ততদিনের জন্য পার্ট টাইম লেকচারারের পোস্টে ঢুকে যায় ও। নর্থ বেঙ্গল ইউনিভার্সিটি থেকে শিলিগুড়ির একটা কলেজে যোগ দেবার ডাক আসে। সেই সময় রণেন্দু পরীক্ষার জন্য বেশ কিছুদিন বাড়ি আসতে পারে না। অথচ আসার জন্য মনটা ছটফট করে।

বৈশাখীর যাবার আগে রণেন্দু দুদিনের ছুটি ম্যানেজ করে। বৈশাখী টেনশনে ছিল। তার টিকিট ছিল ওয়েটিং লিস্টে। কনফার্ম হল কিনা দেখতে যাবার নাম করে রণেন্দু চলে গেল টিকিট নিয়ে। সেটা ক্যানসেল করে প্লেনের টিকিট নিয়ে এল।

কিন্তু যতটা খুশি হবে ভেবেছিল বৈশাখী ততটা যেন হল না। বলল, ‘অত টাকা খরচ করতে গেলে কেন… আমি ট্রেনেই চলে যেতাম তৎকাল করে। গোছগাছে ব্যস্ত থাকায় দুজনের একাকী আলাপ সেদিন ততটা জমল না। আসার সময় বৈশাখী বলল, ‘তোমার কত টাকা লাগল টিকিট কাটতে? ওর হাতে তখন কয়েকটা পাঁচশো টাকার নোট।’

‘কেন? তুই আমাকে টাকা দিবি নাকি!’

বৈশাখীর মুখটা কেমন যেন ফ্যাকাশে হয়ে যায়।

‘দাঁড়া, তোকে সামনের মাসেই পিঁড়িতে বসাচ্ছি। তার পর সব বউ যা করে, তুই ও তো তাই করবি? হাত খরচটা ধরিয়ে দিয়ে গোটা মাইনের টাকাটাই তো নিয়ে নিবি…’

শরীরের স্বাদ একবার পাবার পর রণেন্দুর দিনরাত কেমন যেন পাল্টে যায়। সেই আস্বাদন পাবার জন্য শরীর বারবার জেগে উঠতে থাকে। রণেন্দুর খুব ইচ্ছা ছিল শিলিগুড়ি যাবার আগে বৈশাখীকে একবার কাছে পেতে…

সেটা আর হয়ে ওঠে না। বৈশাখীকে সে এয়ারপোর্টে বিদায় জানিয়ে বাড়ি ফিরে আসে। বাবা মা পুরুতের সাথে কথা বলে শুভ লগ্নের দিন ঠিক করতে বসে যায়।

ফ্লাইটের সময় হিসেব করে ফোন করে রণেন্দু। বিজি টোন পায়। ভাবে বাবা মা র সাথে কথা বলছে হয়তো। ফ্লাইট ল্যান্ড করার খবর দিচ্ছে। দশ মিনিট পরে ফোন করে ফের। আবার এনগেজড টোন পায়। এমন হলে বৈশাখী কল হোল্ড করে রণেন্দুকে ধরে নেয়। যদি বা জরুরি ফোন হয়, কথা শেষ করেই রিং ব্যাক করে। ফোনের প্রত্যাশায় থাকতে থাকতে দুপুর বেলায় ঘুমিয়ে পড়ে রণেন্দু। ঘুম থেকে উঠে তড়িঘড়ি সে ফোন চেক করে। না, কোনও কল আসেনি। মোবাইল হাতে নিয়ে সে চটজলদি রিং ব্যাক করে। খবর নেবার আগেই ঘুমিয়ে পড়ার জন্য মনে মনে লজ্জিত হয়। কিন্তু আবার এনগেজড টোন পাওয়া যায়।

ভিতরে ভিতরে অস্থির হয়ে ওঠে রণেন্দু। আবার কল করে। ঘোষিকার গলা বলে ওঠে ফোনে ‘অন্য কল পর হ্যায়’। হোয়াট্‌স অ্যাপ অন করে রণেন্দু। মেসেজ করে সে তড়িঘড়ি। একের পর এক। অনলাইন থাকতে থাকতে হঠাৎ অফলাইন হয়ে যায় বৈশাখী।

‘তুমি কোথায়?’ ‘ফোন ধরছ না কেন?’ ‘সেফলি ল্যান্ড করেছ?’ প্রশ্নগুলো আনসিন, আন আনসারড রয়ে যায়। বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে র‍্যান্ডম টাইপ শুরু করে রণেন্দু! একটানা একশো সাতাশটা মেসেজ পাঠিয়ে থামে সে। ডবল টিক হয়। তবু সবুজ হয় না তার মেসেজ। অথচ মাঝে মাঝে বৈশাখীকে অনলাইন দেখায়। রণেন্দু বুঝতে পারে হোয়াট্‌স অ্যাপ খুলছে বৈশাখী। অথচ তার মেসেজ হেড খুলে দেখছে না। সে হোয়াট্‌স অ্যাপে ভয়েস কল করে। স্ক্রিনে ভেসে ওঠে ‘মাই জান ইন অন অ্যানাদার কল, মাই জান ইজ অন অ্যানাদার কল।

সন্ধ্যা হয়ে যায়। পাগল পাগল লাগে রণেন্দুর। ফোন করার বদলে ছুটে যায় বৈশাখীদের বাড়ি। উদ্বেগ যথাসম্ভব গোপন রেখে জেনে নেয় সেফ ল্যান্ডিং এর খবর। লজ্জায় বলতে পারে না, ফোন তুলছে না বৈশাখী। পাগলের মতো রাস্তায় হাঁটতে থাকে রণেন্দু। আর রিং করতে থাকে, মেসেজ করতে থাকে। কত খারাপ কিছু মনে উদয় হয়।

একবার ওর গলাটা শুনতে খুব ইচ্ছা করে। কোথায় গিয়ে উঠল, কেমন আছে, কিছু অসুবিধা হচ্ছে কিনা, সব জানতে ইচ্ছা করে। সব জানার অধিকার তো তারই, তার একার। তাহলে কার সাথে এত কথা বলছে বৈশাখী। ওর কি কিছু ঘটল? ওর কি ফোন হারিয়ে গেল? ওর ফোন কি অন্য কেউ ব্যবহার করছে?

রাত হয়, উদ্ভ্রান্তের মতো বাড়ি ফিরে আসে রণেন্দু। মা বাবা অনেক প্রশ্ন করে। সব হুঁ-হাঁ করে উত্তর দিয়ে নিজের শোবার ঘরে গিয়ে খিল দেয় সে। তার দু’চোখে তখন টলটলে জল। দশটা থেকে সাড়ে এগারোটা, ফোন হোয়াট্‌স অ্যাপ সব বন্ধ রাখে বৈশাখী। রণেন্দু ফেসবুক খোলে, মেসেঞ্জার খোলে, কোথাও অনলাইন নেই বৈশাখী।

রাত সাড়ে এগারোটায় হোয়াট্‌স অ্যাপ অনলাইন দেখায়। রণেন্দু কাঁপা কাঁপা হাতে ভিডিও কল করে। কল রিসিভ করে না বৈশাখী। পরের মুহূর্তেই রিং ব্যাক করে রণেন্দু। স্ক্রিনে ভেসে ওঠে ‘মাই জান ইজ অন অ্যানাদার কল’। সাড়ে এগারোটা, বারোটা, সাড়ে বারোটা, একটা… ‘মাই জান ইজ অন অ্যানাদার কল’, ‘মাই জান ইজ অন অ্যানাদার কল…’

দেড়টা, দুটো, আড়াইটা… ‘মাই জান ইজ অন অ্যানাদার কল’… ‘মাই জান ইজ অন অ্যানাদার কল…’

ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে থাকে রণেন্দু।

চারটে, সাড়ে চারটে… ‘মাই জান ইন অন অ্যানাদার কল’, ‘মাই জান অন অ্যানাদার কল…’

পাঁচটায় গিয়ে অফলাইন হয়ে যায় বৈশাখী। কাঁদতে কাঁদতে ক্লান্ত রণেন্দু ঘুমিয়ে পড়ে। ঘুমের দেশে গিয়ে সে স্বপ্নে দেখে বৈশাখীকে।

একসময় ঘুম ভেঙে যায়। স্বপ্ন স্বপ্নই থাকে মানুষের। কদাচ তা পূরণ হয়। ফোন খুলে হোয়াট্‌স অ্যাপে একটা মেসেজ দেখতে পায় রণেন্দু।

‘সরি রণো, আমি বুঝতেই পারিনি কবে পরিমলকে এত ভালোবেসে ফেলেছি। বুঝলাম তখন, যখন শিলিগুড়ি যাবার ডাক এল। বুঝতে পারলাম ওকে ছেড়ে থাকতে হলে আমি মরে যাব। ও আমার জন্য প্রাণপাত করেছে বলেই আজ আমি নেটে সফল হতে পেরেছি। তার সবটুকু তোমাকে আমি বলতে পারিনি। ও চাইছে শিগগিরিই বিয়েটা হয়ে যাক আমাদের। কাকা-কাকিমা শুনলাম শুভলগ্ন দেখে রেখেছেন। আমার মতো মেয়ে পেয়েই যাবে। একজনকে খুঁজে নিও! ভালো থেকো।

ফোনটা হাত থেকে পড়ে যায় রণেন্দুর। সাধের স্মার্ট ফোনের টাচ স্ক্রিন ভেঙে চৌচির হয়ে যায়। চৌচির হয়ে যায় তার হূদয়। শিশুর মতো ডুকরে কেঁদে ওঠে সে। বুঝতে পারে তার একমাত্র ‘যাবার জায়গাটা’ হারিয়ে গেল, চিরতরে…

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...