আমাদের সমাজে ভীষণ ভাবে আত্মহত্যা বাড়ছে। রোজকার জীবনচর্যায় মানুষ বড়ো বেশি একাকিত্বের শিকার। বিবাহ বিচ্ছিন্ন হয়ে জীবন কাটানো অথবা বিয়ে না করার সিদ্ধান্ত নেওয়া এখন আর নতুন কোনও ঘটনা নয়। একক জীবনযাপনে কেউ কেউ মুক্তির আনন্দ খুঁজে নেন। কেউ আবার ডিপ্রেশনের শিকার হয়ে মৃত্যু -কে আঁকড়ে ধরেন। স্বেচ্ছায় হোক বা পরিস্থিতির চাপেই হোক — কীভাবে সামলাবেন একাকিত্ব, কাটিয়ে উছবেন মৃত্যুচিন্তা– তার পরামর্শ রইল এখানে। কয়েকটি উপায় তুলে ধরা হল যেগুলো ডিপ্রেশনের মেঘ কাটিয়ে ওঠার ক্ষেত্রে কিছুটা হলেও কাজ করবে। এই সমাধান যে সবার ক্ষেত্রে সমানভাবে কাজ করবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। তবে পুরোপুরি বিফলে যাবে সেটাও বলা যাবে না। আপনার মনের প্রকৃতি অনুযায়ী সমাধান খুঁজতে হবে আপনাকেই।
এমন কিছু করুণ যাতে একঘেয়েমি কেটে যায়
একাকিত্ব একটি অস্থায়ী অনুভূতি। জীবনের বিভিন্ন পট পরিবর্তনে আমরা একাকি বোধ করি। সেটা হতে পারে নতুন কলেজ জীবন শুরু করা বা সম্পূর্ণ নতুন কোনো স্থানে বসবাস শুরু করা। বিভিন্ন সৃজনশীল কাজ একাকিত্বের কষ্ট থেকে আমাদের দূরে রাখতে সাহায্য করতে পারে। তাছাড়া সময়ের সঙ্গে সঙ্গে একাকিত্ব বোধ ফিকে হয়ে যায়।
সেক্ষেত্রে এমন কোনো কাজ করুন যেটা আপনি পছন্দ করেন। বিশেষ করে সেই কাজটি, যেটা আপনার মনোযোগ এতোটাই কেড়ে নেবে যে সময় কিভাবে কাটছে আপনি ভুলে যাবেন।
সেটা হতে পারে বই পড়া, কোনো শখের চর্চা বা পছন্দের কোনো কাজ করা। এই কাজগুলো আপনার শরীর ও মন দুই-ই ভাল রাখবে।
যোগাযোগ বাড়ান
সামাজিক সংগঠন বা সামাজিক উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে যোগ দিন।এই সমাধানের বিষয়টি শুনতে একটু গতানুগতিক ঠেকবে। যদি আপনার একাকিত্বের কারণ আপনার আশেপাশে লোকজনদের সঙ্গে মেলামেশা কমে যাওয়ার ফলে হয়ে থাকে, তাহলে যোগাযোগ বাড়ানো আপনার জন্য ভালো সমাধান হতে পারে। পারলে অনাথ আশ্রম বা বৃদ্ধাশ্রমে সময় দিন। এতে ভালো কাজের জন্য মানসিক তৃপ্তি পাবেন।
যদি অপরিচিতদের সাথে কথা বলার বিষয়টি আপনাকে ভীত বা অপ্রস্তুত করে তাহলে, এমন একটি সংগঠন বেছে নিন যেখানে আপনি কাজের পাশাপাশি সৃজনশীল কিছু করতে পারবেন। হয় কোনো গানের বা নাটকের দলে যোগ দিন অথবা কিছু তৈরি করা শিখুন। এতে করে, ইচ্ছার বিরুদ্ধে কারো সঙ্গে কথা বলার চাপে থাকতে হবে না। সেইসঙ্গে নিজের পছন্দের কোনও কাজ বেছে নেওয়ায় আপনি হয়তো সেখানে এমন কাউকে পেয়ে যাবেন, যার সঙ্গে আপনার চিন্তা ভাবনা মিলে যাবে।
জীবনকে ইতিবাচক করতে চিন্তা ভাবনায় পরিবর্তন আনুন
একটি সমীক্ষায় মানুষের সহানুভূতির মাত্রা পরীক্ষা করে দেখা গেছে যে, যারা নিজেদের একাকী বলে দাবি করেন, তারাই কিন্তু সমাজের অন্য মানুষের প্রতি অনেক বেশি সহানুভূতিশীল। বিশেষ করে তাদের প্রতি, যারা কোনো কষ্টকর সময় পার করছেন। পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়া বা মানসিক চাপ কাটিয়ে ওঠার বিভিন্ন কৌশল শিখে নিতে পারেন, আপনারই মতো কোনও একা অথচ পজিটিভ মনোভাবের মানুষের সান্নিধ্যে এসে।
দ্বিধা কাটিয়ে কথোপকথন শুরু করুন
অপরিচিতদের কারও সঙ্গে কথাবার্তা শুরু করার জন্য এক ধরনের মানসিক শক্তির প্রয়োজন। কিন্তু এজন্য আপনাকে শুরুতেই গভীর কোনও কথা বলতে হবে, এমনটা নয়।খুব সাধারণ কথাবার্তা দিয়ে আলাপচারিতা শুরু করুন।
অনুভূতি গোপন করবেন না
আপনার অনুভূতি সম্পর্কে বন্ধুবান্ধব বা পরিবারের সাথে কথা বলুন। যদিও এ ধরনের সমাধান দেওয়া যতটা সহজ, বাস্তবে করা ততটা সহজ না। কিন্তু আপনাকে খুঁজে বের করতে হবে পরিবারের বা তার বাইরের কোনও একজন মানুষকে, যার উপর আপনি কিছুটা হলেও নির্ভর করতে পারবেন। তাঁর কাছে মনের কথা শেয়ার করুন।
ইতিবাচক ভাবনাকে মনে স্থান দিন
প্রতিটি মানুষের ইতিবাচক দিকটি দেখার চেষ্টা করুন। যারা একাকীত্ব ভোগেন, তাদের অন্যের প্রতি বিশ্বাসের ভিত্তিটা নড়বড়ে। তাই এই সমাধানটির মূল বিষয়বস্তু হল, মানুষের ভেতর থেকে এমন ভালো কিছু খুঁজে বের করা,যাতে তার প্রতি বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়ে।
আপনি যদি মনে করেন যে কেউ আপনাকে তিরস্কার করেছে বা কটূ কথা বলেছে– তাহলে ভেঙে না পড়ে, ইতিবাচক-ভাবে ভাবুন। নিজেকে জিজ্ঞেস করুন, আপনার বিরুদ্ধে তার কথাগুলো সত্য কিনা। সে ব্যাপারে কোনো প্রমাণ আছে কিনা। না হলে ভিন্নভাবে ভাবুন। সম্ভবত তারা ব্যস্ত বা ক্লান্ত ছিল অথবা তাদের মন খারাপ বা মানসিক চাপের মধ্যে ছিল, তাই আপনার সম্পর্কে খারাপ কথা বলেছে।। আপনার হয়তো এক্ষেত্রে কিছুই করার ছিল না।
একাকিত্বের কারণ সনাক্ত করুন
আপনি কেন একাকিত্ব বোধ করেন সেটা খুঁজে বের করুন। প্রতিটি মানুষের একাকিত্বের কারণ আলাদা। কেউ হয়তো শারীরিক ভাবে নিজেকে বিচ্ছিন্ন মনে করেন, আবার কেউ হয়তো শিকার হয়েছেন বৈষম্যের। কারও পক্ষে অন্যকে বিশ্বাস করা কঠিন, আবার অনেকেই জানেন না নিজের মন মানসিকতার সঙ্গে মিল আছে এমন মানুষ কোথায় পাবেন।
একাকিত্ব থেকে বেরিয়ে আসার, সমাধান বের করার সবচেয়ে কার্যকর পদক্ষেপ হল, কেন একাকিত্ব অনুভব করছেন সেটা আগে জানা। এক্ষেত্রে আপনার সমাধান যদি কাজ না করে তাহলে অন্য কিছু চেষ্টা করুন।
অপেক্ষা করুন, মন ভালো হওয়ার
আমরা জানি যে একাকিত্বের এই অনুভূতি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অস্থায়ী। একাকিত্বের এই অনুভূতি সময়ের সাথে চলে যায়। তাই সে পর্যন্ত অপেক্ষা করা দরকার। দুঃখ কেন আপনার কাছচাড়া হচ্ছে না এই ভেবে ডিপ্রেসড হয়ে পড়বেন না। তবে যারা দীর্ঘস্থায়ী একাকিত্বে ভুগছেন, তাদের জন্য হয়তো কুকুর বা অন্য কোনও পোষ্য রাখা কার্যকর হতে পারে, যাকে নিয়ে বেশ কিছুটা সময় কাটিয়ে দিতে পারবেন।
প্রত্যাখ্যাত হওয়ার ভয় কাটিয়ে উঠুন
মানুষকে আপনার সাথে কোনও কাজে যোগ দিতে বলা বা কারও সাহায্য চাওয়া, ভালো অভ্যাস। প্রত্যেকেই এটা ভাবতে চান যে, তাদের মতো হয়তো অন্যরাও কোনো কাজের প্রতি সাড়া দেবেন। কিন্তু তাদের থেকে কখনও কখনও নেতিবাচক উত্তর আসতে পারে। আপনাকে এই ‘না’ শোনার ভয় কাটিয়ে উঠতে হবে। কেউ যদি বলেন যে, সেদিন তিনি ব্যস্ত আছেন, তাহলে বুঝতে হবে সত্যিই হয়তো তিনি ব্যস্ত আছেন। তাই হুট করে এটা ভেবে বসবেন না যে তারা আপনাকে এড়িয়ে চলছেন। অন্যের ‘না’-কে স্বাভাবিক ভাবে নিন।
নিজেকে ভালোবাসুন
সাজগোজ করা বা নিজের জন্য একটা নতুন রেসিপি ট্রাই করার মধ্যেও কিন্তু আনন্দ আছে। নিজেকে মাঝে মধ্যে ছোটোখাটো অ্যাচিভমেন্ট-এর জন্য উপহার দিন। সেটা যে সবসময় খুব দামি কিছু হতে হবে তা নয়। হয়তো এমন কোনও জিনিস যা আুনি বহুদিন আকাঙ্খা করেছেন কিন্তু কেনা হয়নি। বা ধরুন নিজের জন্য একটা ভ্যাকেশন প্ল্যান করলেন খুব পছন্দের কোনও জায়গায়। আসল কথা হল, জীবনের ছোটো ছোটো অনুভব থেকে আনন্দ খুঁজে নিন।
এটা ঠিক যে, সব সমাধান সবার জন্য কাজ করবে না। একাকিত্বে আক্রান্তদের একেকজন একেকভাবে নিজেদের সমস্যা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করা দরকার। একটি সমাধান যদি কাজ না করে , তাহলে ভিন্ন কিছু করার চেষ্টা করুন। জীবনকে ভালোবাসুন। মৃত্যু কে বেছে নেওয়া কোনও সমাধানের পথ নয়।