স্কুল থেকে বাড়ি ফিরেই একটা চটের থলি গোছানো দেখে তোতোন একটু অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে, ‘ওমা কোথাও যাবে? দিদির বাড়ি, না মামার বাড়ি?’
–আমি না তুই যাবি।
–আমি! কোথায়?
–পদ্মার বাড়ি।
–দিদির কাছে? বেশ মজা। কিন্তু এখন যে স্কুলে পরীক্ষা চলছে।
–চলুক গে, পদ্মার ওখানেই স্কুলে ভর্তি হবি।
–কেন মা আমি এখন তো কিছু করি না, কোনও বদমায়েশি করি না, তাতেও চলে যাব?
মা কিছু সময় উত্তর না দিয়ে রান্না ঘরে চলে যায়। তোতোনও মায়ের পিছন পিছন রান্না ঘরে গিয়ে বেশ জোরেই বলে ওঠে, ‘ওমা, কিছু বলো গো, তুমি যে চুপ করে আছো?’
–তোর বাবা বলেছে তাই যাবি, এর বেশি আমি আর কিছু জানি না। কিছু প্রশ্ন করবার থাকলে বাবাকে করবি।
এখানেই তোতোনের সমস্যা। বাবা যেন সব সময় রেগেই থাকে। কথায় কথায় বকে, মারে। কয়েকমাস আগেই হেডমাস্টারমশাই অফিস ঘরের বাইরে ঘন্টা দুই কান ধরে দাঁড় করিয়ে রেখেছিলেন। তোতোন সেদিন প্রার্থনার সময় জামার হাত গুটিয়ে রেখেছিল। কথাগুলো বাড়িতে বলতেই বাবা মারতে মারতে বলে, ‘তোর মতো ছেলেকে এমনটাই করা দরকার।’
–কিন্তু বাবা, আমি তো কিছু করিনি।
–আমি কিছু বলতে যাব না, তোর জন্য বলতে গিয়ে স্কুলের পুজোটা হারাব নাকি?
বাবা বেশ কয়েকবছর ধরে স্কুলের সরস্বতী পুজো করে বলে তোতোনের বন্ধুরা তোতোনকে দেখলেই বলে, ‘কলাবামুনের ব্যাটা।’ তোতোন কিছু বলতে গেলে মারামারি হয়, জানতে পারলে স্কুলের স্যার ম্যাডামরা বকেন, মারেন। বাড়িতে বললে বাবাও মারে। অথচ দরকারের সময় ঘরের সবাই তোতোনকেই ডাকে। বড়দি বিয়ের আগে ডাকত, এখন ছোড়দি, দাদা এমনকী মা বাবাও দরকারের সময় তোতোন তোতোন। বাবা গতবছরেই সরস্বতী পুজোর দিন তোতোনকে পয়সা কুড়োতে নিয়ে গেছিল। দাদাকেও বলেছিল কিন্তু দাদা যায়নি। সব কিছু গুছোবার পর বাবা তোতোনের হাতে দশ টাকা দিয়ে বলে, তিন ভাইবোন মিলে কিছু খাবি। ’
–দশ টাকায় তিনজন?
তোতোন টাকাটা বাকি দাদা দিদিদের না দিয়ে নিজের পকেটেই রাখে। জানতে পেরে বাবা ঠাস করে তোতোনের গালে একটা চড় কষিয়ে বলে, ‘যেদিন রোজগার করবি সেদিন এই রকম করবি।’
দুচোখ দিয়ে জল গড়িয়ে আসে। দশ টাকাটাও ফেরত দিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। অনেক রাতে বাড়ি ফিরে বাবার তর্জন শুনেছিল, ‘এত দেরি, ঘরটা হোটেল নাকি?’
–বিসর্জন দেখছিলাম।
–তোকে না বেশি রাত পর্যন্ত বাইরে ঘোরাঘুরি করতে বারণ করেছি।
তোতোন কোনও উত্তর না দিয়ে এমন ভাবে ঘরে ঢুকেছিল, যেন কিছুই হয়নি। ছোড়দি, দাদা দুজনেই রেগে গেছিল। তক্তাতে বসতে গেলে দাদা বলে ওঠে, ‘এখানে বসিস না, তোর জামা কাপড় নোংরা।’ তোতোন রেগে গিয়ে বাইরে থেকে ধুলো তুলে তক্তাতে ছড়িয়ে দিয়ে বলে, ‘এই নে তোদের পরিষ্কার।’ বাবা একটু পরে জানতে পেরে আবার মেরেছিল। মার খাওয়াটাকে জীবনের সাথে এক্বেবারে জড়িয়ে ফেলেছিল তোতোন।
ঘরে বাইরে কারণে অকারণে শুধু মার জুটত। কখনও স্যার ম্যাম কখনও বা বাবা। স্কুলে কিছু হলেই হেডমাস্টারমশাই প্রথমে আচ্ছা করে মেরে বাবাকে ডেকে পাঠাতেন। বাবাও অমনি লেজ নাড়তে নাড়তে হেডমাস্টারমশাই-এর ঘরের দরজার কাছে হাতজোড় করে দাঁড়াত। ক্লাস থেকে তোতোনকে ডেকে পাঠানো হতো। তোতোনের সামনেই হেডমাস্টারমশাই বাবাকে অপমান করতেন। বাবা স্কুলের সবার সামনেই মারত, তাও তখন তোতোনের, বাবার জন্য খারাপ লাগত।
আস্তে আস্তে স্কুল, বাড়ি পাড়া সব জায়গাতেই বদমায়েশি কমিয়েছিল। নিয়মিত স্কুল যেত, বিকেল ছাড়া মাঠে যেত না, টুকটাক পড়াও করতে আরম্ভ করেছিল। স্যার ম্যামরা অবাক হয়ে বলত, ‘কিরে তুই ভালো হয়ে যাচ্ছিস?’ তোতোন হাসত। কিন্তু কখনও ভাবেনি বাবা-মা বড়দির কাছে পাঠিয়ে দেবে। তোতোনের চলে যাওয়ার কথা শুনে দাদা ছোড়দি কিছু বলে না, চুপ করে থাকে।
তোতোনও কাউকে কিছু বলতে পারে না, শুধু রাতে শুয়ে গুমরে গুমরে কাঁদে। ঘুমের ভান করে বাবা মায়ের কথা শোনে। জামাইবাবুর কি একটা রোগ আছে, ছেলে মেয়ে হচ্ছে না। তোতোন কিছু বলেনি, কিছু জানেও না। পরের দিন ভোর হতেই মাকে জড়িয়ে ধরে বলে, ‘না আমি তোমাদের ছেড়ে যাব না, এখানে থাকব।’
সকাল বলেই মা কোনও উত্তর দেয় না। অন্য সময় হলে ঠিক বলে দিত, ‘যাবি না তো কি করবি শুনি, আমার হাড় মাংস খাবি। তোকে জন্ম দিয়ে কি কাল যে করেছিলাম।’
বাকি দাদা দিদিরাও ভালো করে কথা বলে না। বড়দিই একমাত্র তোতোনকে ভালোবাসত। রাতে শুয়ে তোতোনের মাথায় হাত বুলিয়ে বলত, ‘কেন এমন করিস বলতো, সবাই বকে মারে আমারও তো খারাপ লাগে।’
বড়দির বিয়ের দিন আর কেউ না কাঁদলেও তোতোন লুকিয়ে কেঁদেছিল। জামাইবাবু খুঁড়িয়ে চলে, তবে সরকারি চাকরি করে, বাড়ির অবস্থাও খুব ভালো, চাষবাস আছে। বাড়ির লোকজনও কেউ নেই। শুধু জামাইবাবুর বাবা বেঁচে আছেন। বড়দি বিয়ের পর এলে লুকিয়ে তোতোনের হাতে টাকা দেয়। তবে এক্বেবারে বড়দির কাছে থাকাটা কিরকম লাগে। রাতে শুয়ে তোতোনের ঘুম আসে না। একটা চাপা গুমোট ভাব শরীরটাকে জাপটে ধরে। বড়দির বিয়ের পর ছোড়দি বলে, ‘এবার থেকে একটা পেট বাঁচল, বলো মা।’ মা কিছু না বললেও মনে মনে খুশিই হয়। দুটো মন্দিরে নিত্যপুজোয় সংসারটা কোনওরকমে চললেও বকি সবদিকই বন্ধ।
পরের দিনেই বাবা তোতোনকে সঙ্গে করে বড়দির বাড়ি দিয়ে আসে। দোতলা বাড়ি, থাকবার লোক মাত্র তিনজন। দিদি, শ্বশুরমশাই, আর একজন চাকর। জামাইবাবু কলকাতার একটা অফিসে কাজ করে। এতদিন বাড়ি থেকে যাতায়াত করলেও পাঁচ বছরের জন্যে বাইরে কোথাও চলে যাচ্ছে। বড়দি তাই এই ক’বছর তোতোনকে নিজের কাছে রাখবার কথা ভেবেছে। তোতোনের করবার কিছু নেই, বন্ধু, স্কুল, খেলা সব কিছু ছেড়ে নতুন জায়গায় যেতে হবে। বড়দির শ্বশুর বেশ ভালো, প্রথম দিন তোতোনকে দেখতে পেয়েই মাথায় হাত বুলিয়ে বলেন, ‘আমি হেডমাস্টার মশাইকে বলে রেখেছি। কালই সঙ্গে করে নিয়ে গিয়ে ভর্তি করে দেব।’
এর আগে দিদির বাড়ি অনেকবার এলেও এবার এসে কীরকম একটা অনুভূতি হয়। বাড়িতে থাকা অবস্থার সব কিছু মনে পড়ে, আর কান্না আসে। সেই সময় সেখানে দাঁড়িয়ে ছিল, টুটুলদা। নিজের থেকেই এসে পরিচয় করে বলে, ‘আমি দুলু পণ্ডিতের ছেলে।’
আলাপ করবার কিছুক্ষণের মধ্যেই তোতোনকে মাঠে নিয়ে চলে যায়। দিদি বারণ করলেও সে কথা শোনে না। দুলু পণ্ডিত প্রতিদিন দিদির বাড়ি পুজো করে। প্রথমদিনেই তোতোনের টুটুলকে খুব ভালো লেগে যায়। সেদিনই পুকুরের ধার থেকে দুটো হাঁসের ডিম কুড়িয়ে, গোবর মাখিয়ে কুটি জ্বেলে সেদ্ধ করে দুজনে খায়। তোতোনের খুব ভালো লাগে।
এই স্কুলটাও বেশ ভালো। হেডমাস্টারমশাই অতটা রাগি নন। তোতোন যেতেই কাছে ডেকে নাম জিজ্ঞেস করেন। তোতোন নাম বলতেই নিজেই সঙ্গে করে ক্লাস সেভেনের ক্লাসে বসিয়ে আসেন। বড়দির শ্বশুরের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আপনি বাড়ি চলে যেতে পারেন।’
প্রথম দিনেই ক্লাসে তোতোনের দুজন বন্ধু হয়। তবে দুজনের কাউকেই তোতোনের ভালো লাগে না।
দেখতে দেখতে কয়েক সপ্তাহ পেরিয়ে যায়। প্রতিদিনই তোতোন বড়দিকে জিজ্ঞেস করে, ‘মা ফোন করেছিল?’ বড়দি আমতা আমতা করে মাথা নাড়ে। তোতোন আস্তে আস্তে বড়দিকে সবার কথা জিজ্ঞেস করা বন্ধ করে দেয়। স্কুল থেকে ফিরে বা স্কুল যাবার আগে বড়দির সাথে হাতে হাত লাগিয়ে কাজ করতে হয়। স্কুলে একাই বসে থাকে, কখনও এদিক সেদিক ঘুরে বেড়ায়। টুটুলদার সাথে দিদির বাড়িতে আলাপ হলেও আর দেখা হয় না, দিদির মুখে শোনে, ‘ও কোথাও একটা গেছে।’ তাও টুটুলদার সাথে থাকতে ভালো লাগত।
বাইরে থেকে টুটুলদা ফিরতেই প্রথমে টুকটাক খেলা তারপর আস্তে আস্তে আরম্ভ হয় এদিক সেদিক টোটো কোম্পানি। গ্রাম ছাড়িয়ে পাশের গ্রামে মেলা, হাট কিছুই বাদ যায় না। দিদি বকে, দিনের বেলা স্কুল থেকে ফিরতে একটু দেরি হলেই বকে, ছুটির দিনে বাইরে বেরোলে ফিরতে দেরি হলে বকে। তোতোন চুপ করে শোনে।
নতুন স্কুলের হেডমাস্টারমশাইও একদিন ক্লাস থেকে তোতোনকে ডেকে পাঠিয়ে অনেক কথা বলেন। এই স্যারকে তোতোনের প্রথমদিন থেকেই ভালো লাগে। আস্তে আস্তে কথা বলেন, বোঝান। আগের স্কুলের স্যারের মতো বকেন না। তোতোনেরও ওনার কাছে গেলেই পড়তে ইচ্ছে করে, সব কথা শুনতে ইচ্ছে করে। কিন্তু সেদিন বকুনিটা ভালো লাগেনি, কেমন যেন আগের স্কুলের স্যারের মতো লাগছিল। একটা কথাও শুনতে ইচ্ছে হয়নি। ছুটির আগেই স্কুল থেকে বেরিয়ে যায়। মাঠে বসে থাকে, সেই সময় টুটুলদা আসে।
টুটুলদা ক্লাস সেভেনের পর আর পড়েনি। শুধু ঘুরে বেড়ায় আর এর-ওর গাছের ফল চুরি করে। তোতোনের সাথে দেখা হলে চুরির ফল দেয়। তোতোনের ভালো লাগে। আস্তে আস্তে টিফিনের সময়েই ব্যাগ কাঁধে স্কুল থেকে বেরিয়ে যায়। টুটুল স্কুলের বাইরে অপেক্ষা করে। দুজনে ঘুরতে আরম্ভ করে, এদিক সেদিক। সন্ধে মাথায় বাড়ি ফিরতেই দিদির বকুনি শোনে। তোতোন কোনও কিছু কান করে না। পরের দিন আবার ঘুরতে চলে যায়। দিদির বাড়ি ফিরে সেদিন দিদির হাতে মার খায়। রাগ বাড়ে তোতোনের, গুমরে থাকে, রাতে কিছু খায় না!
তারপর দিন থেকে অবশ্য ঘোরা বন্ধ করে না। আস্তে আস্তে টুটুলের সাথে ঘোরার পরিমাণ বাড়ে, যেদিন স্কুল থাকে সেদিন টিফিনেই বেরিয়ে যায়, স্কুল না থাকলে আরও মজা। সকালে কয়েকঘন্টা প্রাইভেট পড়ে, বাড়ি এসেই বেরিয়ে পড়ে, দিদির বাড়ির সামনের মাঠে, কোনওদিন মাঠে ফুটবল বা গুলিডাং খেলে, তোতোনদের আরও বন্ধু জোটে। খেলা না হলে এদিক ওদিক ঘুরতে থাকে। টুটুলদার সাথে মাঝে মাঝে একটু আধটু বিড়িতেও টান দিতে আরম্ভ করেছে।
দেখতে দেখতে মাস চার পেরিয়ে যায়। স্কুল ছাড়াও গ্রামে তোতোন এখন পরিচিত মুখ। মাঠে খেলার পাশে আশেপাশের অনেকের বাগানে তোতোনের এখন অবাধ যাতায়াত। এমনকী কারওর বাগানে একটা টব উলটে গেলেও সবাই তোতোনের দিদিকে বলে। দিদির হাতে মার খাওয়াটা তোতোনের কাছে এখন ভাত খাওয়ার সমান হয়ে গেছে। কোনও কিছুতেই গা করে না। তবে টুটুলদার সাথে এখন মাঠের থেকে নদীর ধারে বেশি যায়। তাদের সঙ্গে আরেকজন থাকে পিঙ্কি দিদি। টুটুলদা তার সাথে তোতোনের আলাপ করিয়ে দিয়ে বলে, ‘এই যে আমার গার্লফ্রেন্ড, তোরও হবে, আরও কয়েকটাদিন যাক।’
তিনজনে ঘন্টার পর ঘন্টা নদীর বালিতে বসে থাকে। কয়েকদিন পর থেকেই তোতোনকে নদীর বালিতে বসিয়ে রেখে বাকি দুজন নদীর ধারের একটা পুরোনো ভাঙা বাড়ির ভিতরে ঢুকে যায়। যাবার আগে প্রতিবারেই বলে যায়, ‘এখানে বসে থাকবি, কাউকে এদিকে দেখতে পেলেই আমাকে জানাবি, কুকুরের মতো ডাকবি, তবে নিজে ওদিকে হুট করে চলে যাবি না। গেলেই তোর দিদিকে সেদিনের তোর বিড়ি খাবার কথাগুলো বলে দেব।’ তোতোন টুটুলদার কথা শোনে, ওরা দুজন বাড়িটার ভেতরে গেলেও তোতোন নদীর তীরেই বসে থাকে।
একদিন তোতোন ভয় পেয়ে যায়। টুটুলদা আর পিঙ্কিদি ভাঙা বাড়িটাতে চলে যাবার কিছুক্ষণ পরে কয়েকটা কুকুর নদীর বালি থেকে বাচ্চা ছেলের মরা শরীর নিয়ে টানাটানি করে, নিজেদের মধ্যে মারামারি করতে করতে তোতোনের কাছে এসে যেতেই তোতোন ভয় পেয়ে তাড়াতাড়ি বাড়িটার দিকে চলে যায়। কিন্তু কাছে এসে অবাক হয়ে যায়, ‘কী ব্যাপার কোনও সাড়া শব্দ নেই যে! তাহলে কি ওরা অন্য কোথাও চলে গেছে!’
একটু ভিতরে ঢুকে এদিক ওদিক ঘুরতেই হালকা আওয়াজ শোনে। একটা জানলা দিয়ে ভিতরে দেখতেই দেখে টুটলদা আর পিঙ্কিদি মাটিতে শুয়ে আছে, দুজনের গায়ে কোনও জামাকাপড় নেই।
নিজের চোখদুটোকে বিশ্বাস করতে পারে না তোতোন। কয়েকদিন আগেই টুটুলদা কোথা থেকে একটা অসভ্য বই এনেছিল, তোতোনও দেখেছে। প্রথমে একটু লজ্জা করছিল, টুটুলদাই খেঁকিয়ে ওঠে, ‘লজ্জাবতি, যেন এখনও কিছু গজায়নি।’ তোতোন বইটা প্যান্টের পকেটে ভরে বাড়ি নিয়ে আসে। পড়ার বই-এর ভেতরে রেখে পড়ে। কী সব গল্প। পড়তে পড়তে শরীরে কেমন একটা হয়, চুপ করে বসে থাকতে পারা যায় না। প্যান্টে টান পড়ে, কিছুক্ষণের মধ্যেই প্যান্ট ভিজে যায়।
তোতোন পুরোটা বোঝে না। কয়েকদিন পর টুটুলদাকে জিজ্ঞেস করতেই দাদা হাসে, ‘তবে! তোতোন বড়ো হয়ে গেল, বেশ বেশ, তোর দিদিকে বলে, এবার বিয়ে দিতে হয়।’ টুটুলদাটা এমনিই, কারও কোনও ভালো কথা বা কাজে আসে না, সব সময় মুখে শুধু বাজে কথা, মাঝে মাঝে তোতোনের রাগ হয়।
পিঙ্কিদির সাথে টুটুলদাকে ওরকম ভাবে দেখবার কয়েক দিন পরেই টুটুল আবার তোতোনকে স্কুলের রাস্তায় দাঁড় করিয়ে বলে, ‘শোন, আজ টিফিনেই বেরিয়ে যাবি, নদী যাব, পিঙ্কি থাকবে।’ তোতোন মাথা নেড়ে বলে, ‘না, আমি যাব না, তোমরা আমাকে পাহারাতে বসিয়ে ওই বাড়িটাতে চলে যাও। আগের দিন তোমাদের দুজনকেই ওখানে ল্যাংটো দেখেছি।’ টুটুলের চোখ মুখ শক্ত হয়ে যায়, ‘কী দেখেছিস?’
তোতোন আস্তে আস্তে সব কথাগুলো বলে। টুটুলদা মন দিয়ে সবটা শুনেই হালকা হেসে ওঠে, ‘আমাকে বলবার আগে তোর দিদিকে বল।’
–মানে? কী বলব?
–থাক, আমি আর বলছি না, তবে জেনে রাখ তোর দিদিটাও তুলসীপাতা নয়।
তোতোন সেদিন আর স্কুল যেতে পারে না, একাই নদীর ধারে চলে যায়, ঘুরে বেড়ায় এদিক সেদিক, এমনকী সেই বাড়িটাতেও। বাড়ি ফিরে কয়েকদিন চুপ থাকে, বাইরেও বেরোয় না, খেলতে যায় না, স্কুল যায় না। দিদি এসে শরীর খারাপ কিনা জিজ্ঞেস করে, তারপর কয়েক দিনের জন্যে বাড়ি যেতে বলে। তোতোন যেতে চায় না। দিদির কাছে দু’বেলা খাবার তো আছে। বাড়িতে তো তাও নেই। তাও যেতে হয়, মাত্র তিনদিনের জন্য, এর বেশি রাখতেও মা বাবা কেউ পছন্দ করে না।
ওখানকার বন্ধুরাও কেমন যেন হয়ে গেছে। এড়িয়ে প্রশ্ন করে, খেলতে নিতেও কেমন যেন যেন একটা অনীহা প্রকাশ করে। রাস্তায় আগের স্কুলের হেড মাস্টারমশাই-এর সাথে দেখা হয়। তোতোনকে দেখতে পেয়েই মোটর বাইক থামিয়ে রাস্তার মাঝে বলে, ‘কিরে আবার আমাদের জ্বালাতে ফিরলি নাকি?’ তোতোন কোনও উত্তর না দিয়ে এক ছুটে বাড়ি চলে আসে। পরের দিনেই বাবাকে বলে, ‘আমাকে বাসে চাপিয়ে দাও আমি দিদির বাড়ি ফিরে যাই।’
–দিদির বাড়িতে পৌছনোর পর তোতোনকে দেখে দিদিও কিছুটা অবাক হয়। জিজ্ঞেস করে, ‘কী রে তুই! এত তাড়াতাড়ি চলে এলি?’
দিদির শ্বশুর তখন তোতোনের হয়ে কথা বলে, ‘ঠিক আছে, এসেছে ভালোই করেছে, এখন আবার নন্দটাও নেই।’
নন্দকাকা দিদির শ্বশুরবাড়িতে ফরমায়েশ খাটে, গরু দেখে, দিদির সাথে রান্নার জোগাড় করে। বছরে দুবার নিজের বাড়ি যায়। পনেরো কুড়ি দিন করে থাকে। তখন তার বদলে নন্দকাকার গ্রামের বাড়ি থেকে, নন্দকাকার দূর সম্পর্কের ভাই আসে। তোতোন তাকে এই প্রথম দেখে, তবে তার নাম আগে শুনেছে। মন্টুকাকা। খুব তাড়াতাড়ি মন্টুকাকার সঙ্গে আলাপও হয়ে যায়। কম বয়স পেটানো শরীর, হাতে একটা তামার বালা, চোখ মুখে সব সময় একটা ফূর্তি ভাব। দিদিও কাজের ফাঁকে মন্টুকাকার সাথে খুব কথা বলে। সব সময় ডাকে, নিজের হাতে দুপুরে খেতে দেয়। একটা আলাদা ভালোলাগা বোধ দিদির চোখে মুখে ফুটে ওঠে, তোতোন সেটা বেশ বুঝতে পারে।
রাতে দিদির শ্বশুর তাড়াতাড়ি খেয়ে নেয়, খাবারের সাথে বেশ কয়েকটা ওষুধও খেতে হয়। তোতোন এখানে আসার পর থেকে এটাই দেখে আসছে। রাতে কখনও ঘুম থেকে উঠতে দেখেনি। সবাই ঘুমিয়ে পড়বার পর টুটুলদার সাথে পাঁচিল ডিঙিয়ে বেশ কয়েকবার পাশের গ্রামে যাত্রা শুনতে গেছে। দিদি, শ্বশুর বা নন্দকাকা কারওরই ঘুম ভাঙেনি। দিব্যি যাত্রা শুনে, ভোরের আগে বাড়ি ফিরে নিজের ঘরের বিছানায় শুয়ে পড়েছে। পরের দিনেও কেউ টের পায়নি।
সেদিন দিদির বাড়িতে নিজের ঘরের বিছানায় শুলেও অনেক রাত অবধি তোতোনের ঘুম আসে না। মাথার ভিতর হাজার হাজার প্রশ্ন, উত্তর, খেলা মাতুনি সব ঘুরে বেড়াতে থাকে। তারপর নিজেরই অজান্তে একটু তন্দ্রা মতন এলেও একটা শব্দ শুনে আবার চোখ দুটো খুলে যায়। ঠিক একটা দরজা বন্ধ করবার শব্দ শুনতে পায়। প্রথমে একবার তারপরে আবার। ভয়টা তোতোনের শরীরে কোনও কালেই নেই। একবার টুটুলদার সঙ্গে যাত্রা দেখতে যাবার সময় চোরের সামনে পড়েছিল, দুজনেরই ভয় লাগেনি। তবে চোরটা তাড়া করেছিল। তাড়াতাড়ি অন্য গ্রামে যাবার জন্যে অনেক দিনই রাতের অন্ধকারে কবরতলা দিয়ে যেত। কোন দিনও ভয় পায়নি।
সেদিনও তোতোন আস্তে আস্তে নিজের ঘরের দরজা খুলে বাইরে বেরিয়ে এসে এদিক ওদিক দেখতে থাকে। না কেউ কোথাও তো নেই। তার মানে কি ভুল শুনল। নিজের ঘরের দিকে আবার পা বাড়াতেই দিদির ঘর থেকে একটা ফিশফিশানি আওয়াজ শুনতে পায়। এতরাতে দিদির ঘরে, চোর ঢুকল নাকি?
তোতোন দিদির ঘরের বারান্দার দিকের জানলাটার কাছে দাঁড়ায়। জানলাটা ঠেলতেই বুঝতে পারে ভিতর থেকে বন্ধ করা আছে। কান পেতে কিছুক্ষণ দাঁড়ায়। ভিতর থেকে স্পষ্ট কথা বলবার আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। তার মানে দিদির ঘরে কেউ একজন আছে। জামাইদা কি রাতে এসেছে? তোতোন আবার নিজের ঘরে ফিরে আসে, কিন্তু ঘুম আসে না, ব্যাপারটা গোলমেলে লাগছে, ভিতরে কে থাকছে, কে আছে? দিদির সাথে এত আস্তে আস্তে কী কথা বলছে?
আবার দরজা খুলে বাইরে আসে। কিছুসময় পা টিপে টিপে বারান্দায় এদিক ওদিক করে উঠোনে নেমে আসে। তারপর বাড়ির পিছনে গিয়ে আস্তে আস্তে জানলা আর পাইপ ধরে ধরে দিদির ঘরের জানলাতে লুকিয়ে মুখ রাখতেই চমকে ওঠে। এখানেও দুজন ল্যাংটো! একবার, দুবার দেখে, নিজের দুটো চোখকেই বিশ্বাস করতে পারে না।
সেইরাতে আর ঘরে ফেরে না। রাতেই ছুটতে ছুটতে সেই নদীর ধারে এসে বসে। চারদিকে অন্ধকার। ঝোপ থেকে শেয়ালের ডাক শোনা যাচ্ছে। বয়ে চলা নদীর জলের দিকে তাকাতেই একদিকে টুটুলদা পিঙ্কিদি অন্যদিকে দিদি আর…। চোখ ফেটে জল গড়িয়ে পড়ে। তার মানে টুটুলদা সব কিছু জানে, অনেকদিন ধরেই চলছে।
আস্তে আস্তে ভোরের আলো ফুটতে আরম্ভ করে। নদীর জলে চোখ মুখ ধুয়ে উঠে দাঁড়াতেই দিদির প্রতি খুব রাগ হয় তোতোনের। বাড়ি গিয়ে মা, বাবা অন্য দাদা দিদিদের চিৎকার করে সব কিছু বলে দিতে ইচ্ছে করে। পরক্ষণেই নিজেকে বোঝায়। দিদি যদি রেগে যায়, যদি বাড়িতে রেখে দিয়ে আসে। তারমানেই তো সেই আবার বাবা, মা, আর স্কুলের স্যারদের মুখ ঝামটা সহ্য করে বেঁচে থাকা। তার থেকে এই ভালো। যা দেখেছে সেটা শুধু চোখদুটোই জানুক।
দিদির বাড়ি ফিরতেই তোতোনকে দেখে দিদি চমকে ওঠে, ‘কী রে কোথায় গেছিলিস?’
–মাঠে, একটু ছোটাছুটি করছিলাম।
–তা বলে রাত থাকতে।
–রাতে নয়, ভোরেই গেছিলাম।
–কিন্তু মন্তু যে বলল তোকে যেতে দেখেনি।
তোতোন হালকা হেসে বলে ওঠে, ‘কাকার হয়তো খেয়াল নেই।’
বেলা বাড়লে টুটুলদার বাবা নিত্য পুজো করতে আসে। তোতোনকে দেখেই জিজ্ঞেস করে, ‘কবে এলে, টুটুল তোমার কথা জিজ্ঞেস করছিল।’
–টুটুলদা বাড়িতে আছে?
‘হ্যাঁ’ শুনতেই তোতোন বলে ওঠে, ‘আমি দেখা করে আসব।’
টুটুলদার সাথে আবার কয়েকটা দিন স্কুল কামাই, ঘোরাঘুরি চলতে থাকে, সঙ্গে চলে নদীর তীরে বসে থাকা। দুপুরের দিকে পিঙ্কিদি এলে নিয়ম করে টুটুলদা পুরোনো বাড়িটাতে চলে যায়, তোতোন কিছু বলে না। একা একা নদির তীরে বসে থাকবার সময় রাতের কথাগুলো সব চোখের সামনে ভেসে ওঠে।
তারপরের দিন জামাইদা আর নন্দকাকু দুজন একসাথেই ফেরে। মন্টুকাকা নিজের গ্রামে চলে যায়। রাতে জামাইদার সাথে গল্প হয়, তোতোনের জন্য একটা নতুন জ্যামিতি বক্স কিনে এনেছে।
আরও কয়েকটা মাস পেরিয়ে যায়। তোতোনের ইচ্ছে না থাকলেও এখন প্রতিদিন স্কুল যেতে হয়। তোতোন এখন অনেকটা একা হয়ে গেছে। দুলু পণ্ডিততো টুটুলদাকে এক যজমানের বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছে। দিদির বাড়িতে এসে বলে, ‘ওখানেই থাকুক এখানে ঠায় ঘুরে বেড়ায়, তার থেকে ওখানে কিছু কাজকর্ম করুক, তাছাড়া ওদের নিত্যপুজোটা তো আছেই।’
কয়েকটা সপ্তাহ পরেই দিদির ঘরে রান্নার নতুন লোক আসে। আরও কয়েকদিন পর মা’ও আসে। তোতোন নন্দকাকার কাছ থেকে শোনে, ‘তোমার দিদি যে এখন পোয়াতি গো।’
তোতোন আজ খুব ব্যস্ত। দিদির মেয়ের অন্নপ্রাশন। চারদিকে লোকজন। জামাইবাবুও খুব ব্যস্ত। তোতোন সকাল থেকে উঠে পুকুর পাড়ে দাঁড়িয়ে থেকে মাছ ধরিয়েছে। শহর থেকে মাংস, মিষ্টি নিয়ে এসেছে। মাঝে মাঝে রান্নার ওখানেও গেছে। বাড়ি থেকে বাবা-মা, দাদা-দিদিরা এসেছে। তোতোনকেই সব দেখাশোনা করতে হচ্ছে। শুধু আসতে পারেনি টুটুলদা।
কাজের ফাঁকে একবার একটা দরকারে দু’তলায় দিদির ঘরে ঢুকতে গিয়ে থমকে দাঁড়ায় তোতোন। দেখে দিদি একটা কিছু বুকে চেপে ধরে খুব কাঁদছে, মেয়েটা একতলায়। তোতোন ওপরে উঠে আসার সময় দেখেও এসেছে। দিদিকে কাঁদতে দেখে কাছে যেতেই দিদি চমকে ওঠে, তাড়াতাড়ি চোখদুটো মুছে জিজ্ঞেস করে, ‘কিছু বলবি?’
–তোকে নীচে সবাই ডাকছে।
দিদি তাড়াতাড়িতে হাতের মধ্যে লুকিয়ে রাখা জিনিসটা বিছানার নীচে লুকিয়ে একতলায় নেমে যায়। ঘরে তখন একা তোতোন। দিদি নেমে যাওয়ার পর বিছানার সেই দিকটা তুলতেই চমকে ওঠে। একটা তামার বালা। চোখের সামনে কয়েকটা ছবি ভেসে ওঠে। পুরো ব্যাপারটা পরিষ্কার হয়ে যায়। তবুও কাউকে কিছু বলে না।
অন্নপ্রাশন শেষ হয়। আত্মীয়রা সবাই একে একে বাড়ি চলে যায়। জামাইবাবুও কাজের জায়গায় ফিরে যায়। একরাতে খাওয়া দাওয়ার পর সবাই শুয়ে পড়লে তোতোন আস্তে আস্তে দিদির ঘরে যায়। দিদি তখন মেয়েকে দুধ খাওযাচ্ছিল। তোতোন ভিতরে যেতেই দিদি জিজ্ঞেস করে, ‘কিছু বলবি?’
–একটা কথা জিজ্ঞেস করব? রেগে যাবি না তো?
–না না, বল।
–এক রাতে তোর ঘরে আমি একজনকে দেখেছিলাম।
দিদির চোখ মুখে চমকে ওঠার ছাপ ফুটে ওঠে। কিছু সময় তাও চুপ থেকে বেশ স্বাভাবিক ভাবেই বলবার চেষ্টা করে, ‘তুই ভুল দেখেছিস।’
–না’রে দিদি আমি স্পষ্ট দেখেছি।
–চুপ কর। পেকে গেছিস খুব, কালই বাবাকে ফোন করছি, এসে নিয়ে যাক তোকে।
–দিদি আমি যে নিজের চোখে তোদের দুজনকে এই বিছানাতে শুয়ে থাকতে দেখেছি, অন্নপ্রাশনের দিনও তোকে কাকার বালাটা নিয়ে কাঁদতে দেখলাম। তার মানে কি জামাইবাবু!
দিদির চুপ করে থাকা দেখে তোতোনও চুপ করে যায়। কিছুক্ষণ পর বলে, ‘তবে আমি কাউকে কিছু বলব না। তুই নিশ্চিন্তে থাক।’
–তুই তোর নিজের ঘরে যা।
এর আগে দিদি অনেকবার বকেছে, মেরেছে। এখানে আসার পরেও মেরেছে, কিন্তু এই গলা সম্পূর্ণ অলাদা।
দিদির এমন কঠিন গলা তোতোন আগে কখনও শোনেনি, ভয় লাগে তোতোনের। আস্তে আস্তে নিজের ঘরে চলে যাবার রাস্তা ধরতেই দিদি পিছন ডাকে, ‘আমার তোকে এখানে নিয়ে আসাটাই ভুল হয়েছিল, আজ বুঝছি।’
–কিন্তু দিদি আমি তো কিছু করিনি।
–কিছু করিসনি মানে, এইসব কথা কেউ কখনও দিদিকে বলে?
–আমি তো কিছু ভুল বলিনি, যা দেখেছিলাম, তাই বললাম।
–কি হতো একবার ভেবে দেখেছিস যদি আমি তোকে না নিয়ে আসতাম, না খেতে পেয়ে মরতিস, সেটাই ভালো হতো, কালই বাবাকে বলছি তোকে নিয়ে যাক।
তোতোন মুচকি হেসে বলে, ‘দিদিরে, আমাদের বাকি দুজন ভাইবোনও আছে, তারাও ওখানে থাকছে, আমি কালকেই চলে যাব। তোকে আর কষ্ট করে আমাকে ফিরিয়ে নিয়ে যাবার কথা কিছু বলতে হবে না। মরি বাঁচি ওটা আমার বাবার বাড়ি, দিদির বাড়ি নয়। আর না খেতে পেয়ে মরবার কথা বলছিস, না’রে দিদি মরব না, তাহলে তো তুইও মরে যেতিস।’
সকাল থেকেই তোতোনের মায়ের মনটা ভালো নেই। বার বার বলছে, ‘আজ তোতোনটার জন্য খুব মন খারাপ করছে, একবার নিয়ে এসো না।’
তোতোনের বাবা রেগে যায়, ‘এই তো অন্নপ্রাশনের দিন দেখলে, আবার মাস দুই পরে নিয়ে আসব।’
–সে ঠিক আছে কিন্তু আজ মনটা কেমন যেন হচ্ছে, এমন তো হয় না। ছেলেটা কতদিন বাইরে, কোনও দিনও এমন হয়নি। তোতোনের বাবা বা অন্য দিদি দাদারা মায়ের কথাতে কোনও গুরুত্ব না দিয়ে নিজের নিজের কাজে বসে। একটু বেলাতেই বড়দি ফোন করে। তোতোনের ছোড়দি ফোনটা ধরেই উত্তেজিত হয়ে জিজ্ঞেস করে, ‘তোর মেয়ে কী করছে? খুব দুষ্টু হয়েছে?’
উলটো দিকে থাকা দিদি কিছু সময় কোনও জবাব দেয় না, তারপর পর চাপা গলায় বলে, ‘কাল রাতে তোতোন গলায় দড়ি দিয়েছে।’