স্কুল থেকে বাড়ি ফিরেই একটা চটের থলি গোছানো দেখে তোতোন একটু অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে, ‘ওমা কোথাও যাবে? দিদির বাড়ি, না মামার বাড়ি?’
–আমি না তুই যাবি।
–আমি! কোথায়?
–পদ্মার বাড়ি।
–দিদির কাছে? বেশ মজা। কিন্তু এখন যে স্কুলে পরীক্ষা চলছে।
–চলুক গে, পদ্মার ওখানেই স্কুলে ভর্তি হবি।
–কেন মা আমি এখন তো কিছু করি না, কোনও বদমায়েশি করি না, তাতেও চলে যাব?
মা কিছু সময় উত্তর না দিয়ে রান্না ঘরে চলে যায়। তোতোনও মায়ের পিছন পিছন রান্না ঘরে গিয়ে বেশ জোরেই বলে ওঠে, ‘ওমা, কিছু বলো গো, তুমি যে চুপ করে আছো?’
–তোর বাবা বলেছে তাই যাবি, এর বেশি আমি আর কিছু জানি না। কিছু প্রশ্ন করবার থাকলে বাবাকে করবি।
এখানেই তোতোনের সমস্যা। বাবা যেন সব সময় রেগেই থাকে। কথায় কথায় বকে, মারে। কয়েকমাস আগেই হেডমাস্টারমশাই অফিস ঘরের বাইরে ঘন্টা দুই কান ধরে দাঁড় করিয়ে রেখেছিলেন। তোতোন সেদিন প্রার্থনার সময় জামার হাত গুটিয়ে রেখেছিল। কথাগুলো বাড়িতে বলতেই বাবা মারতে মারতে বলে, ‘তোর মতো ছেলেকে এমনটাই করা দরকার।’
–কিন্তু বাবা, আমি তো কিছু করিনি।
–আমি কিছু বলতে যাব না, তোর জন্য বলতে গিয়ে স্কুলের পুজোটা হারাব নাকি?
বাবা বেশ কয়েকবছর ধরে স্কুলের সরস্বতী পুজো করে বলে তোতোনের বন্ধুরা তোতোনকে দেখলেই বলে, ‘কলাবামুনের ব্যাটা।’ তোতোন কিছু বলতে গেলে মারামারি হয়, জানতে পারলে স্কুলের স্যার ম্যাডামরা বকেন, মারেন। বাড়িতে বললে বাবাও মারে। অথচ দরকারের সময় ঘরের সবাই তোতোনকেই ডাকে। বড়দি বিয়ের আগে ডাকত, এখন ছোড়দি, দাদা এমনকী মা বাবাও দরকারের সময় তোতোন তোতোন। বাবা গতবছরেই সরস্বতী পুজোর দিন তোতোনকে পয়সা কুড়োতে নিয়ে গেছিল। দাদাকেও বলেছিল কিন্তু দাদা যায়নি। সব কিছু গুছোবার পর বাবা তোতোনের হাতে দশ টাকা দিয়ে বলে, তিন ভাইবোন মিলে কিছু খাবি। ’