বাচ্চার বায়নাক্বা বেশিরভাগ অভিভাবকদেরই মাথাব্যথা, অবসাদ, চিন্তা এবং ফ্রাস্ট্রেশন-এর কারণ হয়ে দাঁড়ায়। বাচ্চাকে কন্ট্রোলে রাখা এইক্ষেত্রে খুব সহজ কাজ নয়।

বায়না করতে করতে বাচ্চারা রেগে ওঠে। কোনওভাবে, বড়োদের দিয়ে নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে নিতে বদ্ধপরিকর হয়ে ওঠে। তারজন্য রাগ দ্যাখানো থেকে শুরু করে ফ্রাস্ট্রেশন, কেঁদে ভাসানো, চ্যাঁচানো, জিনিসপত্র ভাঙা, মাটিতে শুয়ে পড়া, পালিয়ে যাওয়া, নিঃশ্বাস আটকে রাখা, বমি করে দেওয়া এমনকী অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার অভিনয় করতেও তারা দ্বিধা করে না।

সাধারণত এক-দেড় বছর থেকে শুরু করে তিন-চার বছর বয়সি বাচ্চাদের মধ্যে ট্যানট্রাম-এর সমস্যা বেশি দেখা যায়। কারণ এই বয়সে বাচ্চার সোশ্যাল এবং ইমোশনাল স্কিল্স ডেভেলপ হওয়া শুরু হয়। ইমোশনকে প্রকাশ করার মতো শব্দ তাদের জানা থাকে না। তারা স্বাধীন হতে চায় অথচ অভিভাবকদের থেকে দূরে যেতেও ভয় পায়। এই পরিস্থিতিতে বাচ্চা এমন রাস্তা খুঁজে বার করতে চায় যার মাধ্যমে নিজের আশেপাশের জগৎ-কে সে বদলাবার চেষ্টা করতে পারে আর নিজের দাবিও মানাতে পারে।

বাচ্চার ট্যানট্রাম দেখানোর প্রধান কারণ

টেম্পারামেন্ট – যে-বাচ্চা খুব তাড়াতাড়ি আপসেট হয়ে পড়ে তারাই বেশি বায়না করে অশান্তি বাড়ায়।

স্ট্রেস – একাকিত্ব, ক্ষিদে, ক্লান্তি এই ধরনের কিছু পরিস্থিতি বাচ্চা একেবারেই পছন্দ করে না। এটা তাদের কাছে প্রিয় খেলনা কেড়ে নেওয়ার মতো।

স্ট্রংগ ইমোশন – ভয়, চিন্তা, রাগ, সন্দেহ ইত্যাদি ইমোশনস বাচ্চার বিকাশ প্রক্রিয়ার একটি স্বাভাবিক অঙ্গ সুতরাং এগুলো বাচ্চার মধ্যে থাকবেই কিন্তু চেষ্টা করলে এই ইমোশনগুলি অনেকটাই কন্ট্রোল করা সম্ভব। মনে রাখতে হবে একজন বাচ্চার সঙ্গে অপর বাচ্চার কোনও মিল নেই। বাচ্চার ট্যানট্রাম আয়ত্তে আনার জন্য একটা বাচ্চার উপর যে-ট্রিক্স কার্যকরী হচ্ছে, সেটা অপর একটা বাচ্চার উপর কার্যকরী নাও হতে পারে।

তবে কমন কিছু উপায় অবলম্বন করে এই সমস্যাগুলো কিছুটা এড়ানো সম্ভব

বাচ্চাকে ব্যস্ত রাখুন – বাচ্চা যদি বোর ফিল করে তাহলে হতে পারে তার ভিতরের ছটফটানি কোনও না কোনও ভাবে বাইরে বেরিয়ে আসতে চাইবে সুতরাং কারণ ছাড়াই বাচ্চা চ্যাঁচামেচি, কান্নাকাটি শুরু করে দিতে পারে। এর একমাত্র সমাধান বাচ্চাকে ব্যস্ত রাখা। ছোটো ছোটো মজাদার অ্যাক্টিভিটির মধ্যে তাকে ব্যস্ত রাখুন বা অন্য বাচ্চাদের সঙ্গে তাকে খেলার সুযোগ করে দিন। এতে বাচ্চার মন ভালো থাকবে ফলে রাগের মতো ক্ষতিকারক ইমোশন বশে থাকবে।

কারণ বোঝাবার চেষ্টা করুন – বাচ্চা কোনও জিনিস নিয়ে জেদ বা বায়না শুরু করা মাত্র ওকে বোঝাবার চেষ্টা করুন যে ওর জেদ মেনে নেওয়া কেন সম্ভব নয় আপনার পক্ষে। কিন্তু যদি বাচ্চা অতিরিক্ত চ্যাঁচামেচি বা কান্নাকাটি করতে থাকে তাহলে সেটা ওকে বোঝাবার সঠিক সময় নয়।  বাচ্চা যেটা নিয়ে জেদ করছে, কোনও ভাবে তার মনটাকে সেই জিনিসটা থেকে সরিয়ে আনা খুব দরকার। জেদ করার সময় তার মুখের উপর ‘না’ বলে দেওয়া ঠিক নয় বরং কেন তাকে সেটা দেওয়া যাবে না সেটা বিস্তারিত ভাবে খুলে বললেই সেটা বাচ্চা বুঝতে পারবে আর তার ইগো-ও হার্ট হবে না।

দীর্ঘশ্বাস নিতে বলুন – বাচ্চা ট্যানট্রাম একবার শুরু করলে সঙ্গে সঙ্গে একটি ব্যায়াম ওকে করাতে চেষ্টা করুন। নিজের কাছে বসিয়ে বাচ্চাকে লম্বা করে শ্বাস টানতে বলুন। এর ফলে বাচ্চার ইমোশনাল রিয়াকশন  কিছুটা শিথিল হয়ে পড়বে। বাচ্চা যদি করতে রাজি না হয় তাহলে আপনি নিজেই সেটা করে দেখুন। ডিপ ব্রিদিং ইমোশনকে কন্ট্রোলে রাখতে সাহায্য করে। স্ট্রেস কম করে এবং পাল্স ও ব্রিদ রেট-কে কন্ট্রোল করা যায়।

শাস্তি দেবেন না – অভিভাবকেরা যেটা সবথেকে বড়ো ভুল করে থাকেন, বাচ্চা জেদ দেখালে তাকে শাস্তি দেওয়া। এতে কোনও লাভ হয় না। বরং বড়োদের মনে হয় তাদের শিক্ষায় কোনও দোষ থেকে যাচ্ছে যার ফলে বাচ্চা বেয়াদপ তৈরি হচ্ছে আর নয়তো মনে করেন, তাদের বাচ্চার মধ্যেই কোনও অসংগতি রয়েছে। ঘাবড়ে না গিয়ে স্বামী-স্ত্রী উভয়ে বিষয়টি আলোচনা করে নিজেরাই একটা রাস্তা খুঁজে বার করুন।

 শান্ত করাবার চেষ্টা করবেন না  – বাচ্চার জেদ কোনও ভাবে কমাতে না পারলে বাচ্চাকে ইগনোর করুন অবশ্য খেয়াল রাখবেন জেদের বশে বাচ্চা নিজের ক্ষতি না করে বসে। বাচ্চা যদি রাগের মাথায় কামড়ানো, লাথিমারা, জিনিস ছুড়ে ফেলে দেওয়া এইসব করতে থাকে,  তাহলে সঙ্গে সঙ্গে ওই জায়গা থেকে ওকে সরিয়ে নিয়ে যান। ওকে বুঝতে দিন, কাউকে ব্যথা দেওয়া বা জিনিস ভাঙা কিছুতেই বরদাস্ত করা হবে না। নিজের প্রতিক্রিয়া বাচ্চার সামনে প্রকাশ করবেন না। এতে বাচ্চা বুঝতে পারবে আঁচড়ে কামড়ে সে বড়োদের নিজের কথা মেনে নেওয়াতে পারবে না। তবে অনেক সাইকোলজিস্ট-দের মতে বাচ্চার ভিতরের ফিলিংস বাইরে প্রকাশ করতে পারলেই সে অবসাদমুক্ত থাকতে পারবে।

বাচ্চার প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করতে কার্পণ্য দেখাবেন না – বাচ্চা জেদ করতে গিয়ে উত্তেজিত হয়ে পড়লে তাকে কাছে টেনে নিয়ে জড়িয়ে ধরুন, বুঝতে দিন আপনি ওকে ভালোবাসেন। অনেক ক্ষেত্রেই এটা ম্যাজিকের মতো কাজ করে। বাচ্চা নিজেকে সুরক্ষিত মনে করে এবং ওর বিশ্বাস হয় যে ওকে সকলে ভালোবাসে।

ক্লান্তি এবং ক্ষিদে সবথেকে বেশি, বাচ্চাকে জেদী করে তোলে। সুতরাং সময় সময়ে বাচ্চার খাবারের খেয়াল রাখুন এবং পর্যাপ্ত ঘুম যাতে হয় তাও নজর দিন। বাচ্চার কমফর্টের সঙ্গে আপস করবেন না।

 

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...