পেশাগত বাধ্য-বাধকতার জন্য দীর্ঘসময় বসে কাজ করা এখন বেশিরভাগ মানুষের দৈনন্দিন রুটিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর এরফলে অস্থিসন্ধির ক্রনিক পেইন-এর সমস্যায় ভুগছেন অনেকে। অথচ, এই সমস্যা এক দশক আগেও এতটা ছিল না। তখন শুধু পঞ্চাশের বেশি বয়সিরাই ভুগতেন অস্থিসন্ধির ক্রনিক পেইন-এর সমস্যায় কিন্তু এখন কুড়ি-পঁচিশ বছর বয়সের ছেলেমেয়েরাও এই সমস্যার শিকার হচ্ছেন। আসলে, নানারকম কারণে এখন হাঁটা-চলা, শরীরচর্চা ইত্যাদি কমছে, আর বাড়ছে বসে থাকা। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদী সুস্থতার জন্য নিয়মিত শারীরিক সক্রিয়তা জরুরি। এরজন্য অবশ্য জিম-এ গিয়ে ঘাম ঝরাতে হবে না, বরং হাঁটাচলার পাশাপাশি কিছু ফ্রি-হ্যান্ড এক্সারসাইজ করলেই চলবে। অস্থিসন্ধির ক্রনিক পেইন থেকে মুক্তির জন্য এবং দীর্ঘদিন সুস্থসবল থাকার জন্য উপযোগী কয়েকটি ব্যায়াম করার পরামর্শ দিলেন ডা. রণেন রায়।
ক্যাট-ক্যামেল স্ট্রেচঃ দুই হাত, কাঁধ বরাবর ছড়িয়ে দিন, দুই হাঁটু আলাদা রাখুন, তলপেটের পেশি টেনে পিঠ সোজা করে দাঁড়ান। তলপেট এমনভাবে সংকুচিত করুন যেন নাভিকে শিরদাঁড়ার দিকে টেনে নিচ্ছেন বলে মনে হয়। সামনের দিকে বেন্ড করুন। মাথা ও ঘাড় স্বাভাবিক ভাবে দুই বাহুর মাঝে নামবে। গভীর ভাবে শ্বাস নিয়ে ৩০ থেকে ৪০ সেকেন্ড ধরে রাখুন।
পুশ আপঃ ম্যাটের ওপর স্টম্যাকে ভর দিয়ে শুয়ে পড়ুন, হাত ও তালু থাকুক কাঁধের নীচে। বাহু টানটান করে শরীরের উপরিভাগ মেঝে থেকে উপরে তুলুন। শ্রোণী লেগে থাকুক ম্যাটের সঙ্গে, আর নিতম্ব ধনুকের মতো উঠুক। এভাবে কয়েক সেকেন্ড থেকে ফের শুরুর অবস্থায় আসুন এবং আবার করুন।
নী-টু-চেস্টঃ টেবিল বা কোনও শক্ত কিছুতে পিঠ রেখে শুয়ে পড়ুন। একটি পায়ের হাঁটুর উপর দুইহাত জুড়ে বুকের দিকে টানতে থাকুন। অন্য পা মেঝের সঙ্গে লেগে থাকবে। এরকম থাকুন ৩০ সেকেন্ড। পা বদল করে আবার করুন।
পেল্ভিক টিল্ট্ঃ পিঠে ভর দিয়ে মেঝেতে শুয়ে পড়ুন। হাঁটু ভাঁজ করে পায়ের পাতা ও মাথা মেঝেতে সমান করে রাখুন। এবার পিঠ মেঝে থেকে সামান্য একটু তুলুন, যাতে তলপেটের পেশিতে টান পড়ে। পিঠ সোজা করে ধরে রেখে স্বাভাবিক ভাবে শ্বাস নিন ও ছাড়ুন। পাঁচ সেকেন্ড থাকুন। শ্বাস আটকে রাখবেন না। আগের অবস্থায় ফিরে আসুন ও আবার করুন।
শোল্ডার শ্রাগ্ঃ দুপাশে বাহু রেখে দাঁড়ান বা বসে থাকুন এবং সোজা সামনে তাকান। আস্তে আস্তে কানের দিকে কাঁধ তুলুন। এভাবে ১০ সেকেন্ড থেকে ফের আগের অবস্থায় ফিরে যান। এমনটা কয়েকবার করুন।
শোল্ডার স্কুইজঃ সোজা হয়ে চেয়ারে বসে তালু সামনের দিকে রেখে সোজা করে বাহু তুলুন। দুই কাঁধ সংকুচিত করুন। ৫-র০ সেকেন্ড এরকম করুন, আবার ছেড়ে দিন। ৩ থেকে ৫ বার এই ব্যায়াম করুন।
নেক টার্নঃ সামনের দিকে তাকিয়ে দাঁড়ান বা বসুন। আস্তে মাথা বাঁদিকে ঘোরান। ১০ সেকেন্ড রাখুন। ফিরে আসুন আগের অবস্থায়। এরপর মাথা অপরদিকে ঘোরান। ১০ সেকেন্ড রেখে ফের আগের অবস্থায় ফিরে যান। বিশ্রাম নিয়ে আবার করুন।
নেক টিল্ট্ঃ সামনের দিকে তাকিয়ে বসুন বা দাঁড়ান। আস্তে মাথা বাঁদিকে হেলান। এভাবে পাঁচ সেকেন্ড থেকে শুরুর অবস্থায় ফিরুন। অপর পাশেও এরকম করুন। বিশ্রাম নিন। আরও কয়েকবার করুন।
ক্রান্চেস্ঃ পিঠে ভর দিয়ে শুয়ে পড়ুন, হাঁটু ভাঁজ করুন। দুই হাত রাখুন মাথার পাশে। তলপেট খিঁচে রেখে মেঝেতে নিতম্ব চেপে রাখুন। এবার আস্তে আস্তে মেঝে থেকে কাঁধ ১-২ ইঞ্চি উঁচু করুন। ওঠার সময় শ্বাস ছাড়ুন, কয়েক সেকেন্ড থাকুন, তবে নিঃশ্বাস আটকে রাখবেন না। তলপেট টানা অবস্থায় আস্তে আস্তে নীচু হতে থাকুন। বিশ্রাম নিয়ে আবার করুন।
তবে, মনে রাখবেন, উপযুক্ত ব্যায়াম না করলে হিতে বিপরীত হতে পারে। এই প্রসঙ্গে ‘বোন এক্সপার্ট’ ডা. রণেন রায় জানিয়েছেন, কেউ যদি এই সমস্যায় ভুগতে থাকেন, তাহলে তার উচিত, ফিজিক্যাল অ্যাক্টিভিটিতে যুক্ত হওয়ার আগে, কোনও প্রশিক্ষিত ফিজিয়োথেরাপিস্ট-এর পরামর্শ নেওয়া। কারণ, ভুল শারীরিক ভঙ্গিমা ও অনুপযোগী ব্যায়াম ক্ষতিকারকও হতে পারে।
——–