মধ্যপ্রদেশের জব্বলপুরের একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় ডেস্টিনেশন ভেড়াঘাট। তবে সবাই এর খোঁজ রাখেন না, প্রকৃত অর্থে যারা প্রকৃতি প্রেমিক, তাদের ট্রাভেল ডায়ারির এ এক আবশ্যক সংযোজন। জব্বলপুর এয়ারপোর্ট থেকে ৪৫ মিনিটের গাড়ি-পথে পৌঁছে গেছি ভেড়াঘাট। অক্টোবরের শুরু কিন্তু বেশ গরম। সদ্য বর্ষাস্নাত পাহাড়তলিতে যেন সবুজের রায়ট।

নর্মদার বহতা স্রোত ধরে জব্বলপুর থেকে ২০ কিমি দূরত্বে ভেড়াঘাটের অবস্থান। ছোট্ট এই জনপদ তেমন জনবহুল নয়। কিন্তু সৌন্দর্যের খনি। অতিকায় মার্বেল পাথরের ল্যান্ডস্কেপ ও নদী, যেন এক পিকচার পোস্টকার্ড-এর সাক্ষী করল।

বর্ষা পেরোনোর পর নর্মদা যেন তার স্বরূপে উদ্ভাসিত। একটি বোট-এর সঙ্গে দরদাম করে আমরা চড়ে বসলাম। মিনিট পনেরো জলে ভেসে বেড়ানোর পর যেন এক অন্য পৃথিবীতে গিয়ে পড়লাম। এ বড়ো প্রাচীন এক ল্যান্ডস্কেপ, যার বিশালত্বে ভয় করে। মার্বেলের ওই প্রাচীর যেন কোন প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে অমনই অগম্য অবস্থায় রয়ে গেছে।

ভেড়াঘাটে ক্রুজ শেষ করে আমরা চললাম পরের গন্তব্য ধুঁয়াধার ফল্স দেখতে। এ এক অসাধারণ জলপ্রপাত যাকে ইন্ডিয়ান নায়াগ্রার আখ্যা দেওয়া হয়। কেবল কার-এ চড়ে এর দর্শন করা একটা লাইফটাইম এক্সপিরিয়েন্স। শাহরুখ খান ও করিনা অভিনীত ছবি ‘অশোকা’ এই অঞ্চলে শুট হওয়ায়, অনেকেই পর্দায় এর সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ হয়েছেন। এই অপরূপ জলপ্রপাত সত্যিই মন্ত্রমুগ্ধ করে দেয়।

travelogue
Destination Bheraghat

আমাদের থাকার ব্যবস্থা হয়েছে মধ্যপ্রদেশ ট্যুরিজমের-এর নিজস্ব রিসর্টে। ভেড়াঘাটের খুব কাছেই এই রিসর্ট এক কথায় অসাধারণ। লাঞ্চ করে আমরা বেরিয়ে পড়লাম চৗষট্টি যোগিনী মন্দিরের উদ্দেশে। জব্বলপুরের ঐতিহাসিক তাৎপর্যটি জেনে নিই এক লোকাল গাইডের সাহায্যে। মৌর্য ও সতবাহন সাম্রাজ্যের ইতিহাস বহন করে জব্বলপুর। পরবর্তীকালে গু৫ ও কালাচুরি বংশের শাসকরা এখানে রাজ্যপাট চালান। এই কালাচুরি রাজত্বের এক অমাত্যই চৌষট্টি যোগিনী মন্দিরের প্রতিষ্ঠা করেন। ভেড়াঘাটের অনতিদূরে পাহাড়ের উপরে অবস্থিত এই মন্দির, ভারতের সবক’টি যোগিনী মন্দিরের মধ্যে সর্ববৃহৎ।

চৌষট্টি যোগিনী মন্দির ভারতের প্রচীনতম মন্দির স্থাপত্যগুলির অন্যতম। বস্তুত এটা দুর্গামন্দির। যোগিনীরা দেবীর সহচরী। প্রতিটি যোগিনী মূর্তি দেয়ালে খোদাই করা এবং এক গোলাকার প্রাচীরের উপর এগুলির অবস্থান। তবে প্রাচীরে রয়েছে মোট ৮৪টি কম্পার্টমেন্ট। তার মধ্যে ৬৪টি যোগিনী মূর্তি, অন্যগুলো অন্যান্য দেব-দেবীর। এই মন্দিরে পৌঁছোতে গেলে ১০০টি সিঁড়ি ভেঙে উপরে উঠতে হয়। একবার পৌঁছে গেলে কিন্তু মুগ্ধ করার মতো এক সৌন্দর্যের সাক্ষী থাকবেন সারাজীবন।

Travelogue
Destination Bheraghat

অনেকগুলি মূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায়, বর্তমানে আর্কিওলজিক্যাল সার্ভের তত্ত্ববধানে এর সংরক্ষণের চেষ্টা হচ্ছে। গোলাকার ওই প্রাচীরের মাঝখানে গৌরী-শঙ্কর মন্দির। উপর থেকে নর্মদাকে দেখাও এক অনন্য সুন্দর অভিজ্ঞতা। সেই প্রাচীন কাল থেকে মানুষ কেন প্রকৃতির উপাসক হয়ে এসেছে, পাহাড়ের উপরে এই অনির্বচনীয় দৃশ্য দেখতে দেখতে সেটাই উপলব্ধি করছিলাম।

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...