পর্ব – ১

ঘড়িতে এখন সময় পৌনে দশটা। শীতের সকাল। রণিদার বাড়ির ঘাসের সবুজ গালিচা মোড়া সুবিশাল লনে নরম মিঠে রোদে গা সেঁকতে-সেঁকতে খবরের কাগজে চোখ বোলাচ্ছিলাম। একটু আগে হরিদা এসে টেবিল-চেয়ার পেতে চায়ের যাবতীয় সরঞ্জাম রেখে গেছে। প্লেটে পরিমাণমতন কুচো নিমকি দিয়ে যেতে ভোলেনি। রোববার করে এই সময়টায় এ বাড়িতে আসা এক অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। খবরের কাগজে ডুবে ছিলাম। আচমকা খানিক দূরের গাছে বসে থাকা পাখির ডাকে চোখ তুলে দেখি একটা ফিঙে, চিড়িক চিড়িক করে লেজ নাড়াচ্ছে– যেন বলছে, আমাকে দ্যাখো। উড়ে আসছে ভেজা বাতাস, বেশ লাগছে।

খুশি খুশি মুডে চায়ে চুমুক দিলাম।

এমন সময় লোহার গেটটা শব্দ করে সরে গেল।

দেখলাম, গেট ঠেলে রণিদা ঢুকছে। দ্রুত পদক্ষেপে এগিয়ে এল, আমার দিকে মৃদু হেসে বলল, একটু বস, এখুনি ফ্রেশ হয়ে আসছি। রণিদা প্রতিদিন ভোরবেলা কোনও না কোনও ফিজিক্যাল অ্যাক্টিভিটিজ নিয়ে ব্যস্ত থাকে। কখনও জিমে যায়, কখনও ক্যারাটে ক্লাবে, কখনও স্রেফ জগিং। যেদিন কোথাও যায় না নিজের ছাদে তৈরি একটা মিনি জিম আছে, সেখানেই গা ঘামিয়ে নেয়। এটা ওর রোজকার অভ্যাস। আমাকে বহুবার বলেছে, আরে রঞ্জন, একটু জিম-টিম কর, শরীর ফিট থাকবে, দেখবি কাজে কত এনার্জি পাবি।

চিরকালের হদ্দ কুঁড়ে আমি। ওসব আমার ধাতে নেই। তাই ভোরের সূর্য দেখা আমার কপালে কোনওদিন হয়ে ওঠে না।

কী হে রিপোর্টার, কতক্ষণ? প্রশ্ন শুনে চমকে তাকিয়ে দেখি ঢোলগোবিন্দবাবু–আমাদের রোববারের আড্ডার এক অবিচ্ছেদ্য সঙ্গী।

হেসে জবাব দিলাম, মিনিট কুড়ি হল। বসুন।

বছর বাহান্নর ভারিক্বি চেহারার ঢোলগোবিন্দবাবু একটা চেয়ার টেনে বসতে বসতে বললেন, রণি ফিরেছে?

হ্যাঁ, এই ফিরল। বোধহয় স্নানে গেছে। কিন্তু ব্যাপারখানা কী? আজ একদম ফিটফাট বাবুটি সেজে?

ঢোলগোবিন্দবাবুর পরনে ছিল হালকা ক্রিম রঙা ফুলস্লিভ শার্ট, ডিপ খয়েরি প্যান্ট, পায়ে চকচকে ব্রাউন স্যু। আর মাথায় গলফ ক্যাপ ও ঠোঁটে পাইপ। চমৎকার লাগছিল ভদ্রলোককে।

উনি হেসে জবাব দিলেন, কারণ আছে।

ওনার চোখে-মুখে এক রহস্যময়তা খেলা করছিল। আমি আবার প্রশ্ন করলাম, আজ দেখছি বেশ একটু আগে আগেই চলে এলেন। অন্য দিন তো সাড়ে দশটা-পৌনে এগারোটার আগে এ মুখো হন না।

সে কী, খবর কিছু শোনোনি? মানে, রণি বলেনি তোমায় কিছু?

না, কই কিছু বলল না তো। কাগজটা নামিয়ে টেবিলে রেখে একটু নড়েচড়ে বসি।

আজ এক মক্বেল আসার কথা, নতুন কেস, এক বিশেষ ভঙ্গিতে চোখ নাচিয়ে বললেন ঢোলগোবিন্দবাবু।

তাই! মুহূর্তে আমি যেন চাঙ্গা হয়ে উঠি। একজন ক্রাইম রিপোর্টার হিসাবে আমার প্রফেশনাল নার্ভটা টানটান হয়ে ওঠে। উৎসাহ ভরে বলি, নিন নিন, চা খান।

টি-পট থেকে একটা কাপে খানিকটা লিকার ঢেলে, দুধ ও সুগার কিউব দিয়ে চামচ সমেত কাপ-প্লেট এগিয়ে দিই ঢোলগোবিন্দবাবুর দিকে।

থ্যাংক ইউ মি. রিপোর্টার, কাপ-প্লেট হাতে তুলে নিয়ে সহাস্যে বললেন ভদ্রলোক।

ইউ আর মোস্ট ওয়েলকাম স্যার, কিন্তু কী কেস কিছু বলল কি রণিদা?

নাহ্ শুধু বলল, এই রোববার একটু তাড়াতাড়ি আসবেন, খবর আছে। এর বেশি কিছু ভাঙল না।

তাই বুঝি গন্ধে গন্ধে সাত তাড়াতাড়ি হাজিরা দিয়েছেন? আরে এই তো রণিদা আসছে।

নীল জিন্স-এর উপর একটা স্কাই রঙের টি-শার্ট চাপিয়েছে রণিদা। জিন্স-এ ওকে বেশি স্মার্ট লাগে।

পায়ে কোলাপুরি চপ্পল।

গুড মর্নিং গোবিন্দদা, হেসে বলল রণিদা।

মর্নিং ভায়া, মর্নিং। তারপর, শরীর ভালো তো?

একদম ফার্স্ট ক্লাস, আপনার? চেয়ারে বসে রণিদা।

মা তারার আশীর্বাদে কেটে যাচ্ছে এক রকম। কিন্তু তুমি যে বললে খবর আছে, তা খবরটা কী, শোনাও একটু আমাদের।

চা বানাতে বানাতে রণিদা জবাব দেয়, এখনও পর্যন্ত ব্যাপারটার বিন্দুবিসর্গ জানি না আমি। তবে জেনে যাব খুব শিগগির।

কাপ-প্লেট হাতে তুলে দুটো পর পর সিপ দিয়ে রণিদা ফের বলল, গত পরশু এক ভদ্রলোক ফোনে জানালেন যে তাঁর খুব বিপদ, আমার সাহায্য চান।

আমি জানতে চাইলাম কী রকম বিপদ? উত্তরে ভদ্রলোক বললেন সাক্ষাতে সব কথা জানাবেন। তারপর অ্যাপয়েন্টমেন্ট চাইলেন। ওনাকে আজ দশটা-সাড়ে দশটার মধ্যে আসতে বললাম।

আমি ঘড়ির দিকে একবার চেয়ে বললাম, এখন তো প্রায় সাড়ে দশটা বাজে, এখনও কই…।

প্যাঁ-প্যাঁ-প্যাঁ, গেটের বাইরে একটা সাদা অ্যাম্বাসাডর চিৎকার করে জানান দিল যে সে তার মালিককে নিয়ে এসে গেছে।

হরিদা, একটু দ্যাখো তো, বলে উঠল রণিদা।

বয়স্ক ছিপছিপে হরিদা অপেক্ষাকৃত একটু বেশি ক্ষিপ্রতায় ছুটে গিয়ে গেটটা খুলে দিল। তারপর আঙুল তুলে ইঙ্গিতে গাড়ি পার্কিং-এর জায়গাটা নির্দেশ করে গেট বন্ধ করে দিল।

লনে বসে দেখলাম অ্যাম্বাসাডার থেকে নামলেন তিনজন মধ্যবয়স্ক ব্যক্তি। ওনারা হরিদাকে অনুসরণ করে পায়ে পায়ে লনে আমাদের দিকে এগিয়ে এলেন স্বাভাবিক পদক্ষেপে।

আমরা তিনজনে উঠে দাঁড়ালাম। পারস্পরিক নমস্কার বিনিময় হল।

ঢোলগোবিন্দবাবু ভদ্রলোক তিনজনকে চেয়ারগুলি দেখিয়ে বললেন, প্লিজ, বি সিটেড।

ধন্যবাদ জানিয়ে তিনজন বসলেন।

হরিদা এগিয়ে এসে চা কাপে ঢেলে চিনি-দুধ প্রভৃতি মেশাতে লাগল চুপচাপ।

ওদের একজন ঢোলগোবিন্দবাবুর দিকে চেয়ে বলে উঠলেন, আমার নাম ঘনশ্যাম মণ্ডল। ফোনটা আমিই করেছিলাম।

ঢোলগোবিন্দবাবু বললেন, আমি না, রণজয় চক্রবর্তী হলেন উনি। আপনি ওনাকেই ফোন করেছিলেন। অনুগ্রহ করে চা নিন।

ভদ্রলোক ছাড়া বাকি দু’জন চায়ের কাপ হাতে তুলে নিলেন।

আমাদের মধ্যে ঢোলগোবিন্দবাবু অপেক্ষাকৃত বেশি বয়স্ক বলে অনেকে তাকেই গোয়েন্দা ভেবে ভুল করেন। এক্ষেত্রেও অন্যথা হল না। যাই হোক, গোবিন্দবাবুর কথায় ভদ্রলোক রণিদার দিকে খানিকটা বিস্ময়ভরা দৃষ্টিতে চাইলেন। সম্ভবত বছর বত্রিশের একটি ছেলেকে গোয়েন্দা বলে মেনে নিতে মন চাইছিল না তার।

একটু থেমে উনি বললেন, ও আচ্ছা।

আমার মতন রণিদাও এতক্ষণ তিনজনকেই খুব তীক্ষ দৃষ্টিতে অবজার্ভ করছিল। এবার বেশ কনফিডেন্টলি সরাসরিই বুঝি নেমে এল রণক্ষেত্রে, হ্যাঁ, আমিই রণজয় চক্রবর্তী। বলুন আপনার সমস্যাটা কী?

চা খেতে খেতে ভদ্রলোক একটু ইতস্তত করলেন বলতে, আমার ইয়ে, মানে ব্যাপারটা একটু পার্সোনাল।

ভদ্রলোকের কথায় গোবিন্দবাবু ও আমি অপ্রস্তুত হয়ে রণিদার দিকে অসহায় ভাবে তাকালাম। স্পষ্ট বুঝতে পারছি ভদ্রলোক আমাদের দুজনকে চাইছেন না।

কিন্তু রণিদা ব্যাপারটাকে দ্রুত সহজ করে দিল। বলল, এরা দুজনই আমার অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সহযোগী। আমার যে কোনও তদন্তে ওরা সক্রিয় ভাবেই অংশ নেয়। আমি বলছি ওদেরকে আপনি বিশ্বাস করতে পারেন।

তারপর একটু থেমে আবার বলল, আপনার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিই, ও হল রঞ্জন, সুরঞ্জন দে। একজন ক্রাইম রিপোর্টার। সামান্য লেখালিখির শখ আছে। নামটা হয়তো শুনে থাকবেন।

আমি হাতজোড় করে ফের নমস্কার করি।

আর উনি হলেন ঢোলগোবিন্দ বন্দ্যোপাধ্যায়। আমার দাদার বন্ধু ছিলেন, এখন আমার। ভালো তবলা বাজান। ওনার মতন নিরীহ ভদ্র মানুষ ভূ-ভারতে কমই আছে। এবার যদি অনুগ্রহ পূর্বক আপনাদের পরিচয়টা একটু দেন।

রণিদার স্মার্ট কথাবার্তায় মনে হল ঘনশ্যামবাবুর দুশ্চিন্তা দূর হল।

উনি বললেন, মাফ করবেন, আমার আগেই বোঝা উচিত ছিল। যাই হোক, পরিচয় করিয়ে দিই–এরা দু’জনই আমার বাল্যবন্ধু বলতে পারেন। ইনি সুবিমল সোম আর ইনি কমলেশ খাস্তগীর।

আস্ত বীর! বিস্মিত ঢোলগোবিন্দবাবু দুচোখ কপালে তুললেন এক অদ্ভুত ভঙ্গিতে।।

ওনার বেমক্বা কথায় আমি অবাক, রণিদার চোখেমুখে রীতিমতন বিরক্তি।

ঢোলগোবিন্দবাবুর সব ভালো, দোষ কেবল মাঝেমধ্যে দু-একটা দুমদাম উলটোপালটা কথা বলে ফেলেন কিংবা বেশ প্রত্যয়ের সঙ্গে কোনও কিছুর ভুল ব্যাখ্যা করে বসেন অত্যন্ত নির্বিকার চিত্তে।

খেয়াল করলাম কানে খাটো ঢোলগোবিন্দবাবু হিয়ারিং এইডটা লাগাতে ভুলে গেছেন। আমি ইশারায় ওটি ওনার বুকপকেট থেকে খুলে কানে লাগাতে বললাম।

উপস্থিত সকলেই একটু অপ্রস্তুত। ব্যাপারটা বুঝতে পেরে কমলেশবাবু একটু টেনে টেনে উচ্চারণ করলেন, খা-স্ত-গী-র।

মাথায় টাক। প্রায় ছ’ফুট উচ্চতার ফর্সা, ভারী মেদবহুল চেহারার মানুষটির কণ্ঠে একটু উষ্মা।

ওঃ, সরি সরি, বলে উঠলেন ঢোলগোবিন্দবাবু।

রণিদা বলল, কিছু মনে করবেন না, উনি একটু কানে কম শোনেন। হ্যাঁ যা বলছিলাম, আপনার সমস্যাটা কী নিয়ে?

খানিক থেমে ঘনশ্যামবাবু বললেন, ইয়ে, মানে গত কয়েকদিন যাবৎ আমি বেশ কয়েকটা হুমকি দেওয়া চিঠি পাচ্ছি।

কত দিন ধরে?

তা প্রায়, দিন পনেরো হবে।

চিঠিগুলো সঙ্গে এনেছেন আপনি?

হ্যাঁ, হ্যাঁ এই তো। ভদ্রলোক শশব্যস্ত হয়ে পাঞ্জাবির পকেট থেকে মোড়ানো কিছু কাগজ বের করে রণিদার হাতে দিলেন।

দেখলাম সংখ্যায় চারটি। রণিদা সকলের সামনেই কাচের টেবিলটার ওপর ওগুলি রাখল।

বেশ মনযোগ দিয়ে মিনিট পাঁচেক ধরে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে  চিঠিগুলি দেখে প্রশ্ন করল, এগুলি কি ডাকে এসেছিল?

হ্যাঁ।

খামগুলি কই?

একটা ফেলে দিয়েছি। বাকি তিনটে বাড়িতে কোথাও আছে। ওগুলি কি দরকার?

সম্ভবত শেষের তিনটি? হ্যাঁ, ওগুলি আমাকে দেবেন মনে করে। আচ্ছা একটা কথা বলুন তো, চিঠিগুলি কি একই অফিস থেকে পোস্ট করা হয়েছিল?

এ প্রশ্নটার উত্তর এল সুবিমল সোমের কাছ থেকে। উনি বললেন, আমিও ব্যাপারটা খেয়াল করেছিলাম। চিঠিগুলি কলকাতার বিভিন্ন জায়গা থেকে পোস্ট করা হয়েছিল।

ভদ্রলোকের দিকে রণিদার দৃষ্টি তীক্ষ্ন হল।

তিনজনের মধ্যে ওনাকেই বেশি বুদ্ধিমান বলে মনে হল আমার।

মাথায় সেভেন্টি পার্সেন্ট চুল পাকা, সরু কাঁচা-পাকা গোঁফ। ডানদিক পেতে চুল অাঁচড়ান ভদ্রলোক। মাঝারি দোহারা চেহারার মানুষটির চোখ দু’টিতে বুদ্ধির প্রখরতা ঠিকরে বেরোচ্ছে মনে হল, ব্যাপারটা রণিদারও চোখ এড়ায়নি।

রণিদা দ্রুত উত্তর দিল, গুড। আপনি কি করেন মি. সোম?

এক সময় ব্যাংকে চাকরি করতাম। ভিআরএস নিয়েছি। বর্তমানে বাড়িতেই একটা এসটিডি বুথ বসিয়েছি। জেরক্স মেশিনও আছে। একটা ছেলে রেখেছি দেখাশোনার জন্য।

যাকগে ওসব, হ্যাঁ ঘনশামবাবু, যে কথা বলছিলাম আপনাকে, রণিদা বলতে শুরু করল। এই সংক্ষিপ্ত চিঠিগুলির মূল বক্তব্য যেটা বোঝা যাচ্ছে তা হল, কেউ আপনাকে থ্রেট করছে–বাড়ি-ঘর

বিক্রি-বাট্টা করে দূরে কোথাও চলে যেতে বলছে। তাই তো?

ভদ্রলোক সম্মতিসূচক মাথা নাড়েন।

আপনার কি কাউকে সন্দেহ হয়? তীক্ষ্ন দৃষ্টিতে তাকায় রণিদা।

সন্দেহ?

হ্যাঁ, এই শত্রুতার পিছনে কার হাত আছে বলে মনে হয় আপনার?

ব্যাপারটা নিয়ে আমি অনেক ভেবেছি জানেন? কিন্তু আমাকে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে কার কী লাভ হতে পারে বুঝতে পারছি না।

রোগা-পাতলা চেহারার শ্যামবর্ণ ঘনশ্যামবাবু লোকটির কণ্ঠস্বর বেশ অসহায়, নিরীহ শোনায়।

এমন সময় তৃতীয়জন অর্থাৎ কমলেশ খাস্তগীর তার বিশাল বপু নাড়িয়ে বলে উঠলেন, তোমার কিছু হলে কারও কি কিছু লাভ হতে পারে?

কথা বলেই উনি পকেট থেকে সিগারেটের প্যাকেট ও লাইটার বের করেন। তারপর প্যাকেট থেকে একটা সিগারেট বের করে দ্রুত হাতে ঠোঁটে চেপে ধরে বলেন, এক্সকিউজ মি, সিগারেট না খেয়ে আমি আবার একদম থাকতে পারি না। ফস করে ম্যাচ জ্বালান ভদ্রলোক। সিগারেট ধরিয়ে বলেন, এই একটাই বদ অভ্যাস আমার।

দেখাদেখি সিগারেট ধরালেন সুবিমলবাবুও।

খেয়াল করলাম ব্র্যান্ডটা চারমিনার। রণিদার সঙ্গে থাকার ফলে আমারও মানুষের খুঁটিনাটি লক্ষ্য করার অভ্যস গড়ে উঠেছে।

রণিদা হাত নেড়ে ওদের আশ্বস্ত করে বলে, অল রাইট। হ্যাঁ আপনার কিছু হলে সব থেকে বেশি লাভবান কে হতে পারে ঘনশ্যামবাবু?

কিছুক্ষণ ভাবলেন ভদ্রলোক। তারপর বললেন, বাবা গত বছর হঠাৎই স্ট্রোকে মারা যান। ফলে আমাদের দুই ভায়ের মধ্যে সম্পত্তির ভাগ-বাটোয়ারা করে যেতে পারেননি।

ভাই কি বড়ো?

না, ভাই আমার থেকে বছর পাঁচেকের ছোটো।

কেমন মানুষ তিনি?

সে কথাই বলছি। ওর স্বভাব-চরিত্র নিয়ে বাবার দুশ্চিন্তার অন্ত ছিল না। কিছুদিন আগেই আমার সঙ্গে এক প্রস্থ ঝগড়াঝাঁটি হয়ে গেল। ওর দাবি, যেহেতু আমি একটা সরকারি চাকরি করি বাবার সম্পত্তির সত্তর ভাগ ওকে দিতে হবে। বলুন তো, এটা মেনে নেওয়া যায়?

উনি, মানে আপনার ভাই এখন কোথায়?

কে জানে কোথায়। চিরকাল বাউণ্ডুলে স্বভাবের। মাঝেমধ্যেই বাড়ি থেকে উধাও হয়ে যায়। কোথায় যায় কেউ বলতে পারে না। ওকে জিজ্ঞাসা করেও কোনওদিন উত্তর পাওয়া যায়নি। এক মাস, দুমাস, কখনও কখনও ছ’মাস পর্যন্ত বাড়ির বাইরে কাটিয়ে আসে।

লাস্ট কবে বাড়ি ছেড়েছে?

ওই যেদিন আমার সঙ্গে ঝগড়া হল। তা প্রায় প্রায় মাস খানেক হবে।

ঠিক আছে। উনি ছাড়া আর কাউকে সন্দেহ হয় আপনার? রণিদা ফের জিজ্ঞাসা করে, আপনি কিসে কাজ করেন?

রেলে। অফিসে অবশ্য…

অবশ্য কী?

বছর খানেকের মধ্যে আমার অফিস সুপারিনটেন্ডেন্টের পদে প্রোমোশন হবার কথা, যদি সব কিছু ঠিকঠাক থাকে।

সব কিছু ঠিকঠাক নাও থাকতে পারে বলে মনে হচ্ছে কেন আপনার? রণিদার প্রশ্নের ধার বাড়ে।

ওই পোস্টের জন্য আরও দুজন প্রতিযোগী আছে। আসলে প্রামোশনটা আমি এসসি কোটায় পেতে চলেছি যে ব্যাপারটা ওরা দুজন কেউই মন থেকে মেনে নিতে পারছেন না। কারণ ওরা আমার থেকে বেশ সিনিয়র।

কি নাম ওনাদের?

একজন জনমেজয় মিত্তির, অপরজন নীলাক্ষি দাশগুপ্ত।

এসব ক্ষেত্রে কথার ফাঁকে ফাঁকে ডাইরিতে নোট নেওয়া রণিদার অভ্যাস। এক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম ঘটল না দেখলাম। লেখা শেষ করে ও প্রশ্ন করল, এদের ছাড়া আর কাউকে কি কোনও কারণে সন্দেহ হয় আপনার?

খানিক চুপ করে থাকলেন ভদ্রলোক।

তারপর বললেন, এদের ছাড়া তো আর কারও কথা মনে আসছে না এই মুহূর্তে।।

শুনুন ঘনশ্যামবাবু, আপনাকে আপাতত আমি কয়েকটি কথা বলি, একটু থামে রণিদা।

ও তিনজনের দিকে তাকায়, দেখা যায় প্রত্যেকেই বেশ উদগ্রীব ওর কথা শোনার জন্য।

পরিবেশ তৈরি করে নিয়ে ও ফের বলতে শুরু করে, প্রথমত, আপনি একটু সাবধানে চলাফেরা করবেন। দ্বিতীয়ত, চিঠিগুলি এখনকার মতো আমার কাছে রেখে যান। আর হ্যাঁ, খামগুলি দিয়ে যেতে ভুলবেন না। তৃতীয়ত, দুশ্চিন্তা ঝেড়ে ফেলে মনে আত্মবিশ্বাস আনার চেষ্টা করুন। কারণ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা গেছে হুমকি চিঠি আদপে কার্যকরী হয় না। আর সব শেষে বলি, পুরো ঘটনাটা জানিয়ে লোকাল থানায় একটা জিডি করে রাখুন।

থানায়। মানে পুলিশে?

হ্যাঁ, থানায় জানাতে আপত্তি কীসের?

না, মানে আমরা ঠিক থানা-পুলিশ করতে চাই না, আর সে জন্যই আপনার কাছে আসা, বললেন কমলেশবাবু।

ঘনশ্যামবাবু বললেন, শুনেছি বাঘে ছুঁলে আঠারো ঘা, আর পুলিশে ছুঁলে…

বাহাত্তর ঘা, ওনার মুখ থেকে কথা কেড়ে নিয়ে সম্পূর্ণ করলেন ঢোলগোবিন্দবাবু।

সকলে ওর দিকে তাকালেন, খানিকটা বিস্ময় সবার চোখে।

হ্যাঁ, ঠিকই বলেছি, আগে ছত্রিশ ছিল এখন ওটা বাহাত্তর হয়ে গেছে। বিশ্বাস না হয় মিলিয়ে দেখবেন। নির্বিকার চিত্তে বেশ জোর দিয়ে বললেন ঢোলগোবিন্দবাবু।

কেউ ওর কথায় হাসলেন না। কিন্তু তাতে ভদ্রলোকের ভ্রূক্ষেপ নেই।

ওসব কথা ছাড়ুন, যা বলছি আপনাদের মঙ্গলের জন্যই বলছি, বলল রণিদা, শুনুন চার লাইনের ছোট্ট একটা জিডি করে রাখুন থানায়! জিডি নম্বরটা নিতে ভুলবেন না।

তা হলে ব্যাপারটা কী দাঁড়াল আমাদের কেসটা আপনি নিচ্ছেন না, তাই তো? এতক্ষণে কথা বললেন সুবিমলবাবু।

দেখুন এখনও পর্যন্ত আপনাদের কেসের যা পরিস্থিতি তাতে সেটা নেওয়ার কথা ওঠে না। তবে ব্যাপারটা আমি মাথায় রাখলাম।

না মানে, তাহলে আপনার ফিজের অ্যাডভান্সটা আমরা দিয়ে যেতাম আজ, বললেন কমলেশ খাস্তগীর।

ধন্যবাদ মি. খাস্তগীর, ঠিক সময়ে আমি আপনাদের জানাব বিষয়টা। আপাতত ওটা ভুলে যান। আপনাদের ঠিকানাটা জানা হল না।

উত্তরে সুবিমলবাবু ও কমলেশবাবু নিজেদের কার্ড বার করে রণিদার  দিকে এগিয়ে দিলেন।

ঘনশ্যামবাবু বললেন, আমার তো কার্ড নেই, আমি বরং কমলেশের কার্ডের পিছন দিকে আমার ঠিকানাটা লিখে দিই।

ফোন নম্বর দিতে ভুলবেন না, অফিসেরটাও।

হ্যাঁ হ্যাঁ লিখে দিচ্ছি সব।

লেখা শেষ করে ঘনশ্যামবাবু কার্ডখানা রণিদাকে ফিরিয়ে দিলেন যত্ন সহকারে।

রণিদা লেখাটায় একবার চোখ বুলিয়ে বলল, এটা তো মনে হচ্ছে কালীঘাট এরিয়া, তাই না?

ঠিক তাই, সম্মতিজ্ঞাপক মাথা নাড়েন ঘনশ্যামবাবু।

আচ্ছা আর একটা কথা–এই চিঠির লেখা দেখে আপনার কি পরিচিত কারও লেখা বলে মনে হচ্ছে?

একটু ভেবে উনি মাথা নাড়লেন, নাহ্।

ঠিক আছে আজ তাহলে এই পর্যন্ত। উল্লেখযোগ্য কিছু ঘটলেই ফোনে তৎক্ষণাৎ জানাবেন আমাকে। আর হ্যাঁ, আবারও বলছি, সাবধানে চলাফেরা করবেন। সকলে উঠে দাঁড়াল। এরপর রণিদা উঠে দাঁড়িয়ে সকলের সঙ্গে করমর্দন করল। আমি আর ঢোলগোবিন্দবাবু ওকে অনুসরণ করলাম হাসিমুখে।

কিছু সময়ের মধ্যেই তিনজনকে নিয়ে ড্রাইভার গাড়ি ছেড়ে দিল। হু-স্ করে বেরিয়ে গেল গাড়ি।

এতক্ষণ আমরা সবাই চুপচাপ ছিলাম। হঠাৎ ঢোলগোবিন্দবাবু বলে উঠলেন, ধু-স-স, এ আবার একটা কেস। মনে হচ্ছে রোববারের সকালটাই মাটি হল।

রণিদা বলল, এবার বল দেখি রঞ্জন, কী কী জিনিস চোখে পড়ল তোর ?

আমিও পাক্বা গোয়েন্দার ভঙ্গিতে বলতে শুরু করলাম, এদের মধ্যে সবথেকে বেশি বুদ্ধি রাখেন সুবিমল সোম। ঘনশ্যামবাবু তেমন একটা ঘোর-প্যাঁচের মানুষ নন।

ক্যারি অন, চেয়ারে বসে সিগারেটে টান মেরে ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে পিছে হেলে অর্ধশায়িত অবস্থায় চোখ দুটি বন্ধ রেখে জবাব দিল রণিদা।

সুবিমলবাবু, কমলেশবাবু–দুজনেই চারমিনার খান। তবে মনে হয়…

কী মনে হয়?

মনে হয়, কমলেশবাবুই বেশি ধুমপান করেন, কারণ ওনার গা থেকে পারফিউমের গন্ধ ছাপিয়ে ভুর ভুর করে তামাকের গন্ধ বেরোচ্ছিল।

গুড, আর কী দেখলি বল?

তিনজনেরই বয়স পঞ্চাশের ওপারে। আর ওদের দু’জন মানে ঘনশ্যামবাবু ও সুবিমলবাবু ভিতরে ভিতরে উদ্বিগ্ন মনে হল। কিন্তু কমলেশবাবুর ব্যাপারটা বিশেষ বোঝা গেল না।

ঠিক আছে, মোটামুটি সব ঠিকই বলেছিস। তোকে গোয়েন্দার সহকারী হিসাবে নেওয়া যেতে পারে। কিন্তু গোবিন্দদা, আপনি যে দিবারাত্রি গাদা গাদা দেশি-বিদেশি গোয়েন্দা গল্প পড়েন, আপনি কী কী অবজার্ভ করলেন বলুন দেখি। উল্লেখযোগ্য কিছু বলতে পারলে আগামী দিনে আপনাকে আমাদের সঙ্গে নেব, না হলে নয়।

রণিদার ঠোঁটে মুচকি হাসির ঝিলিক।

এতক্ষণ তর্জনি ও মধ্যমার মাঝে একটা ট্রিপল ফাইভ রেখে মুষ্ঠিবদ্ধ অবস্থায় সুখী সুখী ভঙ্গিমায় থেমে থেমে টান দিচ্ছিলেন ভদ্রলোক, চক্ষু অর্ধনিমীলিত ছিল। এবার চোখ এবং মুখ উভয়ই খুললেন তিনি, তারপর যেন দারুণ কোনও তথ্য সংযোজন করছেন এমন ভাবে বললেন, কমলেশবাবুর হাতে খুব দামি একটা সেলফোন, একটা খবরের কাগজ ছিল, আর,

আর? আমি আগ্রহের সঙ্গে প্রশ্ন করি।

আর ওই অ্যাম্বাসাডরটা ওনার।

চমৎকার। রণিদা সোল্লাসে বলে ওঠে, আপনি দেখছি দিন দিন শার্লক হোমস হয়ে উঠছেন গোবিন্দদা।

উঁহু, হল না। ওয়াটসন, ওয়াটসন বলো ভায়া। শার্লক হোমস তো হতেই হবে, তবে তার আগে ওয়াটসনের ভূমিকায় কিছু দিন কাজ করে নিই, কিছুটা বুদ্ধি পাকুক, বেশ গদগদ কণ্ঠস্বরে বললেন ভদ্রলোক।

আমি প্রশ্ন করলাম, কিন্তু হঠাৎ তুমি খামগুলির ওপর অত জোর দিতে গেলে কেন? এসব ক্ষেত্রে চারটে চিঠি চার জায়গা থেকে ছাড়া হবে সেটাই স্বাভাবিক।

তুই ঠিকই বলেছিস রঞ্জন, পোস্ট করার স্থান ভিন্ন হতে পারে, চিঠিগুলি ভিন্ন ভিন্ন হাতে লেখা হতে পারে কিন্তু অনেক সময়ই দেখা যায় দুষ্কৃতকারী অসাবধানতা বশত এনভেলাপের ওপর ঠিকানাটা নিজের হাতে লিখে ফেলে। সেক্ষেত্রে মূল চিঠি থেকে এনভেলাপের লেখাটাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে পড়ে। যদি সেই রকম কিছু মিলে যায়, একটা চান্স নিলাম বলতে পারিস। চল, এবার ওঠা যাক। তুই টিফিন করবি তো? গোবিন্দদার তো রবিবার করে হাফ-ডে ফাস্টিং চলে। হরিদা, এই হরিদা বলতে বলতে চেয়ার ছেড়ে উঠে ঘরের দিকে

গেল ও।

অন্যমনস্ক ভাবে খবরের কাগজটা কখন যেন তুলে নিয়েছি আমি হাতে। ঢোলগোবিন্দবাবু নিবিষ্টমনে কী ভাবছেন, আর পাইপের ধোঁয়া ছাড়ছেন মাঝে মাঝে।

একটু পর হরিদার কথায় চমকে উঠলাম, এঃ হে, এইটুকু সময়ের মধ্যে জায়গাটা একদম নোংরা করে দিলে লোকগুলি। ছ্যাঃ ছ্যাঃ।

চেয়ে দেখলাম, সবুজ পরিচ্ছন্ন ঘাসের লনে বেশ কিছু

সিগারেটের অবশিষ্টাংশ ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে। হরিদা খুব খুঁতখুঁতে মানুষ।

হঠাৎ ঢোলগোবিন্দবাবু চেঁচিয়ে উঠলেন, ধু-স-স্ সব বোগাস।

কিন্তু সব যে বোগাস নয় সেটা বোঝা গেল কয়েকদিন পরই।

***

পর্ব – ২

ঘনশ্যামবাবুরা এ বাড়ি ঘুরে যাবার ঠিক ষষ্ঠ দিন অর্থাৎ শনিবার। সকাল সাড়ে সাতটা নাগাদ রণিদার একটা ফোন পেলাম।

রঞ্জন, এখনই একবার আসতে পারবি?

তোমার বাড়ি?

হ্যাঁ।

কী ব্যাপার, ভালো কিছু রান্না হচ্ছে না কি?

মজা রাখ, বেরোতে হবে একটু, ঘনশ্যামবাবু খুন হয়েছেন।

খুন! ঘনশ্যামবাবু!

বিস্ময়ের ঘোর কাটবার আগেই ও প্রান্ত থেকে শোনা গেল, আধ ঘণ্টার মধ্যে তৈরি হয়ে চলে আয়।

হ্যাঁ হ্যাঁ, এখনই চলে আসছি, কোনওমতে জবাব দিলাম।

ট্যাক্সিতে টালিগঞ্জ থেকে ঠাকুরপুকুর পৌঁছোতে সকালবেলা বেশি সময় লাগার কথা নয়। একবার ভাবলাম গোবিন্দবাবুকে খবর দিই। আবার পরক্ষণেই মনে হল, রণিদা যদি ওনাকে এই মুহূর্তে ঠিক পছন্দ না করে। থাকগে, যা করবার রণিদাই করুক। বেচারি ঘনশ্যামবাবু যে হুমকি চিঠিগুলি পাচ্ছিলেন তা শেষপর্যন্ত কার্যকরী হয়ে গেল। আহা রে! ভদ্রলোকের দুটি সন্তান আছে শুনেছি। উলটোপালটা ভাবনা-চিন্তায় নিজের আপাত প্রয়োজনীয় কাজগুলি দ্রুত সেরে নিচ্ছিলাম।

শেভ করে স্নান সেরে ফ্রেশ হলাম। ডিম-টোস্ট খেয়ে তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে নিলাম। ব্যাগটা রেডি করাই থাকে, একবার চোখ বুলিয়ে দেখে নিলাম সব কিছু ঠিকঠাক ভরা আছে কি না? নিশ্চিন্ত হয়ে ওটা কাঁধে ঝুলিয়ে রওনা হলাম। ট্যাক্সি পেতে অসুবিধা হল না।

এর মধ্যে ঘনশ্যামবাবু একদিন এসে রণিদাকে হুমকি চিঠির এনভেলপগুলি দিয়ে গেছিলেন।

রণিদা বলছিল, সেদিন ভদ্রলোককে বেশ বিমর্ষ দেখাচ্ছিল। মনে হয়েছিল, ভদ্রলোক বেশ দুশ্চিন্তাগ্রস্ত।

রণিদা আর আমি দুজন মিলে আমাদের সীমিত বিদ্যাবুদ্ধিতে এনভেলপের লেখাগুলির সঙ্গে চিঠির লেখা মেলাতে চেষ্টা করেছিলাম, কিন্তু কোনও মিল পাইনি। এনভেলপের লেখাগুলিতেও একটির সঙ্গে অপরটির কোনও সামঞ্জস্য ছিল না। ঘনশ্যামবাবু নিজেও তেমন কোনও উল্লেখযোগ্য তথ্য আমাদের দিতে পারেননি। ভদ্রলোক আমাদের কাছে এসেছিলেন সাহায্য লাভের আশায়। বেচারিকে এভাবে বেঘোরে প্রাণ দিতে হল।

সাত-পাঁচ ভাবতে ভাবতে এক সময় রণিদার বাড়ি পৌঁছে গেলাম।

ঘরে ঢুকে দেখলাম রণিদা তৈরি হয়েই আছে প্রায়। ইনভেস্টিগেটিং টুল্স বক্সটার মধ্যে উঁকি মেরে কিছু দেখছিল ও। তারপর দ্রুত ওটা বন্ধ করে বলল, চল, বেরিয়ে পড়ি।

মিনিট তিনেকের মধ্যেই বেরিয়ে পড়লাম আমরা। ড্রাইভিং-এ রণিদার হাত দারুণ।

বললাম, আমরা যাচ্ছি কোথায়?

ভিক্টোরিয়া, রণিদার কপালে ভাঁজ, দৃষ্টি সামনে। বুঝলাম গভীর চিন্তা করছে কিছু।

পিও কি ভিক্টোরিয়ায়?

হ্যাঁ।

তুমি কখন খবর পেলে?

সকাল সাতটা নাগাদ সুবিমল সোম ফোনে জানালেন ঘনশ্যামবাবুর মৃত্যুর খবরটা। বললেন, আজ ভোরে ঝাড়ুদারের প্রথম চোখে পড়ে ডেডবডিটা বেঞ্চিতে হেলান দেওয়া অবস্থায়। দেখলে হঠাৎ মনে হবে ভদ্রলোক জীবিত, বসে আছেন। উনি যে মৃত এটা বুঝতেই নাকি বেশ সময় লেগেছিল ওর।

তারপর?

তারপর চ্যাঁচামিচি করে ও গার্ডকে ডাকে। ময়দান থানায় খবর যায়। পুলিশ এসে ডেডবডির দায়িত্ব নেয়, ওনার পকেটের কাগজপত্র থেকে পরিচয়, ফোন-নম্বর ইত্যাদি জানতে পারে পুলিশ, তারপর বাড়িতে ফোন করে জানায়। আইডেন্টিটি কার্ড থেকে প্রাথমিক সনাক্তকরণ পর্ব মিটলেও বাড়ির লোককে এসব ক্ষেত্রে তো অবশ্যই দরকার তথ্য কনফার্ম করা এবং বডি ডিসপোজাল করার জন্য।

থানার ফোন পেয়ে মণ্ডলবাবুর স্ত্রী ভীষণ ভেঙ্গে পড়েন। তারপর উনি সুবিমলবাবুকে ফোন করেন সাহায্যের জন্য।

গাড়িটা রেসকোর্সের গা ঘেঁষে এগিয়ে যায়। এক সময় ভিক্টোরিয়ার গেটের কাছাকাছি পার্কিং প্লেসে এসে দাঁড়ায়।

আয় নাম, শুনেছিলাম ডেডবডিটা এদিকেই কোথাও পড়ে ছিল, বলে গাড়ি থেকে নেমে দরজা লক করে রণিদা।

পায়ে পায়ে আমরা ভিক্টোরিয়ার গেটের দিকে এগোতেই দেখি বেশ গুরুগম্ভীর মুখে এগিয়ে আসছেন আমাদের থ্রি মাস্কেটিয়ার্সের অপর ব্যক্তিটি-স্বয়ং ঢোলগোবিন্দবাবু।

দেখলাম ভদ্রলোকের পরিধানে একটি হাফ প্যান্ট, সেটির দুই পকেটে হাতদুটি ঢোকানো।

পায়ে কেডস, গায়ে পুলওভার, মাথায় মাংকিক্যাপ চাপানো। মোবাইলটা সম্ভবত পকেটে।

ওনার পোশাক দেখে আমার ভ্রু কুঁচকে উঠল।

ব্যাপার বুঝতে পেরে উনি বললেন, ঢাকুরিয়া লেকে জগিং করছিলাম, এমন সময় গোয়েন্দার ফোন। ব্যস, সো–ও–জা চলে এলাম।

কথা না বাড়িয়ে রণিদার পিছু পিছু এগিয়ে গেলাম আমি।

বাঁ-দিক বরাবর কিছুটা এগিয়ে আমরা পিও অর্থাৎ প্লেস অফ অকারেন্স-এ পৌঁছোলাম।

ডেডবডি সরিয়ে ফেলা হয়েছিল আগেই। তবে স্থানটি ঘিরে রাখা হয়েছিল ফিতে দিয়ে। অদূরে দু-জন কনস্টেবল পাহারায়।

রণিদা এগিয়ে গিয়ে ওদের একজনকে নিজের আই-কার্ডটা পকেট থেকে বের করে দেখাল। তারপর সামান্য কিছু কথাবার্তা বলল। মনে হল, ওরা আমাদের পরিচয় পেয়ে সন্তুষ্ট, কাজে বাধা দেবে না আর। ওদের একজনকে কথা বলতে বলতে নিয়ে এল আমাদের কাছাকাছি।

সঙ্গের কনস্টেবলটিকে রণিদা জিজ্ঞাসা করল, ডেডবডিটা কোথায় কী অবস্থায় পাওয়া গেছিল?

উত্তরে সে বলল, বলতে পারব না। এ ব্যাপারে সঠিক তথ্য একমাত্র ঝাড়ুদারই দিতে পারবে।

ওকে ডেকে আনা যাবে?

অবশ্যই। তারপর চেঁচিয়ে অপর কনস্টেবলের উদ্দেশ্যে বলল, জগদীশ, ঝাড়ুদারকে ডেকে আনো তো।

লোকটি চলে গেল ঝাড়ুদারকে ডাকতে।

আমরা ফিতে ঘেরা জায়গাটা ঘুরে ফিরে দেখতে লাগলাম। যদিও দেখার তেমন কিছুই ছিল না সেখানে। একটা বেঞ্চির চারপাশ খানিকটা স্পেস দিয়ে কর্ডন করে রাখা। অপেক্ষা করা ছাড়া উপায় ছিল না।

মিনিট দুতিনের মধ্যেই জগদীশ নামের কনস্টেবলটি ঝাড়ুদারকে নিয়ে এল আমাদের কাছে।

নমস্তে সাব, বলে হাত জোড় করে নমস্কার করল মানুষটা।

রণিদা পালটা নমস্কার জানিয়ে বলল, তোমার নাম কী ভাই?

মাধব, হুজুর।

আচ্ছা ভাই মাধব, একটু আমাকে বলো তো আজ সকালে তুমি ডেডবডিটা কী অবস্থায় দেখতে পেলে?

আজ সকালে রোজকার মতন ঝাঁট দিতে দিতে এদিকে যখন এলাম, দেখলাম একটা লোক এই বেঞ্চিতে বসে আছে জলের দিকে মুখ করে।

কোন দিকে বসে ছিল? ডান দিকে না বামদিকে?

বামদিকে হুজুর।

তারপর তুমি কী করলে?

অনেকক্ষণ এদিক ওদিক ঝাঁট দিতে দিতে আমার মনে কেমন সন্দেহ হল হুজুর। এ কেমন লোক, একদম নড়ছে-টড়ছে না। মনে হল লোকটা হেলে আছে খানিকটা।

তারপর?

ঝাড়ু দিতে দিতে কাছে এগিয়ে এলাম ভালো করে দেখবার জন্য। দেখলাম, লোকটার চোখ বন্ধ। ঘুমিয়ে পড়ল নাকি? সাহস করে ডেকেই ফেললাম, বাবু, ও বাবু?

দেখলাম কোনও সাড়া শব্দ নাই। আমার মনে কু গাইল হুজুর। কী মনে করে এগিয়ে এসে ওনার গায়ে একটু ধাক্বা দিতেই উনি বেঞ্চিতে হেলে পড়ে গেলেন। নিশ্চয়ই মরে গেছে মানুষটা। চিৎকার করে লোক ডাকলাম। একে একে সবাই এল। থানা-পুলিশ হল।

আচ্ছা মাধব, গত কাল সন্ধ্যায় তোমাদের গার্ড ব্যাপারটা লক্ষ্য করেনি? মানে লোকজন বেরিয়ে যাবার পর চেক আপের দায়িত্ব নিশ্চয়ই কারও ওপর দেওয়া থাকে?

থাকে হুজুর।

কে সে, কী নাম? শিউশরণ হুজুর, ওই এসব দেখে।

ওর চোখে ব্যাপারটা পড়েনি?

ওর দুদিন যাবৎ বুখার চলছে হুজুর, তাই মনে হয় ঠিক মতন ডিউটি করতে পারছে না।

আর কেউ নেই এই কাজে?

আছে হুজুর, ও দেশে গেছে।

আচ্ছা, বলল রণিদা। তারপর জায়গাটার চারপাশ ঘুরে ঘুরে সন্দিগ্ধ দৃষ্টি ফেলে দেখতে লাগল।

ঢোলগোবিন্দবাবু আর আমিও চুপচাপ বসে ছিলাম না। জায়গাটার কাছাকাছি যতটা সম্ভব মনোযোগ দিয়ে খুঁজে দেখলাম কিছু পাওয়া যায় কি না। কিছু শুকনো পাতা, পরিত্যক্ত ঠোঙা, চায়ের প্লাস্টিক কাপ, শালপাতা, ইত্যাদি ছাড়া আর বিশেষ কিছুই চোখে পড়ল না। বোধহয় খুনের ঘটনায় আচমকাই ঝাঁট দেওয়া বন্ধ হয়ে গেছিল আজ সকালে।

জিজ্ঞাসায় জানা গেল, সম্ভবত মানুষটিকে গলায় কিছুর ফাঁস দিয়েই হত্যা করা হয়েছিল। অফিসারদের কথাবার্তা অনুযায়ী সেটাই শুনেছে মাধব।

এরপর রণিদা ইনভেস্টিগেটিং টুল্স বক্স থেকে বেশ বড়ো সাইজের একটি ম্যাগনিফাইং লেন্স বার করল, সঙ্গে একটি ফরসেপস ও ছোটো একটি সেলোফেন ব্যাগ।

ওর অভিপ্রায় বুঝতে আমার দেরি হল না।

প্রায় আধঘণ্টা ধরে অসীম ধৈর্য সহকারে বেশ কিছু টুকরো-টাকরা ফরসেপসের সাহায্যে সংগ্রহ করে সেলোফেন ব্যাগে ভরল। কনস্টেবল দুজন সন্দিগ্ধ চিত্তে রণিদার কার্যকলাপ দেখছিল মন দিয়ে। এক সময় রণিদা উঠে দাঁড়াল।

কেসটা কে দেখছেন? জিজ্ঞাসা করল রণিদা।

সামনের কনস্টেবলটি অত্যন্ত নিস্পৃহ কণ্ঠস্বরে জবাব দিল, বলতে পারব না।

এরা দেখছি কিছুই বলতে পারে না, ওয়ার্থলেস সব, বিড়বিড় করে বলল রণিদা। কথাগুলি কানে এল আমার। তারপর বলল, চল রঞ্জন, একবার ময়দান থানায় যেতে হবে।

হাঁটতে হাঁটতে আমরা গাড়ির দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ রণিদা ঢোলগোবিন্দবাবুকে জিজ্ঞাসা করল, কেমন বুঝছেন গোবিন্দদা?

হু-ম্-ম রহস্য এখন গাঢ় হচ্ছে। বেশ সিরিয়াসলি ভারিক্বি কণ্ঠে জবাব দিলেন ভদ্রলোক।

তারপর একটু থেমে বলতে লাগলেন, কথায় আছে না, ‘যেখানে দেখিবে যাই, উড়াইয়া দ্যাখো তাই, পাইলেও পাইতে পার অমূল্য রতন।’ যে কোনও তদন্তের ক্ষেত্রে এই কথাটা আমি সব থেকে বেশি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করি, বুঝলে ভায়া? কিন্তু এখানে তো ওড়াবার মতন তেমন কিছু…

আমার হাসি পেয়ে গেল, কোনও মতে চাপলাম।

গাড়ির দরজা খুলে বসতে বসতে রণিদা বলল, এমন কনফিডেন্টলি ভুলভাল কথাগুলি বলেন কী করে বুঝি না।

গাড়ি স্টার্ট নিল।

মিনিট কয়েকের মধ্যেই রবীন্দ্রসদন, তথ্যকেন্দ্র প্রভৃতি বাঁয়ে ফেলে ময়দান থানায় উপস্থিত হলাম আমরা।

থানার বড়োবাবু ইন্সপেক্টর রমেন সরকার রণিদাকে চেনেন মনে হল। কারণ ঘরে ঢুকতেই ভদ্রলোক বললেন, ব্যাপার কী চক্রবর্তী, এত সকাল সকাল।

আসতে হল একটু। হেসে জবাব দিল রণিদা, ওই ভিক্টোরিয়ার মার্ডার কেসটার ব্যাপারে। কে দেখছেন ওটা?

কেসটা রাতুলকে দিয়েছি। রাতুল রায়, ইয়ং, ভেরি ডায়নামিক অফিসার। দাঁড়ান, ডেকে দিচ্ছি। টেবিলে লাগানো বেলের সুইচটায় চাপ দিলেন ভদ্রলোক। তারপর আমাদের দিকে চেয়ে আবার বললেন, আরে আপনারা দাঁড়িয়ে কেন এখনও, বসুন।

ধন্যবাদ জানিয়ে আমরা তিনজন বসলাম চেয়ারে।

সেন্ট্রি কনস্টেবল বড়োবাবুর ঘরের পর্দা সরিয়ে উঁকি দিয়ে বলল, স্যার ডাকছেন?

হ্যাঁ, রাতুলকে একটু ডেকে দাও তো।

স্যার, বলে পর্দা ছেড়ে চলে গেল সেন্ট্রি।

তারপর, কেমন আছেন? অনেকদিন দেখা-সাক্ষাৎ নেই, হেসে বললেন রমেনবাবু।

হ্যাঁ, সেই লাস্ট দেখা হয়েছিল ডিজি রণধাওর ছেলের বিয়েতে। উফ, ভদ্রলোক খরচও করেছিলেন বটে। উনি তো তখন ডিজি হোমগার্ড ছিলেন, তাই না?

ডিজি হুগলি ব্রিজ।

তাই হবে, বলল রণিদা, আসলে আপনাদের পুলিশ বিভাগে এতজন ডিজি মনে রাখাই কঠিন। সাধারণ পাবলিক ডিজি বলতে তো কেবল ডিজি ওয়েস্ট বেঙ্গলকেই বোঝে। এত রকম…

গুড মর্নিং স্যার, স্যালুট করে এক চাবুক চেহারার বছর ছাব্বিশের সাব-ইন্সপেক্টর দাঁড়ালেন আমাদের সামনে।

মর্নিং রাতুল, এসো তোমার সঙ্গে এনার পরিচয় করিয়ে দিই। ইনি রণজয় চক্রবর্তী, প্রাইভেট ডিটেকটিভ, আ গুড পুলিশ ফ্রেন্ড বলতে পারো। এরা ওর বন্ধু। তোমার সঙ্গে কথা বলতে চান।

ওকে স্যার, আসুন আপনারা আমার সঙ্গে, বললেন রাতুল রায়।

সৌজন্যমূলক হাসি হেসে রণিদা ওসিকে বলল, তাহলে…

হ্যাঁ হ্যাঁ, ঠিক আছে। আপনারা যান ওর সঙ্গে। রাতুল এদের চা খাওয়াতে ভুলো না।

আপনি ভাববেন না স্যার, দরজার বাইরে থেকে উচ্চকণ্ঠে রাতুল রায় জবাব দিলেন।

ওনার পিছু পিছু আমরা আইও’জ রুম-এ গিয়ে বসলাম। প্রাথমিক আলাপ পর্ব মিটতে মিটতে চা-বিস্কুট এসে গেল।

রণিদা বলল, জানেন রাতুলবাবু, ভদ্রলোক যখন ওর দুই বন্ধুকে নিয়ে হুমকি চিঠিগুলি সমেত আমার বাড়ি গেছিলেন, তখন ব্যাপারটা এত সিরিয়াস ছিল না। কিন্তু তার দিন তিনেক পর আমার কথা মতন উনি যখন তিনটে এনভেলপ আমাকে দিতে এসেছিলেন দারুণ বিধবস্ত দেখাচ্ছিল। কোনও কারণে ভীষণ টেনশনে আছেন বলে মনে হল।

তাই নাকি।

হ্যাঁ, কিন্তু ব্যাপারটা আমাকে গোপন করে গেলেন, কিছু একটা বলতে গিয়েও বললেন না। বললে হয়তো মানুষটাকে এভাবে বেঘোরে মরতে হতো না।

একটু থেমে রণিদা প্রশ্ন করল, আচ্ছা, কীভাবে মারা হল ওনাকে সেটা একটু বলবেন?

আ কেস অব স্ট্র্যাংগুলেশন–দড়ি বা ওই জাতীয় কিছুর দ্বারা গলায় ফাঁস দিয়ে হত্যা করা হয়েছে ভিক্টিমকে।

মার্ডার ওয়েপনটা পাওয়া গেল?

নাহ, আততায়ী ও ব্যাপারে যথেষ্ট সজাগ, ওটা ফেলে যাবার মতন বোকা সে নয়, জবাব দিল অফিসার।

এরপর রণিদা ওর ব্যাগ থেকে সেই চিঠি আর এনভেলপগুলি বের করল এবং সেগুলি এগিয়ে দিল অফিসারের দিকে। বলল, মি রায়, এই সেই চিঠি ও এনভেলপগুলি।

অফিসার ওগুলি হাতে নিয়ে খুলে দেখতে লাগলেন।

রণিদা বলল, মি. রায় আপনি কাউকে দিয়ে এগুলি জেরক্স করাবার ব্যবস্থা করুন। অরিজিনাল ডকুমেন্টসগুলি আপনার সম্পত্তি এখন থেকে। ওগুলি আপনি আমার থেকে সিজ করছেন বলে সিডিতে দেখাতে পারেন, আমার কোনও আপত্তি নেই। কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে সাক্ষ্য দিতে আমার ভালোই লাগে, বিশেষত যদি তা কোনও সত্য উন্মোচনের ব্যাপারে হয়। আপনার কেসে হয়তো ভাইটাল এভিডেন্স হিসেবে দাঁড়িয়ে যেতে পারে ওগুলি। আমার জেরক্স কপি পেলেই চলবে। আর এই সেলোফেন প্যাকেটটিও রাখুন। এগুলি আপনার কালেকশন হিসাবে কোর্টে পেশ করাই যুক্তিযুক্ত হবে।

থ্যাংক ইউ মি. চক্রবর্তী, বললেন অফিসার।

এরপর ভদ্রলোক একটি সিজার লিস্ট করে চিঠি আর এনভেলপগুলি অফিসিয়ালি সিজ করলেন। প্রয়োজনীয় সইসাবুদ হল। উনি একজন হোমগার্ডকে ডেকে ওগুলি জেরক্স করিয়ে আনলেন। তারপর কপিগুলি রণিদাকে দিলে রণিদা দ্রুত ওগুলি ব্যাগে ভরল।

অফিসারকে রণিদা বলল, খুব শিগগির নিশ্চয়ই আপনার তদন্ত শুরু হয়ে যাবে। উইশ ইউ গুড লাক। মাঝেমধ্যে একটু ডিসটার্ব করব, আশা করি…

না না, ইউ আর মোস্ট ওয়েলকাম।

থ্যাংক ইউ অফিসার।

ময়দান থানা থেকে বেরিয়ে আমরা গাড়িতে উঠলাম। রণিদা গাড়ি স্টার্ট দিল।

এতক্ষণ যাবৎ ঢোলগোবিন্দবাবু একটি কথাও বলেননি। প্রতি মুহূর্তেই ভাবছিলাম, এই বুঝি কিছু একটা মন্তব্য করবেন উনি। কিন্তু ভদ্রলোক একদম স্পিকটি নট। বাধ্য হয়ে আমি প্রশ্ন করলাম, কী মনে হচ্ছে ঢোলগোবিন্দবাবু?

পাইপ থেকে ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে অত্যন্ত বিজ্ঞের মতন উনি বললেন, ভাবছি, মার্ডারের মোটিভটা কী?

ড্রাইভ করতে করতে রণিদা ওনার দিকে একটিবার অর্থপূর্ণ দৃষ্টিতে তাকাল।

ক্রমশ…

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...