পর্ব - ৩
ঘটনার তিন দিন পর রণিদা মোবাইলে জানাল, আজ বিকেল পাঁচটা নাগাদ আমার বাড়ি চলে আসিস, তোকে নিয়ে বেরোব একটু।
কোথায় যাবে রণিদা?
কেন তদন্তে, ওদিকটা এই ক’দিনে কিছুটা ধাতস্থ হয়েছে নিশ্চয়ই, জবাব দিল ও।
তা হলে কি আমরা মণ্ডলবাবুর বাড়িই যাচ্ছি প্রথমে?
উঁহু, হল না। ঠিক প্রথমেই নয়, ভাবছি যাব একটু ঘুর পথে। প্রথমে আমরা যাব সুবিমল সোমের বাড়ি। তুই আয়, তারপর কথা হবে।
এক মিনিট রণিদা, ঢোলগোবিন্দবাবুকেও নিচ্ছো নিশ্চয়ই? তা না হলে উনি আবার আগের মতন বলবেন, আরে ভায়া, তোমরা আমাকে অর্ধেক জায়গায় নিয়েই যাও না, আমি আর কী তোমাদের ইনভেস্টিগেশনে সাহায্য করব? মনে আছে তোমার, সেইবার কিরিবুরুর গুহাদানবের কেস-এ?
তা যা বলেছিস, রণিদার গলায় মজা টের পেলাম, তা হলে ওনাকেও আসতে বলছি বিকালে।
সোয়া পাঁচটা নাগাদ গাড়ি ছাড়ল আমাদের।
ঠাকুরপুকুর থেকে দুই নম্বর চেতলা হাট রোড পৌঁছোতে মিনিট পঁচিশেক লাগাল।
বাড়ি খুঁজে পেতে দেরি হল না। পাশেই একটা ক্লাব– চেতলা যুব সংঘ। ক্লাবের সামনে ছেলেদের জটলা। জিজ্ঞাসা করতেই আঙুল তুলে দেখিয়ে দিল সুবিমল সোমের বাড়িখানা।
ঢোলগোবিন্দবাবু বললেন, কলকাতার এই একটা বিষয় লক্ষ্য করবার মতন। মানুষকে ঠিকানা জিজ্ঞাসা করলে ধৈর্য ধরে শুনবে, তারপর সঠিক জায়গা দেখিয়ে দেবে। প্রয়োজনে অন্য কাউকে জিজ্ঞাসা করে হলেও তোমাকে সাহায্য করবে। রাস্তার ঘোরপ্যাঁচ থাকলে অনেককে দেখেছি নিজে সঙ্গে নিয়ে গিয়ে দেখিয়ে দিয়ে আসে। কিন্তু দিল্লি বা মুম্বইতে কাউকে ঠিকানা জিজ্ঞাসা করলে দেখবে ওরা ধরাবাঁধা তিনটে কথাই ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বলছে।
কী বলে ওরা? আগ্রহ বাড়ে আমার। দেখলাম রণিদার চোখে মুখেও জানবার ইচ্ছা।
ব্যাটারা হয় বলে, মুঝে মালুম নেহী, না হয় বলে, মুঝে পাতা নেহী, আর একটু বেশি চালাক হলে বলে, পুঁছকর বাতায়েঙ্গে। হতভাগারা কবে কাকে পুঁছবে, আর চলমান পথিককে কবে কীভাবে বাতাবে কে জানে?
গাড়ি থেকে নেমে এসে রাস্তার ওপর একটা দোতলা বাড়ির দরজার গায়ে লাগানো কলিং বেল টিপলাম আমি।