পর্ব – ১
ঘড়িতে এখন সময় পৌনে দশটা। শীতের সকাল। রণিদার বাড়ির ঘাসের সবুজ গালিচা মোড়া সুবিশাল লনে নরম মিঠে রোদে গা সেঁকতে-সেঁকতে খবরের কাগজে চোখ বোলাচ্ছিলাম। একটু আগে হরিদা এসে টেবিল-চেয়ার পেতে চায়ের যাবতীয় সরঞ্জাম রেখে গেছে। প্লেটে পরিমাণমতন কুচো নিমকি দিয়ে যেতে ভোলেনি। রোববার করে এই সময়টায় এ বাড়িতে আসা এক অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। খবরের কাগজে ডুবে ছিলাম। আচমকা খানিক দূরের গাছে বসে থাকা পাখির ডাকে চোখ তুলে দেখি একটা ফিঙে, চিড়িক চিড়িক করে লেজ নাড়াচ্ছে– যেন বলছে, আমাকে দ্যাখো। উড়ে আসছে ভেজা বাতাস, বেশ লাগছে।
খুশি খুশি মুডে চায়ে চুমুক দিলাম।
এমন সময় লোহার গেটটা শব্দ করে সরে গেল।
দেখলাম, গেট ঠেলে রণিদা ঢুকছে। দ্রুত পদক্ষেপে এগিয়ে এল, আমার দিকে মৃদু হেসে বলল, একটু বস, এখুনি ফ্রেশ হয়ে আসছি। রণিদা প্রতিদিন ভোরবেলা কোনও না কোনও ফিজিক্যাল অ্যাক্টিভিটিজ নিয়ে ব্যস্ত থাকে। কখনও জিমে যায়, কখনও ক্যারাটে ক্লাবে, কখনও স্রেফ জগিং। যেদিন কোথাও যায় না নিজের ছাদে তৈরি একটা মিনি জিম আছে, সেখানেই গা ঘামিয়ে নেয়। এটা ওর রোজকার অভ্যাস। আমাকে বহুবার বলেছে, আরে রঞ্জন, একটু জিম-টিম কর, শরীর ফিট থাকবে, দেখবি কাজে কত এনার্জি পাবি।
চিরকালের হদ্দ কুঁড়ে আমি। ওসব আমার ধাতে নেই। তাই ভোরের সূর্য দেখা আমার কপালে কোনওদিন হয়ে ওঠে না।
কী হে রিপোর্টার, কতক্ষণ? প্রশ্ন শুনে চমকে তাকিয়ে দেখি ঢোলগোবিন্দবাবু–আমাদের রোববারের আড্ডার এক অবিচ্ছেদ্য সঙ্গী।
হেসে জবাব দিলাম, মিনিট কুড়ি হল। বসুন।
বছর বাহান্নর ভারিক্বি চেহারার ঢোলগোবিন্দবাবু একটা চেয়ার টেনে বসতে বসতে বললেন, রণি ফিরেছে?
হ্যাঁ, এই ফিরল। বোধহয় স্নানে গেছে। কিন্তু ব্যাপারখানা কী? আজ একদম ফিটফাট বাবুটি সেজে?
ঢোলগোবিন্দবাবুর পরনে ছিল হালকা ক্রিম রঙা ফুলস্লিভ শার্ট, ডিপ খয়েরি প্যান্ট, পায়ে চকচকে ব্রাউন স্যু। আর মাথায় গলফ ক্যাপ ও ঠোঁটে পাইপ। চমৎকার লাগছিল ভদ্রলোককে।