জুনি মোবাইলে সময়টা দেখে নিল। এখনও সময় আছে পার্লার পৌঁছোনোর। আগে থেকেই অ্যাপয়েন্টমেন্ট করা, সুতরাং সময়মতো ওকে পৌঁছোতে হবে। নতুন নতুন বিয়ের পর ওর এইসব সাজগোজ, পার্লারে বসে রূপচর্চা খুব ভালো লাগত। এখন পানিশমেন্ট মনে হয়! আগে এইসব করার জন্য একটা মন ছিল ওর, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে শরীর, মনে কেমন একটা শিথিলতা চলে এসেছে জুনির।
ওর বয়স এখন মাত্র সাতাশ। বড়ো বড়ো চোখ, পাতলা ঠোঁট, টিকালো নাক, কালো ঘন চুল যা কিনা স্টেপ করে কাটা, গায়ের রং একটু মাজা, যেটাকে আমরা শ্যামবর্ণ বলে থাকি। সব মিলিয়ে বেশ চোখে পড়ার মতো ব্যক্তিত্ব।
জুনি মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে। তিন বোন, জুনি মেজো। বড়ো আর ছোটো বোন অপরূপ সুন্দরী, গায়ের রং দুধে আলতা বলতে যা বোঝায়, সেখানে জুনির গায়ের রংটাই একটু চাপা। এর জন্য মনে মনে জুনি একটু বিব্রত হতো। অথচ ওর চোখের মধ্যে এমন একটা আকর্ষণ ছিল যে, সৌমেন একবার দেখেই জুনিকে বিয়ে করতে মনস্থ করে ফেলে।
বিয়ের পাঁচ বছর পরেও জুনি আজও বুঝতে পারেনি, ওদের বিয়েতে সৌমেনের মা-বাবা আদৌ খুশি হয়েছিলেন কিনা। ওর এই একই প্রশ্ন সৌমেনকে নিয়ে। জুনি কি আদৌ সৌমেনকে খুশি করতে পেরেছে?
পার্লারে মেয়েটির দক্ষ হাত জুনির সারা মুখে মাসাজ করছে। ছোট্ট গদিপাতা বেঞ্চটায় শুয়ে আরামে চোখ বুজল জুনি, অতীতের ঘটনাগুলো চোখের সামনে এসে ভিড় করছে। সৌমেনের সঙ্গে ওর বিয়ে আজও স্বপ্ন মনে হয় জুনির। বিয়ের দিন নিজের শাড়ি, গয়না দেখে জুনি বেশ বুঝতে পারছিল ওর বোনেদের, এমনকী বান্ধবীদেরও ওকে দেখে ঈর্ষাবোধ হচ্ছে। সৌমেনদের বাড়ি থেকে পাঠানো হয়েছিল বিয়ের পুরো সরঞ্জাম। লাল বেনারসিতে ঠাসা জরির বুনন, সোনার তারের কাজ। ওড়নাতেও শাড়ির সঙ্গে মানানসই কাজ করা।
গা ভর্তি গয়না, যার বেশিরভাগটাই শ্বশুরবাড়ি থেকেই আসা। বিয়ের দিন হিরের সেট দিয়ে শ্বশুরমশাই আশীর্বাদ করে গেলেন। সত্যি, কনেকে দেখে রাজকুমারীই মনে হচ্ছিল।