বর্ধমানে পৌঁছে রমেনের বাড়ি খুঁজে পেতে সীমার বিশেষ অসুবিধা হল না। গাড়ি থেকে নেমে বাড়ির দরজার দিকে পা বাড়াল ও। বাইরে থেকে ওকে ধীরস্থির, শান্ত মনে হলেও ভিতরে ভিতরে ওর মন অধীর হয়ে উঠছিল।

দরজা খুলে যে-মহিলা এগিয়ে এলেন, তাকে কোনওমতে একটা নমস্কার জানিয়ে সীমা জিজ্ঞেস করল, ‘রমেন কি বাড়িতে আছে?’

‘আপনি সীমা না?’ ভদ্রমহিলার মুখ-চোখ দেখে মনে হচ্ছিল সীমা যেন ওনার বহু দিনের পরিচিত।

‘হ্যাঁ, কিন্তু আপনি আমাকে চিনলেন কী করে?’

‘একবার উনি, মানে রমেন অফিসের কোনও ফাংশনের ছবি আমাকে দেখিয়েছিলেন, তাই মনে থেকে গেছে। চলুন ভিতরে চলুন।’ সীমার হাত ধরে মহিলা ওকে বাড়ির ভিতরে নিয়ে গেল।

‘আমি কে, আপনি নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন। আমি রমেনের স্ত্রী…।’

‘বন্দনা, তাই না?’ সীমা ওর কথার মাঝেই বলে উঠল, ‘আমিও আপনাকে চিনি। রমেনের ফ্ল্যাটে যে-ফ্যামিলি ফোটোগ্রাফটা লাগানো আছে, সেটাতে আপনাকে দেখেছি। ছবিটা এতবার দেখেছি যে মনের মধ্যে গেঁথে গেছে।’

সীমার কথায় কোনও প্রতিক্রিয়া না দেখিয়ে বন্দনা খুব সহজ ভাবে জিজ্ঞেস করল, ‘ওনার অসুস্থতার সম্পর্কে কী করে জানতে পারলেন?’

‘রমেন অফিসে আমার সিনিয়র। ওনার সঙ্গে ফোনে রোজ আমাকে কন্ট্যাক্ট রাখতে হয়। এখন ওনার শরীর কেমন আছে?’ সীমার উত্তরে কোনওরকম আড়ষ্টতা ছিল না।

‘আপনার এই প্রশ্নের উত্তর উনি নিজেই দেবেন। আমি ওনাকে ডেকে দিচ্ছি। আপনাকে কী দেব, চা না কফি? ঠান্ডাও খেতে পারেন।’

‘না-না। কফি হলেই চলবে।’

‘আপনি আমার সম্মানীয় অতিথি। ওনার অফিসের কারও সঙ্গে আমার কোনওদিন পরিচয় হওয়ার সুযোগ হয়নি, আপনিই প্রথম। সুতরাং অতিথি আপ্যায়নে আমি কোনও ত্রুটি রাখতে চাই না। আপনি বসুন, আমি ওনাকে পাঠিয়ে দিচ্ছি’, বলে বন্দনা হাসিমুখে ভিতরে চলে গেল।

সীমা এবার নিজের চারপাশে চোখ বুলোবার সুযোগ পেল। পরিপাটি ভাবে সজ্জিত ড্রয়িংরুম। চারপাশ গোছানো পরিষ্কার ঝকঝক করছে। ঘরের ডেকরেশনে গৃহিণীর সুরুচির ছাপ সর্বত্র।

বন্দনার ব্যক্তিত্বেরও তারিফ না করে পারল না সীমা। গায়ের রং শ্যামলা হলেও, যথেষ্ট সুন্দরী বলা চলে। দুই সন্তানের মা হয়ে যাওয়াতে চেহারাটা সামান্য ভারী হয়ে গেলেও, আকর্ষণ বিন্দুমাত্র কমেনি।

সীমা জানত, বন্দনার শিক্ষগত যোগ্যতা ক্লাস টেন পর্যন্ত। ও ধারণা করে নিয়েছিল স্বল্পশিক্ষিত অন্যান্য মহিলাদের মতোই বন্দনাও হয়তো ক্লান্ত শরীর নিয়ে সংসার সামলে গেঁয়োভূত হয়ে উঠেছে। অথচ সকাল সকাল বন্দনাকে যথেষ্ট আধুনিক সাজসজ্জায় এবং আত্মবিশ্বাসে ভরপুর দেখে সীমার মনে অনেক প্রশ্ন উঁকিঝুঁকি মারতে শুরু করল।

একটু পরেই রমেন এসে ঘরে ঢুকল। সীমাকে দেখে মুখে হাসি ফুটে উঠল তার। সীমার কাছে সরে এসে বলল, ‘তোমাকে আমার বাড়িতে দেখতে পাব কোনওদিন ভাবিনি। কালকে ফোনে কথা হল, বললে না কেন আজ এখানে আসবে তুমি?’

‘আমি বললে, তুমি আমাকে আসতে দিতে? কপট রাগ দেখিয়ে সীমা রমেনের হাতের উপর নিজের হাত রাখে।’

‘হয়তো না।’

‘সেই জন্যেই তো আগে থেকে তোমাকে কিছু জানাইনি, জাস্ট চলে এসেছি। এখন তোমার শরীর কেমন আছে?

‘গত দু’দিন জ্বরটা আর আসেনি, তবে অসম্ভব দুর্বল বোধ করছি।’

‘দেখতেও খুব দুর্বল লাগছে। আরও কদিন বরং ছুটি নিয়ে বিশ্রাম করো।’

‘না-না, আর নয়। সাতদিন হয়ে গেল কামাই করেছি, পরশু সোমবার জয়েন করব ঠিক করেছি। তোমার থেকেও দূরে আর থাকতে পারছি না।’

‘একটু আস্তে বলো’, রমেনের ঠোঁটে হাত রাখে সীমা, ‘তোমার বউ শুনতে পাবে। আচ্ছা একটা কথা জিজ্ঞেস করব?’

‘করো।’

‘আচ্ছা, বন্দনা কি আমাদের সম্পর্কের কথাটা জানে?’

‘জানে হয়তো তবে নিজের মুখে কখনও জিজ্ঞেস করেনি।’ কাঁধ ঝাঁকিয়ে অবহেলার ভঙ্গিতে বলে রমেন।

‘আমার সঙ্গে তো খুবই ভালো ব্যবহার করল। মনে তো হল না, আমার উপর ওর কোনও রাগ বা বিদ্বেষ আছে বলে। কী জানি হয়তো…’, চুপ করে গেল সীমা।

‘সীমা, তুমি আমার কলিগ এবং পরিচিত, আর সেই জন্যই ও তোমার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করবে না এবং করার সাহাসও ওর নেই। তুমি এখানে আমার বাড়িতে পুরো সেফ। বন্দনাকে নিয়ে কোনওরকম টেনশন করার দরকার নেই’, সীমার গালে আলতো করে একটা টোকা মেরে রমেন সামনের সোফাতে গিয়ে বসল।

অফিসের কাজকর্ম সম্পর্কে কথাবার্তা হতে হতে বন্দনা ট্রে নিয়ে ঘরে ঢুকল। কফি আর জলখাবারের ডিশ ট্রে থেকে তুলে টেবিলে রেখে ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে উদ্যত হল।

‘আপনিও আমাদের সঙ্গে বসে কফি খান’, সীমা বন্দনাকে ওদের সঙ্গে বসতে অনুরোধ জানাল কিন্তু বন্দনা সামান্য হেসে রান্নাঘরে কাজ আছে বলে ঘরের বাইরে চলে গেল।

কথা বলতে বলতে সীমা একপ্রকার বন্দনার কথা ভুলেই গেল। ভালোবাসার মানুষটাকে এতদিন পর সামনে পেয়ে সীমার মনের অপরাধবোধটাও এক মুহূর্তে মন থেকে মুছে গেল। বন্দনাও খালি কাপ প্লেটগুলো একবার এসে তুলে নিয়ে গেল কিন্তু তারপর ওই ঘরে ও আর পা মাড়াল না।

বছরখানেক আগে নতুন অফিসে জয়েন করার পর রমেনের সঙ্গে সীমার প্রথম পরিচয় হয়। রমেনের চেহারা এবং ব্যক্তিত্বের আকর্ষণে সীমা নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখতে পারে না। রমেন বিবাহিত জেনেও শরীর মন রমেনের কাছে সমর্পণ করে। সীমার এই সম্পর্কের কথা ওর মা-বাবার কানেও পৌঁছোয়। ওর বাবাই একদিন ওকে আলাদা করে ডেকে জিজ্ঞেস করেন, ‘রমেনের সঙ্গে তোমার সম্পর্কটা ঠিক কীরকম একটু জানতে পারি?’

‘বাবা আমার এখন ৩৫ বছর বয়স। রমেনকে আমি ভালোবাসি। ঠিক সময়ে তোমরা যখন আমার বিয়ে দিতে পারোনি তখন আমার চিন্তা করা ছেড়ে দাও। তোমরা যদি রমেনের সঙ্গে সম্পর্ক ত্যাগ দেওয়ার জন্য জোর করতে থাকো, আমি বাইরে কোথাও নিজের থাকার ব্যবস্থা করে নেব।’ সীমার পরিষ্কার জবাবের পর ওর মা-বাবাও বিষয়টি নিয়ে মেয়ের সঙ্গে আলোচনা করাই ছেড়ে দেন।

বহুদিন অবিবাহিত থাকার পর সীমাও ঠিক করে নিয়েছিল ও আর বিয়ে করবে না। কিন্তু একা জীবন অতিবাহিত করা অতটাও সহজ নয়। এদিকে রমেনও নিজের পরিবারের থেকে দূরে একলা শহরে থাকতে থাকতে নিজেকে নিঃসঙ্গ মনে করতে থাকে। ফলে উভয়ের প্রথম পরিচয় হতেই একে অপরের প্রতি আকর্ষিত হয়ে পড়ে।

রমেনের প্রতি তীব্র আকর্ষণ সীমার নীরস জীবনটাকেই পুরো বদলে দেয়। প্রেমটা অবৈধ জেনেও অজানা এক আকর্ষণে সীমা বাঁধা পড়তে থাকে। ধীরে ধীরে সীমার মনে আরও কিছু পাওয়ার স্বপ্ন জোরালো হতে শুরু করে।

একদিন অফিস শেষে দুজনে রমেনের ফ্ল্যাটে চলে আসে। সীমাকে চুপচাপ দেখে রমেনই জানতে চায়, ‘কী ব্যাপার, আজ এত চুপচাপ কেন?’

‘রমেন আমি তোমার সঙ্গে লিভ ইন করতেও রাজি আছি, যদি তুমি সেটাই চাও। কিন্তু বিয়ে করে জীবন কাটাবার আলাদা একটা আনন্দ যেমন আছে তেমনি সম্পর্কটাতে একটা সম্মানও আছে।’

‘তুমি রাজি থাকলে আজই আমি তোমাকে বিয়ে করে নিতে চাই’, সামান্য কৗতুকমিশ্রিত কণ্ঠে রমেন উত্তর দেয়। সীমা একটু গম্ভীর হয়, ‘এটা করা মানে তো নিজেকেই ঠকানো।’

‘তাহলে বিয়ের কথা তুলছ কেন?’

‘আমার মনের ইচ্ছা তোমার কাছে বলব না তো কাকে বলব?’ সীমা রমেনকে বোঝাবার চেষ্টা করে।

রমেনও একটু সিরিয়াস হয়, ‘সবই তো বুঝলাম কিন্তু আমাদের বিয়ে করাটা সম্ভব নয়, সেটাও তো তুমি ভালো করেই জানো।’

‘তুমি সত্যিই আমাকে মন থেকে ভালোবাসো তো?’ সন্দেহ উঁকিঝুঁকি দেয় সীমার মনে।

‘অবশ্যই’, সীমার মন থেকে সন্দেহ দূর করতে রমেন সীমার ঠোঁটে  চুম্বন এঁকে দেয়।

‘তুমিই সবসময় বলো, বন্দনা তোমার স্ত্রী হলেও, আমাকেই তুমি মন থেকে চাও। এটা তো সত্যি, তাই না?’

‘হ্যাঁ। বন্দনা আমার দুই সন্তানের মা। ও খুব সরল মনের মেয়ে কিন্তু নিজের স্ত্রী-র মধ্যে যে-ধরনের ব্যক্তিত্ব আমি দেখতে চাই, বন্দনার মধ্যে সেটার অভাব রয়েছে। মা-বাবার পছন্দ মতন আমার বিয়ে করা কখনওই উচিত হয়নি। কিন্তু বন্দনার দেখাশোনা করাটা এখন আমার একটা কর্তব্য ছাড়া আর কিছুই নয়’। মনের কথা খুলে বলতে পেরে রমেন অনেকটা সহজবোধ করে। অনেকদিন ধরেই সীমা চাইছিল ও যেন বন্দনাকে ডিভোর্স দিয়ে দেয়।

‘কিন্তু তাহলে আমার কী হবে? আমাদের খুশির জন্যেও তুমি বন্দনা-কে ডিভোর্স দেবে না?’ আহত বাঘিনির মতো সীমা রমেনের মুখোমুখি হয়।

‘না, দেব না। এই কথা নিয়ে তুমি এরপর আর কোনওদিন আমাকে প্রেশার দিও না। বন্দনা আমাকে ছেড়ে যেতে চাইলে আলাদা কথা, কিন্তু ওকে ডিভোর্সের প্রস্তাব দেওয়া মানে আমি নিজের চোখে নিজেই ছোটো হয়ে যাব। কারণ ও আমাকে ছাড়া আর কিছুই জানে না। ওর পৃথিবীটা আমাকে ঘিরেই ও তো তোমার মতো সাবলম্বি নয়। বিনা দোষে ওকে আমি এই শাস্তি কিছুতেই দিতে পারব না। সেটা অন্যায় হবে’।

রমেনের কঠোর স্পষ্ট উত্তর দেওয়ার ভঙ্গিতে সীমা আর কথা বাড়াবার সাহস পেল না। কিন্তু মনে মনে সীমা সেদিনই ঠিক করে নিয়েছিল, বন্দনার সঙ্গে তাকে একবার দেখা করতেই হবে। কারণটা অবশ্য সীমারও ঠিকমতো জানা ছিল না কিন্তু যাকে সে চোখে দেখেনি তার চরিত্র এবং ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে জানার এক অদম্য কৗতহূল সীমাকে সেদিন গ্রাস করেছিল। হয়তো মনে মনে সীমা চেয়েছিল বন্দনা নিজে থেকেই রমেনকে ছেড়ে চলে যাক এবং এই ইচ্ছাটাকে কার্যকরী করার লক্ষ্যেই রাস্তা খুঁজে বার করতে সীমা, রমেনের খোঁজ নেওয়ার বাহানা করে ওদের বর্ধমানের বাড়িতে গিয়ে উপস্থিত হয়েছিল।

বন্দনা-কে দেখে সীমারও মনে হল ও খুব সরল, শান্ত স্বভাবের মেয়ে। সীমার প্রতি কোনও রাগ বা বিদ্বেষ বন্দনার ব্যবহারে প্রকাশ না পাওয়ার ফলে, সীমাও মনে মনে ওর প্রতি বিরূপ মনোভাব কিছুতেই পোষণ করতে পারল না। বরং মেয়েটা-র প্রতি একটা মায়া অনুভব করল সীমা।

রমেনকে সীমা ভালোবাসে ঠিকই কিন্তু নিজের স্ত্রী-র সঙ্গে ওর ব্যবহার কেমন যেন অদ্ভুত মনে হল সীমার। সীমার জায়গায় অন্য কেউ হলে এই অদ্ভুত ব্যবহারের জন্য শুধুমাত্র রমেনকেই দোষারোপ করত, এটা সীমাও অস্বীকার করতে পারল না।

নিজের বাড়িতে রমেন খোলাখুলি ভাবেই সীমার সঙ্গে গল্পে মেতে উঠল। ওর ব্যবহারে কোনও আড়ষ্টতা প্রকাশ পেল না। বন্দনা বাড়িতে থাকা সত্ত্বেও রমেন সীমার হাতটা নিয়ে নিজের হাতে চেপে ধরে ওর সঙ্গে গল্পে মেতে উঠল।

বন্দনা হঠাৎ যদি এই অবস্থায় ওদের দেখে ফেলে, এই ভয় বোধহয় সীমারই খালি ছিল, রমেনের নয় কারণ রমেনের ব্যবহারে সেটাই বারবর প্রকট হয়ে উঠছিল। গল্পের মাঝে হঠাৎই রমেন, সীমাকে নিজের কাছে টেনে নিয়ে ওর ঠোঁটে নিজের ঠোঁট চেপে ধরতেই সীমা ঘাবড়ে গেল!

‘কী করছ রমেন? বন্দনা যদি এই অবস্থায় আমাদের দেখে ফেলে তাহলে অ্যাটলিস্ট আমি খুব লজ্জা পাব’, সীমাকে সত্যিই খুব নার্ভাস মনে হচ্ছিল।

‘রিল্যাক্স, সীমা’, রমেনকে খুব স্বাভাবিক মনে হল। ওকে এই ব্যাপারটা নিয়ে এতটুকু চিন্তা করতে সীমা দেখল না। ‘আমি তোমাকে মন থেকে ভালোবাসি সীমা। তুমি ভেবো না যে তোমাকে মাধ্যম করে আমি আমার কামনা-বাসনা মেটাচ্ছি। তোমার কাছ থেকে এতদিন যা পেয়েছি, বন্দনার কাছ থেকে সেটা কোনও দিন পাইনি, সেই আনন্দ একমাত্র তুমিই আমাকে দিয়েছ সীমা।’

‘কিন্তু তাও… এখানে, বন্দনার উপস্থিতিতে… ওর বাড়িতে আমাকে আদর করছ– এটা আমার কাছে অত্যন্ত অস্বস্তিকর। রমেন… প্লিজ ছারো’, আকুতি জানায় সীমা।

‘ঠিক আছে, আমি হাত সরিয়ে নিচ্ছি। কিন্তু একটা ব্যাপার তুমিও খেয়াল রেখো…।’

‘কী ব্যাপার রমেন?’

‘বন্দনাকে ভয় পাওয়ার কোনও কারণ নেই। ও যদি কোনওদিন আমাকে প্রেশার দেওয়ার চেষ্টা করে তাহলে আমি ওকে ছেড়ে তোমাকে বেছে নেব’। রমেনের কথার মধ্যেই ওর মনোভাব স্পষ্ট ভাবে সীমার কাছে ধরা দেয় যেটা সীমা অ্যাপ্রিশিয়েট করে ঠিকই কিন্তু মনের একটা কোণায় অস্বস্তির অনুভূতি সীমাকে মানসিক ভাবে চঞ্চল করে তোলে।

হঠাৎ-ই সীমার মনে হয় বন্দনার সঙ্গে কথা বলাটা খুব দরকার। বন্দনার ব্যক্তিত্ব, ওর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যগুলো জানার অদম্য ইচ্ছা সীমাকে পেয়ে বসে। বন্দনার সঙ্গে কথা না বলা পর্যন্ত রমেনকে ওর থেকে দূর করার কোনও রাস্তা সীমার খুঁজে পাওয়া সম্ভব নয়।

বন্দনাও আর একবারের জন্যেও বসার ঘরে ওদের সামনে আসেনি। রমেন-ই বলল রান্নাঘরে দুপুরের খাবার বানাতে ও ব্যস্ত রয়েছে। অথচ সীমার কেন জানি না মনে হল, বন্দনা ইচ্ছে করেই ওদের থেকে নিজের দূরত্ব বজায় রাখছে। ব্যস্ততার ব্যাপারটা শুধু একটা বাহানা মাত্র।

বন্দনা ওদের সঙ্গে একসঙ্গে খেতেও বসল না। সীমা ওকে অনেক জোর করল একসঙ্গে খাওয়ার জন্য কিন্তু ও কিছুতেই খেল না।

‘বন্দনা সব সময় আমার খাওয়া শেষ হলে তবেই খেতে বসে। তুমি শুরু করো, ও পরে খেয়ে নেবে’, বন্দনার তোয়াক্বা না করেই রমেন সীমার প্লেটে খাবার তুলে দিতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল।

সীমা খেয়াল করল, প্রত্যেকটা খাবার রমেনের পছন্দের বানিয়েছে বন্দনা এবং প্রত্যেকটি পদই অত্যন্ত সুস্বাদু।

‘রান্না কেমন হয়েছে সীমা?’ বন্দনার উপস্থিতিতেই রমেন সীমাকে প্রশ্ন করল।

‘দারুণ হয়েছে’, সীমার উত্তরে পরিষ্কার বোঝা গেল খাবার খেয়ে সীমা অত্যন্ত তৃপ্ত।

‘বন্দনা সত্যিই দারুণ রান্না করে। সেইজন্যই তো ওজন কিছুতেই কম করতে পারছি না।’

সীমা খেয়াল করল, রমেনের মুখে নিজের প্রশংসা শুনে বন্দনার মুখ রাঙা হয়ে উঠল। ওর দু’চোখে রমেনের জন্য অন্ধ ভালোবাসা ঝরে পড়ার সাক্ষী হয়ে থাকল সীমা।

বন্দনা যে রমেনকে প্রচন্ড ভালোবাসে এবং হয়তো রমেনকে ডিভোর্স দিতে ও কখনও রাজি হবে না, এই ভয়টা হঠাৎ-ই সীমাকে কেন জানি পেয়ে বসল। তার মন অশান্ত হয়ে উঠল।

খাওয়া-দাওয়া শেষ করে রমেন এসে ড্রয়িংরুমের ডিভানে লম্বা হয়ে শুয়ে পড়ল। খানিকক্ষণ পরেই ওর নাক ডাকার শব্দে সীমা মনে মনে না হেসে পারল না। কিছুক্ষণ অপলকে ওর মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে সীমা সোফা ছেড়ে উঠে দাঁড়াল। ওর গন্তব্য রান্নাঘর।

বন্দনা-কে দুটো প্লেটে খাবার বাড়তে দেখে সীমা কৗতূহল চাপতে পারল না, ‘আপনি ছাড়াও আরও কেউ খাবার খেতে বাকি আছে নাকি?’

‘হ্যাঁ, এই অন্য প্লেট-টা আমার বান্ধবী রুনার’, বন্দনা জানলা দিয়ে পাশের বাড়ির দিকে অঙ্গুলি নির্দেশ করল, ‘ও পাশেই থাকে।’

‘আপনার বান্ধবী এখানে এসে খাবে না?’ আশ্চর্য হয়ে সীমা জিজ্ঞেস করল।

‘না, আমার বড়ো ছেলে বাবলু প্লেট-টা ওর বাড়ি দিয়ে আসবে।’

‘আপনার দুই ছেলেকে তো দেখলাম না, ওরা বুঝি বাড়িতে নেই?’ সীমা প্রশ্ন করে।

‘ছোটোটার জ্বর হয়েছে, ঘরে শুয়ে আছে। বাবলু-কে আমি ডাকছি। সকাল থেকে ও রুনার বাড়িতেই রয়েছে, একবারও বাড়ি আসেনি।’

পিছনের দরজা খুলে বন্দনা ছেলের নাম ধরে ডাকতেই, বাবলু ছুট্টে রুনার বাড়ি থেকে বেরিয়ে এল।

মায়ের আদেশ মতো সীমাকে পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করল। খুব সাবধানে বন্দনা, রুনার জন্য বাড়া থালাটা বাবলুর হাতে ধরাতেই, ও সঙ্গে সঙ্গে আবার রুনার বাড়ির দিকে পা বাড়াল।

‘আপনার ছেলেটি তো খুব মিষ্টি এবং খুবই কাজের’, সীমাকে

প্রশংসা করতেই হল।

‘রুনা-ও ওকে প্রচণ্ড ভালোবাসে… মায়ের মতো। বাবলুই লাভবান, কারণ দু’জন মায়ের ভালোবাসা একসঙ্গে পাচ্ছে ও’, শান্তস্বরে সীমার চোখের দিকে তাকিয়ে বন্দনা কথাগুলো বলল।

খাবার ঘরের পাশেই, বারান্দায় তিন-চারটে চেয়ার পাতা ছিল, বন্দনা প্লেট নিয়ে ওখানেই বসল। সীমাকেও ইশারায় পাশে বসতে অনুরোধ করল। একটা নিঃস্তব্ধতা ওদের ঘিরে ধরল, কারও মুখেই কথা নেই। সীমাই প্রথম নিঃস্তব্ধতা ভঙ্গ করল।

‘রুনার বুঝি কোনও সন্তান নেই?’

‘ও-তো বিয়েই করেনি… আপনার মতোই বিয়ে করবে না বলে মনস্থির করেছে। প্রত্যেকটি মেয়েরই মনে মমতা ভরা থাকে এবং স্বাভাবিক ভাবেই মাতৃহূদয়ও থাকে। রুনা তো বাবলুকেই নিজের ছেলে মনে করে, ওর প্রতি রুনার ভালোবাসার অন্ত নেই’, হাসিমুখে জানায় বন্দনা।

কিছুক্ষণ চুপ করে বসে থাকে সীমা। কী বলবে ভেবে পায় না। মনে মনে কিছুট সাহস সঞ্চয় করার চেষ্টা করে। হঠাৎ-ই নিঃস্তব্ধতা ভঙ্গ করে ও, ‘সত্যিই আমিও ভেবেছিলাম কোনওদিন আর বিয়ে করব না কিন্তু এখন আমি এমন মানুষকে খুঁজে পেয়েছি যার সঙ্গে আমি সারাটা জীবন কাটাতে চাই। এই ব্যাপারে আমি আপনার সঙ্গে কথা বলতে চাই।’

বন্দনার কানে সীমার কথাগুলো ঢুকেছে কিনা সীমা ঠিক বুঝতে পারে না কারণ বন্দনার পরের কথাগুলো ঠিক সীমাকে কেন্দ্র করে নয় বরং বাবলু আর রুনার সম্পর্কটা নিয়ে। আনমনা হয়েই বন্দনা বলতে থাকে, ‘রুনা-কে কতবার বলেছি একটা বিয়ে করতে কিন্তু ও কিছুতেই কথা শুনতে চায় না। সবসময় বলে, বিয়ে না করেই বাবলুর মতন একটা মিষ্টি ছেলেকে যখন সন্তান হিসেবে পেয়েছি, তখন মিছিমিছি একটা অজানা লোককে বিয়ে করে নিজের স্বাধীনতা কেন নষ্ট করব। আমার বাবলু যে ওর বার্ধক্যের অবলম্বন হতে চলেছে এই বিশ্বাস ওর মনে একেবারে গেঁথে গেছে।’

‘বন্দনা, রমেনের সঙ্গে এক বছরেরও বেশি আমার পরিচয়। ওর সঙ্গে দেখা হওয়ার পরেই আমার জীবনে খুশি ফিরে এসেছে, নয়তো এই একাকীত্ব আমায় আত্মহত্যাপ্রবণ করে তুলত। সীমা বন্দনার বলা কথাগুলোকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করেই যেন বলতে থাকে।

‘রুনার জীবনে আমার বাবলুই খুশির আলো নিয়ে এসেছে। রোজই প্রায় রুনা ওর জন্য গিফ্ট নিয়ে আসে।’

সীমাও নাছোড়বান্দা। ও গলার স্বর সামান্য বাড়িয়ে বলে, ‘রমেন আর আমার সম্পর্কটা বন্ধুত্ব দিয়ে শুরু হয়েছিল ঠিকই কিন্তু এখন অনেক গভীরে পৌঁছে গেছে এই সম্পর্ক। এখন আমরা একে অপরকে ভালোবাসি’। যেন কিছুটা অগ্রাহ্য করার ভঙ্গিতেই।

বন্দনা উদাস হয়ে যায়। দূর দিগন্তে নিজের দৃষ্টি প্রসারিত করে বলে, ‘জানেন, আমার ছেলের মন জেতার জন্য রুনা ওকে প্রচুর লোভ দেখায়। প্রচুর টাকা খরচ করে প্রায়শই রেস্তোরাঁর খাবার নিয়ে আসে বাবলুর জন্য। ছেলেটার বাইরের খাবারে এতটাই অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে যে বাড়ির খাবার এখন আর ওর মুখে রোচে না।’

‘বাবলুর কথা ছেড়ে রমেন সম্পর্কে কেন আপনি আমার সঙ্গে কথা বলছেন না?’ সীমা বিরক্ত হয়ে ওঠে।

আশ্চর্য, বন্দনা সীমার ব্যবহারে এতটুকু বিচলিত হয় না বরং সীমার কাঁধে হাত রাখে যেন সীমা ওর খুব ভরসার পাত্রী, ‘রুনা একদম রান্না করতে পারে না। ওর রান্নাঘর খালিই পড়ে থাকে। অথচ বাবলু যদি ওর নিজের ছেলে হতো তাহলে কি ও এই দায়িত্ব এড়িয়ে যেতে পারত? নিজের হাতে নিজের ছেলেকে রান্না করে খাওয়ানো-টা কি তখন ওর বোঝা মনে হতো?’

‘নিজের সন্তানের ইচ্ছে পূরণ করাটা কোনও মায়ের কাছেই বোঝা হতে পারে না।’

‘যাকে আমরা ভালোবাসি, তার খুশির জন্য কিছু করা কখনওই বোঝা হতে পারে না। রুনা-তো প্রায় রোজই আমাকে প্রেশার দিতে থাকে যে ও বাবলুকে অ্যাডপ্ট করতে চায়।’

‘এই বিষয়ে আপনার কি মতামত, বন্দনা?’ বন্দনা মুখে সামান্য হাসি টেনে এনে বলতে লাগল, ‘প্রসবযন্ত্রণা সহ্য না করেই কি কেউ যথার্থ অর্থে মা হতে পারে। সংসার সামলানোর ঝক্বি থেকে শুরু করে যে-কোনও পরীক্ষার সম্মুখীন হওয়ার শক্তি, নিজে কষ্ট সহ্য করে সন্তানের সুখ-সুবিধার খেয়াল রাখার ইচ্ছে একমাত্র মায়েরই থাকে –কোনও মাসিপিসি বা জেঠি, কাকিমার থাকে না এত কষ্ট করার ইচ্ছে।’

‘হ্যাঁ, আপনি ঠিকই বলেছেন। আমিও এখন নিজের একটা সংসার পাতার…’

বন্দনা সীমা-কে কথার মাঝেই থামিয়ে দিয়ে কিছুটা গম্ভীর হয়ে যায়। বলে, ‘আমার বাবলুকে রুনা যতই ভালোবাসুক, বাবলু কিন্তু আমার সন্তানই থাকবে… বিশ্ব-সংসার ওকে আমার ছেলে বলেই জানবে। রুনার, বাবলুর পিছনে এত টাকা খরচ করা, বাবলুর ওর বাড়িতে এত যাতায়াত করা ইত্যাদি কিন্তু একটা ‘সত্যি’ কখনও বদলাতে পারবে না যে, বাবলু আমার সন্তান। একটা কথা আপনাকে জিজ্ঞেস করতে পারি?’

‘হ্যাঁ, নিশ্চয়ই’, সীমা নিজেও একটু গম্ভীর হয়ে যায় কারণ প্রথমবার ওর মনে হয় বন্দনা, বাবলু আর রুনার সম্পর্কটার ব্যাপারে ওর কাছে কিছু জানতে চাইবে।

‘আমি যদি কোনও উপায় না পেয়ে আমার বাবলুকে রুনার হাতে তুলে দিই, তাহলেও কি সত্যি সত্যি রুনা ওর মা হয়ে যাবে? সন্তানকে জন্ম দেওয়ার আনন্দ ও কি করে বুঝবে? আমাকে কাঁদিয়ে ও কি জীবনে সুখী হতে পারবে?’ বন্দনার দুই চোখ হঠাৎই জলে ভরে ওঠে।

সীমা একটা গভীর নিঃশ্বাস ফেলে, ‘আপনাকে কষ্ট না দিয়ে কি রুনা আপনার বাবলুকে পেতে পারবে আর আপনার বান্ধবী হিসেবে রুনার বাবলুকে দত্তক নেওয়ার ইচ্ছে মন থেকে ত্যাগ করা উচিত। আমারও এখানে আসাটা উচিত হয়নি। আপনার ব্যক্তিত্বর সঙ্গে পরিচিত হওয়ার পর আমার মন আরও অশান্ত হয়ে উঠেছে।’

বন্দনা সীমার হাত নিজের হাতে তুলে নেয়। ভারী গলায় বলে, ‘সীমা, আপনি আমার ছোটো বোনের মতো তাই নিজের মনের কথা আপনার কাছে খুলে বলছি। আমার কাছে আমার সন্তান, স্বামী এবং

সংসার ছাড়া ভালোবাসার আর কেউ নেই। রমেনকে ছাড়ার কল্পনা করাটাও আমার কাছে অসহনীয়।

আমি জানি আমার থেকে আপনাকে বেশি চায় রমেন। এটা আমার জন্য ঠিক নয়। রমেনের সুখ-সুবিধা সবকিছুর খেয়াল অথচ আমিই রাখি। ও নিজের ছেলেদের প্রাণের থেকে বেশি ভালোবাসে। ওদের জন্যই বাড়ির সঙ্গে ওর যোগাযোগ রয়েছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। আর এই সত্যিটা আমার মনকে গভীর নিরাপত্তা এবং একইসঙ্গে গভীর আনন্দও দেয়।’

‘আপনাকে দেখে যতটা সরল এবং সাদাসিধে মনে হয় আপনি মোটেও ততটা নন। আপনার সঙ্গে এক মিনিটও আর থাকা আমার পক্ষে সম্ভব নয়’, হঠাৎই চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ায় সীমা।

বন্দনা নির্লিপ্ত ভাবে জবাব দেয়, ‘আপনি যদি আমার মনের ভিতরে ঢুকতে পারতেন তাহলে আমার উপর রেগে না গিয়ে আমাকে সহানুভূতি দেখাতেন। আমার উপর দয়া হতো। স্বামীকে ভালোবেসেও, ভালোবাসা না পাওয়ার দুঃখ, হাজার চেষ্টা করেও আমি ভুলতে পারি না।

রমেন আর বাবলুর মধ্যে একটা মিল খেয়াল করেছেন কি? নিজেদের চাহিদা পূরণ করার জন্য আমার স্বামী আপনার সঙ্গে আর ছেলে রুনার সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করে নিয়েছে। কিন্তু এই বাড়ির সঙ্গে সম্পর্ক ত্যাগ করার জন্য কেউ ইচ্ছে প্রকাশ কখনও করেনি।

দোকানের খাবার বাবলুর স্বাস্থ্যের জন্য খারাপ জেনেও ছেলের খুশির জন্য আমি চুপ করে থাকি। রমেনের আপনাকে ভালো লাগে, এই নিয়ে আমিও কোনওদিন রমেনের কাছে নালিশ জানাতে যাব না। আমার মৃত্যু খালি পারবে ওদের সঙ্গে আমার সম্পর্ক ছিন্ন করতে।

যে-কোনও পরিস্থিতিতেই আমি রমেনের সঙ্গে ভালো ভাবে মনে আনন্দ বজায় রেখে থাকতে পারব কিন্তু রুনা বা আপনি এই সম্পর্কটা-কে টিকিয়ে রেখে কী আদৗ লাভবান হতে পারবেন? ওর সন্তান বা আপনার যদি একজন সঙ্গীর প্রয়োজন তাহলে আপনারা নতুন করে কেন শুরু করছেন না? অপরের উচ্ছিষ্ট যতই সুস্বাদু হোক না কেন, সেটা খাওয়ার কী খুব দরকার আছে?’

নিরুত্তর সীমা দাঁড়িয়ে বন্দনার অশ্রুসজল মুখের দিকে খানিকক্ষণ তাকিয়ে থাকে। ঠিক এই মুহূর্তে তার মনে হতে থাকে বন্দনার ওই ব্যক্তিত্বের জোরের কাছে, তার সমস্ত আধুনিকতা, বেপরোয়া ভাব, সবই কেমন যেন ফিকে হয়ে গেছে। বন্দনা একটা বিশেষ তারে ঘা দিয়েছে, যা তার মাথার কোশগুলোকে নাড়িয়ে দিয়েছে। সত্যি কি সে কোনওদিন সম্পূর্ণ ভাবে পাবে রমেনকে? উত্তরটা এই মুহূর্তে তার মতো করে কেউ জানে না। সীমা দরজার দিকে পা বাড়ায়। রমেন তখনও নিশ্চিন্তে সোফায় ঘুমোচ্ছে দেখে, ওকে না জাগিয়েই সীমা নিজের পার্সটা সোফা থেকে তুলে দরজা দিয়ে বাইরে বেরিয়ে আসে।

মনে মনে, রমেনের সঙ্গে অবৈধ সম্পর্কটা থেকে বেরিয়ে আসার সিদ্ধান্তটা আরও দৃঢ় হতে থাকে সীমার মধ্যে।

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...