ক্যান্সার নামক মারণ রোগে আক্রান্ত হওয়ার কোনও নির্দিষ্ট বয়স নেই। সাম্প্রতিকতম তথ্য অনুযায়ী, সারা পৃথিবীতে প্রায় ৩ লক্ষ শিশু নতুন করে ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছে প্রতি বছর। আমাদের দেশেও সংখ্যাটা বেশ উদ্বেগজনক। পরিসংখ্যান থেকে জানা যাচ্ছে, ভারতে প্রতি বছরে ৫০,০০০ শিশু এই রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। তবে, আশার কথা হল— সঠিক সময়ে যথাযথ চিকিৎসা হলে শিশুদের ক্ষেত্রে এই রোগ নিরাময়যোগ্য। এক্ষেত্রে, যত তাড়াতাড়ি রোগ নির্ণয় করা সম্ভব হয়, ততই সুস্থতার সম্ভাবনা বাড়ে।
ক্যান্সারের ধরন :
শিশুদের মধ্যে লিউকেমিয়া, ব্রেন ও স্পাইনাল কর্ডের টিউমার, নিউরোব্লাস্টোমা, উইলমস টিউমার, লিম্ফোমা, রাবডোমায়োসারকোমা, রেটিনোব্লাস্টোমা, হাড় বা অস্থির ক্যান্সার, উইংস সারকোমা— এই ধরনের ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা বেশি দেখা যায়। ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীর প্রায় ২৮ শতাংশ লিউকেমিয়া বা বোন ম্যারো এবং রক্তের ক্যান্সারের রোগীর প্রায় ২৬ শতাংশ ব্রেন ও স্পাইনাল কর্ডের টিউমার জনিত ক্যান্সারে আক্রান্ত হতে দেখা যায়।
উপসর্গ :
ক্লান্তি, হাড় ও জয়েন্টে ব্যথা, দুর্বলতা, জ্বর, ওজন কমে যাওয়া, রক্তপাত প্রভৃতি যদি লিউকেমিয়ার অন্যতম লক্ষণ হয়, ব্রেন ও স্পাইনাল কর্ডের টিউমার জনিত ক্যান্সারের রোগীদের মধ্যে হাঁটতে বা কোনও জিনিস হাত দিয়ে ধরতে অসুবিধা, বমি-বমি ভাব, মাথা-যন্ত্রণা, ঘুম-ঘুম ভাব, অস্বচ্ছ দৃষ্টি— এইসব লক্ষণ দেখতে পাওয়া যায়। নিউরোব্লাস্টোমার বিকাশ প্রধানত ভ্রূণ অবস্থাতেই হয় এবং ১০ বছরের বাচ্চাদের মধ্যেই দেখা যায়। এক্ষেত্রে, পেটে ফোলা ভাব ছাড়াও অনেক সময় জ্বর বা হাড়ের ব্যথার মতো উপসর্গ থাকতে পারে।
৩-৪ বছরের বাচ্চারাই বেশি আক্রান্ত হয় উইলমস টিউমারে। এক্ষেত্রেও পেটে ফোলা ভাব, জ্বর, ব্যথা, বমি ভাব, খিদে না পাওয়া এই সব লক্ষণ দেখতে পাওয়া যায়। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকেই আক্রমণ করে লিম্ফোমা। বিশেষত লিম্ফ নোডসে দেখা গেলেও অনেক সময় লসিকা গ্রন্থিতে, অস্থি মজ্জা বা অন্য অংশেও ছড়াতে পারে।
ক্লান্তি, ঘাড়, কুঁচকির নীচে ফোলা, জ্বর, ওজন হ্রাস এই রোগের প্রধান উপসর্গ।রাবডোমায়োসারকোমা মাথা, ঘাড়, পেট, কুঁচকি, হাত, পা অর্থাৎ শরীরের যে-কোনও অংশে হতে পারে এবং ব্যথা ও ফুলে যাওয়াই এর লক্ষণ।