এখনও আমরা রয়েছি করোনার আবহে। তাই, জীবনযাত্রা সম্পূর্ণ স্বাভাবিক হয়নি। এই পরিস্থিতিতে যে-কোনও সময় চাইলেই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়ে চিকিৎসকের মুখোমুখি হয়ে চিকিৎসা পরিষেবা নেওয়া কষ্টকর। অতএব, জরুরি পরিষেবা নেওয়ার প্রযোজন ছাড়া, চিকিৎসা কেন্দ্রে যাওয়ার বিষয়টি এড়িয়ে চলা উচিত। এক্ষেত্রে, রিমোট মনিটরিং সিস্টেম একটি অত্যন্ত সহায়ক চিকিৎসা পরিষেবা। সম্প্রতি এই বিষয়ে যাবতীয় কৌতূহল মেটালেন ডা. আফতাব খান।
রিমোট মনিটরিং সিস্টেম কী?
এটি চিকিৎসক এবং রোগীর সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষাকারী একটি মাধ্যম। অ্যাপ-নির্ভর এই মাধ্যমটির জন্য চাই একটি স্মার্ট ফোন। রোগী এবং তার দ্বারা নিযুক্ত চিকিৎসকের স্মার্ট ফোন-এ নির্দিষ্ট একটি অ্যাপ ডাউনলোড করে, চিকিৎসার সুযোগ নিতে হবে। এটি একটি অত্যন্ত আধুনিক চিকিৎসা পরিষেবার মাধ্যম।
সব রোগের চিকিৎসার ক্ষেত্রে কি রিমোট মনিটরিং সিস্টেম-এর সাহায্য নেওয়া যেতে পারে?
না, এটি সব রোগের চিকিৎসার ক্ষেত্রে কার্যকরী নয়। তবে, কয়ে সেকেন্ড যার স্পন্দন বন্ধ হয়ে গেলে দেহে আর প্রাণ থাকবে না, সেই গুরুত্বপূর্ণ অর্গ্যান অর্থাৎ হৃদয়ন্ত্রের সুরক্ষার জন্য ব্যবহার করা হয় এই রিমোট মনিটরিং সিস্টেম। যাদের হার্ট-এ ডিভাইস ইমপ্ল্যান্ট করা আছে অর্থাৎ পেসমেকার বসানো আছে, তাদের সবসময় পর্যবেক্ষণে রাখা জরুরি। কারণ, মুহূর্তের অসতর্কতা কিংবা সমস্যা, বড়ো বিপদে ফেলতে পারে রোগীকে। তাই, জীবনের সুরক্ষার জন্য রিমোট মনিটরিং সিস্টেম একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম।
কীভাবে কাজ করে এই রিমোট মনিটরিং সিস্টেম?
এটি আসলে একটি ট্রান্সমিটার সিস্টেম। পেসমেকার-এর সঙ্গে রিমোট মনিটরিং অ্যাপ-এর সুন্দর ভাবে যোগাযোগ স্থাপিত হয়ে ওঠার কারণে, হৃদয়ন্ত্রের ভালোমন্দ অবস্থার সম্পূর্ণ তথ্য সর্বদা পাওয়া যায় স্মার্ট ফোনে।
রিমোর্ট মনিটরিং সিস্টেম-এর সুবিধাগুলি কী কী?
এটি একটি স্বযংক্রিয় পদ্ধতি। রক্তচাপ, রক্ত সঞ্চালন এবং হৃদস্পন্দনের মাত্রার তথ্য স্বযংক্রিয় ভাবে পরিবেশিত হয় স্মার্ট ফোন-এর নির্দিষ্ট অ্যাপ-এ। এমনকী, রোগী যখন ঘুমিয়ে থাকবেন, তখনও হার্ট-এর ভালোমন্দ পরিস্থিতির সমস্ত তথ্য পাওয়ার সুবিধা রয়েছে। হার্ট-এর সামান্য অস্বাভাবিকতা দেখা দিলেই তৎক্ষণাৎ সতর্ক করবে এই সিস্টেম। রোগী নিজেই বুঝতে পারবেন হার্ট-এর অস্বাভাবিকতা। অর্থাৎ, কোনও সমস্যা হলেই অ্যাপ-এর মাধ্যমে মোবাইল ফোন-এ রেড-অ্যালার্ট পাবেন রোগী কিংবা তার বাড়ির লোকেরা। এরপর, চিকিৎসক যদি ব্যস্তও থাকেন তখন রোগীর রিমোট মনিটরিং সিস্টেম-এর তথ্য না দেখে থাকলেও, বিপদের বার্তা পাওয়া মাত্র রোগী কিংবা তার বাড়ির লোকেরা বিষয়টিকে চিকিৎসকের নজরে আনতে পারবেন দূরভাষের মাধ্যমে। চিকিতসক তখন তাঁর মোবাইল-এ থাকা সংযোগকারী অ্যাপ-এর মাধ্যমে রোগীর হার্ট-এর সমস্যা বুঝতে পারবেন এবং প্রযোজনীয় নির্দেশ দিতে পারবেন। যদি কোনও ওষুধের মাধ্যমে বিপদ এড়ানোর সম্ভাবনা থাকে, তাহলে চিকিত্সক সেই পরামর্শ দেবেন। আর যদি গুরুতর কোনও সমস্যা দেখা দিয়ে থাকে, তাহলে রোগীকে তখনই হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরামর্শ দেবেন। অর্থাৎ অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ রয়েছে এক্ষেত্রে। তাই, অহেতুক মানসিক চাপ নিতে হয় না এবং প্রযোজন না থাকলে হাসপাতালে যাওয়ার কিংবা ভর্তি হওয়ার ঝামেলা থাকে না। শুধু তাই নয়, পেসমেকার বসানো রোগী যদি তাঁর হোম টাউন-এ না থাকেন, তিনি যদি ট্রাভেল করেন কিংবা বহু দূরে থাকা অবস্থায় হার্ট-এর কোনও সমস্যা দেখা দিলে, বিশেষ অসুবিধায় পড়তে হবে না রোগীকে। কারণ, তিনি তাঁর শারীরিক অসুস্থতার বার্তা রিমোট মনিটরিং সিস্টেম-এর মাধ্যমে যেমন নিজে জানতে পারবেন সঠিক সময়ে ঠিক তেমনই তিনি তার বর্তমান পরিস্থিতি চিকিৎসকের নজরে এনে, উপযুক্ত চিকিৎসা পরিষেবা নিতে পারবেন। এক্ষেত্রে দ্রুত চিকিত্সা পরিষেবা নেওয়ার সুযোগ আছে বলে, রোগীর জীবনরক্ষার সুযোগও অনেক বেশি। কারণ, রোগীর স্মার্ট ফোন ছাড়াও চিকিৎসকের ফোন সেট-এ এসএমএস, ই-মেইল এবং অ্যাপ-এর নোটিফিকেশন-এও রোগীর শারীরিক সমস্যার বার্তা পেঁছে যাবে।