বাচ্চার জেদ কমাবেন কীভাবে?

নানারকম কারণে জেদ করে বাচ্চারা। খিদে পেলে, ঘুম পেলে কিংবা শরীরে কোনও কষ্ট হলে যেমন জেদ করে, ঠিক তেমনই ভলোবাসার অভাববোধ করলেও জেদ করে। অনেক সময আবার নিজের প্রতি অতিরিক্ত দৃষ্টি আকর্ষণ করানোর জন্যও জেদ ধরে বাচ্চারা। কিন্তু অতিরিক্ত জেদ বাচ্চার শরীর ও মনে কুপ্রভাব ফেলতে পারে। শুধু তাই নয়, জেদের কারণে ভবিষ্যতে অন্যের চোখে অপ্রিয় হয়ে উঠতে পারে। অতএব, বাচ্চার জেদ কমাতেই হবে। এর জন্য প্রধান দায়িত্ব নিতে হবে বাবা-মাকে। কিন্তু কীভাবে?

  • বাচ্চা যদি একাকিত্ব অনুভব করে কিংবা বিরক্তবোধ করে, তাহলে তার কান্নাকাটি বা চ্যাঁচামেচি বন্ধ করানোর জন্য কোনও কাজে তাকে ব্যস্ত রাখুন। যেমন খেলনা, আঁকা অথবা বড়োদের কাজে সাহায্য করতে বলুন। শাকসবজি বাছাবাছি, গুছিয়ে রাখা ইত্যাদিতেও ব্যস্ত রাখতে পারেন। প্রযোজন হলে বাসনপত্র এলোমেলো করে দিয়ে বাচ্চাকে গোছাতে বলুন
  • খিদে পাওয়ার কারণে যদি জেদ করছে মনে হয়, তাহলে তখন পছন্দের খাবার খাওয়ান বাচ্চাকে
  • সঠিক সময়ে ঘুম পাড়ান বাচ্চাকে এবং বাচ্চাকে অন্তত আট ঘন্টা ঘুমোনোর ব্যবস্থা করুন। কারণ, ঘুম ভালো হলে বাচ্চার মুড ভালো থাকবে এবং জেদ কমবে
  • বাচ্চা যখন জেদ করবে, তখন তাকে মারধর কিংবা অন্য কোনও ভাবে শাস্তি দেবেন না, এতে জেদ আরও বেড়ে যাবে। বরং উলটোটাই করুন, ওকে আদর দিয়ে অন্য কোনও ভাবে ব্যস্ত রাখুন, হাসাবার চেষ্টা করুন
  • বাচ্চাকে নিজের ভালোবাসা প্রকাশ করুন। যেন কোনও ভাবেই বাচ্চা অসহায়তা অনুভব না করে
  • বাচ্চার সামনে বড়োরা যেন ঝগড়া না করে। কারণ, ঝগড়া দেখলে ভয় পেয়ে বিরক্তি কিংবা জেদ দেখাতে পারে।

সন্তানের শিক্ষাখাতে সঠিক বিনিয়োগ

‘লেখাপড়া করে যে, গাড়িঘোড়া চড়ে সে’– এমন প্রবাদ শুনতে শুনতে বড়ো হয়েছি আমরা। অর্থাৎ, শিক্ষালাভের মাধ্যমেই যে জীবনে সাফল্যলাভ করা যায়, এই সারমর্মটুকু ছোটোবেলাতেই মাথায় গেঁথে দিতে চেয়েছেন আমাদের মা-বাবা কিংবা শুভাকাঙক্ষী গুরুজনেরা।

আসলে, সন্তানকে উচ্চশিক্ষিত করে  তোলা কিংবা সঠিক শিক্ষাদানের জন্য যে-ভাবে কঠিন পরিশ্রম করতে হয় বাবা-মাকে এবং যে-পরিমাণ অর্থের জোগান দিতে হয় তাদের, তা যাতে সার্থকতালাভ করে,– সেই বিষয়টিই নানা কথায় স্মরণ করিয়ে দিতে চান সন্তানকে। অবশ্য, সন্তানের বোধবুদ্ধি হওয়ার পর তবেই তারা মা-বাবার পরামর্শ মেনে চলতে চেষ্টা করবে কিন্তু মা-বাবাকে দায়িত্ব পালন করতে হবে সন্তান জন্মলাভের পর থেকেই।

আধুনিক সমাজব্যবস্থায় শিক্ষার ধরন বদলেছে। তাই মা-বাবারাও চিন্তাধারার পরিবর্তন আনতে বাধ্য হয়েছেন। এখন বাংলা মাধ্যমের তুলনায় ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে লেখাপড়া ভালো হয়, এমন ধারণা থেকে ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে পড়ানোর প্রবণতা বাড়ছে। তাছাড়া ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে পড়লে ইংরেজি ভাষাটা ভালো ভাবে র৫ করতে পারবে এবং পৃথিবীর যে-কোনও প্রান্তে কর্মজীবনকে সাফল্যমন্ডিত করতে পারবে, এমন ধারণাও তৈরি হয়েছে অভিভাবকদের মনে। অপ্রিয় হলেও, হয়তো কথাটা সত্যি। তাই ইংরেজি মাধ্যম স্কুুলের চাহিদা বাড়ছে এবং এই সুযোগে স্কুল কর্তৃপক্ষও পঠনপাঠনের জন্য আর্থিক বোঝা চাপিয়ে চলেছে অভিভাবকদের ওপর। আর সন্তানের শিক্ষাখাতে খরচ হওয়া এই বিপুল পরিমাণ অর্থের জোগান দিতে হিমসিম খাচ্ছেন মা-বাবারা। কিন্তু যদি পরিকল্পনামাফিক ব্যয়বরাদ্দ করা যায় সন্তানের শিক্ষাখাতে, তাহলে আর্থিক ঝামেলায় পড়ার সম্ভাবনা কমবে। যেমন অনেকে বড়ো কোনও স্কুলে ছেলেমেয়েকে ভর্তি করিয়ে দুই-তিন ক্লাস পড়ানোর পর আর আর্থিক বোঝা না নিতে পেরে ওই স্কুল থেকে ছাড়িয়ে নেন। আবার অনেক পরিবারে, বিশেষকরে গ্রাম বা মফস্সলের কিছু অভিভাবক টাকাপয়সা না জমিয়ে ছেলেমেয়েকে পড়াতে গিয়ে বিফল হন। বাংলা মাধ্যম স্কুলে পড়িয়েও আট-দশ ক্লাস-এর বেশি আর টানতে পারেন না ছেলেমেয়ের লেখাপড়ার খরচ। ফলে, অর্ধসমা৫ থেকে যায় সন্তানের শিক্ষা। তাই এরা জীবনে তেমন প্রতিষ্ঠা পায় না। অতএব, সন্তানের শিক্ষাখাতে সঠিক ব্যয়বরাদ্দের জন্য আগাম পরিকল্পনা জরুরি।

সন্তানের শিক্ষাজীবনকে তিনটি পর্বে ভাগ করে নিন প্রথমে। প্লে স্কুল থেকে ক্লাস ফোর পর্যন্ত ধরে নিন প্রথম পর্ব। ফাইভ থেকে টেন পর্যন্ত দ্বিতীয় পর্ব এবং তারপরের উচ্চশিক্ষা কিংবা পেশাগত শিক্ষাকে রাখুন তৃতীয় পর্বে। এবার সঞ্চয় পর্ব।

সন্তান জন্ম নেওয়ার পর থেকে টাকা জমানো শুরু করুন। এক্ষেত্রে আগাম সময় পাবেন আড়াই বছর। কারণ, সন্তানের আড়াই বছর বয়স থেকে শুরু হয় শিক্ষাজীবন।

ডায়ারি, পেন অথবা কম্পিউটার কিংবা ল্যাপটপ নিয়ে বসুন প্রথমে। প্রথমে লিখুন আপনার মাসিক আয়ের পরিমাণ। তারপর নানা খাতে ব্যয়ের পরিমাণ হিসাব করার পর দেখুন কতটা টাকা বাঁচাতে পারলেন। এরপর সন্তানের আড়াই বছর বয়স পর্যন্ত, অর্থাৎ ত্রিশ মাস টাকা জমাতে থাকুন। এরই পাশাপাশি, খোঁজ নিন বিভিন্ন স্কুলের ভর্তি বাবদ এবং টিউশন ফিজ ইত্যাদি খরচের পরিমাণের বিষয়ে। এবার আপনার আর্থিক সামর্থ্যের কথা মাথায় রেখে সিদ্ধান্ত নিন, কোন স্কুলে ভর্তি করলে নিশ্চিন্তে সন্তানকে সঠিক শিক্ষাদান করতে পারবেন। এক্ষেত্রে মাথায় রাখবেন, নিউক্লিয়ার ফ্যামিলিতে স্বামী-স্ত্রী দু’জনেই যদি চাকুরিজীবী হন, তাহলে সন্তানকে হয় ডে-কেয়ার অথবা ক্রেশ-এ কিংবা ‘আয়া-মাসি’র কাছে রাখতে হবে এবং এরজন্য আরও পাঁচ-সাত হাজার টাকা খরচ হবে প্রতি মাসে।

এই প্রসঙ্গে উল্লেখ্য, বাচ্চার অ্যাডমিশন বাবদ মোটামুটি পঞ্চাশ হাজার টাকা থেকে এক লক্ষ টাকা খরচ আছে ভালো ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে পড়াতে গেলে। এরপর আছে স্কুল ড্রেস, বইখাতা এবং মান্থলি স্কুল ফিজ। প্রায় সব ভালো ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে এক থেকে দু’হাজার টাকা মান্থলি ফিজ নিয়ে থাকে নার্সারি থেকে ক্লাস ওয়ান পর্যন্ত। এরপর ক্লাস ফোর পর্যন্ত তা দাঁড়ায় মোটামুটি আড়াই হাজার টাকার মতো।

ক্লাস ফাইভ থেকে খরচ কিছুটা বাড়বে। কারণ, বেশিরভাগ স্কুলে ক্লাস ফাইভ থেকে সবরকম ফিজ বাড়িয়ে দেওয়া হয়। এরসঙ্গে পড়ার চাপ বাড়লে হোম ওয়ার্ক-এর জন্য যদি হোম টিউটর রাখেন তাহলে খরচ আরও কিছুটা বাড়বে এবং এই ব্যয়ের পরিমাণ প্রতিবছরই কিছুটা বাড়তে থাকবে। তাই সেইমতো ব্যয়বরাদ্দও করতে হবে মা-বাবাকে।

তৃতীয় পর্ব, অর্থাৎ দশ ক্লাস পাশ করার পর যেমন ‘বিভাগ’ বেছে নেবে আপনার সন্তান, খরচের পরিমাণটাও তেমনই হবে। অর্থাৎ, আর্টস, কমার্স এবং সায়েন্স এই তিন বিভাগে পড়ার খরচও আলাদা। সবচেয়ে বেশি খরচ সায়েন্স বিভাগে। এছাড়া, স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর পর্যায়ের খরচের পরিমাণ বাড়বে ক্রমান্বয়ে। আর যদি ডক্টর, ইঞ্জিনিয়ার, চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট বানাতে চান কিংবা অন্য কোনও কারিগরী শিক্ষা দিতে চান আপনার সন্তানকে, তাহলে খরচের বিষয়ে খোঁজ খবর করে সেইমতো ব্যয়বরাদ্দ করুন। এরজন্য শিক্ষামূলক যোজনায় টাকা জমান অথবা রেকারিং অ্যাকাউন্ট-এ টাকা রাখুন। এরপরও যদি আর্থিক ঘাটতি থাকে, তাহলে এডুকেশনাল লোন নিতে পারেন। উচ্চশিক্ষার প্রয়োজনীয় পেপার্স ব্যাংক-এ সাবমিট করে লোনের জন্য আবেদন করুন। এক্ষেত্রে অবশ্য আপনার সন্তানকে মেধাবী হতে হবে এবং ভবিষ্যতে উপার্জনের প্রবল সম্ভাবনা থাকতে হবে।

সুস্থ থাকুন বছরভর

স্বাস্থ্য-ই যে সম্পদ, এ বিষয়ে দ্বিমত থাকা উচিত নয়। কারণ, অর্থ, সম্পত্তি, খ্যাতি, লোকবল, ভালোবাসার মানুষ যা-ই থাকুক না কেন, সবই গৌণ হয়ে যায় যখন বড়ো কোনও রোগ বাসা বাঁধে শরীরে। তখন প্রাধান্য পায় শুধু সুস্থ হওয়ার তাগিদ। বাঁচতে ইচ্ছে করে সবকিছুর বিনিময়ে। কিন্তু তখন হয়তো শত চেষ্টাতেও আর আগের মতো সুস্থ স্বাভাবিক শরীর কিংবা জীবন ফিরে পাওয়া সম্ভব হয়ে ওঠে না। হয়তো তখন সম্পূর্ণ সুস্থতা ফিরে পাওয়া যায় না আধুনিক চিকিৎসা পরিষেবা নেওয়ার পরেও। সঠিক সময়ে সঠিক পদক্ষেপ না নেওয়ার জন্য, সুস্থতার চাবিকাঠি হয়তো আয়ত্তে থাকে না তখন। অতএব, আজ এখন-ই সুস্থ থাকার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।

কী হয়নি, কী হতে পারত, কীসের অভাবে আপনার শরীর সম্পূর্ণ সুস্থ রাখতে পারেননি, এসব নিয়ে এখন বেশি মাথা ঘামিয়ে লাভ নেই। বরং, এই নতুন বছরে নতুন কিছু করার সংকল্প নিন। আর সেই সংকল্প হোক স্বাস্থ্যরক্ষার।

প্রথমে মনে রাখতে হবে, সুস্বাস্থ্যের কিছু মানদণ্ড আছে। এই মানদণ্ড নির্ধারণ করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। যেমন–

১) কর্মশক্তিঃ স্বাভাবিক ভাবে কাজ কিংবা পরিশ্রম করার শক্তি।

২) দৃষ্টিভঙ্গিঃ প্রতিটি কাজের ইতিবাচক মনোভাব।

৩) বিশ্রামঃ পরিশ্রমের নিরিখে প্রয়োজনীয় আরাম এবং ঘুম।

৪) ভারসাম্যঃ প্রকৃতি, আবহাওয়া, জলবায়ু এবং মনুষ্য-প্রকৃতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়া।

৫) প্রতিরোধ শক্তিঃ সাধারণ সর্দি-কাশি এবং সংক্রমণ প্রতিরোধক ক্ষমতা।

৬) উপযুক্ত ওজনঃ বয়স এবং উচ্চতা অনুযায়ী শরীরের সঠিক ভার।

৭) দৃষ্টিশক্তিঃ চোখের স্বাভাবিক উজ্জ্বল দৃষ্টি।

৮) দুর্গন্ধহীনতাঃ মুখের ভেতর এবং শরীর থেকে দুর্গন্ধ বের না হওয়া।

৯) ঔজ্জ্বল্যঃ খুসকিবিহীন উজ্জ্বল চুল এবং তেলবিহীন মুখমন্ডল।

১০) ব্যথাহীনতাঃ  ব্যথা-যন্ত্রণাহীন শরীরের হাড় এবং পেশিসমূহ।

এই দশটি মানদণ্ড বিচার করলেই বুঝে যাবেন, শারীরিক ভাবে আপনি কতটা সুস্থ। আর আপনার সুস্থতায় যদি ঘাটতি থাকে, তাহলে প্রস্তুতি নিন সুস্বাস্থ্য ফিরিয়ে আনার। এরজন্য অবশ্য নিষ্ঠার সঙ্গে কিছু নিয়ম মেনে চলতে হবে। দিনে-রাতে এইসব নিয়ম মেনে চললে, ২০২১ সালের মধ্যে আপনার জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ অর্থাৎ সুস্বাস্থ্য পুনরুদ্ধার করতে পারবেন কিংবা নতুন করে স্বাস্থ্যসুন্দর হতে পারবেন।

২০২১-এর জন্য টিপসঃ 

  •  ঘুম থেকে উঠুন সকাল ৬টার মধ্যে। মৌরি ভেজানো জল কিংবা ত্রিফলার জল, অথবা পাতিলেবুর রস হালকা গরম জল দিয়ে অথবা চিরতার জল (প্রতিদিন নয়, মাঝেমধ্যে) পান করুন, মেদবিহীন পেটও পরিষ্কার থাকবে
  • ঢিলেঢালা পোশাক পরে অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটুন অথবা ১৫ মিনিট দৌড়োন, এতে হূদরোগ আটকাতে পারবেন
  • সকাল থেকে রাত্রি পর্যন্ত খাবার খান সঠিক সময়ে। ৭টার মধ্যে ব্রেকফাস্ট, ১টার মধ্যে লাঞ্চ, ৪টে–৬টার মধ্যে টিফিন এবং ৯টার মধ্যে ডিনার সারুন, শরীর ভালো থাকবে
  •  খাবারে শাকসবজির পরিমাণ যেন বেশি থাকে। মাছ বেশি খাবেন, মাংস কম খাবেন। প্রতিদিন অন্তত দুটো ফল খাওয়া জরুরি। কমলালেবু, কিউই, খেজুর, পাকা পেঁপে এসব অবশ্যই খাবেন মাঝেমধ্যে। এতে পেট পরিষ্কার থাকবে এবং শরীরও সঠিক ভিটামিনের জোগান পাবে
  •  প্রতিদিন এক কাপ দুধ খাবেন। মাঝেমধ্যে ডাবের জল খাবেন। আর, দিনে-রাতে অন্তত ৩-৪ লিটার (প্রা৫ বয়স্ক) জল পান করবেন।

দুধ-চায়ের পরিবর্তে গ্রিন-টি পান করুন, শরীর রোগমুক্ত থাকবে

  • দুপুরে না ঘুমোনোই ভালো। রাতে অবশ্যই ১০টা ৩০ মিনিটের মধ্যে ঘুমোতে যাবেন। ৬-৮ ঘন্টা গভীর ঘুম চাই রাতে। এর ফলে ফুরফুরে মেজাজ থাকবে
  •  গায়ে সাবান মেখে পরিপূর্ণ স্নান করুন প্রতিদিন। সপ্তাহে অন্তত ২ দিন ভালোমানের শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধোবেন। সকালে এবং রাতে খাওয়ার পরে টুথপেস্ট দিয়ে ভালো ভাবে ব্রাশ করুন, দুর্গন্ধমুক্ত থাকবেন
  •  ধুয়েমুছে পরিষ্কার রাখুন ঘরবাড়ি। ঘরে পর্যা৫ আলো-হাওয়া ঢুকতে দিন, জীবাণুমুক্ত রাখুন। বাড়ির চারপাশ যেন জঞ্জালমুক্ত থাকে। ছুটির দিনে বালিশ, বিছানাকে পর্যা৫ রোদ খাওয়ান, নিরোগ, সুস্থ থাকবেন
  •  ধোয়া জামাকাপড় কড়া রোদে শুকিয়ে নিন, নয়তো ত্বক-সমস্যা হতে পারে
  •  কর্মক্ষেত্রে একনাগাড়ে বসে থাকবেন না। মাঝেমধ্যে হাঁটাচলা করুন এবং সুযোগ থাকলে একটু ফ্রি-হ্যান্ড এক্সারসাইজ করে নিন, স্থূলত্ব এবং হূদরোগ এড়াতে পারবেন
  •  শরীর থেকে অতিরিক্ত ক্যালোরি ক্ষয় করার জন্য ঘাম-ঝরানো পরিশ্রম করুন অবশ্যই
  •  যতটা সম্ভব কম ব্যবহার করুন ইলেক্ট্রনিক গ্যাজেট। একটানা বেশিক্ষণ মোবাইলে কথা বলবেন না এবং কোনও কিছু বেশি সময় ধরে দেখবেন না। এতে চোখ এবং মস্তিষ্কের রোগ এড়াতে পারবেন
  • একঘেয়েমি কাটাতে পরিবারের সবাই কিংবা বন্ধুবান্ধব মিলে বেড়াতে যান মাঝেমধ্যে। সর্বদা হাসিখুশি থাকার চেষ্টা করুন
  • বন্ধ করুন ধূমপান এবং মদ্যপান, আয়ু বাড়বে
  •  উপযুক্ত ফোরপ্লে-র মাধ্যমে নিয়মিত যৗনতৃিঀ৫ লাভ করুন। সুরক্ষিত যৌনসম্পর্কের জন্য কন্ডোমের ব্যবহার আবশ্যক
  • ৬ মাস অন্তর ব্লাড টেস্ট করিয়ে দেখে নিন সুগার, থাইরয়েড, কোলেস্টেরল ইত্যাদি আয়ত্বে আছে কিনা। আর সেইসঙ্গে, মাঝেমধ্যে ব্লাড প্রেসার (বিপি) চেক করিয়ে নিন, সুস্থ এবং নিশ্চিন্ত থাকতে পারবেন
  •  চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ কিনে খাবেন না। বিজ্ঞাপনে প্রভাবিত হয়ে নিজের ইচ্ছেমতো ওইসব ওষুধ খাবেন না, বিপদে পড়বেন
  •   যৌনরোগ এড়াতে বাড়ির শৌচালয় পরিষ্কার রাখুন এবং বাড়ির বাইরে অপরিষ্কার শৌচালয় ব্যবহার করবেন না
  •  পেটের অসুখ এড়ানোর জন্য ফুটপাথ-এ খোলা জায়গায় রাখা কাটা ফল কিংবা অন্যান্য খাবার কিনে খাবেন না
  • ভালোমানের জুতো ব্যবহার করুন। একদিকে ক্ষয়ে যাওয়া জুতো পরবেন না, এতে নার্ভ-এর চাপ এড়াতে পারবেন।

—–সুরঞ্জন দে।

বেকিং সোডা-র বহুবিধ ব্যবহার

বেকিং সোডা যে কতরকম কাজে লাগতে পারে, তা অনেকেরই অজানা। মনে রাখবেন, কিছু খাবারকে খাস্তা, মুচমুচে কিংবা স্পঞ্জি করার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয় বেকিং সোডা-র কার্যকারিতা। এসব ছাড়াও, আর কী কী প্রয়োজনীয় সুবিধে নেওয়া যায় বেকিং সোডা ব্যবহার করে, সেই বিষয়ে জেনে নিন বিস্তারিত ভাবে।

বেকিং সোডা আসলে সোডিয়াম হাইড্রোজেন কার্বোনেট বা সোডিয়াম বাইকার্বোনেট। এক কার্বোনিক যৌগিক। NaHCO3 হল এর কেমিক্যাল ফর্মূলা। চলতি ভাষায় একে আমরা বলি ‘খাওয়া সোডা’।

ব্যবহার সমূহ

¤ ফল এবং সবজি জীবাণুমুক্ত করাঃ বাজার থেকে কাঁচা সবজি এবং ফলমূল আনার পরে বেকিং সোডা জলে মিশিয়ে ধুয়ে নিন।

¤ কার্পেট ক্লিনিংঃ কার্পেট পরিষ্কার এবং জীবাণুমুক্ত করার জন্য ব্যবহার করুন বেকিং সোডা। কিছুটা বেকিং সোডা কার্পেটের উপর ছড়িয়ে, দশ মিনিট পরে ভ্যাকুয়াম ক্লিনার দিয়ে ক্লিন করে নিন।

¤ মাউথওয়াশঃ মুখের দুর্গন্ধ দূর করার জন্য এক গেলাস জলে হাফ চা-চামচ বেকিং সোডা মিশিয়ে গারগল করুন।

¤ ডিওডরেন্টঃ ঘামের দুর্গন্ধ দূর করার জন্য ট্যালকম পাউডারের সঙ্গে সামান্য বেকিং সোডা মিশিয়ে ব্যবহার করুন।

¤ এয়ার ফ্রেশনারঃ ঘরের অস্বস্তিকর গন্ধ কাটানোর জন্য একটা কৌটোতে বেকিং সোডা রেখে, কিছুক্ষণ কৌটোর ঢাকনা খুলে রাখুন।

¤ জামাকাপড়ের কড়া দাগ দূর করার জন্যঃ ওয়াশিং মেশিনে জামাকাপড় কাচার সময় লিকুইড সোপ-এর সঙ্গে সামান্য বেকিং সোডা মিশিয়ে নিন।

¤ বাসনপত্রের কড়া দাগ দূর করার জন্যঃ স্টিল কিংবা সিলভার-এর তৈরি বাসনপত্রের পোড়া কিংবা তৈলাক্ত দাগ দূর করার জন্য সাবানের সঙ্গে বেকিং সোডা মিশিয়ে ব্যবহার করুন।

¤ বাথরুম ক্লিনিংঃ বাথরুমের মেঝের দাগছোপ কিংবা পিচ্ছিল ভাব কাটানোর জন্য বেকিং সোডা ঘষে দিন। ড্রেন ক্লিনার হিসাবেও ব্যবহার করতে পারেন বেকিং সোডা।

¤ ব্রাশ ক্লিনিংঃ টুথ-ব্রাশ এবং হেয়ার-ব্রাশ পরিষ্কার এবং জীবাণুমুক্ত রাখার জন্য বেকিং সোডা ব্যবহার করুন।

¤ শু ক্লিনিংঃ জুতোর মধ্যে জমে থাকা ঘাম এবং ধুলোময়লা দূর করার জন্য, জলে বেকিং সোডা মিশিয়ে ধুয়ে নিন।

¤ দাঁত পরিষ্কার করার জন্যঃ যাদের দাঁত হলুদ কিংবা ছোপছোপ, তারা বেকিং সোডা দাঁতে ঘষে মুখ ধুয়ে নিন।

¤ আন্ডারআর্ম কালো দাগ দূর করার জন্যঃ স্নানের এক ঘন্টা আগে সামান্য পরিমাণ বেকিং সোডা বগলে লাগিয়ে রাখুন।

¤ ফ্রিজ এবং মাইক্রোআভেন ক্লিনিংঃ সামান্য বেকিং সোডা দিয়ে ফ্রিজ এবং মাইক্রোআভেন পরিষ্কার করলে দাগমুক্ত এবং জীবাণুমুক্ত রাখা যাবে।

¤ মাথার খুসকি দূর করার জন্যঃ শ্যাম্পু করার পনেরো মিনিট আগে মাথায় বেকিং সোডা মেখে নিন।

¤ নখ পরিষ্কারঃ যাদের হাত এবং পায়ের নখ হলুদ কিংবা বিবর্ণ হয়ে গেছে, তারা বেকিং সোডা ঘষে উপকার পাবেন।

সুগন্ধী গৃহকোণ

আপনার বাসস্থানটি কি যথেষ্ট স্ট্রেসমুক্ত করছে আপনাকে? যেখানে থাকেন সেই জায়গাটির পরিচ্ছন্নতাই কিন্তু শেষ কথা নয়। ঘরের পরিবেশ সুন্দর করতে সুগন্ধীরও কিন্তু একটি বিশেষ ভূমিকা আছে। নিমেষে আপনাকে রিফ্রেশ করতে সাহায্য করে সুগন্ধী পরিবেশ। তাই বর্ষায় ক্ষতি হয়ে যাওয়া ইন্টিরিয়র-এ আনুন কিছু নতুনত্বের ছোঁয়া। পুরোনো কার্পেট, ফাংগাস লাগা দেয়াল, পেট্‌স-এর পরিচ্ছন্নতা, ডাস্টবিন সাফাই– সবই প্রয়োজন হয় এই সময়টায়, যখন একঘেয়ে বর্ষার ময়েশ্চার আপনার ঘরের অভ্যন্তরকেও স্যাঁতসেতে করে তুলেছে।

অনেকেই বাড়ির পরিচ্ছন্নতায় মন দেন কিন্তু ঘরের ভিতরের ভ্যাপসা গন্ধটা থেকেই যায়। এই সমস্যা কাটাতে অ্যারোমা ক্যান্ডেল্স, ধূপ, রুম ফ্রেশনার ব্যবহার করতে হবে। এর ফলে অভ্যন্তরে এক ধরনের ফ্রেশনেস আসবে, যা আপনার মনকে প্রসন্নতা দেবে।

কাঠের ফার্নিচারে স্যাঁতসেতে ভাব থেকে যায় বর্ষা বিদায় নেওয়ার পরও। আজকাল অনেকেই ল্যামিনেটেড ফার্নিচার ব্যবহার করছেন, যাতে এই সমস্যা থাকে না। ফলে ঘুন ধরা বা সময়ে সময়ে ফার্নিচার পলিশ করার সমস্যাও পোহাতে হয় না।

ঘর ফ্রেশ রাখার টিপস

  • ঘরের ভেন্টিলেশন যেন সঠিক থাকে, সেদিকে খেয়াল রাখুন– এর ফলে ঘরের ভ্যাপসা গন্ধ অনেকটাই কেটে যাবে। দিনের বেশ কিছুটা সময় ঘরের দরজা জানলা খোলা রাখুন, ঘরে যেন পর্যাপ্ত আলো-বাতাস খেলে
  •  সুগন্ধী রুম ফ্রেশনার, ধূপ, পটপৗরি প্রভৃতি বেডরুম বা লিভিংরুম-এ রাখুন, কিচেনে নয়
  •  কার্পেট ফ্রেশ করার জন্য এর উপর ট্যালকম পাউডার ছড়িয়ে, কিছুক্ষণ রাখার পর ভ্যাকুম ক্লিনার দিয়ে পরিষ্কার করুন
  •  কাপড়জামা থেকে বর্ষাকালে দুর্গন্ধ বেরোয়। তাই ধোয়ার পর এগুলিকে ফ্যাব্রিক রিফ্রেশার দিয়ে সুগন্ধী করে তুলুন। এর ফলে কাপড়জামা মোলায়েম তো থাকবেই, সেই সঙ্গে ফ্রেশও থাকবে
  •  বাড়ির আসবাব কলিন বা অন্য কোনও ক্লিনার দিয়ে পরিষ্কার করুন। পুরোনো কাঠের ফার্নিচার থাকলে একবার পলিশ করিয়ে নিন, না হলে স্যাঁতসেতে ফার্নিচারে ঘুণ ধরবে
  • বিছানার চাদর বালিশ রোদে দিন, বাথরুমে ফিনাইল ও ন্যাপথালিন বল্স দিন
  • রুম-স্প্রে হিসাবে ল্যাভেন্ডার, লেমন, ক্লোভ প্রভৃতি ফ্র্যাগরেন্স বাছুন। এই ধরনের গন্ধ দীর্ঘস্থায়ী হয় ও ঘর সুগন্ধিত রাখে

ঘরোয়া উপায়ে ফ্রেশনেস

ঘরের ভ্যাপসা গন্ধ থেকে মুক্তি পেতে, আপনি কয়েকটি ঘরোয়া পদ্ধতিও অবলম্বন করতে পারেন।

  • আলমারিতে নিমপাতা রাখুন। এর ফলে কাপড়-জামায় ভ্যাপসা গন্ধ হবে না
  • লেবু আধাআধি কেটে একটি বাটিতে করে ঘরের কোণে রেখে দিন
  • কর্পূরদানিতে কর্পূর জ্বেলে দিন। এই সময় দরজা-জানলা বন্ধ রাখুন যাতে কর্পূরের গন্ধ ঘরে ছড়িয়ে পড়ে
  • বাড়িতে পটপৗরি বানানোর জন্য কোনও সুগন্ধী ফুলের পাপড়ি অল্প জলে ফুটিয়ে নিন। ফুলের গন্ধ ঘরে নিমেষে ছড়িয়ে পড়বে। ফুলের বদলে একই ভাবে লেবুর খোসা, লবঙ্গ বা দারুচিনি ব্যবহার করতে পারেন ঘরে ফ্রেশনেস আনার জন্য
পড়ার জন্য সীমাহীন গল্প-নিবন্ধসাবস্ক্রাইব