‘লেখাপড়া করে যে, গাড়িঘোড়া চড়ে সে’-- এমন প্রবাদ শুনতে শুনতে বড়ো হয়েছি আমরা। অর্থাৎ, শিক্ষালাভের মাধ্যমেই যে জীবনে সাফল্যলাভ করা যায়, এই সারমর্মটুকু ছোটোবেলাতেই মাথায় গেঁথে দিতে চেয়েছেন আমাদের মা-বাবা কিংবা শুভাকাঙক্ষী গুরুজনেরা।
আসলে, সন্তানকে উচ্চশিক্ষিত করে তোলা কিংবা সঠিক শিক্ষাদানের জন্য যে-ভাবে কঠিন পরিশ্রম করতে হয় বাবা-মাকে এবং যে-পরিমাণ অর্থের জোগান দিতে হয় তাদের, তা যাতে সার্থকতালাভ করে,– সেই বিষয়টিই নানা কথায় স্মরণ করিয়ে দিতে চান সন্তানকে। অবশ্য, সন্তানের বোধবুদ্ধি হওয়ার পর তবেই তারা মা-বাবার পরামর্শ মেনে চলতে চেষ্টা করবে কিন্তু মা-বাবাকে দায়িত্ব পালন করতে হবে সন্তান জন্মলাভের পর থেকেই।
আধুনিক সমাজব্যবস্থায় শিক্ষার ধরন বদলেছে। তাই মা-বাবারাও চিন্তাধারার পরিবর্তন আনতে বাধ্য হয়েছেন। এখন বাংলা মাধ্যমের তুলনায় ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে লেখাপড়া ভালো হয়, এমন ধারণা থেকে ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে পড়ানোর প্রবণতা বাড়ছে। তাছাড়া ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে পড়লে ইংরেজি ভাষাটা ভালো ভাবে র৫ করতে পারবে এবং পৃথিবীর যে-কোনও প্রান্তে কর্মজীবনকে সাফল্যমন্ডিত করতে পারবে, এমন ধারণাও তৈরি হয়েছে অভিভাবকদের মনে। অপ্রিয় হলেও, হয়তো কথাটা সত্যি। তাই ইংরেজি মাধ্যম স্কুুলের চাহিদা বাড়ছে এবং এই সুযোগে স্কুল কর্তৃপক্ষও পঠনপাঠনের জন্য আর্থিক বোঝা চাপিয়ে চলেছে অভিভাবকদের ওপর। আর সন্তানের শিক্ষাখাতে খরচ হওয়া এই বিপুল পরিমাণ অর্থের জোগান দিতে হিমসিম খাচ্ছেন মা-বাবারা। কিন্তু যদি পরিকল্পনামাফিক ব্যয়বরাদ্দ করা যায় সন্তানের শিক্ষাখাতে, তাহলে আর্থিক ঝামেলায় পড়ার সম্ভাবনা কমবে। যেমন অনেকে বড়ো কোনও স্কুলে ছেলেমেয়েকে ভর্তি করিয়ে দুই-তিন ক্লাস পড়ানোর পর আর আর্থিক বোঝা না নিতে পেরে ওই স্কুল থেকে ছাড়িয়ে নেন। আবার অনেক পরিবারে, বিশেষকরে গ্রাম বা মফস্সলের কিছু অভিভাবক টাকাপয়সা না জমিয়ে ছেলেমেয়েকে পড়াতে গিয়ে বিফল হন। বাংলা মাধ্যম স্কুলে পড়িয়েও আট-দশ ক্লাস-এর বেশি আর টানতে পারেন না ছেলেমেয়ের লেখাপড়ার খরচ। ফলে, অর্ধসমা৫ থেকে যায় সন্তানের শিক্ষা। তাই এরা জীবনে তেমন প্রতিষ্ঠা পায় না। অতএব, সন্তানের শিক্ষাখাতে সঠিক ব্যয়বরাদ্দের জন্য আগাম পরিকল্পনা জরুরি।