একটি ছেলে আমাকে খুব ভালোবাসে কিন্তু আমি ওকে ভালোবাসি না

আমার বয়স ১৭ বছর। আমি এখন ক্লাস টুয়েলভ-এ পড়ি। একটি ছেলে আমাকে খুব ভালোবাসে এবং আমাকে বিয়ে করতে ইচ্ছুক। ভালোবাসাটা শুধুমাত্র ওর দিক থেকেই। কিন্তু আমি ওকে কিছুতেই মুখের উপর বলতে পারছি না যে আমি ওকে ভালোবাসি না। কারণ ও এতে মনে দুঃখ পাবে। অথচ আমি ওকে অন্ধকারে রাখতেও চাইছি না। এই অবস্থায় কী করা উচিত?

আপনার বয়স এখন খুবই কম। এখন পড়াশোনা এবং কেরিয়ার গঠনে মন দিন। যে ছেলেটির কথা জানিয়েছেন তাকে ভদ্র এবং স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিন ওকে আপনি ভালোবাসেন না। সে শুধুই আপনার বন্ধু। এখন প্রেম অথবা বিয়ের বয়স আপনার নয়, এমনকী উদ্দেশ্যহীন ভাবে ঘুরে বেড়াবারও কোনও যুক্তি নেই। সুতরাং আপনার উপর কোনওরকম আশা রাখতে ছেলেটিকে বারণ করুন আর না মানলে এড়িয়ে চলুন।

আরও পড়ুন 

আমি ২৩ বছরের যুবক, এমএ পড়ছি। কলেজেরই একটি মেয়েকে ভালোবাসতাম। আমি জানতাম মেয়েটিও আমাদের সম্পর্কটা নিয়ে যথেষ্ট সিরিয়াস। কিন্তু হঠাৎই মেয়েটি তার বাড়ি থেকে পছন্দ করে দেওয়া একটি ছেলেকে বিয়ে করে নিয়েছে। মেয়েটির এই ব্যবহারে মানসিক ভাবে আমি বিপর্যস্ত। মেয়েটিকে ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করলেও কিছুতেই ভুলতে পারছি না। ওর কথা মনে পড়লে আমি কোনও কাজেও মন দিতে পারি না। আমি এখন কী করব?

 মন থেকে কাউকে ভালোবাসলে তাকে মুছে ফেলা এত সহজ হয় না। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে স্মৃতির চাদরেও ধুলো জমতে শুরু করে। কাউকে ভোলা অবশ্যই কঠিন কিন্তু অসম্ভব নয়, তারপর যেখানে সেই ব্যক্তিটি অবিশ্বাসের কাজ করেছে।

নিজেকে পড়াশোনা, কেরিয়ার নিয়ে ব্যস্ত রাখলে ভোলাটা সহজ হবে। তাছাড়া দু’দিন পর আপনারও বিয়ে হবে, তখন পুরো ঘটনার স্মৃতিই ধীরে ধীরে আবছা হয়ে যাবে। তবে মনের দরজা বন্ধ রাখবেন না, খুবই কম বয়স আপনার। অচিরেই নতুন কোনও সম্পর্ক এসে পুরোনোকে ভাসিয়ে নিয়ে যাবে।

 

প্রক্সি

এয়ারপোর্ট থেকে কৌশিক কোম্পানির গাড়িতে যখন নতুন বাড়ির দরজায় এসে নামল, তখন বেলা গড়িয়ে গেছে। খুব ক্লান্ত না লাগলেও মনটা ভালো লাগছিল না। স্ত্রী রূপাকে সঙ্গে আনতে পারেনি।   ও নাঙ্গালেই বাপের বাড়িতে রয়ে গেছে। সাত মাস চলছে সুতরাং ওই অবস্থায় এই নতুন জায়গায় ওকে নিয়ে আসতে কৌশিক একেবারেই রাজি হয়নি।

একটা প্রোমোশন এবং ট্রান্সফার নিয়ে কৌশিক চণ্ডীগড় এসেছে। পঞ্জাবের নাঙ্গালেই কউশিকদেরও বাড়ি। ওখানেই ও বড়ো হয়েছে। অবশ্য চণ্ডীগড় আগেও বহুবার এসেছে তবে তখন হোটেলেই থেকেছে। এখন কোম্পানি ওকে বড়ো বাড়ি দিয়েছে।

গেট দিয়ে ঢুকতে ঢুকতে চারপাশে চোখ বুলিয়ে নিল কৌশিক। বাড়ির সামনে সুন্দর কেয়ারি করা সবুজ লন। নানারকম ফুলের গাছ লাগানো। দুটো বড়ো গাছও চোখে পড়ল তবে কীসের গাছ বুঝতে পারল না কৌশিক। ওর গাড়ির ড্রাইভারই এগিয়ে এসে দরজার তালা খুলে দিল পকেট থেকে চাবি বার করে আর চাবিটা কৌশিকের হাতে ধরাল।

ততক্ষণে বাইরে অন্ধকার নেমেছে। ড্রাইভার গাড়ি থেকে কৌশিকের দুটো সুটকেস নামিয়ে এনে বাড়ির ভিতরে রেখে ওর অনুমতি নিয়ে গাড়ি নিয়ে চলে গেল। কৌশিক ওর মুখেই জেনে নিল পরের দিন অফিস যাওয়ার জন্য ও-ই আবার গাড়ি নিয়ে নটায় উপস্থিত হবে।

কোম্পানির দেওয়া ফার্নিশড ফ্ল্যাটে প্রয়োজনের সবকিছুই রয়েছে সেটা কৌশিক আগেই খবর নিয়ে নিয়েছিল তাই জামাকাপড় এবং টুকিটাকি কয়েকটা জিনিস ছাড়া আর কিছুই সঙ্গে করে আনেনি। আর চণ্ডীগড় বড়ো শহর সুতরাং দরকারে সবকিছুই কিনে নেওয়া যাবে। সোফায় গা এলিয়ে চোখ বুজল কৌশিক। এক কাপ চা হলে মন্দ হতো না। রূপার কথা মনে হল। কী জানি কি করছে ও এখন। মোবাইলটা বার করে রূপার নম্বর মেলাতে যাবে বাইরের দরজায় টোকা দেওয়ার আওয়াজ কানে গেল। উঠে এসে দরজা খুলতেই দেখল তিরিশ একত্রিশ বছর বয়সি এক মহিলা দরজায় দাঁড়িয়ে আছেন।

জিজ্ঞাসু দৃষ্টি তুলে ধরতেই ভদ্রমহিলা মৃদু হেসে বললেন, ‘ভিতরে আসতে পারি? আমি আপনার উলটো দিকের বাড়িতেই থাকি। কৌশিক তাকে ভিতরে আসতে বলে আবার সোফায় এসে বসল।

মহিলা উলটো দিকের সোফায় এসে বসলন, ‘আমার নাম শ্রীপর্ণা। স্বামী এবং দু’বছরের মেয়ের সঙ্গে থাকি। বাড়িওয়ালা আমাদের পরিচিত। ওনার কাছেই শুনলাম আপনারা আসছেন। একে শহরে আপনারা নতুন, তারপর ঠিক উলটো দিকে থাকি, কী দরকার না দরকার তাই খোঁজ নিতে এলাম।’

কৌশিক কিছুটা ভরসা পেল। রূপার অনুপস্থিতিতে কেউ তো একজন রইল খোঁজখবর নেওয়ার। মুখে হাসি এনে বলল, ‘আপনারা নয়, আমি এখন একাই এসেছি। রূপা, আমার স্ত্রী প্রেগন্যান্ট। দুই আড়াই মাসে ডেলিভারি হয়ে গেলে তারপর এখানে নিয়ে আসব।’

এতক্ষণে কৌশিক লক্ষ্য করল, মহিলার হাতে একটি প্লাস্টিকের ব্যাগ রয়েছে। ওর নজর ব্যাগটির উপর পড়াতে সলজ্জ ভঙ্গিতে শ্রীপর্ণা বলে ওঠে, ‘নতুন জায়গায় এসেছেন, তাই ভাবলাম বাড়ি থেকে একটু চা বানিয়ে নিয়ে যাই’, এই বলে ব্যাগ থেকে ফ্লাস্ক ও দুটি কাপ বার করে টেবিলে নামিয়ে রেখে চা ঢালতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল।

কৌশিকের দিকে চায়ের কাপটা এগিয়ে দিতে দিতে শ্রীপর্ণা বলল, ‘দেখুন, আমার বানানো চা আবার আপনার পছন্দ হয় কিনা? আমার স্বামী রজত আবার আমার বানানো চা খুব ভালোবাসে খেতে।’

শ্রীপর্ণার অফুরন্ত কথার তোড়ে কৌশিক কী বলবে ভেবে পেল না। মনে হল ভদ্রমহিলা একটু বেশি কথা বলেন। তাও ভদ্রতা করে বলল, ‘আপনার হাতের চা কিন্তু এই তৃষ্ণার্ত-কে খুবই তৃপ্তি দিল। আপনি চা না আনলে আমাকেই রান্নাঘরে গিয়ে কী ব্যবস্থা রয়েছে দেখতে হতো। আপনি বাঁচালেন।’

‘আরে না-না। গতকালই দেখলাম নেমপ্লেট বদলে নতুন লাগানো হচ্ছে। দেখলাম বাঙালি। তখনই ঠিক করে নিয়েছিলাম এলেই আলাপ করব। কর্মসূত্রে আমার স্বামীও এখানে বহুদিন কাটিয়ে ফেললেন। আমি আবার অতশত ফর্মালিটি মেনে চলতে পারি না। নতুন এসেছেন তাই আলাপ করতে চলে এলাম। দেখুন, একসঙ্গে বসে চা খেতে খেতে আলাপ পরিচয়ের পর্বটাও কেমন সারা হয়ে গেল’, এক নিঃশ্বাসে বলে ফেলে শ্রীপর্ণা।

‘ধন্যবাদ, আমার ভালোই হল আপনি নিজে এসেই আলাপ করে নিলেন। আমার গিয়ে আলাপ জমানোর কষ্টটা লাঘব হল। রূপার আপনার সঙ্গে আলাপ করে খুব ভালো লাগবে।’

সঙ্গে সঙ্গে শ্রীপর্ণা বলে উঠল, ‘কাল রোববার, রজতের ছুটি। লাঞ্চ আমাদের সঙ্গে করবেন। কোনও অজুহাত শুনব না। আর আমি গিয়ে রাতের খাবার পাঠিয়ে দিচ্ছি। আমার মেড এসে আপনাকে দিয়ে যাবে। বাইরের গেট-টা খোলা রাখবেন।’

স্ত্রী-র অনুপস্থিতিতে কৌশিকের মনটা খুব খারাপ লাগছিল, তবু শ্রীপর্ণা আসাতে এবং ওর পরিবারের সঙ্গে আলাপ হবে এই আশায়, কৌশিকের ক্লান্ত চোখ, বিছানায় পড়তেই মুহূর্তে বুজে এল।

পরের দিন লাঞ্চের সময় কৌশিক উপস্থিত হল শ্রীপর্ণাদের বাড়িতে। রজত-ই দরজা খুলে বেরিয়ে এসে ওকে বাড়ির ভিতর নিয়ে গেল। খুবই মিশুকে এবং সরল প্রকৃতির ছেলেটি-র সঙ্গে আলাপ জমতেই কৌশিকের ভালো লেগে গেল ওকে। ওদের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা বাড়তেও বেশি সময় লাগল না। এই সুবাদে শ্রীপর্ণাদের বাড়ি ঘনঘন যাতায়াতও শুরু হয়ে গেল কৌশিকের। রজতেরও এ ব্যাপারে কোনও আপত্তি বা মাথাব্যথা ছিল না কারণ ও জানত শ্রীপর্ণা এরকমই। সুতরাং চেনা পরিচিতদের যাতায়াত লেগেই থাকত বাড়িতে।

শ্রীপর্ণা বরাবরই উচ্ছল এবং চঞ্চল স্বভাবের। নিজের সাজগোজ, পোশাক এই নিয়েই বেশিরভাগ সময়টা কাটাত ও। ফলে ওর সমবয়সি পরপুরুষরা সহজেই ওর প্রতি আকৃষ্ট হতো এবং ওদের মুখ থেকে নিজের প্রশংসা শুনতে ভালো লাগত শ্রীপর্ণার। অথচ রজতের মুখ থেকে কোনওদিন নিজের সম্পর্কে একটা প্রশংসাও শ্রীপর্ণা শোনেনি। এই নিয়ে রজতের প্রতি ওর ক্ষোভের শেষ ছিল না।

কৌশিকও বাড়িতে একা একা হাঁপিয়ে উঠছিল। সারদিন অফিসে কাজের পর বাড়ি ফিরে রূপার সঙ্গে ফোনে কথা সেরে পূর্ণ বিরতি। কিছু করার থাকত না। অফিসের ক্যান্টিন থেকেই খাবার প্যাক করিয়ে ড্রাইভার বাড়ি পৌঁছে দিয়ে যেত। চা, ব্রেড টুকিটাকি একটু-আধটু রান্নাঘরে নিজেই বানিয়ে নিত। শ্রীপর্ণাই ঝোড়ো হাওয়ার মতো সময় অসময় নেই পৌঁছে যেত কৌশিকের এই একাকিত্ব দূর করতে।

ওর প্রতি শ্রীপর্ণার দুর্বলতা বুঝতে অসুবিধা হতো না কৌশিকের সুতরাং সেও এর সদ্ব্যবহার করতে বিন্দুমাত্র দ্বিধা করত না। শ্রীপর্ণা বাড়িতে এলেই বলত, ‘দারুণ সুন্দর লাগছে তোমাকে দেখতে।’ আর ওমনি ঝলমল করে উঠতে শ্রীপর্ণার মুখমণ্ডল।

যখনই কৌশিকের বাড়িতে আসত শ্রীপর্ণা রোজই নতুন নতুন শাড়িতে সেজেগুজে। কখনও কৌশিককে নিজের মোবাইলটা ধরিয়ে ছবি তুলে দেওয়ার অনুরোধ করত আবার কখনও নিজেই পোজ দিয়ে সেলফি তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়ত।

একদিন হঠাৎই শ্রীপর্ণা কৌশিককে বলল, ‘আমাকে তোমার বউয়ের ছবি দেখাবে?’

কৌশিক মোবাইল খুলে রূপার ছবি ওর সামনে ধরতেই শ্রীপর্ণা বলল, ‘বাঃ বেশ সুন্দরী তো তবে আমার মতো নয়।’

‘হ্যাঁ, ও খুব সাদাসিধে। সাজগোজ করে না বললেই চলে’, কৌশিক লক্ষ্য করল ওর কথা শুনে শ্রীপর্ণা বেশ খুশি হল।

কৌশিক বাড়িঘর পরিষ্কার করানো এবং রোজকার কাচাকুচির জন্য একটি লোক রেখে দিল। সারাদিন থেকে কৌশিক আসতেই ও বাড়ি চলে যেত। আবার পরের দিন সকালে হাজিরা দিত। মাঝেমধ্যে শ্রীপর্ণা এসে লোকটিকে দিয়ে ভালো করে সারাবাড়ি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পরিষ্কার করিয়ে কৌশিকের কোয়ার্টারটা ঝকঝকে করে তুলত।

নিজের বাড়িতেও মেয়েকে দেখাশোনার জন্য সবসময়ের একজন আয়া রেখে দিয়েছিল। কৌশিকের ওর বাড়িতে যাওয়ার প্রয়োজন হলেই কোনও না কোনও কাজে মেয়েটিকে বাজারে পাঠিয়ে দিত শ্রীপর্ণা। রজতও সাড়ে নটা-দশটার আগে বাড়ি ফিরত না। সুতরাং বেশ অনেকটা সময় একসঙ্গেই কাটাত ওরা। একে অপরের প্রতি দুর্নিবার আকর্ষণ থাকা সত্ত্বেও মর্যাদার সীমা লঙঘন করার সাহস কেউ-ই দেখায়নি। ওদের মধ্যে দৈহিক সম্পর্ক না হয়ে থাকলেও মাঝে মাঝেই কৌশিকের একাকীত্ব ওকে শালীনতার বেড়া ভেঙে দিতে প্ররোচিত করত। শ্রীপর্ণাও হয়তো কৌশিকের এই চাহিদার আগুন অনুভব করত কিন্তু কেন জানি না ভবিষ্যতের কোনও শুভ সময়ের অপেক্ষায় এই মিলনকে দুজনেই স্থগিত রেখে দিয়েছিল।

রজতের উপেক্ষাই হয়তো শ্রীপর্ণাকে ধীরে ধীরে কৗশিকের দিকে ঠেলে দিচ্ছিল। সমান্য সুযোগ পেলেই ও কৌশিকের বাড়িতে পৌঁছে যেত এবং সেবা যত্নের কোনও ত্রুটি রাখত না। নিজের ব্যবহার দিয়ে যেন পরপুরুষটিকে প্রলুব্ধ করারই চেষ্টা করত ও।

একদিন সন্ধেবেলা অফিস থেকে বাড়ি ফিরে কৌশিক দেখল ওর ড্রয়িং রুমের সেন্টার টেবিলে ফুলদানিতে ফুল সাজানো রয়েছে। জিজ্ঞাসা করতেই কাজের লোকটি বলল, ‘মেম সাহেব এসেছিলেন। উনি এই ফুলগুলো রেখে গেছেন। বলেছেন ওনাকে ফোন করতে।’

কৌশিক ফোন করতেই শ্রীপর্ণার গলা ভেসে এল। ‘ধন্যবাদ শ্রীপর্ণা। হঠাৎ আজ ফুল রেখে এসেছ কেন?’

‘কৌশিক, যেদিন দেখবে ফুলদানিতে ফুল সাজিয়ে এসেছি বুঝবে রজত বাড়িতে নেই এবং ফিরতেও দেরি হবে। তুমি বিনা দ্বিধায় আসতে পারো।’

কৌশিক অফিসের জামাকাপড় না ছেড়েই কাজের লোক-কে ছুটি দিয়ে দিল। দরজায় তালা লাগিয়ে শ্রীপর্ণাদের বাড়ির দিকে পা বাড়াল। আকাশি নীল রঙের শাড়িতে অপূর্ব লাগছিল শ্রীপর্ণাকে। আজ যেন একটু বেশি-ই শৃঙ্গার করেছে ও। কৌশিককে দুই বাহুর আলিঙ্গনে অভ্যর্থনা জানিয়ে ড্রয়িংরুমে এনে বসাল। উচ্ছল শ্রীপর্ণার মায়াবী দুই চোখে কৌশিকের নিজেকে হারিয়ে ফেলতে ইচ্ছে করছিল।

শ্রীপর্ণা জড়িয়ে ধরল কৌশিকের দুই হাত, ‘কৌশিক, তোমার সঙ্গে বন্ধুত্ব করে আমি যে কতটা আনন্দ পেয়েছি তা তোমাকে বলে বোঝাতে পারব না।’

‘আজ তোমাকে দারুণ সুন্দর লাগছে’, কৌশিক নিজেকে রোধ করতে পারল না, ‘এত সুন্দর সেজেছ, অবশ্য না সেজেও তোমাকে সুন্দর লাগে।’

‘প্রশংসা করতে হলে তোমার থেকে শিখে যাওয়া উচিত। তুমি একটু বসো, টিভি-টা চালিয়ে দিয়ে যাচ্ছি। আমি চট্ করে চা বানিয়ে আনি। মশাইয়ের খাওয়া হয়নি নিশ্চয়ই, মুখটা একেবারে শুকিয়ে গেছে। আমি কিছু নিয়ে আসছি।’ রিমোট-টা কৌশিকের হাতে ধরিয়ে শ্রীপর্ণা ঘর থেকে বেরিয়ে গেল।

খানিকক্ষণ পরেই ট্রে-তে করে দুই কাপ চা এবং প্লেটে কিছু স্ন্যাক্স সাজিয়ে কৌশিকের সামনে টেবিল রেখে ওর পাশে সোফায় এসে বসল। ‘কৌশিক, আজ রাতে রজতের ফেরার কথা ছিল। ওকে দিল্লি যেতে হয়েছে অফিসের কাজে। একটু আগেই ফোন করে জানাল ওর ফিরতে কাল রাত হবে। আজ কাজ শেষ হয়নি।’

কৌশিকের মুখে চিন্তার ছায়া পড়ল, ‘তাহলে আজ রাতটা বহ্নিকে নিয়ে তোমাকে একা কাটাতে হবে?’

‘একা কোথায়? তাই তো তোমাকে আসতে বলেছি। মেয়ের আয়াকে বিকেলে ছুটি দিয়েছি। দুদিন ধরেই ও ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করতে যাবে বলছিল। সুযোগ যখন এসেই গেল… আমাদের কাছে কাল সন্ধে অবধি অফুরন্ত সময়। আমরা ইচ্ছেমতো এই সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে পারব। কৌশিক, তুমি নিশ্চয়ই এতদিনে বুঝতে পেরে গেছ আমি তোমাকে অসম্ভব ভালোবাসি।’

শ্রীপর্ণার মুখের কথা শেষ হতেই, কৌশিক নিজের হাত শ্রীপর্ণার বদ্ধমুঠি থেকে মুক্ত করে নিজেকে কিছুটা সরিয়ে আনল শ্রীপর্ণার উষ্ণ সান্নিধ্য থেকে। ওর বিস্ময়মিশ্রিত দৃষ্টি থেকে চোখ সরিয়ে কৌশিক বলল, ‘শ্রীপর্ণা, আমাদের উচিত একটু সিরিয়াস হওয়ার। তোমাকে আমি কিছু বোঝাতে চাই সেটা হয়তো তোমার ভালো নাও লাগতে পারে। দ্যাখো আমি বিবাহিত, রূপা আমাকে প্রচণ্ড ভালোবাসে। আর রজতের অনুপস্থিতির সুযোগ আমি কিছুতেই নিতে পারব না। ও আমার বন্ধু। আমি বুঝতে পারি আমার প্রতি তোমার একটা আকর্ষণ আছে সেটা আমিও কিছুটা প্রশ্রয় দিয়েছি। কিন্তু আমার অনুরোধ নিজেদের নিয়ন্ত্রণ করাটা খুব দরকার হয়ে পড়েছে এখন…’

কৌশিককে কথার মাঝেই থামিয়ে দেয় শ্রীপর্ণা, ‘কৌশিক, তুমি ভুল করছ। বি প্র্যাকটিকাল। আমি তোমার এবং তোমার স্ত্রীয়ের মধ্যে দেয়াল না তুলেও তো তোমার সঙ্গে প্রেম করতে পারি। আমাদের সম্পর্কটা গোপন থাকলেই হল। এতে অন্যায় বা কী?’

কথাগুলো বলতে বলতেই কিছু একটা ভাবল শ্রীপর্ণা। তারপর সামান্য হেসে বলল, ‘তুমি আমার থেকে বয়সে বড়ো কৌশিক আর এভাবে কেউ আমাকে কখনও বোঝায়নি। তোমাকে ভালোবেসে আর বন্ধুত্ব করে আমি অনেক কিছু পেয়েছি, শিখেছি সুতরাং এটার দরকার ছিল এবং থাকবেও। রজতকে বিয়ে করে স্ত্রীয়ের দায়িত্ব থেকে আমি কখনও পিছু হটিনি আর কখনও হটবও না কিন্তু ওকে কখনও ভালোবাসতে পারিনি আমি। জানো কৌশিক তোমরা সবাই বলো ও খুব সহজ সরল মানুষ। কিন্তু স্ত্রীকে ভালোবাসার ওর কাছে নাতো সময় আছে আর না ওর চিন্তাতেও এর কোনও গুরুত্ব আছে। স্ত্রীয়ের সুখ-সুবিধে দেখাটা যেমন স্বামীর কর্তব্য তেমন তার শারীরিক

সুখ-চাহিদা পূর্ণ করাটাও স্বামীরই দায়িত্ব’, বলতে বলতে শ্রীপর্ণা অন্যমনস্ক হয়ে পড়ে, চোখের কোণটা ওর চিকচিক করে ওঠে।

কৌশিক ওর হাতটা নিজের হাতে তুলে নেয়, ‘দেখো সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সব ঠিক হয়ে যাবে। আমি এখনও তোমার বন্ধু, ভবিষ্যতেও থাকব। আমার মনে সব সময় তোমার জন্য একটা বিশেষ জায়গা তোলা থাকবে।’

রূপার ডেলিভারির সময় দশ দিনের ছুটি নিয়ে কৌশিক নাঙ্গাল চলে গেল। কন্যাসন্তানের জন্ম দেওয়ার পর রূপাকে ওর বাপের বাড়িতে রেখে কৌশিক চণ্ডীগড় ফিরে এল। শ্রীপর্ণাদের বাড়ি

আসা-যাওয়া আগের মতোই বজায় থাকল কিন্তু দু’জনের ব্যবহার এখন অনেক বেশি সংযত। অফিসের কাজেও অনেকটাই ব্যস্ততা বেড়ে গেল কৗশিকের।

মেয়ে জন্মাবার প্রায় দেড়মাস পর রূপার ভাই এসে বোনকে কৌশিকের বাড়ি ছেড়ে গেল। রূপার শরীরের জন্য ওর একটু যত্নের প্রয়োজন ছিল। দিনের বেলা শ্রীপর্ণা এসে রূপার হাতে হাতে অনেকটাই সাহায্য করে দিত। এটা-ওটা রান্না করে এনে রূপাকে খাইয়ে যেত। নতুন জায়গায় এসে রূপার প্রথম প্রথম খারাপ লাগলেও শ্রীপর্ণা ধীরে ধীরে ওর মন জয় করে নিল। ওদের বন্ধুত্ব দিনেদিনে আরও গাঢ় হয়ে উঠল। শ্রীপর্ণার মুখেই রূপা জানতে পারল যে মাত্র কুড়ি বছর পেরোতে না পেরোতেই ওর রজতের সঙ্গে বিয়ে হয়ে যায়। ফলে বিয়ের আগে কোনও পুরুষের সঙ্গে আলাপ-পরিচয় হওয়ার সুযোগই ঘটেনি শ্রীপর্ণার জীবনে।

একদিন দুই বন্ধুতে কথা হচ্ছিল স্বামী, সংসার ইত্যাদি নিয়ে। শ্রীপর্ণা খুব সহজ ভাবেই রূপাকে বলল, ‘তোমার স্বামীকে আমার খুব ভালে লাগে। উনি এতটাই দয়ালু আর মানুষকে ভালোবাসার ক্ষমতা রাখেন যে, যে-কেউই সহজে ওনার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়বে। তোমাদের দুজনের জুটি ভগবান অনেক সময় ধরে খুব ধৈর্য নিয়ে বানিয়েছেন। তোমাদের দুজনকে একসঙ্গে দেখলে ঈর্ষা হয়।’

শ্রীপর্ণার কথার উত্তরে রূপা সামান্য হাসল, ‘ঠিকই বলেছ, আগের জন্মে সত্যিই কোনও ভালো কাজ করেছিলাম যার পুরস্কার হিসেবে কৌশিককে জীবনসঙ্গী হিসাবে পেয়েছি।’

রূপা চণ্ডীগড়ে আসার পর এই দুটো পরিবারের মধ্যে অন্তরঙ্গতা আগের থেকেও অনেক বেড়ে গেল। বাচ্চা, বড়ো সকলের জন্মদিনে, বিবাহবার্ষিকী সবকিছুই দুটো পরিবারের মধ্যে ধূমধাম করে পালন করতে শুরু করল ওরা। হইহই করে একসঙ্গে খাওয়াদাওয়া, পিকনিকে যাওয়া ইত্যাদি লেগেই থাকত।

ডেলিভারির পর ধীরে ধীরে রূপার শরীরও আগের থেকে অনেক সুস্থ হয়ে উঠল। রজতের সামনে রূপা সবসময় শ্রীপর্ণার প্রশংসা করত। রজতও নিজের স্ত্রীয়ের প্রশংসায় গর্ববোধ করত। নিজেও স্বীকার করত, ‘পর্ণা বরাবরই এরকমই। সবাইকে সাহায্য করে ঠিকই কিন্তু ধন্যবাদ পাবার আশা ও কখনও রাখে না।’

রূপার কাছে রজতকে প্রথমবার নিজের প্রশংসা করতে শুনে শ্রীপর্ণার আনন্দের সীমা থাকে না। কৌশিককে ফোন করে বলে, ‘জানো আজ প্রথমবার রজত রূপার কাছে আমার প্রশংসা করেছে। এই আনন্দের জন্য একটা পার্টি তো হওয়া চাই-ই চাই। এই উপলক্ষ্যে তোমরা আজ সন্ধেবেলায় আমাদের বাড়িতে চা খেতে আসবে। আমি রূপাকে ফোন করে দেব।’ কৌশিকও শ্রীপর্ণার প্রস্তাবে রাজি হয়ে যায়।

একদিন অফিস ফেরত বাড়িতে এসে কৌশিক দেখল ড্রয়িংরুমে টেবিলের উপর ফুলদানিতে টাটকা ফুল রাখা রয়েছে। রূপাকে জিজ্ঞেস করতে ও বলল, ‘শ্রীপর্ণা এসেছিল, অনেকক্ষণ বসে আড্ডা মেরে চা খেয়ে একটু আগেই বাড়ি গেল। ওর আমার জন্য ফুল আনতে ইচ্ছে করছিল বলে ফুল নিয়ে এসে ফুলদানিতে সাজিয়ে রাখল।’

কৌশিক, ফুল আনার কারণ আগেই বুঝে গিয়েছিল। রজত বাড়ি নেই তাই শ্রীপর্ণা কৌশিকের সঙ্গে ওর বাড়িতে একা দেখা করতে চায়। রূপার সঙ্গে বসে চা আর জলখাবার খেয়ে হাতমুখ ধুয়ে নিল কৌশিক। ঘুমন্ত মেয়েকে একটু আদর করে রূপাকে বলল, ‘অফিসের কাজে আমাকে একটু বেরোতে হবে। এক দেড় ঘন্টার মধ্যে ফিরে আসব।’

শ্রীপর্ণাদের বাড়ি পৌঁছে কৌশিক দেখল ড্রয়িংরুমে বসে শ্রীপর্ণা ওরই অপেক্ষা করছে। কৌশিক আসতেই ওর গলা জড়িয়ে ধরল শ্রীপর্ণা, ‘আজ কতদিন পর তোমাকে এখানে একা ডেকে আনলাম। রজত শহরের বাইরে গেছে কাজে সুতরাং তোমার সঙ্গে একান্তে সময় কাটাবার এটাই সুযোগ। তুমি একটু বসো, আমি চা বানিয়ে আনি’, বলে শ্রীপর্ণা ঘর থেকে বেরিয়ে গেল।

কৌশিক সিলিং-এর দিকে তাকিয়ে সোফায় হেলান দিল। মনের মধ্যে ঝড় চলছিল কৌশিকের। রূপাকে মিথ্যে বলে ও শ্রীপর্ণার সঙ্গে দেখা করতে এসেছে। রূপার প্রতি কেন ও এই অন্যায় করছে? আবার নিজের মনকেই বোঝায় কৌশিক, লুকিয়ে শ্রীপর্ণার সঙ্গে দেখা করতে এসেছে ঠিকই কিন্তু অন্যায় কাজ বা অশালীন আচরণ কোনওটাই ও করছে না। সুতরাং কেন শুধুশুধু নিজেকে দোষারোপ করা?

চিন্তায় এতটাই আচ্ছন্ন হয়ে ছিল কৌশিক, টের পায়নি কখন শ্রীপর্ণা পাশে এসে বসেছে। ঘোর ভাঙে শ্রীপর্ণার কথায়, ‘কৌশিক কী এত ভাবছ? আজ কিন্তু আমি তোমাকে ছাড়ছি না। তোমার সঙ্গে আজ আমি চূড়ান্ত সুখ অনুভব করতে চাই। প্লিজ আজ না কোরো না। রজতের ফিরতে রাত হবে।’

স্তম্ভিত হয়ে যায় কৌশিক। স্নায়ুশক্তি লোপ পায় ওর। বোধজ্ঞান সব লুপ্ত হতে থাকে। কলের পুতুলের মতন শ্রীপর্ণার হাত ধরে ওদের বেডরুমে গিয়ে ঢোকে। বিছানায় গিয়ে বসে কৌশিক। হঠাৎ-ই দুজনকে চমকে দিয়ে শ্রীপর্ণার মোবাইলটা বেজে ওঠে। শ্রীপর্ণা ফোনটা দেখে বলে, ‘রূপার ফোন।’

‘শ্রীপর্ণা, তুমি বাড়ি আছ? কৌশিক অফিসের কাজে একটু বেরিয়েছে। খুব বোর হচ্ছি, ভাবছি মেয়েকে নিয়ে তোমার কাছে চলে আসি।’

শ্রীপর্ণা উত্তর দিল, ‘রজতও বাড়ি নেই। আমি খাবার বানাচ্ছিলাম। তুমি বরং চলে এস আর রাতের খাবারও এখানেই খেয়ে নিও।’

ফোন নামিয়ে শ্রীপর্ণা কৌশিকের দিকে তাকায়। ওর সারা মুখে হাতাশার কালো মেঘ নিমেষে ছড়িয়ে পড়ে। কৌশিকের সংবিৎ ফেরে। ও তাড়াতাড়ি বেরিয়ে আসে শ্রীপর্ণার বাড়ি থেকে। কিছুটা এগিয়ে গিয়ে পার্কের একটা বেঞ্চিতে গিয়ে বসে। গত এক ঘন্টার ঘটনাক্রম ভিড় করে আসে ওর চোখের সামনে।

কৌশিক আর শ্রীপর্ণা। দুজনের ভালোবাসার অভিব্যক্তি একেবারে আলাদা। ভালোবাসার সঙ্গে শ্রীপর্ণার চাহিদা দৈহিক মিলনসুখের কিন্তু কৌশিকের কাছে মনের মিলটাই চরম আত্মতৃপ্তির উপকরণ। বৈবাহিক সুখের চরম সীমায় কৌশিক রূপার সঙ্গে আগেই পৌঁছে গিয়েছিল সুতরাং নতুন স্বাদ গ্রহণ করার ইচ্ছা বা মানসিকতা কোনওটাই তার ছিল না।

অথচ শ্রীপর্ণার প্রতি রূঢ় ব্যবহার কিছুতেই করা সম্ভব ছিল না কৌশিকের। ওর জীবনের এই শূন্যতা কৌশিকের অজানা ছিল না। ও এও জানত শ্রীপর্ণা রূপাকে নিজের ছোটো বোনের মতোই স্নেহ করে, সেখানে কোনও ফাঁকি নেই। কৌশিকের একটা ভুল পদক্ষেপ শ্রীপর্ণা-রূপার সম্পর্ক খারাপ করে দিতে পারে একথা ভালো করেই জানত ও। নিজের উপরেই হাসি পায় কৌশিকের। দুই নৌকায় পা দিয়ে এভাবে কতদিন চালাতে পারবে সেটা কৌশিক নিজেও আন্দাজ করতে পারে না।

সেদিন কৌশিক আর রূপার বিবাহবার্ষিকী ছিল। অফিস থেকে বাড়ি ফিরে কৌশিক দেখল রূপা সুন্দর সেজেগুজে রয়েছে।

‘বাঃ আজ খুব সুন্দর লাগছে তোমাকে। রোজ কেন এভাবে সেজে থাকো না?’ কৌশিক প্রশ্ন করে রূপাকে।

‘তুমি বোধহয় ভুলে গেছ আজ আমাদের ম্যারেজ অ্যানিভার্সারি। আজ আমরা বাইরে ডিনার করব’, রূপা বলে।

‘আমি ভুলিনি। ভেবেই রেখেছি বাইরেই ডিনার সারব। তুমি বরং একটা কাজ করো, শ্রীপর্ণা আর রজতকেও আমাদের সঙ্গে যাওয়ার জন্য বলে দাও।’

শ্রীপর্ণাকে ফোন করতেই শ্রীপর্ণা রাজি হয়ে যায় তবে রজতের অফিসের কাজ থাকায় ওরা তিনজনেই বিবাহবার্ষিকী সেলিব্রেট করে রাতে বাড়ি ফিরে আসে। আসার পথে শ্রীপর্ণাকে ওর বাড়ির দরজায় নামিয়ে দেয় কৌশিক।

পরের রবিবার রূপা, রজতকে ফোন করে, রজত আর শ্রীপর্ণাকে ডিনারে নিমন্ত্রণ জানিয়ে বলে, ‘দাদা, আপনি শ্রীপর্ণাকে নিয়ে রাতের খাবার আমাদের সঙ্গেই খাবেন। আপনি আমাদের বিবাহবার্ষিকীর দিন আসতে পারেননি। রবিবার আপনাকে আসতেই হবে।’

শ্রীপর্ণাদের আসার দিনে রূপাকে সুন্দর করে সাজতে দেখে কৌশিক একটু অবাক হল কারণ সচরাচর রূপা সাদামাটা থাকতেই বেশি পছন্দ করত। অবশ্য ও কিছু জিজ্ঞাসা করল না। যথারীতি শ্রীপর্ণা আর রজত সময়ে পৌঁছে গেল কৌশিকদের বাড়িতে। অন্যদিনের মতোই সেজেগুজে অসাধারণ সুন্দর লাগছিল শ্রীপর্ণাকে। কিন্তু রূপার সামনে শ্রীপর্ণার প্রশংসা করাটা কৌশিকের উচিত মনে হল না। কৌশিক ওদেরকে অভ্যর্থনা জানিয়ে ড্রয়িংরুমে এনে বসাল। কিন্তু শ্রীপর্ণা নিজেকে সংযত রাখার কোনওরকম চেষ্টা না করেই কৌশিকের সামনে এসে জিজ্ঞেস করল, ‘বললে না তো আমাকে কীরকম লাগছে দেখতে?’

উত্তর দিতে ইচ্ছে করছিল না কৌশিকের, তবুও চাপা স্বরে বলল, ‘ভালো লাগছে।’

এরই মাঝে রূপা অতিথিদের জন্য শরবতের গেলাস নিয়ে ঘরে ঢুকল। সকলের হাতে গেলাস ধরাতে ধরাতে হঠাৎ-ই রজতের দিকে চোখ তুলে তাকিয়ে সবাইকে অবাক করে দিয়ে রূপা বলল, ‘দাদা, আজ কিন্তু আমি শুধু আপনার জন্যই সেজেছি। আশা করি আপনার চোখে আমি আজ সুন্দর হয়ে উঠতে পেরেছি। বলুন না… আমি চাই আজ অন্তত আমার প্রশংসায় আপনি দুটো কথা বলুন।’

রজত রূপার অনুরোধে অস্বস্তিতে পড়লেও মুখে কিছু প্রকাশ করল না, বরং সামান্য হেসে বলল, ‘বউদি, আপনাকে না সেজেও দেখেছি আবার আজ সেজেগুজেও দেখছি। দু’ভাবেই আপনাকে সুন্দর লাগে দেখতে।’

‘দাদা, এই কথাগুলো শ্রীপর্ণাকে বলাও এবার আপনাকে অভ্যাস করতে হবে।’ এই বলে রজতের হাত শ্রীপর্ণার হাতে তুলে দিয়ে রূপা বলল, ‘শ্রীপর্ণা, আজ এই উপলক্ষ্যে তোমাদের জন্য স্পেশাল রসোগোল্লার পায়েস বানিয়েছি। চলো সবাই মিলে একসঙ্গে খেতে বসা যাক। খেতে খেতেই গল্প করা যাবে।’

হইহই করে ডিনার খাওয়া শেষ হতে, রজত আর শ্রীপর্ণা বাড়ি ফেরার জন্য উঠে দাঁড়াল। রূপা ওদের দুজনের খুব কাছে সরে এসে রজতের উদ্দেশ্যে বলল, ‘দাদা, স্ত্রী সবসময় স্বামীর ভালোবাসা পাওয়ার় জন্য উন্মুখ হয়ে থাকে। মনে ভালোবাসা থাকলেও তার মৌখিক প্রকাশটুকুও কিন্তু স্ত্রীয়ের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। স্ত্রী এতে সুখী হয়। কাজের ব্যস্ততা অন্য জায়গায় কিন্তু স্ত্রী-পরিবারের সুখ দেখাটাও স্বামীর দায়িত্ব কর্তব্য। আমার কথা শুনুন, আজ থেকে শ্রীপর্ণার প্রতি ভালোবাসা মুখেও প্রকাশ করুন। ওর প্রশংসা করুন যা ও আপনার কাছ থেকে শুনতে চায়। কতদিন আর কৌশিক আপনার হয়ে প্রক্সি দেবে? এবার তো এই দায়িত্ব আপনাকেই নিজের কাঁধে তুলে নিতে হবে।’

 

রিলেশনশিপ Goals ২০২১

আপনি কি ডেটিং-এর প্রথম স্টেজে আছেন? সদ্য এনগেজ্ড হয়েছেন, কিংবা সদ্যবিবাহিত? নাকি ইতিমধ্যেই পার করে ফেলেছেন দাম্পত্যের ২০টি বসন্ত? যেমনই হোক আপনার সম্পর্কের ইকোয়েশন, প্রত্যেকটি সম্পর্কের থাকে একটি স্বতন্ত্র রসায়ন। রস ও রসায়ন, দুয়ে মিলে তৈরি হয় একটি পারফেক্ট সম্পর্কের ব্লেন্ড। তবেই সেই সম্পর্ক দীর্ঘমেয়াদি হয়। দুজনে একসঙ্গে চলার পথ মসৃণ হয়। পরস্পরের জন্য বাঁচার, জীবন-কে সুন্দর করে তোলার একটা তাগিদ থাকে।

আপনার উপযুক্ত সঙ্গী-কে? সে-ই যে আপনার আগ্রহের বিষয়গুলিতে আগ্রহী, আপনার স্বপ্ন দেখার শরিক, আপনার বিশ্বাস, আশা, ভরসার ক্ষেত্র। ভয় সরিয়ে যে আপনাকে দেয় নির্ভরতার আশ্বাস। কিন্তু সম্পর্ক তখনই সার্থক হবে যখন আপনারা পরস্পরকে ঠিক মতন বুঝতে পারবেন। পরস্পরের মতামত ও ভাবনা সম্পর্কে শ্রদ্ধাশীল হতে পারবেন। দ্বিমত থাকলেও, অন্যের চিন্তার মূল্য দেবেন।

বাহ্যিক সৌন্দর্যও একসময় ম্লান হয়ে যায়, বয়স একজায়গায় দাঁড়িয়ে থাকে না কিন্তু সম্পর্ক চিরস্থায়ী করাটা সম্পূর্ণ আপনারই হাতে। সম্পর্কের মধ্যে নানা সময়ে নানা সংঘাত বা মতবিরোধ আসতে পারে। কিন্তু আপস কিংবা ত্যাগ স্বীকারের মধ্যেই লুকিয়ে আছে সম্পর্ককে স্থায়ী করার রহস্য। কোনও সম্পর্ক সম্পূর্ণতা লাভ করতে পারে না, যদি আপনি যা নন তা হবার ভান করে চলেন। আপনি যা– সেভাবেই নিজেকে প্রকাশ করুন। দোষ-ত্রুটি মুক্ত নয় কোনও মানুষ। আপনার সঙ্গী যদি সত্যিই কমিটেড হন, তবে আপনি ‘আসলে যেমন’, আপনার সেই সত্তাটাকেই ভালোবাসবেন। কাজেই নিজের সত্যিকারের চরিত্রটাকে লুকোনোর চেষ্টা না করাই ভালো। কারণ আপনার সঙ্গী যদি কখনও উপলব্ধি করেন এই মিথ্যেটা, তাহলে তার হতাশা আসতে বাধ্য এই ভেবে যে, যার জন্য তার এত কমিটমেন্ট, এত ভালোবাসা– সে আসলে একজন অসৎ মানুষ।

এখানে দেওয়া হল ২০-টি টিপ্স যা আপনার সম্পর্ককে সমধুর করে তুলবে। ২০২১ আপনার জন্য সুখকর হয়ে উঠুক এই ২০-টি পরামর্শের জোরে।

  • পরস্পরের বিশ্বাস কে গুরুত্ব দিনঃ  পরস্পরের ভাবনা চিন্তাকে গুরুত্ব দিন। এর ফলে ভবিষ্যৎ জীবনে যখন আপনারা সন্তানের মা-বাবা হবেন, তখন তাদের শিক্ষা, দীক্ষা, ভাবনার প্রসারতা দিতে পারবেন। নিজেদের মানসিকতা স্বচ্ছ হলে সমাজের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি উদার হয়। অনেক মা-বাবা সেই কারণেই তাদের সন্তান সমকামী হলে, অন্য জাতির পাত্র বা পাত্রীকে বিয়ের জন্য নির্বাচন করলে বা নির্দিষ্ট কোনও রাজনৈতিক মতাদর্শকে অবলম্বন করলে, মা-বাবা তা মেনে নিতে পারেন। অর্থাৎ আপনার উদার মানসিকতাই ভবিষ্যতে আপনার জীবনের অনেক জট সহজে খুলে দিতে সাহায্য করবে।
  • বিয়ে করবেন নাকি করবেন নাঃ আপনাদের সম্পর্ককে সামাজিক স্বীকৃতি দিয়ে প্রথাগত ভাবে দম্পতি হবেন কিনা, প্রথমত সেটা ঠিক করে নেওয়াটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অনেকেই আজকাল লিভ-ইন করার পথও নিচ্ছেন। দীর্ঘদিন লিভ-ইন করার ফলে ট্যাক্স বেনিফিট, হেলথ বেনিফিট প্রভৃতি পার্কস্-এর সুযোগ এখন আইনসিদ্ধ ভাবে লিভ-ইন করা কাপলরা পেয়ে থাকেন সাধারণ দম্পতিদের মতোই। একটা কথা ভুলবেন না, ‘ম্যারেজ ইজ নট আ স্টোরি বুক রোম্যান্স’। কাজেই এর সঙ্গে কিছু দায়িত্বও এসে পড়ে। পরস্পরের জন্য আপনারা সেই দায়দায়িত্ব বহন করতে নিশ্চিত জেনে, তবেই বিয়ের সিদ্ধান্ত নিন।
  • সন্তান চান নাকি চান নাঃ  এই ভাবনাটা আগেই ভেবে নেওয়া ভালো। এতে সন্তান জন্মানোর পর তার জীবন নিয়ে ছেলেখেলা করার পরিস্থিতি হয় না। দুজনে দায়িত্বশীল অভিভাবক হবেন নাকি নিঃসন্তান থাকবেন, এটা সম্পূর্ণই আপনাদের ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। কিন্তু সন্তানের জন্মের পর, ডিভোর্সের মতো কোনও সিদ্ধান্ত না নেওয়াই উচিত।
  •  মানি ম্যাটার্সঃ  টাকা যে-কোনও সম্পর্কের মাধুর্য নষ্ট করতে পারে। তাই প্রথম থেকেই পরস্পরের উপার্জন ও তার ব্যবহার কীভাবে হবে, সে ব্যাপারে স্বচ্ছ ভাবনা গ্রহণ করুন। যে-আয় দুজনে মিলে করছেন, তা একক ভাবে না রেখে, সংসারের সামগ্রিক আয় হিসাবে ভাবলে সুবিধে হবে। ক্রমে পরিবারে স্বচ্ছলতাও আসবে।
  •  কোথায় বাসা বাঁধবেনঃ  বিয়ের পর দুজনে কোথায় থাকবেন সেটাও অগ্রিম ভেবে নেওয়া ভালো। স্ত্রীর বাবা-মা বা আপনার বাবা-মা উভয়ের কাছেই একই পরিবারের সদস্য হয়ে থাকতে পারেন। আর একান্তই নিজেরা আলাদা থাকতে হলেও উভয়ের মা-বাবার দায়িত্ব এড়াবেন না।
  • ফিটনেস ও হেলথ্ গোলঃ  দুজনের বয়স কম থাকতে থাকতে এই জিনিসগুলোকে গুরুত্ব দিন। এতে অসুস্থ কম হবেন। সংসারের ভালো অনেকটাই আপনাদের ভালো থাকার উপর নির্ভরশীল। অতএব ফিটনেস-এর প্রতি যত্নশীল হোন।
  • বাকেট লিস্ট তৈরি করুনঃ  দুজনের মিলিত ইচ্ছে ও স্বপ্নের একটা বাকেট লিস্ট বানান। তারপর একে অপরকে সাহায্য করুন যাতে দুজনে মিলে সেই স্বপ্নকে ছুঁতে পারেন। সেটা যদি বিশ্বভ্রমণ হয় –তাহলে তার জন্য ফিন্যান্স প্ল্যান করুন। সেটা যদি গান-বাজনা বা ক্রিয়েটিভ কোনও কাজ হয়, তাহলে সেই হারিয়ে যাওয়া প্যাশন আবার শুরু করুন।
  • সারাদিন পর একটি ঘন্টা কোয়ালিটি টাইমঃ  প্রতিদিন সমস্ত কাজ সেরে পরস্পরের সঙ্গে কথা বলার জন্য অন্তত একঘন্টা সময় হাতে রাখুন। দুজনে টিভি দেখা, মিউজিক শোনা বা একসঙ্গে রান্না করার মধ্যে দিয়েও কোয়ালিটি টাইম কাটানো যায়। উইক এন্ড-এ শপিং বা ডাইন আউট বা সিনেমা দেখার প্ল্যান রাখলেও মন্দ হয় না।
  • ডিসিপ্লিনকে নিত্য সঙ্গী করুনঃ  সংসারের মধ্যেও কিছু ডিসিপ্লিন থাকা জরুরি। কাজের ফাঁকে পরস্পরের খোঁজ নেওয়া, সময় মতো বাড়িতে ঢোকা-বেরোনো, লোক-লৗকিকতা করা –সবই সেই ডিসিপ্লিনের অঙ্গ। বাড়িতে বাচ্চাদেরও একটা ডিসিপ্লিনের মধ্যে রাখুন। সব জেদ মেটাবেন না, দোষ করলে শাস্তি দিন বা ভুলগুলো বুঝিয়ে সুধরে দিন।
  • নাইট ডেটঃ মাঝে মাঝে স্ত্রী বা সঙ্গিনীর সঙ্গে নাইট ডেট করুন। পরস্পরের জন্য তার পছন্দের সাজ সাজুন। সারপ্রাইজ ফুরিয়ে যেতে দেবেন না জীবন থেকে। সেটা উপহারের মধ্যে দিয়ে হোক বা পছন্দের রান্না রেঁধে– উদ্দেশ্য পরস্পরকে আনন্দ দেওয়া।
  • কিছু গ্রুপ অ্যাক্টিভিটি করুনঃ  পরিবারের সকলে মিলে কিছু গ্রুপ অ্যাক্টিভিটি করুন। কোনও অ্যাক্টিং বা ড্রয়িং ওয়ার্কশপ করুন আপনার প্রতিবেশি বাচ্চাদের নিয়ে। উৎসবে একসঙ্গে নাটক করুন। চাইলে শীতে পিকনিক করুন। এতে শুধু নিজের পরিবারের মধ্যেই নয়– সম্পর্কের বাঁধন মজবুত হবে প্রতিবেশীদের সঙ্গেও।
  • পার্সোনাল স্পেস কে সম্মান করুনঃ  যতই কেন- না দুজনে দুজনের মননের সঙ্গী হোন– প্রত্যেক মানুষের কিছু প্রাইভেট স্পেস থাকে। সেই পার্সোনাল স্পেসটাকে সম্মান দিন। দিনের মধ্যে একঘন্টা সময় নিজের জন্যও রাখুন। নিজের শখ বা পছন্দের কাজে ইনভলভ্ড হোন।
  • অজুহাত বাদ দিনঃ  ভুল করলে স্বীকার করুন। অজুহাত সরিয়ে দিন। কোনও কমিটমেন্ট ফেইল করলে, সত্যি করে বলুন কেন সেটা পূরণ করতে পারবেন না। মনে রাখবেন ‘ব্রোকেন প্রমিসেস ব্রিড আনহ্যাপিনেস’। তাই কাউকে কোনও প্রতিশ্রুতি দিলে, কথা রাখার চেষ্টা করুন।
  •  রাগ করে ঘুমোতে যাবেন নাঃ  যে-কোনও সিরিয়াস সম্পর্কে রাগ-অভিমান হয়েই থাকে। যদি তা কলহের দিকে মোড় নেয়, তাহলে একটা সময়ের পর তর্ক করা বন্ধ করুন। নিজের ভুল হলে, ক্ষমা চান। অন্যজনের ভুল হলে সাময়িক ভাবে মেনে নিন। পরে রাগ পড়লে তার ভুলটা তাকে বুঝিয়ে শুধরে দিন। কিন্তু রাগ পুষে রেখে ঘুমোতে যাবেন না। এটা দু’ক্ষেত্রেই অস্বাস্থ্যকর– আপনার মনের এবং সম্পর্কের।
  • সঙ্গী ও পরিবার, ব্যালেন্স জরুরিঃ  আপনার পরিবার যদি আপনার সঙ্গী নির্বাচনের ক্ষেত্রে রুখে দাঁড়ায়, তখন একরোখা না হয়ে চেষ্টা করুন সঙ্গী বা সঙ্গিনীকে পরিবারের মানুষদের সঙ্গে পরিচয় করাতে। হতে পারে তার ব্যবহারে আপনার পরিবার হয়তো মত পালটাবে। বিয়ের পরেও যদি মনোমালিন্য লেগে থাকে, কোনও এক পক্ষকে সমর্থন না করে, চেষ্টা করুন যতটা সম্ভব নিরপেক্ষ থাকার।
  • স্পষ্টবক্তা হোনঃ  আপনার পছন্দ-অপছন্দ স্পষ্ট ভাবে সঙ্গিনী বা সঙ্গীকে জানান। সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার চেয়ে প্রাথমিক ভাবে কিছু অভ্যাস বদলে নেওয়া ভালো। এতে দীর্ঘমেয়াদি সম্পর্ক সুখকর হয়। নিজের বদ অভ্যাসও একই সঙ্গে বদলানোর চেষ্টা করুন, যাতে অন্যজন আপনার দিকে অভিযোগের আঙুল না তুলতে পারে।
  • পরস্পরের জন্য ভাবুনঃ  মনে রাখবেন একটা সম্পর্কে কিন্তু আপনি একা নেই। দুজনে আছেন। কাজেই দুজনেরই পক্ষে যা কল্যাণকর– তেমন সিদ্ধান্তই নিন। স্বার্থপরতার কোনও জায়গা নেই যৌথ জীবনে। তাই পরিকল্পনাগুলো যেন পরস্পরের জন্য হিতকর হয়। শারীরিক পরিশ্রম করার ক্ষেত্রেও অন্যজনকে মাঝেমাঝে রিলিফ দিন।
  • কমপ্লিমেন্ট দিনঃ  স্ত্রী বা স্বামী বহুদিন একসঙ্গে রয়েছেন বলেই যে পরস্পরের প্রতি মুগ্ধতা হারিয়ে ফেলবেন– সেটা অনুচিত। পরস্পরকে কমপ্লিমেন্ট দিতে ভুলবেন না। এতে পরস্পরের কাছে পরস্পরের গুরুত্ব ও ভালোবাসা বাড়বে। আজকের গতিহীন জীবনে ছোটো ছোটো অনুভূতিগুলো হারিয়ে যাচ্ছে। সেগুলোকে আগলে রাখুন।
  • নতুন কিছু করুনঃ  দুজনে মিলে নতুন কিছু করার উদ্যম হারিয়ে ফেলবেন না। অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টস বা ট্রেক-এ যেতে পারেন। ছবি অাঁকা বা ছবি তোলা, যেটাই করুন, দুজনে দুজনের সঙ্গী হোন। শেখার কোনও বয়স হয় না। বাল্য বয়সে বা যৌবনে যা শিখতে চেয়েও শেখা হয়নি, সেটা নতুন করে শুরু করতে বাধা নেই।
  • পজিটিভ থাকুনঃ  বেঁচে থাকাটা মূল্যবান মনে করুন ছ  কথায় কথায় হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়বেন না। জীবনের ইতিবাচক দিকগুলো-কে দেখতে শিখুন। কাউন্ট ইয়োর ব্লেসিংস। অর্থাৎ এই জীবনটা খুব মূল্যবান। মনুষ্য জন্মটাকে আশীর্বাদ হিসাবে নিন। ভালো কাজের মধ্যে থাকুন। আক্ষেপ নিয়ে বাঁচবেন না। যা পাচ্ছেন, যা পেয়েছেন সেটাকে নিয়ে খুশি থাকার চেষ্টা করুন।

যৌন অনুভূতির পাঁচ রহস্য

যৌনতার প্রকৃত আনন্দ তখনই পাওয়া যায়, যখন স্বামী-স্ত্রীর অনেক না-বলা কথা উভয়ে বুঝতে পারেন অনায়াসে। মাত্র পাঁচটা সহজ স্টেপস-এ কী করে জিতে নেবেন সঙ্গিনীর মন,তা জেনে নিন ।

বেশিরভাগ মহিলাই চান, স্বামী যেন তার সেক্স সিক্রেটস আবিষ্কার করে নেন ভালোবেসে। কিন্তু বাস্তবে তা হয় না সবার ক্ষেত্রে। এই বিষয়ের গবেষক এবং বিশেষজ্ঞদের মতে, সিংহভাগ বিবাহিত পুরুষ ঠিকমতো বোঝেনই না তার স্ত্রীর চাহিদা এবং যৌন অনুভূতির রহস্যের বিষয়ে। কিন্তু সত্যি যদি কেউ সেক্স ফিলিংস-এর সঠিক রহস্য আবিষ্কার করে নিতে পারেন, তাহলে তার দাম্পত্য-জীবনের শারীরিক সম্পর্ক মধুময় হবেই।

সেক্স মানেই শুধু ইন্টারকোর্স নয়

আনন্দদায়ক সেক্স মানেই শুধু ইন্টারকোর্স নয় বিবাহিত মহিলাদের কাছে, বরং স্বামীর সঙ্গে অন্য সময়ের সুখানুভূতিও বিশেষ গুরুত্ব পায়। স্বামী সবসময় নিজের কাজে ব্যস্ত থাকলে কিংবা কোয়ালিটি টাইম না দিয়ে শুধু বিছানায় শারীরিক চাহিদা মেটালে স্ত্রীর অপছন্দের কারণ হয়ে যেতে পারেন। স্ত্রী-র তখন মনে হতে পারে, তিনি শুধু ভোগ্যবস্তুর মতো মর্যাদা পাচ্ছেন স্বামীর কাছে। কারণ প্রায় প্রত্যেক স্ত্রী-ই চান, শুধু বিছানায় নয়, বিছানার বাইরেও যেন অসীম ভালোবাসায় ভরিয়ে দেন তার স্বামী। গুরুত্ব দিয়ে, সুখদুঃখ শেয়ার করে, আদরযত্নে ভরিয়ে দিয়ে, ভালোমন্দের খোঁজখবর রাখলে তবেই খুশি থাকেন স্ত্রী–এই সত্যিটা বুঝতে হবে লাইফ পার্টনারকে।

সমাজতত্ত্ববিদদের মতে, দাম্পত্য সম্পর্ক সফল হওয়ার আসল রহস্য লুকিয়ে থাকে প্রতিটি অনুভবি মুহূর্তে। কথা, ব্যবহার, সাহায্য, সহানুভূতি, প্রেরণা, সঙ্গদান, খুনসুটি, এমনকী উপহার প্রদানের মাধ্যমেও সুখানুভব জাগানো যায়। কারণ, এসবের সুপ্রভাব পড়ে বিছানায়, শারীরিক সম্পর্কে। ঝগড়া-বিবাদের যেমন কুপ্রভাব পড়ে বিছানায়, ঠিক তেমনই প্রতিটি সুখকর মুহূর্তের সুপ্রভাবও পড়ে ইন্টারকোর্স-এর ক্ষেত্রে। অতএব, শারীরিক সম্পর্ককে সফল রূপ দিতে হলে, গুরুত্ব দিতে হবে জীবনের প্রতিটি মুহূর্তকে। দায়িত্ব, কর্তব্য, অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থানের সুবন্দোবস্ত, হইহুল্লোড় প্রভৃতিও যে জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়, একথা খেয়াল রাখতে হবে স্বামীকে।

‘টার্ন-অন’ করা জরুরি

মানুষ সবসময় হাসিখুশি, প্রাণোচ্ছল থাকতে পারেন না জীবনের নানা সমস্যার কারণে। তাই শরীরও সবসময় প্রস্তুত থাকে না যৌনতার জন্য। অতএব, স্বামী-স্ত্রী উভয়েরই মানসিক পরিস্থিতি বুঝতে হবে উভয়কেই। মনে রাখতে হবে, এটা সম্পূর্ণ অনুভবের বিষয়। অন্তরাত্মার মিল থাকলে, একে অন্যের মানসিক পরিস্থিতি বুঝতে পারা খুব কঠিন হয় না। আর যেটুকু অনুভবের মাধ্যমে বোঝা কঠিন হবে, তা হালকাচালে কথা বলে বুঝে নিতে হবে। পরিস্থিতি জটিল বুঝলে সেইসময় ইন্টারকোর্স থেকে বিরত থেকে অবস্থা স্বাভাবিক করার চেষ্টা করা উচিত। আর যদি দেখা যায় পার্টনার-এর মনখারাপের সমস্যা তত গভীর নয়, তাহলে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনের জন্য ‘টার্ন-অন’ করুন তাকে। অর্থাৎ, সঙ্গীর শরীরকে প্রস্তুত করতে হবে যৌনতার জন্য। এই প্রস্তুতির প্রক্রিয়া শুরু করতে পারেন নৈশভোজের সময় থেকে। প্রথমে সঙ্গীর মনখারাপের কারণ জেনে নিয়ে সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নিন এবং প্রসঙ্গ বদলে মজাদার কথা বলে পার্টনার-এর মেজাজ ফুরফুরে করার চেষ্টা করুন। মাথায় হাত রাখুন, প্রশংসামূলক কথা বলুন, কোথাও বেড়াতে যাওয়ার প্রস্তাব দিন, প্রয়োজনে খুনসুটি করে গাল টিপুন। এরপর ধীরে-ধীরে আদর-আহ্লাদের মাধ্যমে জাগিয়ে তুলুন শরীরকে।

নন-সেক্সুয়াল টাচ্

শুধু যৌনতা নয়, দাম্পত্য সম্পর্ক উপভোগ করা যায় নানা ভাবে। স্বামী কেয়ারিং হলে খুশি হন স্ত্রী-রা। তাই, স্ত্রীর পরিহিত পোশাক ঠিক আছে কিনা তা হাত ধরে ঘুরেফিরে দেখে প্রশংসা করুন। কপালের টিপ প্রপার জায়গায় নেই–এই অজুহাতে টিপ তুলে আবার পরিয়ে দিন হাত ধরে। হঠাৎ করে শাড়ি কিংবা গয়না এনে হাতে দিয়ে পরে দেখাতে বলুন। স্ত্রী যখন শাড়ি গয়না পরে দেখাবে, তখন ‘দারুণ লাগছে’ বলে জড়িয়ে ধরুন। পার্টনার-এর পছন্দের খাবার এনে নিজের হাতে খাইয়ে দিন মাঝেমধ্যে। মোটকথা, নানা অজুহাতে ‘নন্-সেক্সুয়াল টাচ’ প্রয়োজন, যা পার্টনার পছন্দ করেন। মনে রাখবেন, এর সুফল পাবেন পরে। কারণ, ‘সবুরে মেওয়া ফলে’।

পরিপূর্ণ তৃপ্তির প্রয়োজন

যৌন-স্বাস্থ্য সমীক্ষার রিপোর্ট অনুযায়ী, দাম্পত্যে যতবার সম্ভোগক্রিয়া হয়, তার অর্ধেক সময় পরিপূর্ণ তৃপ্তি পান মাত্র ষাট শতাংশ দম্পতি। কিন্তু, এই তৃপ্তির বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, পরিপূর্ণ যৌনতৃপ্তি পরস্পরের প্রতি আকর্ষণ বাড়ায়, বন্ধন দৃঢ় করে। শুধু তাই নয়, যৌনতৃপ্তি শরীরে, মনে যৌবন ধরে রাখতে সাহায্য করে। তাই, পাশবিক ভাবে নয়, পরিপূর্ণ যৌনতৃপ্তির জন্য এগোতে হবে ‘স্লো বাট স্টেডি’ ফরম্যাট-এ। তবে শুধু নিজের পরিপূর্ণ যৌনতৃপ্তির কথা মাথায় রাখলে চলবে না, পার্টনার-কেও খুশি করার দায়িত্ব নিতে হবে। এরজন্য ফোরপ্লে জরুরি। পরস্পরকে আলিঙ্গন করুন, চুম্বনে ভরিয়ে দিন, যৌনসম্পদ উপভোগের আগে, উষ্ণ স্পর্শে তৃপ্তিলাভের আবহ তৈরি করুন এবং একজন অন্যজনকে ধীরে-ধীরে বিবস্ত্র করুন। আর ক্লাইম্যাক্স-এ পশ্চার পরিবর্তনের মাধ্যমে যৌনক্রিয়া উপভোগ করুন।

অ্যাটেনশন আফটার সেক্স

বেশিরভাগ দম্পতিই পূর্ণ আনন্দলাভের পর মুখ ফিরিয়ে শুয়ে থাকেন, যা কাম্য নয়। কারণ, এই স্বভাব শুধু শরীর সর্বস্বতার ইঙ্গিত বহন করে। তাছাড়া, স্খলনের পরেও শরীরের উষ্ণতায় তৃপ্তির রেশ থাকে। তবে মনে রাখবেন, এই আফটার এফেক্ট উপভোগ করতে হলে, ভালোবাসা জারি রাখতে হবে। কারণ, শুধু শরীর নয়, মানসিক তৃপ্তিও প্রধান ভূমিকা নেয় উভয়ের অন্তরাত্মার মিলনের জন্য। আসলে, মানুষ মনে মনেই বাঁচে বেশিটা। তাই, সঙ্গীকে অকপট ভালোবাসুন, আনন্দে থাকুন, স্বাস্থ্যকর খাবার খান, শরীরচর্চা করুন আর সেক্স রিলেটেড বাজারি ওষুধ খাওয়া বন্ধ করুন। দেখবেন, পরিপূর্ণ তৃপ্তিলাভ হবেই।

—-x—-

আবেগপ্রবণ সঙ্গীকে সামলাবেন কীভাবে?

ইমোশনাল মানুষ সংখ্যায় কম হলেও আছেন এই সমাজে। এদের সঙ্গে সারাজীবন কাটানো খুব কঠিন মনে হতে পারে কারও কারও ক্ষেত্রে। কখন কী কারণে ইমোশনাল হয়ে পড়বেন আবেগপ্রবণ লোকেরা, তা বুঝে ওঠা মুশকিল। স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের মধ্যে সংবেদনশীলতা থাকবে অবশ্যই, কিন্তু তা বাড়াবাড়ির পর্যায়ে গেলে সমস্যা তৈরি করে। দাম্পত্য সম্পর্কে গভীরতা বজায় রাখতে গেলে পরস্পরের মতামতকে যেমন গুরুত্ব দিতে হবে, ঠিক তেমনই সম্মান এবং ভরসা করতে হবে। সত্যি এটাই যে, স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক তখনই মধুর হবে, যখন একজন অন্যজনকে স্পেস দেবে।

অনেক দম্পতি পরস্পরের প্রতি সহানুভূতিশীল থাকেন, কোয়ালিটি টাইম দেন, কিন্তু কখনও আবার পরিস্থিতি বদলে যেতেও দেখা যায়। যদি কারও জীবনসঙ্গী বেশি ইমোশনাল হন, তাহলে তিনি চান তার সঙ্গী সর্বদা যেন ছায়াসঙ্গী হয়ে থাকে। ব্যক্তি স্বাধীনতা তেমন গুরুত্ব পায় না তার কাছে। তাই, আজীবন তাকে মানিয়ে নেওয়াও মুশকিল হয়ে ওঠে। কখন কোন বিষয় সঙ্গীর অপছন্দ হবে, তা বুঝে উঠতে না পারলে মনোমালিন্য, ঝগড়া ইত্যাদির আবহ তৈরি হতে পারে।

মনোবিদ ডা. সখুজা এ বিষয়ে জানিয়েছেন, বেশি সংবেদনশীল মানুষের সঙ্গে দীর্ঘদিন মানিয়ে চলা অনেকের ক্ষেত্রে মুশকিল হয়। তাই, সংবেদনশীল মানুষটির সঙ্গী যদি ধৈর্য, বুদ্ধি এবং সংবেদনশীলতা দিয়ে পরিস্থিতি না সামলাতে পারেন, তাহলে দাম্পত্য সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। আসলে, বেশি সংবেদনশীল মানুষ বাস্তবের থেকে বেশি কল্পনাপ্রবণ চরিত্রের হন। তাই, আদর, ভালোবাসার ঘাটতি কিংবা তাকে গুরুত্ব কম দিলেই বিপত্তি। তার তখন মনে হতে পারে, সঙ্গী বা সঙ্গিনী অবহেলা করছে তাকে। এর থেকে তিনি ইনসিকিয়োর ফিল করেন। তাই, এমন মানুষের সঙ্গে বুঝেশুনে চলতে হবে।

কথার গুরুত্ব

আপনার সঙ্গী অথবা সঙ্গিনী যদি বেশি সংবেদনশীল হন, তাহলে তার সমস্ত কথা গুরুত্ব সহকারে শুনুন। তাহলে আপনি বুঝতে পারবেন আপনার সঙ্গী অথবা সঙ্গিনীর মনের ভাব। আর সেই মনের ভাব অনুযায়ী ব্যবহার করুন তার সঙ্গে। যখনই আপনি অবসর পাবেন, তার সঙ্গে বসে কথা বলুন হাসিমুখে এবং অনুভব করুন তার সংবেদনশীলতা। আসল কথা, কথার মাধ্যমেই জেনেবুঝে নিতে হবে সঙ্গী অথবা সঙ্গিনীর সুখ-দুঃখের কোমল জায়গাটা।

সত্যিটা জানার চেষ্টা করুন

যদি আপনার পার্টনার সবসময় আবেগপূর্ণ কথা বলতে থাকেন এবং আপনার উষ্ণ সান্নিধ্য চান, তাহলে কথা বলেই জেনে নিন এমন হাবভাবের কারণ। যদি তিনি সহজে মুখ খুলতে না চান, তাহলে ভালোবাসা দিয়ে বোঝান যে আপনি তার পাশে আছেন সর্বদা। স্লঁরা সাধারণত একটু ডিমান্ডিং প্রকৃতির হন, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এরা সঙ্গীর অ্যাটেনশন ও সময় ছাড়া কিছুই চান না। তিনি কোনও সমস্যায় পড়লে, আপনি বন্ধুর মতো তাঁর পাশে দাঁড়ান, সমস্যার সমাধান করার চেষ্টা করুন। যদি তা সম্ভব না হয়, তাহলে তাকে অন্তত ‘সমস্যা কেটে যাবে’ বলে মনোবল জোগান। আপনি এসব যদি সঠিক ভাবে করতে পারেন, তাহলে দেখবেন, তিনি অনেক সিকিয়োর্ড ফিল করছেন এবং সমস্যায় পড়লে কিংবা দুঃখ হলে, কথা লুকিয়ে না রেখে, আপনার কাছে সত্যি কথা উগ্রে দেবেন।

সান্নিধ্য বাড়ান

পার্টনার-কে আপনি যত সান্নিধ্য দেবেন, ততই আপনি তার মনের ভাব বুঝতে পারবেন সহজে। আপনার উষ্ণ সান্নিধ্য তাকে ভরসা জোগাবে, মনের জোর বাড়াবে এবং আবেগ কমাতে সাহায্য করবে। আর যত তিনি আপনার ভালোবাসা অনুভব করবেন, ততই তার ইনার পাওয়ার বাড়বে এবং তখনই যদি তাকে কল্পনা আর বাস্তবের তফাতটা বোঝাতে পারেন, তাহলে সুফল পাবেন। কারণ, ভালোবাসা ভরসা এবং বিশ্বাস জোগায়। আর বিশ্বাস তৈরি হলেই তিনি আপনার কথা মতোই কাজ করবেন।

কেন বেশি আবেগপ্রবণ?

আপনার পার্টনার কেন বেশি আবেগপ্রবণ, সেই কারণ জানার চেষ্টা করুন। খোঁজ নিয়ে কিংবা কথা বলে তার কোনও বিষণ্ণ অতীত আছে কিনা তা জানার চেষ্টা করুন। ছোটো থেকে তিনি কতটা সামাজিক কিংবা কতটা বাস্তববোধ রয়েছে তার, তা জানার চেষ্টা করুন। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, ছোটো থেকেই অনেকে ঘরকুনো, বাড়ির বাইরে পা রেখে কঠিন বাস্তবের মুখোমুখি হননি কিংবা অভিভাবকরা কেউ তাকে বাস্তব জ্ঞান দান করেননি সঠিক ভাবে। শুধু তাই নয়, সাহিত্য এবং সিনেমার অতি ভক্তরাও অনেকসময় বেশি কল্পনাপ্রবণ কিংবা আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন। সাহিত্য এবং সিনেমার সঙ্গে বাস্তবের পার্থক্যটা তাকে সেভাবে কেউ বুঝিয়ে দেননি হয়তো কিংবা তিনি নিজেও বোঝেন না। তাই, এই বেশি আবেগপ্রবণ মানুষগুলোর আবেগের সঠিক কারণ জেনে প্রয়োজনে তাকে মনোবিদের কাছে নিয়ে গিয়ে কাউন্সেলিংকরান। কারণ, অতি আবেগ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কুফলদায়ী।

ধৈর্য ধরুন

আবেগপ্রবণতা একদিনেই কমিয়ে দেওয়া যায় না, সময় লাগে। প্রথমে তাকে ভালোমন্দের তফাত বোঝান ভালোবাসা দিয়ে। তার অতি আবেগের প্রকাশে বিরক্তি কিংবা রাগ হলেও, উত্তেজিত না হয়ে ধৈর্য নিয়ে তার মাথায় হাত রাখুন। ভালোবাসার হাত বাড়িয়ে দিন। আপনার প্রতি তার বিশ্বাস এবং ভরসা বাড়ানোর উদ্যোগ নিন। ধৈর্য নিয়ে এসব করলে দেখবেন, আপনার পার্টনার-এর অতি আবেগ কমেছে এবং আপনাদের দাম্পত্যজীবন স্বাভাবিক হচ্ছে ধীরে ধীরে।                                                                                                        

পড়ার জন্য সীমাহীন গল্প-নিবন্ধসাবস্ক্রাইব