সন্তানের ভালোমন্দের দায়িত্ব মা-বাবার। তাকে ভালোভাবে মানুষ করা, পড়াশোনা শেখানো, কেরিয়ার গড়ে তুলতে সাহায্য করা, সমাজে সুপ্রতিষ্ঠিত হতে সাহায্য করা– এসবই বাবা-মায়ের কর্তব্য। কিন্তু কর্তব্য পালন করতে করতে কখনও কি মনে হয়েছে, আপনার কর্তব্যের অতিরিক্ত বোঝার ভারে আপনার সন্তান ত্রস্ত, নিঃশ্বাস নেওয়ার মতো জায়গাটুকুর তার প্রয়োজন? সুতরাং আগে না ভাবলেও যুগের আধুনিকতার সঙ্গে নিজেকে এবং সন্তানকে যদি মানানসই করে তুলতে চান তাহলে প্রত্যেক অভিভাবকেরই সচেতন হওয়া উচিত। এই নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের খুব সাবধানে হ্যান্ডল করাই বাঞ্ছনীয়।
দক্ষিণ কলকাতার নামি কলেজের ছাত্র সায়ন। বাড়ি বাগুইহাটিতে। মা-বাবার একমাত্র সন্তান। একমাত্র সন্তান হওয়াতেই হয়তো মা-বাবার চিন্তা বেশি। ছেলে কলেজে কী করছে, বন্ধুত্ব কাদের সঙ্গে করছে, কলেজ শেষ হতেই ছেলে সোজা বাড়ির পথ ধরছে কিনা– এই নিয়ে হাজারো চিন্তা সায়নের বাবা-মায়ের। বড়োদের মাত্রাতিরিক্ত চিন্তা সায়নের স্বাধীন ভাবনাচিন্তার পথে কিছুটা বাধা হয়েই দাঁড়ায়, ফলে মিথ্যার আশ্রয় না নিয়ে সে মা-কে জানায় এতদূর আসা যাওয়া করতে প্রতিদিন তার যে সময় নষ্ট হচ্ছে সেটা বন্ধ হবে যদি কলেজের কাছাকাছি কোনও থাকার ব্যবস্থা খুঁজে নেয়। এতে সময় বাঁচবে এবং পড়াশোনার জন্যেও সায়ন বেশি সময় দিতে পারবে। মা-বাবা ছেলের এই ইচ্ছে মেনে নেন। কিন্তু সায়ন বাবা-মায়ের বিশ্বাসের অমর্যাদা কোনওদিন হতে দেয়নি। বরাবর ভালোভাবে প্রতিটি পরীক্ষায় সফল হয়েছে সে। তাহলে কেন এই বাড়ি ছেড়ে যাওয়া? কারণ হচ্ছে প্রতিনিয়ত উঠতে বসতে তার প্রতি তার আচরণের প্রতি বড়োদের শ্যেণ দৃষ্টি রাখাটাই হয়তো তার মনকে সবার অগোচরে বিদ্রোহী করে তুলেছিল। কোনটা ভুল, কোনটা ঠিক, এই বিচার করার বয়স সায়নের হয়েছিল।
এখন এই নতুন জেনারেশনের ছেলেমেয়েরা নিজেদের অ্যাকাডেমিক, কেরিয়ার নিয়ে এত বেশি সচেতন যে, কারণ অকারণে তারা খুব সহজে মানসিক শান্তি হারিয়ে ফেলে, টেনশনে ভোগে, সহজে অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়ে। ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে আত্মহত্যা করার প্রবণতা আগের তুলনায় বেড়েছে। এক্ষেত্রে কোনও পক্ষকেই দোষ দেওয়া যায় না। আমরা এমনই একটা সমাজে বাস করছি, যেখানে মানুষ স্ট্রেসের ভারে জরাজীর্ণ সুতরাং যে-কোনও মুহূর্তে অঘটন ঘটা আশ্চর্যজনক নয়।