মায়ের প্রতি নির্ভরতা দিয়েই শুরু হয় একটি মেয়ের শিশুকাল। মেয়েরা অবশ্য তাদের মেয়েবেলায়, ছেলেদের তুলনায় কিছুটা বেশি পরিণতমনস্ক হয়৷ তাদের স্পর্শকাতরতাও বেশি৷ তাই তাদের হ্যান্ডেল করা দরকার অতি সাবধানে৷ মায়ের প্রতি তীব্র ভালবাসাও মেয়ের মনে থাকে, সেই সঙ্গে থাকে আনুগত্য। টিনএজ পার হতে হতে এই আনুগত্যে কখনও ফাটল ধরতে থাকে। এর পেছনে থাকে নানা কারণ। কখনও দেখা যায় মায়ের চেয়ে বাবার প্রতি মেয়ের আনুগত্য ও ভালোবাসা তার বড়ো হবার সঙ্গে সঙ্গে ধীরে ধীরে বেড়ে গেছে। বাবাকেই সে মনে করছে নিজের ‘হিরো’। তখন বাবা-মায়ের মধ্যে কোনো মতবিরোধ হলে মেয়ে বিনা দ্বিধায় বাবাকেই সমর্থন করে।
তবে বেশিরভাগ কিশোর-কিশোরীই নিজেদের স্বয়ংসম্পূর্ণ ভাবতে পছন্দ করে এবং মনে করে কারও সাহায্যের প্রয়োজন নেই। মেয়েদের ক্ষেত্রে যেহেতু এখনো আমরা অনেক বেশি রক্ষণশীল, তাই আপনার কন্যাটির জানা প্রয়োজন যে আপনি তাকে সাহায্য করতে ইচ্ছুক। তার যে-কোনও প্রয়োজনে আপনি পাশে আছেন বন্ধুর মতো। ছোটো থেকেই মেয়েকে মূল্যবোধ শেখাতে হবে৷ একজন নীতিবান, আদর্শ ব্যক্তিকে অনুসরণ করার জন্য তাকে উদ্বুদ্ধ করুন৷
কন্যা-সন্তানের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে আপনি কখনও কখনও কঠোর হতে পারেন কিন্তু কঠোরতার মাত্রা ছাড়িয়ে গেলে মেয়ে ভুল বুঝবে আপনাকে। আপনার অতিরিক্ত শৃঙ্খলা এবং কঠোরতা দেখে তার বিশ্বাস জন্মাতে পারে যে, আপনি শুধুমাত্র তার জন্য জীবনকে কঠিনই করতে চান। তাকে বলুন আপনি তাকে খুবই ভালোবাসেন এবং জীবনে শৃঙ্খলা থাকা দরকার সবারই।
সাধারণত বয়ঃসন্ধির সময় হরমোন ও শারীরিক পরিবর্তনের কারণে টিনএজারদের ব্যবহারেও বেশ পরিবর্তন আসে। বয়ঃসন্ধির সময় যেসব শারীরিক পরিবর্তন ঘটে তাও বিভিন্ন ধরনের সামাজিক ও মানসিক পরিবর্তন ঘটায়। নানা বিষয়ে তার আগ্রহ, আবার পরক্ষণেই মেজাজ পরিবর্তন করার জন্য, সরাসরি তার শরীর ও মস্তিষ্ক প্রভাবিত হয়। চিন্তা করে দেখুন, কতটা শারীরিক পরিবর্তন হয়েছে আপনার মেয়ে সন্তানটির।আপনাকে বুঝতে হবে, যে-মেয়েটি আগে হয়তো খুব হই-হুল্লোড় করে বেড়াত, সে-ই এখন তার নিজের পরিবর্তনগুলোর সাথে খাপ খাওয়াতে পারছে না। শারীরিক পরিবর্তনটি আপনি চোখে দেখছেন, মানসিক পরিবর্তন কি দেখতে পারছেন?
How to handle emotions of teenagers?
আপনি হয়তো দেখছেন আপনার মেয়েটি হঠাৎ করে লেখাপড়ায় অমনোযোগী হয়ে গিয়েছে, আপনার বেশিরভাগ কথাতে রিয়্যাক্ট করছে, অনেক সময় মিথ্যা বলছে কিছু নিয়ে, কোনও বিষয় লুকাচ্ছে, যে- বন্ধুদের সাথে হয়তো আপনি বলছেন কম মিশতে, তাদের সাথেই বেশি মিশছে, তর্ক করছে কারণে অকারণে। একই বাড়িতে থেকে মানসিকভাবে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছেন কন্যার সাথে। আপনি হয়তো বুঝতে পারছেন না কী করবেন।
আমাদের পরামর্শ হল, যে-কোনও জিনিসের ভালো-মন্দ নিয়ে মেয়ের সাথে খোলাখুলি আলোচনা করুন৷সন্তানের মতিগতি বুঝতে চাইলে তার সঙ্গে নিয়মিত মানসিক যোগাযোগ থাকাটা ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ৷ ছোটো থেকে শাসনে রাখার পর একটু বড়ো হলে সন্তানের সঙ্গে বন্ধুর মতো মিশতে চাইলে তা বাস্তবায়িত হবে না৷ এতে ছেলেমেয়েরা মোটেই সব কিছু শেয়ার করে না৷ অতিরিক্ত শাসন বা সন্তানের প্রতি কম নজর দেওয়া কোনওটাই বাবা-মায়ের করা উচিত নয়৷
ট্রাস্ট বা বিশ্বাস যে কোনো সম্পর্কের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ। আপনি যদি আপনার কিশোরী সন্তানকে আপনার কথা শোনাতে চান, তাহলে আপনাকেও কিন্তু তার কথা শোনার সময় ও ধৈর্য্য রাখতে হবে। আপনাকে তার বিশ্বাস অর্জন করতে হবে। একটি খোলা সম্পর্ক রাখুন মেয়ের সাথে, যেখানে আপনারা একে অপরের সাথে কিছু ভাগ করতে পারেন। এতে আপনার সন্তান জানবে যে আপনি তাকে গুরুত্ব দেন এবং তার জীবনের বিষয়ে সে আপনার সাথে খোলাখুলি কথা বলতে পারে।