একটি মেয়ে বিয়ের Married Life পরে প্রবেশ করে নতুন এক পরিবারে। এই পরিবারের একটি মাত্র সদস্যই তার একান্ত আপন। কিন্তু কোনও স্ত্রী, স্বামীর সব কথা শুনে চলার পর তার শ্বশুর-শাশুড়ির সব কথা ভালো মনে মেনে নিতে না-ও পারে। ঠিক তখনই দেখা দেয় দ্বন্দ্ব। কীভাবে? গৃহবধূরা আজকাল প্রায়শই শ্বশুর-শাশুড়ির সংসার থেকে ভিন্ন হয়ে বেরিয়ে আসতে চায়। কেন এমন হয়, আপাতদৃষ্টিতে আমরা তা বুঝি না। এখন ঘরে ঘরে একটাই পুত্রসন্তান – তবুও এমন হচ্ছে। অ্যাডজাস্টমেন্টের কি কোনও পথ নেই? হয়তো আছে, কিন্তু সে পথে কেউ হাঁটতে চায় না।

শ্বশুর-শাশুড়ি বদমেজাজি, এমন অভিযোগ বউমাদের তরফ থেকেই আসে। স্বামীটি ভেবে পায় না বাবা-মা’র কত আদর-যত্ন-ভালোবাসায় সে বড়ো হয়েছে, আর তাদেরকেই তার স্ত্রী বলছে বদমেজাজি স্বভাবের? অন্যদিকে শ্বশুর-শ্বাশুড়ির প্রশ্ন, বউ-মা-তো নিজের মুখ সামলেই কথা বলতে শেখেনি, শ্বশুর-শাশুড়িকে কীভাবে সামলাবে? এদিকে বউমা ভাবে অফিস-সংসার সব সামলে সংসারে যদি একটু উষ্ণতার ছোঁয়া পাওয়া না যায়, তাহলেই বা কীভাবে চলে? স্বামী কিন্তু সবসময়ই একথাই বোঝাতে চায় যে, তার বাবা-মা বদমেজাজি নয় বরং স্পষ্টবাদী। স্ত্রীও ছাড়বে কেন, সে ভাবে স্পষ্টবাদী হওয়া আজকাল শোভনীয় নয়। আবার সে নিজেই সব কথা স্পষ্টভাবে জানায় তার স্বামীকে।

এমন ঘটনাই ঘটল বৃন্দা আর সুফলের জীবনে, বৃন্দার স্বামী সুফল কিছুতেই বুঝতে চায় না, ত্রুটি-টা বৃন্দার তরফে নয়, বরং সুফলের বাবা-মা’র মধ্যেই অ্যাডজাস্টমেন্টের অভাব। চোখে জল আসে বৃন্দার। কথা না বলে চুপ করে যায়। কান্না পায় এই ভেবে যে, স্বামী যদি একবারও তার দুঃখটা বুঝত। যদি বলত ‘আমি তোমার কষ্টটা বুঝতে পারছি, তুমি এভাবে চলো।’ কিন্তু সেই পথে সুফল হাঁটল না।

এখন শ্বশুর-শাশুড়ির সঙ্গে স্বামীর প্রতিও একধরনের উষ্মা দেখা দিয়েছে বৃন্দার মনে। সুফল আর সে যে, শপথ করেছিল দুটি মন একটি প্রাণের! কিন্তু স্বামীই সে কথা ভুলে গেল? একদিন স্বামীকে যখন বৃন্দা সে কথা জানাল, সে নির্বিবাদে বলল, ‘তুমিও তো বলছ আলাদা হবে, আমার বাবা-মা বদমেজাজি।’ সুফল আরও বলল, ‘সেদিন তোমার পিসিমা এসেছিলেন বারেবারে বললেন আমার বাবার মতো মানুষ হয় না, আমি কোনওদিনই আমার বাবার মতো হতে পারব না। এসব কথার মানে আমি বুঝি না? এতে বাবার আর আমার সম্পর্কের চিড় ধরানো হয়, বুঝি না?’

প্রত্যুত্তরে বলে ওঠে বৃন্দা, ‘দ্যাখো আমি তোমাকে অনেকদিনই বলেছি যে, আমার পিসিমা অপ্রাসঙ্গিক কথা বলেন। আমি মানছি।’

‘মানছ তো কুটুম্বিতা করতে তাকেই কেন পাঠান তোমার বাবা-মা?’

‘বাঃ, এখন তুমি ‘আমার পিসিমা’, ‘আমার বাবা-মা’ বলছ?’

হ্যাঁ, আমরা জানি অনেক সংসারেই তোমার-আমার থেকে ‘তোমরা-আমরা’ অনুভূতি অর্থাৎ ‘উই ফিলিং’, ‘দে ফিলিং’ তৈরি হয় যা কখনওই কাম্য নয়।

এই ‘দে ফিলিং’ মনোভাব তখনই ‘উই ফিলিং’-এ পর্যবসিত হয়, যদি আমরা একবার নিজেদের একটু শুধরে নিয়ে সহযোগিতা, সহমর্মিতার আশ্রয় নিই।

যেমন, সব স্ত্রীকেই বুঝতে হবে, বিয়ের আগে তার বাবা-মা-ও তাকে শাসনে আদরে রেখেছিলেন। প্রায়শই বন্ধু নির্বাচন নিয়ে মা’র কাছে বকুনি শুনতে হয়েছে। অনেক কাজে মা বাধা দিয়েছেন, মা’র কথা শুনে চলতে হয়েছে। বিয়ের পরেও আর-একটা পরিবারে, আর-একটা সংসারের চরিত্র একই রকম। সেখানে স্বামীর ভালোবাসা-আদরই শেষ কথা নয়, শাসন-বারণও থাকবে।

আবার স্বামীর ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। স্ত্রী-এর দোষগুণ যেমন সে মেনে নিয়েছে, ঠিক একই রকমভাবে তাকে মেনে নিতে হবে স্ত্রীর আত্মীয়স্বজনের দোষত্রুটি বা তার বাবা-মার ব্যবহার। তবেই ‘এটা তোমার, এটা আমার’ ধারণার অবসান হবে।

স্ত্রী ভাবতে শিখবে বৃহত্তর পরিবারে সে আর-এক যুগল অভিভাবক পেয়েছে, স্বামীও ভাবতে শিখবে, একটি মেয়েকে তার পরিবার-সহ গ্রহণ করতে হবে। আমাদের দেশ ভারতবর্ষ, পারস্পরিক সম্প্রীতির ভিত্তিতেই বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্যকে তুলে ধরে। আমরাও আশা করব, আমাদের পরিবারগুলির পারস্পরিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে দেশের এই আদর্শই প্রতিফলিত হবে।

বিবাহ-সমস্যা

সাধারণভাবে ‘বিবাহ সমস্যা’ বিষয়ে বলা যায় যে, মুদ্রার মতোই বিয়েরও Married Life দু-পিঠ। একদিকে এটি যেমন নির্ভরতার আশ্বাস ও সামাজিক সুরক্ষাবোধ বহন করে, অন্যদিকে বিয়ে অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং ও সমস্যাদীর্ণও হয়ে উঠতে পারে। বিয়ের ‘তেমন ভালো দিক নয়’-এর প্রসঙ্গে বলা যায় যে, শ্বশুর-শাশুড়ির সঙ্গে দ্বন্দ্ব হল মুখ্য সমস্যা, একটি দম্পতিকে যার সম্মুখীন হতে হয়। শ্বশুর-শাশুড়িরা হয় দারুণ সহযোগী হবে নয়তো এর পুরো বিপরীত হবে। পরবর্তী পরিস্থিতিতে বিষয় একটু জটিল ও বুদ্ধির পরীক্ষা হয়ে দাঁড়ায়। উভয়তরফে মানিয়ে চলতে না পারা থেকেই সমস্যার সৃষ্টি হয়। আমরা জানি যে জীবন চ্যালেঞ্জপূর্ণ, সেটা আমাদের কাটিয়ে উঠতে হয়। অতএব আপনি কখনওই ইনলজ-দের জন্য নিজের বিয়ে ভাঙতে দেবেন না। কে জানে হয়তো সমস্যার সমাধান হলে বধূটি একজোড়া বুঝদার অভিভাবক পাবে।

বিবাহ সমস্যার সমাধান

–    বিয়ের পর বিয়ের বন্ধন অটুট রাখাই হোক মুখ্য প্রাধান্যের বিষয়। বাকি যা কিছু সরিয়ে রেখে, সেইসব উপায়ের কথা ভাবা উচিত যে, কীভাবে সম্পর্ক সুদৃঢ় করা যায়। শ্বশুরবাড়ি এবং স্বামীই হল বিবাহোত্তর জীবনের মুখ্য বিষয়।

–    শ্বশুরবাড়ির আত্মীয়স্বজনের প্রতি সম্মান, সুস্থ সম্পর্ক গড়ে তুলতে সাহায্য করে। একবার যদি শ্বশুরবাড়ির মানুষজনের প্রতি সম্ভ্রম তৈরি হয়, সম্পর্ক অনেক মসৃণ হবে। অভিভাবকদের দাবি অধিকাংশ ক্ষেত্রে অত্যন্ত কম থাকে বা থাকেই না। তারা যা চান, তা হল শ্রদ্ধা আর সম্মান। যদি আপনার মনে হয়েও থাকে যে, ইনলজ-রা প্রকৃত অর্থেই এসবের উপযুক্ত নন, তবু তাদের উদ্দেশে প্রশংসা বর্ষণ করাই শ্রেয়।

–    শ্বশুর-শাশুড়ি আপনার স্বামীর বাবা-মা একথা মনে রাখবেন। তারা আপনার থেকে আনুগত্য দাবি করেন। সুতরাং আপনারও কিছুটা অনুগত হওয়া জরুরি। তাহলেই সব সমস্যার সমাধান হবে।

–    ইনলজ-দের সমালোচনা করবেন না। তাদের সব স্বভাব বা চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য আপনার পছন্দ না-ও হতে পারে। যদি স্বামীও তাদের বিরুদ্ধে কোনও মন্তব্য করেন, শুধু শুনে যাওয়াই ভালো, কোনও মন্তব্য না করে। আপনার মন্তব্য বিদ্যমান সমস্যাকে বাড়াবে। পরিষ্কার প্রশ্নও বিরাট সমস্যা তৈরি করতে পারে।

–    ইনলজ-রা আপনার বিষয়ে কী ভাবেন সেটাও জানা দরকার। কে জানে হয়তো শুধুমাত্র শুনেই আপনি সমস্যার মূল কারণ চিনতে পারবেন এবং সমাধানও পাবেন।

–    অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নিরাপত্তার অভাব সমস্যার মূল কারণ হয়। অধিকাংশ শ্বশুর-শাশুড়িই, তাঁদের ছেলের বিয়ের পরে নিজেদের অবাঞ্ছিত বা হেয় বোধ করেন এটি খুবই স্বাভাবিক। কারণ, অন্য কেউ একজন তার সন্তানের জীবনে গুরুত্বপূর্ণ বা অত্যন্ত প্রিয় হয়ে ওঠেন। এই নিরপত্তাহীনতা অত্যন্ত কঠিন সমস্যা। কিন্তু আপনারই তাঁদের নিশ্চিন্ত করা উচিত যে, তাঁরা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং একটি বিশেষ স্থান অধিকার করেন।

–    ইনলজ-দের সঙ্গে সমস্যা হলে স্বামীর সঙ্গে কথা বলুন– তিনিও আপনাকে সঠিক পরামর্শ দিতে পারেন। যার ফলে সমস্যার সম্পূর্ণ সমাধান হবে।

–    অনেক সময় ছুটি কাটানো নিয়েও ভিন্ন মত থাকে শ্বশুর-শাশুড়ি আর বউমার। ভালো পরামর্শ হল আগে থেকেই অনুভূতি, আকাঙ্খা আর চিন্তায় সীমারেখা টেনে দেওয়া।

–    মনে রাখা জরুরি আপনি এবং আপনার ইনলজ-দের মধ্যে সামাজিক, সাংস্কৃতিক পার্থক্য থাকবে। এই পরিস্থিতিতে, যদি উভয়পক্ষে বিবাদ হয়, তাহলে মধ্যপন্থা খুঁজে নিয়ে সমস্যার সমাধান করাই ভালো।

 

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...