অভীকের তার ব্যাপারে এমন নিস্পৃহ হয়ে যাওয়ার কোনও কারণ খুঁজে পাচ্ছিল না নয়না। কিছুতেই বুঝতে পারছিল না, যাকে সে নিজের স্বামী বলে জেনেছে এতকাল, সে কেমন যেন অচেনা হয়ে যাচ্ছে ক্রমশ। নয়নার সঙ্গে কথা বলতেও যেন ইদানীং ক্লান্ত বোধ করে অভীক। নয়না আঁচ করতে পারে হয়তো ‘অন্য কেউ’ এসেছে অভীকের জীবনে।
প্রমিত-কে মন খুলে সব কথা বলা সম্ভব নয় জয়ীতার। অথচ সে বুঝতে পারছে মনে মনে যোজন দূরত্ব তৈরি হয়ে যাচ্ছে তার স্বামীর সঙ্গে। নির্ভার হওয়ার আর নির্ভর করার একটি ভিন্ন আধার খুঁজে পেয়েছে জয়ীতা। ধীরে ধীরে ওই মানুষটিই হয়ে উঠেছে তার প্রেম। কোনও যুক্তিবুদ্ধি, সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি বিশ্লেষণ করেও কূলকিনারা পায় না জয়ীতা– সে জানে না এমন কেন হল, কী করে হল, শুধু জানে আর তার পক্ষে সেই মানুষটিকে জীবন থেকে বাদ দিয়ে বাঁচা সম্ভব নয়।
প্রায়শই এই ধরনের সম্পর্ক গড়ে ওঠে আমাদের আশেপাশে, চেনাপরিচিত মহলে, এমনকী দফতরেও। ঠিক দস্তুর না হলেও এমন ঘটনা আজকাল আর বিরল নয়। সমাজতাত্ত্বিকরা একে কেতাবি পরিভাষায় কী বলবেন জানা নেই, তবে এটা ঠিক যে এ যুগের মেয়েরা, পুরুষদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এখন কর্মক্ষেত্রে নিজেদের অপরিহার্য করে তুলেছেন। এই কর্মজগতের যতরকম সংঘর্ষ কিংবা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয় একজন পুরুষকে, ঠিক ততটাই ফেস করেন একজন মহিলা-কর্মীও। কর্মক্ষেত্রে দীর্ঘসময় অতিবাহিত করা এবং প্রতিদিন প্রতিনিয়ত কর্মজগতের নানা ঝক্বি সামলাতে সামলাতে, কখন যে দুটি নারী-পুরুষ পরস্পরের খুব কাছাকাছি চলে আসে, কেউ জানতেও পারে না।
শুধুমাত্র শরীর একজন পুরুষ ও নারীকে বাঁধতে পারে, এমন ধারণায় যারা বিশ্বাসী– তাদের দৃষ্টিভঙ্গিকে খানিকটা এলোমেলো করে দিয়েই হয়তো, দফতরেই গড়ে উঠতে পারে শরীরবর্জিত এমন এক ইমোশনাল রিলেশনশিপ। একটি পুরুষ ও একজন নারী সকলের অনবধানে নিজেদের ইমোশনাল কোশেন্ট-এর সদর্থক আত্মপ্রকাশে হয়ে উঠতেই পারেন জীবনসমরের সহযোদ্ধা। খুব পার্থিব লেনদেন বা দেনাপাওনা হয়তো সেই সম্পর্কের অন্যতম শর্ত না-ও হতে পারে– তবু হয়তো সময়েরই চাহিদায় একসময় মনের সুকোমল বৃত্তিগুলি পাপড়ি মেলে, পরস্পরকে ভালোবেসে ফেলে দুটি মন। নয়নার পক্ষে হয়তো বোঝা সম্ভব নয়, ঠিক কোন যুক্তি থেকে সেই ‘অন্য মেয়েটি’ হয়ে ওঠে অভীকের সমস্ত আশা, আকাঙ্খা, ভয়, ব্যক্তিগত জীবনের নানা টানাপোড়েন শেয়ার করার একমাত্র ক্ষেত্র। ঠিক যেমন প্রমিতেরও বোঝা সম্ভব নয়, কী করে এক অন্য পুরুষ জয়ীতার জীবনের ইমোশনাল শেয়ারিং-এর এক ও একমাত্র ক্ষেত্র হয়ে ওঠে!